মেজর ডেসপার্ড কিছুক্ষণ চুপ করে থাকার পরে বলে উঠলেন, এই হল আমার গল্প বা ব্যাখ্যা–যাই বলুন। আমার মনে হয় শেটান কোন ভাবে মিসেস ল্যাক্সমোরের কাছ থেকে এই খবর জানতে পেরেছিলেন এবং সেদিন আমাদের সামনে এই ঘটনারই ইঙ্গিত দিয়েছিলেন।
ব্যাপারটা কিন্তু আপনার পক্ষে বেশ বিপজ্জনক। মিঃ শেটান যখন জানতে পেরেছিলেন- পোয়ারোর শান্ত কণ্ঠস্বর ভেসে এল।
ওসব আমি পরোয়া করি না। যাই হোক, এই গল্পের কোন সাক্ষ্য প্রমাণ আমি হাজির করতে পারব না। আমার মুখের কথাকেই প্রমাণ বলে ধরে নিতে হবে। অবশ্য এর পরিপ্রেক্ষিতে আমি মিঃ শেটানকে খুন করেছি এই ধারণা করে নেওয়াও অস্বাভাবিক নয়। সেজন্যই আপনাকে আসল ঘটনা খুলে বললাম, বিশ্বাস করা না করা আপনার ইচ্ছা।
আপনার মুখের কথাই আমি বিশ্বাস করছি মেজর ডেসপার্ড। পোয়ারো হাত বাড়িয়ে দিলেন ডেসপার্ডের দিকে।
ডেসপার্ডের দু চোখ খুশীতে চকচক করে উঠল। পোয়ারোর দু হাত আঁকড়ে ধরলেন তিনি। অসংখ্য ধন্যবাদ, মঁসিয়ে পোয়ারো।
তুই একটা ভীতু মেয়ে অ্যানা–বোকা মেয়ে। উটপাখির মতো বালির মধ্যে মুখ লুকিয়ে রাখলেই কি চলবে? যেখানে একটা খুন নিয়ে কথা সেখানে তোর না গেলে চলে। বিশেষতঃ যখন সন্দেহভাজনদের মধ্যে তুই একজন–অবশ্য সেভাবে দেখতে গেলে তোর ওপরেই সন্দেহটা কম হওয়া উচিত। রোডা উত্তেজিত হয়ে ওঠে।
সকালের ডাকেই পোয়ারোর আমন্ত্রণ পত্র তাদের কাছে এসে পৌচেছে। অথচ অ্যানা তার কাছে যেতে মোটেই রাজি নয়।
কিন্তু জানিসই তো রোডা, গোয়েন্দা-গল্পে যার ওপর কম সন্দেহ হয় পরে দেখা যায় সেই খুনি। অ্যানা ঠাট্টার সুরে বলে।
তার কথায় কান দেয় না রোডা। তা হলেও তোকে যেতেই হবে। মনে রাখিস, তোর ওপরও নজর করা হচ্ছে, তোকেও সন্দেহের আওতায় রাখা হচ্ছে। এখন আমি খুনের কথা সহ্য করতে পারি না। রক্তের গন্ধে অজ্ঞান হয়ে যাই।…এসব ন্যাকামো চলে না।
বেশ তো পুলিশের কাছে আমি সব প্রশ্নের জবাব দিতে রাজি আছি। অ্যানা বোঝাবার চেষ্টা করে, কিন্তু কোথাকার কে এক….. পোয়ারো, তার প্রশ্নের জবাব দিতে আমি বাধ্য নই।
তাহলেও ভেবে দেখ, তুই যদি না যাস–ভদ্রলোক হয়ত ভেবে বসবেন তুই খুনি, তাই যেতে ভয় পাচ্ছিস।
কিন্তু আমি খুনি নই। অ্যানা ঠাণ্ডা ভাবে বলে।
আমি যেন তাই বলেছি। আরে বাবা, আমিও জানি তুই কোনদিন হাজার চেষ্টা করলেও কাউকে খুন করতে পারবি না। তবুও দেখ, ভদ্রলোক বাইরের লোক–তার তো এত জানার কথা নয়। তার চেয়ে বরং চল আমরা দেখা করে আসি। নয়ত ভদ্রলোক এখানেই এসে হাজির হবেন। বলা যায় না, হয়ত ততক্ষণে ঝি-চাকরদের কাছ থেকে আমাদের গোপন খবর বার করে নিয়েছে।
ভদ্রলোক কি কারণে যে আমার সঙ্গে দেখা করতে চাইছেন। অ্যানা বিরক্ত হয়ে পড়ে। তোর কি মনে হয় রোডা, ভদ্রলোক কি রকম?
