কি করতেন সেখানে?
অ্যানার হয়ে রোডাই উত্তর দিল বাগানের কাজকর্ম দেখাশোনা। যদিও অ্যানার কাজ ছিল কাকির সেবাশুশ্রূষা করা। কিন্তু আমার কাকির আবার বাগানের সখ, অ্যানারও সেই কাজে তাকে সাহায্য করতেই সময় কেটে যেত।
সে চাকরী ছেড়ে দিলেন কেন?
মিসেস ডিঘারিংয়ের স্বাস্থ্য ক্রমশ এত খারাপ হয়ে পড়ল যে একজন পাস করা নার্সের দরকার দেখা দিল।
তার ক্যান্সার হয়েছে। রোডা বলল, শেষ বয়সটা খুব যন্ত্রণায় ভুগছেন। আজকাল কষ্ট বেশি হলে মরফিয়া নেন।
আমার সঙ্গে মিসেস ডিঘারিং বরাবরই ভাল ব্যবহার করেছেন। এত কষ্ট পাচ্ছেন, আমার খুবই খারাপ লাগছে। অ্যানার কথায় বেদনার সুর।
আমার সঙ্গে অ্যানার স্কুলজীবন থেকে বন্ধুত্ব। বোড়া জানায়, অ্যানা যখন অন্য কাজ খুঁজতে লাগল, তখন আমিও গ্রামাঞ্চলে একটা বাড়ির খোঁজ করছিলাম। ইচ্ছে ছিল কাউকে সঙ্গী হিসাবে নেব। মায়ের মৃত্যুর পরে বাবা আবার বিয়ে করলেন। আমার ভাল লাগল না, চলে এলাম। অ্যানাকে আমার সঙ্গে থাকতে বলাতে রাজি হল। তারপর থেকে এখানেই আছি।
আচ্ছা। মিস মেরিডিথ, মিসেস এন্ডনের কাছে দু বছর ছিলেন বললেন, তার বর্তমান ঠিকানা?
ভদ্রমহিলা এখন প্যালেস্টাইনে, তার স্বামী সরকারি কাজে ওখানে গেছেন। কি কারণে অতশত বলতে পারব না।
সে সব আমরা জেনে নেব-মিসেস ডিঘারিংয়ের ওখানে কবছর ছিলেন?
ঠিক তিন বছর। চটপট জবাব দেয় অ্যানা, তার ঠিকানা, মার্শভেন হেস্বারী ডেভবে।
হু। তাহলে এখন আপনার বয়স পঁচিশ। আর একটা প্রশ্ন, কেল্টেনহ্যাম শহরের দুজন সম্ভ্রান্ত ভদ্রলোকের নাম লিখে দিন, যাঁরা আপনাকে এবং আপনার বাবাকে ভালভাবে চিনতেন।
অ্যানা দুজনের নাম ঠিকানা লিখে দিল।
মিঃ শেটানের সঙ্গে আপনার কোথায় পরিচয় হল?
রোডা আর আমি সুইজারল্যান্ডের একটা হোটেলে উঠেছিলাম। সেখানেই তার সাথে আলাপ। হোটেলের অন্যান্য বোর্ডাররা একটা ফ্যান্সি ড্রেসের আয়োজন করেছিল। শোন পেয়েছিলেন প্রথম পুরস্কার, শয়তান সেজে।
হোটেলে আর টুরিস্ট ছিল যারা, তাদের নাম ঠিকানা মনে আছে?
আপনি তো খুব সন্দেহবাতিকগ্রস্থ লোক! রোডা বলে ওঠে, এতক্ষণ ধরে কি আমরা আগাগোড়া মিথ্যে বলছি?
ব্যাটেল চোখ মিট মিট করলেন।বুঝতেই পারছেন, কত বড় সাংঘাতিক একটা খুনের তদন্ত চালাচ্ছি, সবদিক দেখেশুনে তো এগোতে হবে।
তবুও আপনি একটা সন্দেহপ্রবণ লোক! মৃত্যু হেসে রোডা কাগজে কতগুলো নাম ঠিকানা লিখে দিল।
ব্যাটেল উঠে দাঁড়ালেন, অসংখ্য ধন্যবাদ মিস মেরিডিথ। আপনার বন্ধুও যখন বলছেন আপনি নির্দোষ জীবন কাটাচ্ছেন তখন ভয় কিসের? কিন্তু একটা ব্যাপার বুঝতে পারছি না। শেটানের অদ্ভুত ব্যবহারের কারণটা কি? আপনাকে কোনদিন কোন বিষয়ে কিছু বলেছিলেন?
