আপনি? কক্ষনো না। আমরা বিশ্বাস করি না। রোডা মাথা বাঁকিয়ে বলে।
প্রমাণ না পেয়ে সবকিছুকেই সত্যি বলে ভেবে নেবেন না মিস দোবাস। যাক এবার আমি বিদায় নেব। চেয়ার ছেড়ে উঠে দাঁড়ালেন মেজর ডেসপার্ড।
সুপারিনটেন্ডেন্ট ব্যাটেল কি এদিকেই আসবেন? অ্যানা একটু ইতস্ততঃ করে জিজ্ঞাসা করে। রোডাও হঠাৎ প্রশ্ন করে, ব্যাটেল কিরকম লোক বলুন তো?
খুবই বিচক্ষণ, দক্ষ পুলিশ সুপারিনটেন্ডেন্ট।
কিন্তু অ্যানা যে বলল, বোকা বোকা গোঁয়ার গোবিন্দ টাইপ।
দেখে ওরকম মনে হয়, কিন্তু ওটা ওর মুখোস। আসলে খুবই চালাক চতুর লোক। যাইহোক মিস মেরিডিথ, যাবার আগে আপনাকে একটা কথা বলে যাই। আমাকে ভুল বুঝবেন না। আমি বলতে চাই, হয়ত মিঃ শেটানের সঙ্গে আপনার কোন যোগাযোগ থাকতেও পারে। কিন্তু আপনি হয়ত চান না তা সকলের কাছে প্রকাশ হয়ে পড়ুক-
সেই জানোয়ারটার সাথে আমার কোন সম্পর্কই ছিল না। তাকে আমি চিনতামই না। মিস মেরিডিথ চেঁচিয়ে ওঠে।
মাপ করবেন। আমি আপনাকে আঘাত করতে চাই না। আমার কথা হল যদি সেরকম কোন ব্যাপার থাকে আপনি আপনার সলিসিটারের উপস্থিতি ছাড়া সুপারিনটেন্ডেন্টের কোন কথার উত্তর দিতে বাধ্য নন, এটা আপনার আইন সঙ্গত অধিকার।
সুপারিনটেন্ডেন্ট ব্যাটেলের সমস্ত প্রশ্নের উত্তরই আমি দেবো। গোপন করার মত কিছুই নেই–কিছুই নেই– মৃদুস্বরে বিড়বিড় করে অ্যানা মেরিডিথ।
মেজর ডেসপার্ড বিদায় নিয়ে চলে গেলেন।
সুপারিনটেন্ডেন্ট ব্যাটেল যখন ওয়েভেন কুটীরে এসে পৌঁছলেন তখন বেলা গড়িয়ে এসেছে। এখানে আসবার পথে তিনি মিস মেরিডিথের সম্পর্কে বিভিন্ন লোকের কাছে খোঁজখবর নেন। সব থেকে বেশি খবরাখবর দেন, ওয়েভেন কুটীরের ঠিকে ঝি, মিসেস অস্টওয়েল। ব্যাটেল অবশ্য কাউকেই প্রকৃত পরিচয় দেননি। বিভিন্ন জায়গায় বিভিন্ন রকম পরিচয় দিয়েছেন–কোথাও কনস্ট্রাকসনের লোক, কাউকে ভ্রমণকারী হিসাবে, নিজের পরিচয় দিয়েছেন। খবর যা জোগাড় করেছেন বলতে গেলে বেশ ভালই।
ওয়েভেন কুটীরে দুই বন্ধু বাস করে–মিস মেরিডিথ ও মিস দোবাস। বছর দুয়েক হল ওরা ঐ কুটীরের বাসিন্দা। মিঃ পিকারগিলের কাছ থেকে ওরা ওয়েভেন কুটীর কিনে নেন। প্রতিবেশীরা সকলেই বেশ পছন্দ করেন ওদের। তবে পুরোনো আমলের কয়েকজন বৃদ্ধ এভাবে দুই অবিবাহিত তরুণীর একা একা থাকাটা বিশেষ পছন্দ করেন না, অবশ্য মেয়ে দুটি খুবই ভদ্র এবং সভ্য। প্রতিবেশীদের মতে মিস দোবাস ও মিস মেরিডিথ লণ্ডনের মেয়ে। কিন্তু মিসেস অস্টওয়েলের মতে এরা দুজনে ডেভনশায়ারের অধিবাসী ছিল। মিস দোবাসের বেশ ভাল টাকাকড়ি আছে, ওয়েভেন কুটীরের মালিক সে-ই, এছাড়া অধিকাংশ খরচ-পত্তর মিস দোবাসই চালায়।
