না না, ব্যাপারটা সেরকম নয়। ভুল হলে আমি অবশ্যই শোধরাবার চেষ্টা করি।
আপনার ভুল বোধ হয় খুব কম হয়!
মানুষ মাত্রই তো ভুল করে মঁসিয়ে পোয়ারো। আপনার কি কোনদিনই ভুল হয়নি?
শেষ ভুলটা হয়েছিল আঠাশ বছর আগে। পোয়ারোর শান্ত কণ্ঠস্বর ভেসে আসে, তারপর দু একবার ভুলের সম্ভাবনা দেখা দিলেও কোন ভুল হয়নি।
দারুণ ব্যাপার তো। মেজর ডেসপার্ড উৎসাহের সুরে বলেন, মিঃ শেটানের খুনের তদন্ত কি আপনি করছেন? অবশ্য যা শুনেছি আপনাকে বোধহয় সরকারিভাবে কোন দায়িত্ব দেওয়া হয়নি।
না, সরকারিভাবে আমাকে তদন্তের ভার দেওয়া হয়নি। তবুও এ-ব্যাপারে কেসটা আমি নিজে থেকেই নিয়েছি। আমারই নাকের ডগায় বসে খুন করে যাবে এতটা স্পর্ধা সহ্য করা যায় না। খুনি শুধু আমাকেই নয় স্কটল্যান্ডে ইয়ার্ডকেও ব্যঙ্গ করেছে। আসলে সুপারিনটেন্ডেন্ট ব্যাটেলকে যতটা বোকা মনে হয় তা তিনি নন, খুবই চালাক চতুর। ব্যাপারটা নিয়ে তিনিও উঠে পড়ে লেগেছেন–
হ্যাঁ আমিও জানি। পেছনের সীটে ঐ কাঠখোট্টা চেহারার লোকটাকে দেখুন।
পোয়ারো পেছন ফিরে তাকালেন, কই কেউ নেই তো!
তাহলে নিশ্চয়ই বাসের মধ্যে কোথাও না কোথাও আছে। আমার পেছনে সবসময় লেগে আছে, ছদ্মবেশ ধরতে ওস্তাদ। তবে আমার কাছে ফাঁকি দেওয়া অত সোজা নয়। কালো নিগ্রো হলেও, আমি একবার যে মুখ দেখি ভুলি না সহজে।
বাঃ ঠিক আপনার মত লোককেই দরকার আমার। পোয়ারো খুশি হয়ে বলেন, যার নজর তীক্ষ্ণ এবং স্মৃতিশক্তিও প্রখর। আপনি হয়ত আমাকে সাহায্য করতে পারবেন। ডাঃ রবার্টস, মিসেস লরিমার কেউই আমার প্রশ্নের সঠিক জবাব দিতে পারলেন না
আমি আপনাকে কিভাবে সাহায্য করতে পারি? ব্যাপারটা ঠিক বুঝলাম না। মেজর ডেসপার্ড অবাক হলেন।
সে সন্ধ্যায় মিঃ শেটানের খুন হবার আগে যে ঘরে বসে আপনারা তাস খেলছিলেন, সেই ঘরের জিনিসপত্রের একটা সঠিক বিবরণ দিন আমাকে। মানে কোন কোন জিনিস আপনার নজরে পড়েছিল–
আমি বোধহয় সেরকম কিছুই বলতে পারব না। যতদূর মনে পড়ছে ঘরটা জিনিসপত্রে ঠাসা ছিল–অনেকগুলো আলনা, সিল্কের জামাকাপড়, আরো কত কি–
ঠিক কি কি জিনিস ছিল?
