হয়ত ঠিকই বলে গেলেন ভদ্রলোক, বিড় বিড় করলেন ব্যাটেল। মানুষের চরিত্র সম্পর্কে ওঁর গভীর জ্ঞান আছে। কিন্তু তবু প্রমাণ ছাড়া কাউকে নির্দোষ ভাবা যায় না। কর্নেল রেসের রেখে যাওয়া কাগজপত্র দেখতে দেখতে ব্যাটেল নিজেও কিছু কিছু নোট করে নিতে লাগলেন।
তাহলে সুপারিনটেন্ডেন্ট, মিসেস অলিভার তাকালেন ব্যাটেলের দিকে, কিভাবে এগোচ্ছেন কিছুই বললেন না?
ব্যাটেল মৃদু হাসলেন, এখনো সুনির্দিষ্ট কোন লক্ষ্যে পৌঁছতে পারিনি। সবই খাপছাড়া।
ওঃ! আপনি আসলে বলতে চাইছেন না, বুঝেছি। মিসেস অলিভার বলে ওঠেন।
না, না। মাথা নাড়লেন ব্যাটেল, আমি সব কিছুই বলতে চাই
তাহলে বলুন! মিসেস আলভার খুব উৎসাহ দেখান।
প্রথমেই যে কথাটা বলব, তা হল মিঃ শেটানকে কে খুন করেছে এ সম্বন্ধে বিন্দুবিসর্গও আমি জানতে পারিনি–মানে কোন সূত্রই পাওয়া যায়নি। চারজনের প্রতিই আমার সমান সন্দেহ রয়েছে। নজর রাখা হয়েছে সকলের ওপরই। যদিও আমার মনে হয় না এতে কোন ফল পাওয়া যাবে। আমার মনে হয় মঁসিয়ে পোয়ারো যা বলেছিলেন সেই একটা পথই আছে-অতীত। এদের চারজনেরই অতীত ঘেঁটে বার করতে হবে কে কি অপরাধ করেছিল। তার থেকেই আমরা হয়ত এই খুনটার হদিশ পেতে পারি। তবে এর মধ্যেও একটা কিন্তু রয়ে যাচ্ছে, সত্যিই কি কোন অপরাধ করেছিল এরা? মিঃ শেটান হয়ত নিছক ঠাট্টা করেছিলেন মঁসিয়ে পোয়ারোর সঙ্গে।
এদের অতীত সম্বন্ধে কোন খবরা খবর করেছেন?
হ্যাঁ, এদের মধ্যে ডাক্তার রবার্টসের ওপরেই আমার কিছুটা সন্দেহ হয়।
কি রকম? মিসেস অলিভার বলে ওঠেন।
মঁসিয়ে পোয়ারো জানেন আমি সব রকমের থিওরিই হাতে-কলমে প্রয়োগ করে দেখেছি। খবর নিয়ে জেনেছি রবার্টসের কোন নিকট আত্মীয়দের মধ্যে কেউই হঠাৎ মারা যাননি। তবে তার অতীত ঘেঁটে একটামাত্র ঘটনার সন্ধান পেয়েছি যা এই খুনের মামলার ব্যাপারে প্রয়োজনীয়। অবশ্য নাও হতে পারে। যাই হোক, আমাদের এখানকার একজন সার্জেন্ট মিসেস ক্যাডক নামে এক মহিলার বাড়ির কাজের লোকের কাছ থেকে ডাঃ রবার্টসের সম্বন্ধে এই তথ্য জোগাড় করেছে।
৩. একটা গোলমেলে ব্যাপার
ডাক্তার রবার্টস এক সময় তার এই মহিলা পেশেন্ট মিসেস ক্র্যাডকের সঙ্গে একটা গোলমেলে ব্যাপারে জড়িয়ে পড়েন। ডাঃ রবার্টসের ওপর প্রচণ্ড রেগে গিয়ে ঝগড়া বাধিয়ে তোলার চেষ্টা করতে থাকেন মিঃ ক্র্যাডক। তার বাড়িতেই মিসেস ক্র্যাডককে দেখতে এসেছিলেন ডাঃ রবার্টস। হঠাৎ ভদ্রমহিলার স্বামী রেগে গিয়ে ডাঃ রবার্টসকে শাসিয়ে দেন তার নামে মেডিক্যাল কাউন্সিলে রিপোর্ট করবেন বলে। ডাঃ রবার্টস তখন ভদ্রলোককে ডেকে নিয়ে শান্ত করে বলেন যে ব্যাপারটা সম্পূর্ণ ভুল। মিঃ ক্র্যাডক অযথাই ডাঃ রবার্টসকে সন্দেহ করছেন। তিনি আর কখনই মিঃ ক্র্যাডকের বাড়িতে আসবেন না। এরপর শান্ত হন এবং ডাঃ রবার্টস বাথরুমে গিয়ে সাবান দিয়ে হাত ধুয়ে বিদায় নিয়ে চলে যান। অফিসে চলে যান মিঃ ক্র্যাডক।
তারপর? মিসেস অলিভার-এর কৌতূহলী প্রশ্ন ভেসে এল।
মিঃ ক্র্যাডক এর কিছুদিনের মধ্যেই অ্যানথ্রাক্স রোগে মারা যান।
অ্যানথ্রাক্স? সে তত গবাদি পশুদেরই হয়ে থাকে?