সুপারিনটেন্ডেন্ট ব্যাটেল দু-একটা গুরুত্বপূর্ণ কথা ডায়েরীতে লিখে রাখলেন। কিছুক্ষণ বাদে ওয়েভেন কুটীরে ডোরবেল টিপলেন তিনি। দরজা খুলল এক দীর্ঘাকৃতি সুন্দরী, বলাইবাহুল্য ইনি হলেন মিস রোডা দোবাস। ব্যাটেল নিজের পরিচয় দিতে বসবার ঘরে তাকে নিয়ে এল রোডা। অ্যানা একটা বেতের চেয়ারে বসে ছিল। হাতে তার উষ্ণ কফির কাপ। ব্যাটেল ঢুকতেই অ্যানা এগিয়ে এসে করমর্দন করল।
একটু অসময় এসে পড়লাম মিস মেরিডিথ, ব্যাটেল মৃদু হাসলেন, ইচ্ছে করেই দেরি করলাম, আগে এলে হয়ত আপনাকে পেতাম না।
রোড, সুপারিনটেন্ডেন্ট ব্যাটেলের জন্য এক কাপ কফি নিয়ে আয়। অ্যানা তাকাল রোডার দিকে।
ব্যাটেল চেয়ার টেনে বসতে বসতে বললেন, আপনার আথিতেয়তার জন্য, ধন্যবাদ মিস মেরিডিথ।
রোডা এক কাপ কফি নিয়ে এসে ব্যাটেলের সামনে রাখল। অ্যানা বেশ সহজভাবেই বসে আছে! রোডা চেয়ারে বসে ব্যাটেলের দিকে তাকিয়ে আছেন–দু চোখে অপার কৌতূহল।
অ্যানা প্রশ্ন করল, আপনাকে আমরা আরো আগেই দেখা পাবার আশা করেছিলাম, সে যাক, তদন্ত কতদূর এগোল, কিছু পেয়েছেন?
সেরকম কিছু না, কাজ চলছে। ডাঃ রবার্টসের চেম্বারে গিয়ে তার কাগজপত্র পরীক্ষা করে দেখেছি। কথাবার্তা হয়েছে মিসেস লরিমার-এর সঙ্গে। এখন শুধু বাকি মেজর ডেসপার্ড আর আপনি। অ্যানার ঠোঁটে মৃদু হাসি। বেশ তো প্রশ্ন করুন আমাকে।
কয়েকটা কথা জানবার আছে, মানে–সহজ ভাষায় আপনার আত্মপরিচয়।
নিজেকে তো ভদ্র সভ্য বলেই জানি। আমার জন্ম হয়েছিল-গরিব কিন্তু ভদ্র পরিবারে। ঠাট্টার সুরে বলে উঠল রোডা।
আঃ রোড, এটা একটা সিরিয়াস ব্যাপার। অ্যানা রেগে উঠল।
মিস দোবাস, আপনার বন্ধুকেই বলতে দিন। বলুন মিস মেরিডিথ কি বলছিলেন।
আমার জন্ম হয়েছিল ভারতবর্ষের এক শহরে কোয়েট্টায়। আমার বাবা মেজর জন মেরিডিথ মিলিটারীতে চাকরী করতেন। আমার এগারো বছর বয়সে আমার মা মারা যান। বাবা এর কয়েক বছরের মধ্যে অবসর নিয়ে কেন্টেনহ্যামে চলে এলেন। বাবা মারা গেলেন আমার আঠারো বছর বয়সে। বাবার মৃত্যুর পর চোখে অন্ধকার দেখলাম, একেবারে ভিখারী, নিঃস্ব অবস্থা। লেখাপড়াও বেশি করিনি, শর্টহ্যান্ড-টাইপ কিছু জানা নেই। এরকম অবস্থায় কি-ই বা চাকরী পাব। বাধ্য হয়ে একজনের বাড়িতে চাকরী নিলাম–দুটো ছোট ছোট ছেলেমেয়েকে দেখা শোনা করার আর সংসারে ছোটখাট কাজে সাহায্য করা।
সেখানকার ঠিকানা?
কর্ত্রীর নাম মিসেস এলডন। লার্চ শহরের ভেক্টর অঞ্চলে বাড়ি। দু বছর ছিলাম সেখানে। মিসেস এল্ডন এরপর স্বামীর সঙ্গে বিদেশে চলে যান। কাজেই অন্য চাকরী খুঁজতে হল। এরপর রোডা ওর কাকীমা মিসেস ডিঘারিংয়ের বাড়িতে একটা কাজ ঠিক করে দেয়। খুব ভাল ছিলাম সেখানে, মাঝে মাঝে রোডা আসত। দুচারদিন থাকত। খুব মজায় কাটত সে দিনগুলো।