না না। অ্যানার সঙ্গে কোন বিষয়ে বিশেষ কিছু কথাবার্তা হয়নি। বরাবর খুব ভদ্র ব্যবহার করতেন। অ্যানা চটপট জবাব দিল।
আচ্ছা। এবার আমি বিদায় নেব। শুভ রাত্রি। মিস মেরিডিথ কফির জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ।
ব্যাটেল চলে যাবার পর গেট বন্ধ করে ড্রয়িংরুমে ফিরে এলো রোডা।দেখলি তো অ্যানা, তুই খালি ভয় পাচ্ছিলি। ভদ্রলোক তো বেশ ভালই, মোটেই সাংঘাতিক কিছু নয়।
হ্যাঁ, সেরকমই তো দেখলাম। আমি ভেবেছিলাম হয়ত জেরায় জেরায় নাজেহাল করে দেবে।
রোডা অল্প ইতস্তত করে বলল, অ্যানা, তুই যে ক্রফটওয়েতে থাকার কথা কিছু বললি না? ভুলে গিয়েছিলি?।
না। অ্যানার শান্ত কণ্ঠস্বর ভেসে এল, মাত্র কদিন সেখানে ছিলাম, আমার মনে হয় কথাটা খুব একটা জরুরী নয়। সেখানকার কোন লোকও আমায় চেনে না। তবে তোর যদি দরকারি মনে হয় আমি ব্যাটেলকে চিঠি দিয়ে জানিয়ে দিতে পারি। যদিও মনে হয় না খুব একটা ক্ষতি বৃদ্ধি হবে, ঘাঁটাঘাঁটির প্রয়োজন কি?।
না দরকার আর কি? মনে হলো তাই বললাম। রোডা উঠে দাঁড়াল।
আরে মঁসিয়ে পোয়ারো! পোয়ারোকে দেখে অবাক হলেন মেজর ডেসপার্ড, আপনি এই বাসে? কি আশ্চর্য্য!
পোয়ারো মনে মনে হাসলেন। এইভাবে দেখা হয়ে যাওয়াটায় যে আশ্চর্যের কিছুই নেই তা তিনি ছাড়া আর কে জানে? ডেসপার্ড কখন হোটেল থেকে বেরোবেন তিনি সময়টা আন্দাজ করেছিলেন। সেই অনুযায়ী অপেক্ষাও করেছিলেন রাস্তাতে। দূর থেকে ভদ্রলোককে এগিয়ে আসতে দেখে পোয়ারো এগিয়ে গিয়ে পরের বাসস্টপেজে দাঁড়ান। ডেসপার্ডের মত ঝুঁকি নিয়ে চলন্ত বাসে ওঠেননি তিনি। বাস থামলে ধীরে সুস্থে উঠেছেন।
মিঃ শেটানের ব্যাপারটায় আপনারা কিছু করে উঠতে পারলেন মঁসিয়ে পোয়ারো?
আমি শুধু চিন্তা করি। এই বয়সে এদিক ওদিক ঘুরে বেড়িয়ে তদন্ত করা আমার সহ্য হয় না।
আরে সেটাই তো সবচেয়ে ভাল ব্যাপার। লোকে অনর্থক দৌড়োদৌড়ি করে। কোন কাজে এগোবার আগে যদি শান্ত হয়ে ব্যাপারটা ভাল ভাবে চিন্তা করে নেয় তবে পণ্ডশ্রম-এর ঝামেলা যাবে না।
জীবন সম্পর্কে আপনার দৃষ্টিভঙ্গি কি তাই মেজর ডেসপার্ড?
প্রায় ক্ষেত্রেই তাই। সহজ মনে উত্তর দিলেন ডেসপার্ড। আমিও আগে জিনিসটা তলিয়ে বুঝে নেওয়ার চেষ্টা করি, কি ভাবে এগোব সেটা ঠাণ্ডা মাথায় ভেবে নিই-তারপর সেইভাবে কাজ।
পোয়ারোর গম্ভীর কণ্ঠস্বর ভেসে এল, এরপর কি আপনার সিদ্ধান্তের নড়চড় হয় না? কোন বাধাই আপনার পথ আটকে দাঁড়ায় না।