***
লণ্ডনে ফিরে ব্যাটেল প্রথমে পোয়ারোর সঙ্গে দেখা করলেন। তারপর ঘণ্টা খানেক আগেই অ্যানা আর রোডা বিদায় নিয়েছে।
ব্যাটেল ডেভনশায়ারের সমস্ত ঘটনা খুলে বললেন পোয়ারোকে। সবশেষে মন্তব্য করলেন ডাক্তার পর্যন্ত ভেবেছে যে এটা অসাবধানতা বশতঃ হয়েছে। ডেভনশায়ারের কেউ এটাকে খুন বলে ভাবে না–এমনকি পুলিশের ধারণা মিস মেরিডিথ নির্দোষ। মিসেস বেনসনের মৃত্যু যে খুন, সে বিষয়ে কোন সন্দেহ নেই। তবে প্রশ্ন হল মিস মেরিডিথ খুনটা করল কেন?
আমি হয়ত এর কারণ সম্পর্কে আপনাকে একটা আভাস দিতে পারবো। পোয়ারো শান্তভাবে বললেন।
কিভাবে মঁসিয়ে পোয়ারো?
আজ বিকেলে আমি একটা ছোট্ট পরীক্ষা করেছি। মিস মেরিডিথ আর তার বন্ধুকে ডেকে পাঠিয়েছিলাম। অ্যানা মেরিডিথকে সেই একই প্রশ্ন করলাম, মিঃ শেটানের ড্রয়িংরুমে কি কি জিনিস দেখেছিল সে?
আপনি দেখছি ঘুরে ফিরে সেই একটা প্রশ্নতেই জোর দিচ্ছেন?
কারণ আছে। আমি ঐ একটা থেকেই অনেক কিছু জানতে পারি। মিস মেরিডিথ খুবই সন্দেহ প্রবণ। তাই একটা ফাঁদ পাতলাম। মিস মেরিডিথ গয়নার বাক্সটার কথা বলতেই আমি তাকে ছুরিটার কথা জিজ্ঞাসা করলাম। সেটা ঠিক উল্টোদিকের টেবিলেই পড়েছিল। কায়দা করে আমার ফঁদ এড়িয়ে গেল মিরিডিথ এবং এজন্য মনে মনে খুব গর্বও হল তার। স্বাভাবিকভাবেই তার আত্মরক্ষার শক্তি কিছুটা ঢিলে হয়ে গেল। তাহলে তাকে ডেকে আনার কারণ শুধু এই, ছুরিটা সে দেখেছে কি না এটা স্বীকার করিয়ে নেওয়া? তবে তো সে পোয়ারোকে বেশ কঁকিই দিতে পেরেছে, এই ভেবে অ্যানা খুব হাসিখুশী হয়ে উঠলো। সহজভাবে গয়নার বাক্স, ফুলদানীর গোলাপ ফুল–যার জল পাল্টানো হয় নি, এসব গল্প করল মেরিডিথ।
কিন্তু তাতে হলোটা কি? অবাক হন ব্যাটেল।
বুঝলেন না? এটা একটা গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপার। ধরুন আমারা মেয়েটির স্বভাব চরিত্র সম্পর্কে কিছুই জানিনা। তার কথাবার্তার মধ্যেই তো তার চরিত্রের একটা আভাস পেতে পারি। ফুলের কথাই তার মনে আছে–তার মানে এই নয় যে সে ফুল ভালবাসে, তাহলে আগেই নজর পড়ত সুন্দর টিউলিপের ওপর, এটা হলো মাইনে করা কাজের লোকের কথা–ফুলদানীর জল পাল্টানো যার কাজ। এ হলো একটা পয়েন্ট। তার মধ্যে একটা নারীসত্তাও আছে, গয়না যার খুব প্রিয়–এবার বুঝতে পারছেন কিছু?
হু। গম্ভীরভাবে মাথা নাড়লেন ব্যাটেল এতক্ষণে ব্যাপারটা আমার মাথায় ঢুকেছে?
