কতক্ষণ ছিলেন তিনি?
প্রায় ঘণ্টাখানেক। তারপর আমার কর্ত্রী শুতে গেলেন। সন্ধ্যোর ডিনারটা শোবার ঘরেই দিতে বললেন, খুব ক্লান্ত বোধ করছিলেন তিনি।
পোয়ারো কিছুক্ষণ চুপ করে রইলেন। গতকাল সন্ধ্যায় কি কোন চিঠিপত্র লিখেছিলেন তোমার কর্ত্রী?
শুতে যাবার আগে কিছু লিখেছিলেন কিনা ঠিক জানি না তবে বসবার ঘরের টেবিলের ওপর ডাকে পাঠাবার জন্যে কয়েকটা চিঠি পড়েছিল। রাত্রে গেট বন্ধ করবার আগে সেগুলো তাকে দিয়ে আসি আমি। কিন্তু সে চিঠিগুলোতে অনেক আগে থেকেই টেবিলে রাখা ছিল।
মোট কটা চিঠি ছিল?
ঠিক সংখ্যাটা মনে নেই। দুটো কি তিনটে। তিনটেই বোধহয়।
ডাকে দেবার আগে চিঠির ওপরের ঠিকানাগুলো লক্ষ্য করেছিলে? ভালো করে ভেবে বল, ব্যাপারটা খুব জরুরী।
চিঠিগুলো ডাকবাক্সে ফেলার সময় ওপরের চিঠির ঠিকানাটা নজরে পড়েছিল–সেটা হচ্ছে ফোঁটাম অ্যাণ্ড ম্যাসন। তবে অন্যগুলোর কথা তো ঠিক বলতে পারব না।
চিঠি যে ঠিক তিনটের বেশি ছিল না তুমি নিশ্চিত?
হ্যাঁ স্যার।
পোয়ারো গম্ভীরভাবে মাথা নাড়লেন কয়েকবার। শূন্যদৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলেন সিঁড়ির দিকে। তোমার কী যে ঘুমের ওষুধ ব্যবহার করতেন তুমি জানতে?
হ্যাঁ স্যার, ডাঃ লঙই তাকে ঘুমের ওষুধ খেতে নির্দেশ দিয়েছিলেন।
সেই ওষুধের শিশিটা কোথায় থাকত?
তার শোবার ঘরের ছোট জালের আলমারিটার মধ্যে।
আর কোন প্রশ্ন না করে সিঁড়ি বেয়ে ওপরে উঠে গেলেন পোয়ারো। গম্ভীর থমথমে মুখ।
দোতলায় সুপারিনটেন্ডেন্ট ব্যাটেল এবং ডিভশনাল সার্জনের সঙ্গে দেখা হলো তার। তাদের সব পরীক্ষা তখন শেষ। ব্যাটেলের কাছ থেকে অনুমতি নিয়ে মিসেস লরিমার-এর শোবার ঘরের দিকে এগিয়ে গেলেন পোয়ারো। মৃত দেহটা একবার নিজে পরীক্ষা করবেন তিনি।
ঘরে ঢুকে দরজাটা ভেজিয়ে দিলেন পোয়ারো। প্রাণহীন দেহটা বিছানার ওপর স্থির হয়ে পড়ে আছে। ঝুঁকে মিসেস লরিমারের মুখের দিকে একদৃষ্টে তাকিয়ে রইলেন।
পোয়ারোর বুকের ভেতর একটা জমাট অশান্তি ক্রমেই দানা বাঁধছে। সত্যিই কি মিসেস রিমার একটি তরুণীকে অপমান এবং মৃত্যুর হাত থেকে বাঁচানোর জন্য শেষ পর্যন্ত এই আত্মহত্যার পথ বেছে নিলেন? না কোন অন্য রহস্যময় কারণ আছে?
