বাড়ি ফিরেই ব্যাটেল কে ফোন করলেন পোয়ারো।
হ্যালো! ব্যাটেলের ভরাট কণ্ঠস্বর ভেসে এল।
আমি যা বলছি শুনুন। মিস মেরিডিথের সঙ্গে একবার দেখা করাটা খুব জরুরী। পোয়ারো উত্তেজিত ভাবে বলে উঠলেন।
হ্যাঁ। সেটা আমিও জানি। কিন্তু এখনই ব্যাপারটা এত জরুরী হয়ে উঠল কেন?
মঁসিয়ে ব্যাটেল। যত সময় যাবে সে আরও সাংঘাতিকভাবে বিপজ্জনক হয়ে উঠতে পারে এটা ভুলে যাবেন না।
মিনিটখানেক চুপ করে থেকে ব্যাটেল বললেন, হ্যাঁ, আমি বুঝতে পারছি। কিন্তু সেরকম তো কেউ নেই–যাকগে, আমি অবশ্য তাকে সরকারীভাবে চিঠি লিখে জানাচ্ছি যে আমি আগামীকাল তার সঙ্গে উইলিংফোর্ডে দেখা করব। মনে হয়, এতে কিছুটা নার্ভাস হয়ে পড়বে সে। তখনই তাকে কায়দা করা সহজ হবে।
হ্যাঁ। এটা খারাপ না। আপত্তি না থাকলে আমি আপনার সঙ্গী হতে পারি।
আপত্তি? কি যে বলেন। আপনাকে সঙ্গী পেলে খুব খুশী হব।
রিসিভার নামিয়ে রেখে কিছুক্ষণ বসে রইলেন পোয়ারো। তার মনটা কিছুতেই স্থির থাকতে চাইছে না। কিসের একটা আশঙ্কায় অস্বস্তি হচ্ছে তার।
কাল সকালেই দেখা যাবে। বিড় বিড় করতে করতে ঘুম চোখে বিছানার দিকে এগোলেন পোয়ারো।
আমার কর্ত্রী কিন্তু এসব ব্যাপার খুব অপছন্দ করতেন, স্যার। যাই ঘটুক না কেন গেরস্থ বাড়ি পুলিশ ঢুকবে কেন? তিনি যদি ভুল করে দু একটা বেশি ট্যাবলেট খেয়ে মারাই যান, সেটাতে দুর্ঘটনা ছাড়া আর কিছু নয়। পুলিশের এতে মাথা গলাবার কি আছে?
মিসেস লরিমারের বাড়ির বৃদ্ধা দাসী পোয়ারোর কথার উত্তর দিচ্ছিলেন। একটু আগেই মিসেস লরিমার-এর মৃত্যুর খবর পেয়েছেন পোয়ারো। সুপারিনটেন্ডেন্ট ব্যাটেল তাকে ফোন করে খবরটা জানান। পুলিশের মতে–মিসেস লরিমার আত্মহত্যা করেছেন। পোয়ারোর সঙ্গে ডাঃ রবার্টসের দেখা হয়েছে এ বাড়িতে ঢোকার মুখে। তারও মত ঘুমের ওষুধ খেয়ে আত্মহত্যা করেছেন মিসেস লরিমার। সুপারিনটেন্ডেন্ট ব্যাটেলের কাছ থেকে পোয়ারো মোটামুটি ঘটনাটা জানতে পেরেছেন।
মৃত্যুর আগে মিসেস লরিমার বাকী তিনজন ডাক্তার রবার্টস, মেজর ডেপার্ড আর মিস মেরিডিথের নামে চিঠি লিখে গেছেন। পরিস্কার চিঠি, কোনরকম জটিলতা নেই। সব ঝামেলা, ঝঞ্ঝাট থেকে মুক্ত হবার একটা পথই তার সামনে খোলা আছে আত্মহত্যা। শেটানের খুনী তিনি নিজেই। এই ঘটনায় অন্য তিনজনকে যে কষ্ট ভোগ করতে হয়েছে। তার জন্য তিনি ক্ষমাপ্রার্থী। এই হল চিঠির মূল বক্তব্য।
