তা কেন? হাতে ভালো তাস থাকলে নিশ্চয়ই ছয়-সাতের ডাকে যাবেন।
আপনি তাহলে ঝুঁকি নেবার পক্ষে?
ডাক নির্ভুল হলে ঝুঁকির কোন প্রশ্নই আসে না। এ তো সোজা হিসেব। তবে খুব কম লোকই নির্ভুল বিট দিতে পারে। প্রথমটা হয়ত ঠিকঠাকই শুরু করে কিন্তু শেষরক্ষা করে উঠতে পারে না। সে যাই হোক–এবার চতুর্থ স্কোরশিটটা হাতে নিলেন মিসেস লরিমার, এটাতে ঠিকমত খেলা হচ্ছিল না, কেমন যেন ঝিমিয়ে ঝিমিয়ে চলছিল। বোধহয় আগের খেলাটা অত উত্তেজনা পূর্ণ হওয়াতে পরেরটা ভাল হচ্ছিল না।
পোয়ারো স্কোরগুলো ভাঁজ করে পকেটে রাখলেন, সত্যি ম্যাডাম, আপনার স্মৃতিশক্তির তুলনা নেই। প্রত্যেকটা তাস বোধহয় আপনার ছবির মত মনে আছে?
তাই তো মনে হয়!
স্মৃতিশক্তি সত্যি একটা অসামান্য উপহার, আমার মনে হয় অতীত বোধহয় আপনার কাছে নতুন, প্রতিটি খুঁটিনাটি ঘটনা মনে হয় সবেমাত্র গতকালের তাই না?
মিসেস লরিমার চকিতে পোয়ারোর দিকে তাকালেন, বড় বড় চোখে হঠাৎ অন্ধকার নেমে এল। কিন্তু কয়েক মুহূর্তের মধ্যেই নিজেকে সামলে নিলেন, মিসেস লরিমার। কিছুই পোয়ালোর নজর এড়ালো না। নিঃসন্দেহে তার তীর লক্ষ্যভেদ করেছে।
কিছু মনে করবেন না। উঠে দাঁড়ালেন মিসেস লরিমার আমি তো আর অপেক্ষা করতে পারছি না, এক্ষুনি বেরোতে হবে। আপনার কাজেও কোন সাহায্য করতে পারলাম না–
তা কেন? আমি যা জানতে চাইছিলাম আপনার কথা থেকেই আমি পেয়ে গেছি পোয়ারো তাকালেন মিসেস লরিমারের দিকে।
মিসেস লরিমার কিন্তু কোন কথা বললেন না। তিনি কি বলেছেন পোয়ারোই বা কি জানতে চেয়েছিলেন এ সম্পর্কে তার কোন কৌতূহলই নেই।
আমি আজ বিদায় নিচ্ছি মিসেস লরিমার। অসংখ্য ধন্যবাদ আপনাকে। একটা কথা–আপনি ডেকে না পাঠালে আমি কোনদিনই আপনার মূল্যবান সময় নষ্ট করতে আসব না।
কিন্তু মঁসিয়ে পোয়ারো, আমিই বা কেন আপনাকে ডেকে পাঠাব? মিসেস লরিমার জিজ্ঞাসা করলেন।
হয়ত পাঠাবেন, কেমন যেন মনে হচ্ছে আমার। যদি ডেকে পাঠান নিশ্চয়ই আমি আসব।
পোয়ারো বিদায় নিয়ে রাস্তায় পা বাড়ালেন। হাঁটতে হাঁটতে মনে পড়ল মিসেস লরিমার প্রথমে তার প্রশ্নের উত্তর দিতে রাজি হননি পরে উত্তর দিলেন। আমার অনুমান ভুল নয় বিড় বিড় করলেন পোয়ারো–ওরকমটাই হবে।
মিসেস অলিভার খুব কষ্টে টু-সিটার গাড়ি থেকে রাস্তায় নামলেন। বেশ কিছুটা সামনে এগোবার পর ওয়েভন কুটীর-এর দেখা মিলল। দু-কামরার বাঙলো প্যাটার্নের একটা বাড়ি। দরজার বেল টিপলেন। ভেতর থেকে কোন সাড়াশব্দ এল না। আরও দু চারবার বেল টিপেও কোন কাজ হল না। মনে হয় ভেতরে কেউ নেই।
অগত্যা মিসেস অলিভার বাইরের বাগানের মধ্যে কিছুক্ষণ পায়চারি করলেন। বাগানের পাশেই ফাঁকা মাঠ। একটু পরেই সেদিক থেকে দুজন তরুণীকে এগিয়ে আসতে দেখা গেল। কাছাকাছি হতেই মিসেস অলিভার এগিয়ে গেলেন ভালো আছেন মিস মেরিডিথ? আমাকে চিনতে পারছেন নিশ্চয়ই?
