বোকা মেয়ে, কিসব উদ্ভট ধারণা করে বসে আছিস?
সত্যিই কি কিছু বলিসনি? এই খুনের ব্যাপারে কথা হল না?
না না। বরং তার উপন্যাসের খুন-খারাপি নিয়ে, গল্পের প্লট এসব নিয়ে কথা হল। কেমনভাবে প্লট তৈরি করেন বললেন। জানিস অ্যানা আমাকে ব্ল্যাক কফি আর টোস্ট খাওয়ালেন মিসেস অলিভার। গর্বের সুরে বলে রোলা, তারপর অল্প থেমে কুণ্ঠিতভাবে জিজ্ঞাসা করে, তুই চা খেয়েছিস?
হ্যাঁ। মিসেস লরিমার-এর সঙ্গে হঠাৎ দেখা হল তিনি-ই খাওয়ালেন।
মিসেস লরিমার? ও! বোধহয় সেই খুনের ঘটনার দিন উপস্থিত ছিলেন তিনি, তাই না? ভদ্রমহিলা কেমন রে?
আগের বার যেরকম দেখেছিলাম, একটু যেন পরিবর্তন হয়েছে। কেমন যেন ব্যাপার মনে হল।
তোর কি মনে হয় খুনটা ভদ্রমহিলাই করেছেন? অ্যানা তীক্ষ্ণ গলায় বলে, রোডা, বহুবার বলেছি এসব আলোচনা আমি পছন্দ করি না।
আচ্ছা, আচ্ছা, বেশ। তোর সেই সলিসিটার কেমন লোক? খুব কাঠখোট্টা? আইনের অন্ধিসন্ধি মুখস্থ?
না, ভদ্রলোক বেশ ভালোই। চল, চল। বাড়ি ফিরব, ঐ দেখ প্যাডিংটন যাবার বাস ছাড়ছে।
আসুন মঁসিয়ে পোয়ারো, মিসেস অলিভারও এসে পড়েছেন দেখছি। আসুন আসুন। সকলের সঙ্গে করমর্দন করেন ব্যাটেল। তিনিই মঁসিয়ে পোয়ারো আর মিসেস অলিভারকে ডেকে পাঠিয়েছেন স্কটল্যান্ড ইয়ার্ডে।
আমার মনে হয় এখন আমাদের মধ্যে একটা আলোচনা হওয়া দরকার। কে কতদূর এগোলাম, কি কি তথ্য জানা গেল? এ জন্যই আজ আপনাদের ডেকেছি। কর্নেল রেসও এসে পড়বেন এক্ষুনি। ব্যাটেলের কথা শেষ হবার প্রায় সাথে সাথেই কর্নেল রেস ঘরে ঢুকলেন।
আমার বোধহয় দেরি হয়ে গেল। মিসেস অলিভার কেমন আছেন? মঁসিয়ে পোয়ারো। আমার জন্য সকলেই বোধহয় অপেক্ষা করছেন। খুবই দুঃখিত। আসলে আমাকে কয়েকটা দরকারি কাজ সেরে নিতে হল, কালকেই একটা পাটির সঙ্গে বেলুচিস্তান রওনা হব।
আমাদের এ ব্যাপারটায় কোন খোঁজ খবর আনতে পারলেন? প্রশ্ন করেন ব্যাটেল।
হ্যাঁ মেজর ডেসপার্ডের বিষয়ে কিছু খবরাখবর জোগাড় করেছি। কতগুলো টাইপ করা কাগজ ব্যাটেলের দিকে এগিয়ে দিলেন কর্নেল রেস। কখন, কোথায়, কোন দেশে গিয়েছিলেন সবকিছু, তারিখ, নাম, খুঁটিনাটি লেখা আছে। মনেহয় দরকার নেই এগুলোর। মেজর ডেসপার্ডের নামে কোথাও কোন অভিযোগ, নিল শাইনি। শক্ত পোক্ত বলিস্ট পুরুষ। সমাজের সব নিয়ম কানুন মেনে চলেছেন। যখন যেখানে গেছেন প্রিয় হয়ে উঠেছেন, কেউই নিন্দা করেনি মেজর ডেসপার্ডের। কথা বলেন কম, কিন্তু ঠাণ্ডা মাথায় বিচার-বুদ্ধি সম্পন্ন লোক। তার হাতের টিপ নিখুঁত। বিপদে বুদ্ধি হারান না। দূরদৃষ্টি আছে এবং নির্ভরযোগ্য পাকা ভদ্রলোক।
কোথাও কোন অ্যাক্সিডেন্ট বা আকস্মিক মৃত্যুর সঙ্গে তার যোগাযোগ ছিল? ব্যাটেলের কণ্ঠস্বর ভেসে আসে।
সে ব্যাপারেও খোঁজ নিয়েছি। একবার তার একজন অনুচরকে সিংহের থাবা থেকে বাঁচিয়েছিলেন নিজের জীবন বিপন্ন করে!