চমৎকার. আপনার মুখে মিস মেরিডিথের পুরোনো জীবনের কথা শুনলাম। আর মিসেস অলিভারের মুখে সেই অদ্ভুত কথাটা শোনার পর থেকেই আমি চিন্তা করতে শুরু করলাম। খুনটা আর্থিক কোন কারণে মিস মেরিডিথ করেনি, কেননা আমরা দেখেছি এখনও তাকে চাকরী করে খেতে হয়। তাহলে আসল কারণটা কি? ওপর ওপর মিস মেরিডিথের স্বাভাব-চরিত্র সম্বন্ধে একটু একটু ভেবে দেখলাম। সাদামাটা শান্ত মেয়ে। গরীব, কিন্তু সৌখীন সাজপোশাকের ওপর ঝোঁক বেশি। ছোট খাট সুন্দর জিনিসের ওপর লোভ। মনের গড়নটা খুনীর সঙ্গে মানায় না, বরং চোরের সঙ্গে খাপ খায়। আপনার মনে আছে, আমি জিজ্ঞাসা করেছিলাম, মিসেস এল্ডন আগোছালো টাইপের মহিলা কি না। আপনি আমার কথায় সায় দিয়েছিলেন।
হ্যাঁ, তখন তো বেশ অবাক হয়েছিলাম।
আমি এখন ভেবেচিন্তে একটা ধারণা করলাম। ধরে নেওয়া যাক, মিস মেরিডিথ-এর একটা দুর্বলতা আছে। ঐ যে একধরনের মেয়েরা দোকান থেকে জিনিসপত্র চুরি করে–মেরিডিথ খানিকটা সেই ধরণের। হয়ত মিসেস এন্ডনের ঘর থেকে দুল কি ছোটখাট গয়না,অথবা দুএক শিলিং সরাত মিস মেরিডিথ। মিসেস এল্ডন অতসব খেয়াল করতেনও না কিংবা ভাবতেন নিজেই হারিয়ে ফেলেছেন কিন্তু বেনসনের চোখকে ফাঁকি দেওয়া অত সহজ নয়। তার হাতেই ধরা পড়ল মিস মেরিডিথ। তিনি মেরিডিথকে চোর হিসাবে দায়ী করলেন, হয়ত ভয়ও দেখিয়েছিলেন। আগেই আপনাকে বলেছিলেম মেয়েটা একমাত্র ভয় পেয়েই খুন করতে পারে। সে জানত মিসেস বেনসন চোর বলে প্রমাণ করতে পারবেন। সেক্ষেত্রে বাঁচবার একটাই পথ আছে–মিসেস বেনসনের মৃত্যু। বোতল দুটো এই জন্যই উল্টোপাল্টা করে রাখল–যার ফলস্বরূপ মিসেস বেনসন মারা গেলেন। ভদ্রমহিলা পর্যন্ত মারা যাবার আগে বিশ্বাস করে গেলেন যে তার নিজের ভুলেই ব্যাপারটা ঘটেছে।
হু, তা হতে পারে। মাথা নাড়লেন ব্যাটেল। কিন্তু এ সবই তো অনুমানের ব্যাপার।
না, কেবল অনুমানই নয়। আমি প্রায় নিশ্চিত। আজ বিকেলে একটা পরীক্ষা করলাম। মিস মেরিডিথকে বললাম, উপহার দেবার উপযোগী কয়েকটা সিল্কের সৌখিন মোজা বেছে দিতে। কায়দা করে জানিয়ে দিলাম, টেবিলের ওপর কজোড়া মোজা আছে তা আমার সঠিক জানা নেই। সিল্কের সৌখিন মোজার লোভ এড়ান, মিস মেরিডিথের পক্ষে কঠিন হবে জানতাম। তাকে একলা থাকার সুযোগ দিয়ে বেরিয়ে গেলাম ঘর ছেড়ে। কি হল জানেন? ঊনিশ জোড়ার মধ্যে এখন রয়েছে সতেরটা। বাকি দুজোড়া মিস মেরিডিথের ব্যাগের মধ্যেই অদৃশ্য হয়েছে।
সর্বনাশ! ব্যাটেল অবাক হলেন, সাংঘাতিক ঝুঁকি নিয়েছে তো।
মনস্তত্বটা লক্ষ্য করুন। মেরিডিথের ধারণা আমি তাকে খুনের জন্য সন্দেহ করি। কিন্তু দুজোড়া সিল্কের মোজা চুরিতে কি আসে যায়? আমি তো আর কোন চোরের খোঁজ করছি না। তাছাড়া এরকম বিকারগ্রস্তদের আত্মবিশ্বাস খুব জোরালো। তারা ভাবে সব সময়ই নির্বিঘ্নে কাজ হাসিল করে সরে পড়তে পারবে।