ডেসপার্ড হতাশভাবে মাথা নাড়লেন, বিশেষ লক্ষ্য করিনি। কয়েকটা ভাল জাতের কম্বল–পারস্য বা ঐ সমস্ত দেশ থেকে আনা নানা রকম কতগুলো মূর্তি, কয়েকটা ছবি দেওয়ালে টাঙানো ছিল, দক্ষিণ আফ্রিকার একটা বড় সাইজের কৃষ্ণসার হরিণের মাথা-ওঃ ওটা বোধহয় পাশের ঘরে টাঙানো দেখেছিলাম।
মিঃ শেটানের শিকারের নেশা ছিল বলে মনে হয় না।
কক্ষনো না। ঘরে বসে তাস দাবা খেলা ছাড়া আর তার কোন কাজ ছিল না। তবে ঘরে আর কি কি ছিল মনে পড়ছে না, টেবিলের ওপর পালিশ করা একটা কাঠের মূর্তি দেখেছিলাম এটা বেশ মনে আছে। আর তো মনে নেই।
পোয়ারো একটু গম্ভীর হলেন, যাকগে, মনে না পড়লে আর কি করা যাবে। মিসেস লরিমারের কিন্তু আশ্চর্য স্মৃতিশক্তি, সেদিনের খেলার প্রত্যেকটা তাসের ডাক কখন কি, রকম হয়েছিল একেবারে নিখুঁতভাবে বলেছিলেন–আপনার বোধহয় তাসের কথা কিছুই মনে নেই মেজর ডেসপার্ড?
না। স্বীকার করলেন ডেসপার্ড। দেখুন, বয়স্কা মহিলারা যাদের খালি ক্লাবে বা পার্টিতে তাস খেলে বেড়ানো অভ্যেস তাদের তো তাসের সমস্ত কথা মনে থাকবারই কথা। তাসই যাদের ধ্যান জ্ঞান। সেদিনের খেলায় দু একটা তাসের কথা আমার মনে পড়ছে। একবার রবার্টসের ভাওতায় ঘাবড়ে গিয়ে পাঁচটা ডায়মন্ডের গেমটা ডাকতে পারিনি। ভদ্রলোক অবশ্য গোটা দু-তিন শট দিয়েছিলেন কিন্তু আমরা ডবল দিইনি বলে লোকসানই হল। আর একটা নো-ট্রাম্প গেমে আমি খেলতে পারলাম না। দুটো শর্ট দিলাম।
আপনি বোধহয় ব্রীজের থেকে স্পেকার খেলতেই বেশি পছন্দ করেন? পোয়ারো তাকালেন মেজর ডেসপার্ডের দিকে।
ঠিকই ধরেছেন, মেজর ডেসপার্ড মৃদু হাসলেন। পোয়ারোর গম্ভীর কণ্ঠস্বর ভেসে আসে, মিঃ শেটানের তাসে খুব একটা উৎসাহ ছিল বলে মনে হয় না।
কিন্তু অন্যকে ভয় দেখানোর খেলায় তার বেশ উৎসাহ ছিল–বিশেষতঃ মেয়েদের ভয় দেখিয়ে খুব আনন্দ পেতেন।
একথা কি আপনি আগেই জানতেন, না এখন মনে হলো। মেজর ডেসপার্ড একটু বিব্রত হয়ে পড়লেও খুব দ্রুত নিজেকে সামলে নিলেন। আমার কথাটার অর্থ বিশদভাবে জানতে চাইছেন তো? এ হল আমার ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা–খুব গোপন সূত্র থেকে জানতে পেরেছি।
ভদ্রলোককে কি ব্ল্যাকমেলার বলে মনে হয় আপনার?
ডেসপার্ড মাথা নাড়লেন, ব্যাপারটা আপনি ঠিক বুঝতে পারছেন না। একভাবে ব্ল্যাকমেলার তো বলা যায়ই–তবে এর পিছনে টাকার চাহিদা ছিল না। শেটান অন্যের গোপন খবর জোগাড় করে মানুষকে ভয় দেখাতে ভালবাসতেন। বলা যেতে পারে নিছক নোংরা আনন্দেই এসব করে বেড়াতেন তিনি। আর মেয়েদের কাছ থেকে গোপন খবর বের করা বেশ সোজা। একবার যদি তাদের মাথায় ঢুকিয়ে দিতে পারেন যে আপনি ব্যাপারটা জানেন-ব্যাস, বাকিটা তারা নিজেরাই জানিয়ে দেবে আপনাকে।
মিস মেরিডিথকেও কি তিনি এরকম ভয় দেখিয়েছিলেন? শান্ত কণ্ঠে পোয়ারো প্রশ্ন। করলেন, তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছেন মেজর ডেসপার্ডের দিকে।
মিস মেরিডিথ! অবাক হলেন ডেসপার্ড–তার কথা তো আমি ভাবছি না। আর শেটানকেই বা তিনি ভয় পেতে যাবেন কেন?