মৃদু হাসলেন কর্নেল রেস। তবে হ্যাঁ, আপনার পছন্দমত একটা খবর আমার সংগ্রহে আছে। একবার বিখ্যাত বটানিস্ট ল্যাক্সমোর আর তাঁর স্ত্রীর সঙ্গে দক্ষিণ আমেরিকার গভীর বনে শিখার করতে গেছিলেন ভদ্রলোক। অধ্যাপক এক ধরনের কালাজ্বরে আক্রান্ত হয়ে মারা যান। আমাজন নদীর তীরে, সেই গভীর জঙ্গলের মধ্যেই তাকে কবর দেওয়া হয়।
কালাজ্বর?
হ্যাঁ, তবে এটা গুজবও শুনেছি। ঐ অভিযানে দুএকজন আদিবাসীও কাজের লোক হিসাবে গেছিল। তাদের একজনকে চুরির অভিযোগে বরখাস্ত করা হয়। পরে সে-ই ব্যাপারটা রটিয়ে দেয়। তার বক্তব্য–অধ্যাপক কালাজ্বরে মারা যাননি, তাকে গুলি করে মারা হয়েছিল। অবশ্য মেজর ডেসপার্ড পরিচিত ব্যক্তি, সকলের শ্রদ্ধার পাত্র। তাই ঐ গুজবে কেউ কান দেয়নি।
কতদিন আগেকার ব্যাপার?
কর্নেল রেস মাথা নাড়লেন। আমি কিন্তু মেজর ডেসপার্ডকে খুনি মনে করিনি। এসব খুন-টুন তার দ্বারা সম্ভব নয়।
কিন্তু ভদ্রলোক যদি একবারও ভাবেন, কারো বেঁচে থাকা যুক্তিসঙ্গত নয়, মৃত্যুই তার উপযুক্ত পাওনা তাহলে তাকে সেই যোগ্য শাস্তি দিতে দ্বিধাবোধ করবেন না মেজর ডেসপার্ড।
হতে পারে। তবে ঐ ধরনের কিছু ঘটলে তার সিদ্ধান্তের পেছনে নিশ্চয়ই যুক্তির অভাব হবে না।
ব্যাটেল অধৈর্যভাবে মাথা নাড়লেন, কিন্তু তা বলে সভ্য সমাজে কেউ নিজের হাতে আইন তুলে নিতে পারে না।
তবুও এ-রকমটাই ঘটে চলেছে। চলবেও। সে যাক, আমি বেশিক্ষণ এখানে থাকতে পারব না। বেশ কয়েকটা কাজ বাকি আছে। তবে এই খুনের ব্যাপারটায় শেষ অবধি কি হয় এটা জানতে আমি খুবই আগ্রহী। কোন নিষ্পত্তি না হলেও অবাক হব না। কারণ খুনি কে জানতে পারলেও কোর্টে প্রমাণ করা খুব কঠিন হবে। আমি আমার কর্তব্য করেছি। যদিও আমার মনে হয় ডেসপার্ড খুনি নন। মিঃ শেটান হয়ত কোন ভাবে ল্যাক্সমোরের মারা যাবার ব্যাপারে গুজবটা শোনেন। ডেসপার্ড কিছুতেই খুনি নন। আর মানুষ চিনতে আমার খুব একটা ভুল হয় না।
ব্যাটেল প্রশ্ন করেন, মিসেস ল্যাক্সমোর কিরকম মহিলা?
তিনি এখন লন্ডনেই থাকেন। আপনারা নিজেরাই তার সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারবেন। এই কাগজে তার ঠিকানাও দেওয়া আছে। তবুও আবার বলছি মেজর ডেসপার্ড আপনাদের লক্ষ্যবস্তু নন।
কর্নেল রেস সকলের কাছ থেকে বিদায় নিয়ে চলে গেলেন।