সকাল আটটার ডাকে সর্বপ্রথম ডাঃ রবার্টস এই চিঠি পান। তারপর তিনি তার পরিচারিকাকে পুলিশের সঙ্গে যোগাযোগ করতে নির্দেশ দিয়ে তড়িঘড়ি উপস্থিত হন মিসেস লরিমার-এর বাড়িতে। যেখানে গিয়ে শোনেন যে মিসেস লরিমার তখনও ঘুম থেকে ওঠেননি। দ্রুত পায় তার শোবার ঘরে গিয়ে হাজির হন ডাঃ রবার্টস। কিন্তু তখন আর করার কিছু ছিল না, সব শেষ। ভদ্রমহিলার মাথার কাছে টেবিলে একটা ভেরোনাইলের ফাইল পাওয়া গেছে। এক ধরণের ঘুমের ওষুধ। ফাইলের অর্ধেকটাই খালি। ডাঃ রবার্টসের পরিচারিকার ফোন পেয়ে পুলিশের পক্ষ থেকে ডিভিশনাল সার্জেনও প্রায় সঙ্গে সঙ্গেই মিসেস লরিমারের বাড়িতে উপস্থিত হন। তারও একই মত, ঘুমের ওষুধ খেয়ে আত্মহত্যা করেছেন মিসেস লরিমার।
মেজর ডেসপার্ড শহরের বাইরে গেছেন, সুতরাং সেদিন সকালের ডাকে চিঠি পাননি তিনি। মিস মেরিডিথ চিঠি পেয়েছেন।
পোয়ারো বাস্তবে ফিরে এলেন। তখনও সিঁড়ির কাছে দাঁড়িয়ে বদ্ধা দাসী-ফুঁপিয়ে কাঁদছে।
কি ভয়ঙ্কর, বীভৎস ব্যাপার স্যার। কাল সন্ধ্যাবেলায় তো আপনি তার সঙ্গে চা খেলেন, কি সুন্দর ভদ্র ব্যবহার করলেন তিনি। আর আজ সকালেই আমাদের ছেড়ে চলে গেলেন। ঐ যে ডাক্তার রবার্টস না কি যেন ভদ্র লোক। তা সেই ভদ্রলোক ভোরে এসে উত্তেজিতভাবে জিজ্ঞাসা করলেন, মিসেস লরিমার কোথায়? আমি তো অবাক, বললাম যে তিনি ঘুম থেকে উঠে ঘন্টি না বাজালে কেউ তাকে বিরক্ত করে না, এটাই তার আদেশ। ভদ্রলোক আবার জিজ্ঞাসা করলেন, তার শোবার ঘর কোথায়, বলতে বলতে তিনি সিঁড়ি বেয়ে উঠতে লাগলেন। আমিও দাঁড়ালাম তার পেছন পেছন। দূর থেকে শোবার ঘরটা দেখতেই তিনি দরজা ঠেলে ঘরে ঢুকে চেঁচিয়ে উঠলেন।–হ্যায়-হায়, বড় দেরী হয়ে গেছে। গিয়ে দেখি আমাদের কী খাটের ওপর পড়ে আছেন, স্থির দেহ। ডাক্তার ভদ্রলোক তবু তার হৃৎস্পন্দন চালু করার কত চেষ্টা করলেন। আমাকে বললেন গরম জল আর ব্রাণ্ডি নিয়ে আসতে। কিন্তু সব ব্যর্থ হল। ইতিমধ্যে আবার পুলিশের গাড়িও এসে গেছে–তারপর এই ঝামেলা, এটা কিন্তু ঠিক হল না স্যার। এখানে পুলিশ আসবে কেন?
পোয়ারো এ-কথার জবাব দিলেন না, প্রণাম করলেন, গতকাল রাত্রে মিসেস লরিমারকে কি কোন কারণে উদ্বিগ্ন বা চিন্তিত মনে হচ্ছিল?
না তো স্যার। স্বাভাবিকই ছিল। তবে খুব ক্লান্ত দেখাচ্ছিল, মনে হয় খুব যন্ত্রণা পাচ্ছিলেন তিনি। ইদানিং শরীরও বিশেষ ভালো যাচ্ছিল না। গতকাল আপনি চলে যাবার পর আর একটি অল্পবয়সী মেয়ে তার সঙ্গে দেখা করতে এসেছিল। মনে হয় সেই কারণেও তিনি খানিকটা উদ্বিগ্ন হয়ে পড়তে পারেন।
পোয়ারো সিঁড়ি বেয়ে উঠতে উঠতে থমকে দাঁড়ালেন।
তরুণী মহিলা?
হ্যাঁ স্যার। নাম বললেন–মিস মেরিডিথ।