পোয়ারো মাথা নাড়লেন। মিঃ শেটানের একটা কথা মনে পড়ছে। তিনি সেই খুনিদের কথাই বলেছিলেন যাদের বিরুদ্ধে কোর্টে কোন প্রমাণ দাখিল করা যাবে না।
কিন্তু মিঃ শেটান এত খবর জোগাড় করলেন কি করে? মিসেস অলিভারের প্রশ্নে তার দিকে তাকালেন পোয়ারো, এ সম্বন্ধে কিছুটা অনুমান করে নেওয়া যায়। শেটান একসময় মিশরে গেছিলেন, সেখানেই মিসেস লরিমারের সঙ্গে তার দেখা হয়। তিনি হয়ত মিসেস ক্র্যাডকের রোগের লক্ষণ সম্পর্কে কোন ডাক্তারের সন্দেহজনক মন্তব্য শুনেছিলেন। ক্র্যাডক পরিবারের গণ্ডগোলে ডাক্তার রবার্টসের জড়িয়ে পড়ার ব্যাপারটা আগে থেকে নিশ্চয়ই জানতেন মিঃ শেটান। তার ফলেই কিছু একটা ভেবে নিয়েছিলেন। ডাঃ রবার্টসও হয়ত অসর্তক কোন মুহূর্তে কোন কথা বলেছিলেন শেটানকে। মিঃ শেটানও লোকের গোপন কথা বের করতে ভালই পারতেন। এখন কথা হল শেটানের সন্দেহ ঠিক কিনা?
আমার মনে হয় তিনি নির্ভুল। ব্যাটেল বললেন, ডাঃ রবার্টস যে একজন খুনি কোন সন্দেহ নেই। মিঃ ক্র্যাডককে তিনিই খুন করেছেন। মিসেস ক্র্যাডককে খুন করাও তার পক্ষে অসম্ভব নয়। কিন্তু মিঃ শেটানকে কি তিনি খুন করেছেন? এখানেই প্রশ্ন থেকে যায়। মিঃ ক্র্যাডককে খুন করার ব্যাপারে তিনি তার চিকিৎসা বিষয়কেই কাজে লাগিয়েছেন। যার ফলে সকলের কাছে মৃত্যুটা স্বাভাবিক মনে হয়েছিল। আমার মতে যদি তিনি শেটানকে খুন করার কথা ভাবতেন তবে ছুরির বদলে অন্য কোন পদ্ধতির কথা ভাবতেন।
জানাকথাই তো-র ওপর সন্দেহ হয় প্রথমে, সে কখনই খুনি হতে পারে না। ডাক্তার রবার্টস খুনি নন। মিসেস অলিভার মন্তব্য করেন।
তাহলে সন্দেহের লিস্ট থেকে ডাক্তার রবার্টস বাদ পড়লেন, রইল বাকি–তিন! পোয়ারো মৃদু হাসলেন।
ব্যাটেল বলতে শুরু করলেন অন্যদের বিশেষ কিছু খবর নেই। ডেসপার্ডেরটা আগেই শুনলেন। বছর কুড়ি হল বিধবা হয়ে লন্ডনে বাস করছেন মিসেস লরিমার। শীতকালে মাঝে-মধ্যে রিভারিয়া, মিশর এ-সমস্ত দেশে বেড়াতে যান। কোন সন্দেহজনক মৃত্যুর সঙ্গে তার কোন সংযোগ খুঁজে পাওয়া যায়নি। তার মতো ভদ্রমহিলার যেভাবে জীবনযাপন করা উচিত, সেরকম সম্পূর্ণ স্বাভাবিক সম্মানীয় জীবন কাটাচ্ছেন তিনি। সকলেই তাকে শ্রদ্ধা করে। তার সম্বন্ধে লোকের ধারণাও খুব উঁচু। তার একটাই দোষ, যদি এটাকে দোষ বলা যায়–তবে বোকামি একদম সহ্য করতে পারেন না। আমি সবদিক দিয়ে খোঁজখবর করে দেখেছি কোন দোষ খুঁজে পাইনি। একটা কিছু নিশ্চয়ই আছে, অন্ততঃ মিঃ শোন তো তাই ভাবতেন।