অন্তত কয়েকটা তথ্য যদি জানা যেত–
হঠাৎ খাটের ওপর আর একটু ঝুঁকে পড়লেন পোয়ারো। মৃতদেহের বাঁ হাতের মাঝখানে একফেঁটা শুকিয়ে যাওয়া রক্তের দাগ।
সোজা হয়ে উঠে দাঁড়ালেন পোয়ারো, তার দুচোখের মধ্যে চকচক করছে অদ্ভুত একধরণের সবুজ আলো। পোয়ারোকে যারা গভীরভাবে চেনেন, তারা এ দৃষ্টির সঙ্গে পরিচিত।
ঘর ছেড়ে নিচে নেমে এলেন পোয়ারো। দেখলেন, ফোনের পাশে ব্যাটেল তার এক অধীনস্থ কর্মচারীর সঙ্গে দাঁড়িয়ে আছেন। একটু বাদে ফোন নামিয়ে রাখলেন কর্মচারীটি। না, স্যার, তিনি এখনো তার ফ্ল্যাটে ফিরে আসেন নি।
পোয়ারোর দিকে তাকালেন ব্যাটেল। মেজর ডেসপার্ডকে অনেকক্ষণ থেকে ফোনে ধরবার চেষ্টা করছে। তার নামে চেলসী ডাকঘরের ছাপ মারা একটা চিঠি আছে।
ডাক্তার রবার্টস কি এখানে আসার আগে ব্রেকফাস্ট করে বেরিয়েছিলেন? পোয়ারো হঠাৎ একটা অদ্ভুত প্রশ্ন করলেন।
অবাক হয়ে তার দিকে ফিরে তাকালেন ব্যাটেল। না, ভদ্রলোক একবার বলেছিলেন, ব্রেকফাস্ট না করেই বেরিয়ে পড়েছিলেন তিনি।
তাহলে, নিশ্চয়ই বাড়িতে আছেন এখন।
কিন্তু কেন?
পোয়ারো ততক্ষণে রিসিভার তুলে ডায়াল ঘোরাতে শুরু করেছেন।
ডাঃ রবার্টস? সুপ্রভাত। আমি এরকুল পোয়ারো। একটা প্রশ্ন আছে। আপনি কি লরিমারের হাতের লেখার সঙ্গে পরিচিত? পরিচিত নন? আগে কখনো দেখেননি বলছেন। আচ্ছা আচ্ছা, ধন্যবাদ, অশেষ ধন্যবাদ। রিসিভার নামিয়ে রাখলেন পোয়ারো।
আপনার মতলবটা কি মঁসিয়ে পোয়ারো। ব্যাটেল অবাক হয়ে বলে উঠলেন।
ব্যাটেলের দিকে ফিরে তাকালেন পোয়ারো। গতকাল সন্ধ্যায় এখান থেকে আমি বিদায় নেবার পর, মিস মেরিডিথ এ-বাড়িতে এসেছিলেন। তিনি চলে যাবার পর মিসেস লরিমার শুতে যান। সেই সময় এ বাড়ির ঝি তাকে কোন চিঠিপত্র লিখতে দেখেনি। আর গতকাল সন্ধ্যায় আমার সঙ্গে আলাপ-আলোচনার আগেই যে তিনি এ চিঠিগুলো লিখে রেখেছিলেন সেটাও ঠিক বিশ্বাস করা যাচ্ছে না। কারণ, তাহলে তার কথাবার্তাতেও কিছু একটা আঁচ করা যেত। তবে চিঠি তিনটে কখন লিখলেন?
কেন? কাজের লোকেরা শুতে যাবার পর, হয়ত নিজেই বাইরে গিয়ে এগুলো ডাকে দিয়ে এসেছিলেন।
হ্যাঁ হতে পারে। মাথা নাড়লেন পোয়ারো। আবার এমনও তো হতে পারে যে চিঠিগুলো তিনি আদৌ লেখেন নি।
কি বলছেন মঁসিয়ে পোয়ারো-ব্যাটেলের কথা শেষ হবার আগেই ঝনঝন শব্দে টেলিফোনটা বেজে উঠল। ফোন ধরে একটু পরেই রিসিভার নামিয়ে রাখল পুলিশ কর্মচারীটি।
স্যার মেজর ডেসপার্ডের ফ্ল্যাট থেকে সার্জেন্ট ওকোনার জানাচ্ছে যে ডেসপার্ড আজ সকালে উইলিংফোর্ড-এ যেতে পারেন।
পোয়ারো রীতিমতো উত্তেজিত হয়ে উঠলেন–ব্যাটেলের হাত ধরে টানলেন তিনি। এক্ষুণি উইলিংফোর্ডে যাবার ব্যবস্থা করুন, এক মুহূর্তও সময় নেই। একটা ভয়ানক কিছু ঘটতে যাচ্ছে, হয়ত এই শেষ নয়। আপনাকে আগেই বলেছি সুন্দরী মেরিডিথ অল্প বয়সী হলেও খুবই সাংঘাতিক আর বিপজ্জনক–এটা ভুললে চলবে না।
অ্যানা, রোডা বলে উঠল, কি হল তোর, তখন থেকে ডাকছি। ওসব পাজল-টাজল রাখ। যা বলছি মন দিয়ে শোন।