মোটেই শার্লক হোমসের মত দেখতে নয়, তবে এককালে বেশ নামডাক ছিল। এখন বেশ বুড়ো হয়েছেন-ষাট-পয়ষট্টি বছর বয়স হবে। আমার কি মনে হয় জানিস, ভদ্রলোক স্কটল্যান্ড ইয়ার্ডের ওপর টেক্কা দিতে চাইছেন–চল না দেখেই আসি-হয়ত নতুন কোন খবরও পাওয়া যাবে।
তাহলে চল। বিষণ্ণ হয়ে সায় দেয় অ্যানা। তোর যখন এতই ইচ্ছে।
হ্যাঁ, আমার ইচ্ছে, ঝাঁঝালো গলায় বলে রোডা, কারণ আমি তোর ভাল চাই। তোর মত বোকা আমি খুব কম দেখেছি অ্যানা–ঠিক সময়ে ঠিক জায়গায় তুই নজর দিতে জানিস না।
অ্যানা আর রোডা যখন এ-সমস্ত কথা বলছিল ঠিক তখনই ডেভনশায়ার থেকে লন্ডনের ট্রেনে ফিরছিলেন সুপারিনটেন্ডেন্ট ব্যাটেল। ডেভনশায়ার থেকে অ্যানা মেরিডিথ সম্পর্কে আরও খবরাখবর জোগাড় করে ফিরছিলেন তিনি। সেখানকার স্থানীয় পুলিশের সঙ্গে যোগাযোগ করে তিনি মিসেস বেনসনের মৃত্যুর কারণ সম্পর্কে মোটামুটি ভাবে খোঁজ নিয়েছেন। যা জানা গেছে তা হল : মিসেস বেনসন ভুল করে কাশির সিরাপের বদলে টুপির পালিশ খেয়ে মারা যান। মিস মেরিডিথ যখন ঐ বাড়িতে কাজ নিয়েছিলেন তখন একদিন টুপির পুলিশের বোতলটা ভেঙ্গে যায়। মিসেস বেনসন ঐ পালিশটা সিরাপের পুরোনো খালি বোতলে ঢেলে রাখতে বলেন মিস মেরিডিথকে। কিন্তু অসাবধানতা বশতঃ ঐ বোতলের গায়ে টুপির পালিশ হিসাবে কোন লেবেল আটকানো হয়নি। পালিশটা একটা খালি সিরাপের বোতলে ভরে সবচেয়ে উঁচু তাকে তুলে রাখা হয়েছিল। কিন্তু ঘটনার দিন রাত্রে ভদ্রমহিলা একটা পাত্রে বেশ কিছু সিরাপ ঢেলে পান করেন, কিন্তু সেটা ছিল সেই টুপির পালিশ, সঙ্গে সঙ্গে ডাক্তারকে খবর পাঠানো হয় কিন্তু ভদ্রলোক অন্য গ্রামে রুগী দেখতে গিয়েছিলেন। তিনি ফিরে আসবার আগেই ভদ্রমহিলা মারা যান। বাড়ির লোকেদের ধারণা মিস মেরিডিথ মানে তাদের পরিচারিকাটিই ঘরদোর পরিষ্কার করার সময় ভুল করে বোতল দুটো উল্টোপাল্টা করে রেখেছিল।
ব্যাটেল মনে মনে ভাবলেন, ব্যাপারটা কত সহজ। ওপরের তাকের বোতলটা নিচে রেখে, নিচেরটা ওপরে রাখা। ভুলটা কি করে হলো, কে করল–এসব কোনভাবেই ধরা পড়বে না, কেউ ঘুনাক্ষরেও সন্দেহও করবে না। অথচ কি সহজভাবে একটা খুন করা সম্ভব। কিন্তু খুন করার পেছনে মোটিভটা কি?
আরও দুচার জায়গায় ব্যাটেল খোঁজ-খবর করেছিলেন। মিসেস বেনসনের প্রতিবেশীদের কারোরই মিস মেরিডিথকে ভালো মনে নেই। তবে মিসেস বেনসন যে গৃহকর্ত্রী হিসেবে মোটেই ভাল ছিলেন না এটা সবারই মনে ছিল। ঝি-চাকরদের সঙ্গে সব সময়ই তিনি খারাপ ব্যবহার করতেন, এমনকি অল্পবয়সী মেয়েরাও টিকত না তার বারিতে, কারণ কি?