ব্যাটেল হতাশভাবে মাথা নাড়লেন, তারপর সংক্ষেপে মিস মেরিডিথের সম্পর্কে সংগৃহীত তথ্য সকলকে জানিয়ে বললেন, আমি খোঁজ নিয়ে দেখেছি সব খবরগুলোই ঠিক। মেয়েটি মিথ্যে বলছে না।
তারপর সুইজারল্যান্ড, উইলিং ফোর্ড এখানেও তার সম্বন্ধে কোন সন্দেহজনক খবর পায়নি।
তাহলে মেরিডিথও বাদ যাচ্ছে লিস্ট থেকে? জিজ্ঞাসা করলেন পোয়ারো।
ঠিক এ কথা জোর দিয়ে বলতে পারব না। মাথা নাড়লেন ব্যাটেল। কোথাও একটা গোলমাল আছে। মিস মেরিডিথের চোখমুখে প্রায়ই একটা ভয়ের ছাপ ফুটে ওঠে যেটাকে শুধু মাত্র শেটানের জন্য একথা বলতে রাজি নই। চারিদিকেই তাই ভয়-চকিত নজর, সব সময়ই কোন একটা ভয়ে আতঙ্কিত হয়ে থাকে। নিশ্চয়ই কোন সাংঘাতিক ঘটনার সঙ্গে জড়িত। তবে ঐ যে বললাম মিস মেরিডিথ নির্দোষ জীবনযাপন করে।
মিসেস অলিভারের চোখের তারা চক চক করে উঠল। কিন্তু তবুও অ্যানা একসময় এমন একটা বাড়িতে এক ভদ্রমহিলা ওষুধের বদলে ভুল করে এক ধরণের বিষাক্ত মালিশ খেয়ে মারা যান।
তার কথা শেষ হতে না হতে উত্তেজনায় ব্যাটেল চেয়ার ছেড়ে লাফিয়ে উঠে দাঁড়ালেন, এ খবর আপনি কোথা থেকে পেলেন?
এ হল আমার একটু-আধটু গোয়েন্দাগিরির ফল। মিসেস অলিভারের খুবই গর্বিত জবাব- ওদের ওয়েলডন কুটিরে গিয়ে এক আষাঢ়ে গল্প ফাঁদলাম, ডাঃ রবার্টসকেই আমার সন্দেহ। যোডা মেয়েটা ভাল, কি ভাল ব্যবহার করল আমার সঙ্গে। কিন্তু অ্যানা মোটেই পছন্দ করল না আমাকে এবং সে কথা স্পষ্টভাবে জানিয়েও দিল, খুবই সন্দেহপ্রবণ মেয়ে, যদি গোপন কিছু না-ই থাকবে তবে অত সন্দেহ কিসের? আমি ওদের দুজনকেই লন্ডনে আমার ফ্ল্যাটে আসতে আমন্ত্রণ জানিয়েছিলাম–রোডাই এসেছিল। ওর মুখ থেকেই সব ঘটনা শুনলাম।
কখন, কোথায় এটা ঘটেছিল জানতে পেরেছেন?
ডেভনশায়ারে তিন বছর আগে
সুপারিনটেন্ডেন্ট ব্যাটেল ঝড়ের বেগে প্যাডের ওপর পেন্সিল দিয়ে নোট করতে লাগলেন।
চেয়ারে বসে এদিক ওদিক তাকিয়ে পরিস্থিতিটা বোঝার চেষ্টা করলেন মিসেস অলিভার–নিজের কেরামতিতে তিনি খুবই গর্বিত।
আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ, মিসেস অলিভার। সুপারিনটেন্ডেন্ট ব্যাটেল অভিনন্দন জানালেন। খুব দামী খবর যোগাড় করে আমাদের সকলের ওপর টেক্কা দিয়েছেন আপনি। মিসেস এল্ডনের বোন অবশ্য–
হঠাৎ পোয়ারো প্রশ্ন করলেন মিসেস এল্ডন, অর্থাৎ মিস মেরিডিথ প্রথমে যে বাড়িতে কাজ করত সে বাড়ির কর্ত্রী, তিনি কি খুব অগোছালো টাইপের মহিলা?
ব্যাটেল খুব অবাক হলেন। হ্যাঁ। তার বোনের সঙ্গে কথায় কথায় মিসেস এন্ডনের অগোছালো স্বভাবের কথা উঠেছিল বটে। কিন্তু আপনি কি করে এ খবর পেলেন?