হ্যাঁ। আপনার হয়ত মনে আছে সস্তা দামের এক ধরণের সেভিং ব্রাশ নিয়ে একসময়ে বাজারে খুব গণ্ডোগোল শুরু হয়েছিল–অধিকাংশই নাকি দূষিত ছিল। মিঃ ক্র্যাডকের সেভিং-ব্রাশটাও দূষিত ছিল বলে পরে প্রমাণিত হয়।
ডাঃ রবার্টস কি তার চিকিৎসা করেছিলেন?
না না। তিনি খুবই ধুরন্ধর। অবশ্য হয়ত মিঃ ক্র্যাডকও চাইতেন না। একটাই মাত্র সন্দেহজনক সূত্র আমার নজরে এসেছে–খোঁজ নিয়ে জেনেছি ডাঃ রবার্টসের একজন পেশেন্ট সে সময় অ্যানথ্রাক্স রোগে ভুগছিলেন।
আপনি কি মনে করেন ডাঃ রবার্টস ভদ্রলোকের সেভিং-ব্রাশটা দূষিত করে রাখেন?
হ্যাঁ। আমার তাই মনে হয়। যদিও সবটাই অনুমান তবুও একেবারে অসম্ভব নয়।
মিসেস ক্র্যাডকের কি হল?
তিনিও কিছুদিন বাদে হঠাৎ পাততাড়ি গুটিয়ে শীতকালে মিশরে চলে গেলেন, এক ধরনের সাংঘাতিক সংক্রামক রোগে তিনি ওখানেই মরা যান–তার শরীরে সমস্ত রক্ত দূষিত হয়ে গিয়েছিল। এই অসুখটার কি একটা লম্বা চওড়া নাম আছে। মিশরেই নাকি এই অসুখ হয় বেশি।
এর মধ্যে ডাক্তারের কোন হাত নেই বলতে চান?
সুপারিনটেন্ডেন্ট ব্যাটেল মাথা নাড়লেন, এ বিষয়ে আমার এক জীবাণু বিশেষজ্ঞ বন্ধুর সঙ্গে কথা হয়েছে। সে আবার কোন স্পষ্ট কথা বলতেই রাজি নয়–ভাসা ভাসা মতামত দেয়। তবে একটা কথা জানতে পেরেছি এবং সেটা বেশ গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপার। আমার সেই বন্ধুর মতে–ডাক্তার রবার্টসের পক্ষে মিসেস ক্র্যাডকের ইংল্যান্ড ছেড়ে চলে যাওয়ার আগে তার শরীরে জীবাণু ঢুকিয়ে দেওয়া সম্ভব। কারণ জীবাণু শরীরে ঢোকার বেশ কিছুদিন বাদে এই অসুখের লক্ষণগুলো প্রকাশ পেতে থাকে।
মিসেস ক্র্যাডক কি মিশরে যাবার আগে টাইফয়েডের প্রতিষেধক কোন ইঞ্জেকশন নিয়েছিলেন?
হ্যাঁ।
ঠিক তাই মঁসিয়ে পোয়ারো। মিশরে যাবার আগে মিসেস ক্র্যাডক ডাঃ রবার্টসের কাছে দুটো ইঞ্জেকশন নিতে গিয়েছিলেন, কিন্তু আমরা ঘুরে ফিরে সেই একই সত্যে ফিরে আসছি। প্রমাণ কোথায়? ইঞ্জেকশন দুটো রোগের প্রতিষেধকও হতে পারে অথবা অন্যকিছুও। আমরা নিশ্চিত হতে পারছি কোথায়? সবটাই অনুমান।