ঠিক এ-কথাটাই আমিও বলি। তাছাড়া চুপচাপ বসে থেকে কিছু একটা করা তো ভাল। রোডা মন্তব্য করল।
আমরা এখন তিনজন–তিনজনই নারী। দেখা যাক আমাদের সকলের চেষ্টায় কিছু হয় কি না?
আচ্ছা ডাঃ রবার্টসই যে খুনি একথা ভাবছেন কেন? মিস মেরিডিথ শান্ত কণ্ঠে প্রশ্ন করল।
এ-ধরনের কাজের পক্ষে একমাত্র উপযুক্ত লোক তিনি। মিসেস অলিভারের নির্বিকার কণ্ঠস্বর ভেসে এল।
সে ক্ষেত্রে ডাক্তার হিসাবে বিষটাকেই বেছে নেওয়ার কথা–
না না, মোটেই তা নয়। বিষক্রিয়ায় মৃত্যু হলে ডাক্তারের উপরেই তো সকলের সন্দেহ হবে। ডাক্তার কি অত কাঁচা? আটঘাট বেঁধেই কাজ করেছেন। মাথা দোলালেন মিসেস অলিভার।
তা ঠিক। মেরিডিথ সম্মতি জানালেন, তবে রবার্টস কেনইবা শেটানকে খুন করতে যাবেন?
কত কারণ হতে পারে। হয়ত শেটান অনেক টাকা ধার দিয়েছেন ডাক্তার রবার্টসকে। সেটা শোধ করতে বলায় রবার্টস খুন করলেন তাকে। আবার হয়ত শেটানের কোন নিকট আত্মীয়াকে বিয়ে করেছেন রবার্টস। শেটানের মৃত্যুতে সেই আত্মীয়াটি সব টাকাপয়সা পেয়ে যাবেন–রবার্টস তো বটেই। আর-আর এরকমও হতে পারে শেটান এমন কোন কথা, মানে ডাঃ রবার্টসের কোন গোপন ঘটনা জেনে ফেলেছিলেন। শেটান সেদিন সন্ধ্যায় এরকম একটা কথাও বলেছিলেন, মনে পড়ছে?
মুহূর্তে অ্যানার মুখ ফ্যাকাশে হয়ে গেল। না তো, কিছুই মনে পড়ছে না আমার
আরে–ভুল করে রুগীকে বিষাক্ত ওষুধ খাইয়ে দেওয়া না কি যেন একটা বললেন মনে পড়ছে না আপনার?
বাঁ হাত দিয়ে শক্তভাবে চেয়ারের হাতলটা চেপে ধরল অ্যানা, হ্যাঁ। ঐরকমই কি একটা–অ্যানার ঠিক মনে নেই।
অ্যানা। রোডা বন্ধুর দিকে তাকালেন, এটা গরমকাল নয়। একটা কোট অন্তত গায়ে দিয়ে আসা উচিত ছিল তোর।
মিস মেরিডিথ একটু বিরক্ত হয়ে তাকাল রোডার দিকে।
তাহলে আমার থিওরিটা বুঝতে পারছেন তো? মিসেস অলিভার বলে চললেন লোকে জানল যে ডাঃ রবার্টসের রুগী নিজে ভুলে ওষুধের বদলে বিষ খেয়ে মারা গেছে। আসলে তো সবটাই সাজানো-রবার্টসের কীর্তি। কে জানে এভাবে আরও কত পেশেন্টকে খুন করবেন তিনি!
অবাস্তব–পুরো থিওরিটাই অবাস্তব। এভাবে খুন করে চললে তার নিজেরই তো ক্ষতি–পশার কমে যাবে। মিস মেরিডিথ শক্ত গলায় বলে ওঠেন।
নিশ্চয়ই, গভীর কোন কারণ আছে এর পেছনে।
আপনি ঠিকই বলেছেন মিসেস অলিভার, বলে ওঠে রোড, আপনার আইডিয়াটা দারুণ। ঠিক, একজন ডাক্তারই তো এভাবে খুনটা করতে পারে।
কথার মাঝখানে অ্যানা চেঁচিয়ে উঠল, হা, হা, আমার মনে পড়েছে। মিঃ শোন সেদিনের পার্টিতে ডাক্তারদের সম্বন্ধেই কি যেন একটা বলছিলেন, কি একরম বিষ আছে যা ল্যাবরেটরীর পরীক্ষতে ধরা পড়ে না
ভুল করছেন, শেটান নয়, একথা বলেছিলেন মেজর ডেসপার্ড। আরে, নাম করতে না করতেই ভদ্রলোক একেবারে হাজির। মিসেস অলিভার বেশ অবাক হলেন। বাগানের পথ ধরে ধীর পায়ে এগিয়ে আসতে দেখা গেল মেজর ডেসপার্ডকে।
মিসেস অলিভার বেরিয়ে এলেন ওয়েভেন কুটীর থেকে। গাড়ির দিকে এগোতে এগোতে মৃদু হাসলেন তিনি। বেশিক্ষণ মিস মেরিডিথের ওখানে থাকা উচিৎ হয়নি তার। মেজর ডেসপার্ড রীতিমত অস্বস্তি বোধ করছিলেন মিসেস অলিভারকে দেখে। তাই দুই বন্ধু এগিয়ে গেল বাড়ির দিকে।
মিস মেরিডিথ মজর ডেসপার্ডের কাছে দেরি হওয়ার জন্য ক্ষমা চাইতেই ডেসপার্ড বলে উঠলেন মিস মেরিডিথ, অযথা সময় নষ্টের দরকার নেই। আমার আসার কারণটা বলি। আপনার ঠিকানা আমি সুপারিনটেন্ডেন্ট ব্যাটেলের কাছ থেকে পেয়েছি। ব্যাটেলও এখানেই আসছেন। আমি তাকে প্যাডিংটন স্টেশানে অপেক্ষা করতে দেখেছি। তাড়াতাড়ি গাড়ি হাঁকিয়ে চলে এলাম। জানতাম ট্রেনের আগে এসে পৌঁছব।
কিন্তু এত তাড়াহুড়োর কি প্রয়োজন ছিল?
নিশ্চয়ই। আপনি একলা, আপনাকে সাহায্য করা দরকার।
কেন? আমিই তো আছি। রোডা ফোঁস করে উঠল। মেজর ডেসপার্ড তাকালেন রোডার দিকে। সত্যিই রোডা হল অ্যানা মেরিডিথের প্রকৃত বন্ধু।
আমি জানি, মিস দোবাস, আপনার মত বন্ধু পৃথিবীতে দুর্লভ। আপনাদের দুজনের বয়স অল্প। ঐ খুনের সঙ্গে জড়িত চারজনের মধ্যে মিস মেরিডিথ একজন। সুতরাং অন্যান্য সকলের সঙ্গে তিনিও সন্দেহের আওতায়। এরকম অবস্থায় আপনাদের একজন অভিজ্ঞ লোকের সাহায্য প্রয়োজন। আমার মতে মিস মেরিডিথ, আপনার উচিত কোন অভিজ্ঞ সলিসিটারের সঙ্গে যোগাযোগ করা। কোন চেনা-শোনা সলিসিটার আছে?
মিঃ বারী নামে একজন সলিসিটার আছেন, তবে প্রায় একশোর কাছাকাছি বয়স, তেমন বলতে চলতে পারেন না- রোডা বলে ওঠে।
আপত্তি না থাকলে আমার সলিসিটার মিঃ মেহর্নের সঙ্গে কথা বলে দেখতে পারেন। ফার্মের নাম জ্যাকব অ্যান্ড জ্যাকব। এদের ফী-ও খুব বেশি নয়।
এসবের কোন প্রয়োজন আছে বলে আমার মনে হয় না। তাছাড়া টাকা-।
না, না, টাকার জন্য তোর কোন চিন্তার কারণ নেই অ্যানা। বাধা দিয়ে বলে ওঠে রোড, সে সব হয়ে যাবে। সত্যিই মেজর ডেসপার্ড আপনি সঠিক উপদেশই দিয়েছেন।
ঠিক আছে। তাহলে যা বলছেন তাই করব। অ্যানা শান্ত গলায় জানায়।
এই তো লক্ষ্মী মেয়ের মত কথা। রোড মন্তব্য করে, তারপর আচমকা প্রশ্ন করে, মেজর ডেসপার্ড, আপনার কাকে খুনি বলে মনে হয়–মিসেস লরিমার না ডাঃ রবার্টস?
কেন? আমিও তো খুনটা করে থাকতে পারি। মেজর ডেসপার্ড ম্লানভাবে হাসলেন।