নিশ্চয়ই! অ্যানা মেরিডিথ করমর্দন করলেন সুপ্রভাত! কিন্তু মেরিডিথের চোখের তারায় আতঙ্ক ফুটে উঠল, নিজেকে সামলাতে সময় লাগল তার।
এই হচ্ছে আমার বন্ধু রোড, রোডা দোবাস। আমরা এক সঙ্গেই থাকি। মিস মেরিডিথ আলাপ করিয়ে দিলেন।
মিস দোবাস সুন্দরী মেরিডিথের চেয়ে কিছুটা লম্বা। রোড উচ্ছ্বসিত হয়ে উঠল, আপনিই বিখ্যাত লেখিকা মিসেস অলিভার?
মাথা নাড়লেন মিসেস অলিভার, তারপর ফিরে তাকালেন মিস মেরিডিথের দিকে। অনেক কথা আছে আমার, কোথাও বসতে পারলে ভাল হত।
মেরিডিথ তাকে পথ দেখিয়ে ড্রয়িং রুমে নিয়ে গেলেন।
চেয়ারে বসতে বসতে মিসেস অলিভার বললেন, আমি গতদিনের খুনের ব্যাপারে আলোচনা করতে এসেছি। আমার মনে হয় এ-ব্যাপারে কিছু করা উচিত আমাদের।
করা উচিত? তার মানে? মিস মেরিডিথ অবাক হলেন।
আলবাত। দৃঢ়কণ্ঠে ঘোষণা করলেন মিসেস অলিভার এটা কার কীর্তি আমি নিঃসন্দেহে জানি। ঐ যে ডাক্তার, কি যেন নামটা–রবার্টস। হ্যাঁ, আমার দৃঢ় বিশ্বাস ঐ হল আসল অপরাধী। ভদ্রলোক নিশ্চয়ই ওয়েলসের অধিবাসী। ওদের আমি জীবনেও বিশ্বাস করি না। আমার অসুখের সময় একজন নার্স রেখেছিলাম, সেও জাতে ওয়েলস। মেয়েটি একদিন কি করল জানেন! তিন রকমের তিনটে মিক্সচার একঘন্টা অন্তর অন্তর পর পর তিনবার খাওয়ার কথা। কিন্তু সে ভুল করে একই মিক্সচার পর পর তিনবার খাইয়ে দিল। কোন দায়িত্বজ্ঞান আছে? আমি নিশ্চিত, ঐ রবার্টর্স ছাড়া আর কারো কাজ নয়। এখন শুধু প্রমাণের অপেক্ষা-
আচমকা খিল খিল করে হেসে উঠল রোডা। মাপ করবেন–নিজেকে সামলাতে পারলাম না। আসলে আমি আপনাকে মনে মনে যেরকম কল্পনা করেছিলাম তার সঙ্গে কিন্তু আপনার কোন মিল নেই।
সবাই এরকমটাই বলে। সে যাকগে। এখন আমাদের প্রধান কর্তব্য হল রবার্টসের অপরাধের প্রমাণ খোঁজা–তাও করতে হবে নিজেদের বাঁচতে। আপনাকে কেউ খুনি বলে সন্দেহ করুক নিশ্চয়ই আপনি তা চান না মিস মেরিডিথ?
মিস মেরিডিথ ফ্যাকাশে হয়ে উঠল, কেন? আমাকে সন্দেহই বা করবে কেন?
সাধারণ লোক তাই ভাবে। খুনের সঙ্গে জড়িত অন্য তিনজনকেও তারা সমান সন্দেহ করে।
অ্যানা মেরিডিথের শান্ত কণ্ঠস্বর ভেসে আসে, আপনি আমার কাছে কি জন্য এসেছেন মিসেস অলিভার?
কার কাছে যাব? মিসেস লরিমার সারাদিন ক্লাবে বসে ব্রীজ খেলেন, তার দেখা পাওয়া ভার। তাছাড়া নিজেকে বাঁচানোর মত যথেষ্ট বুদ্ধি আর সাহস তার আছে। মিসেস লরিমারের যথেষ্ট বয়স হয়েছে। কে কি ভাবল না ভাবল তাতে তার কিছু আসে যায় না। আর মেজর ডেসপার্ড হলেন পুরুষ। পুরুষদের নিয়ে আমার কোন মাথাব্যাথা নেই। এরা নিজেদের ব্যবস্থা নিজেরা করে নিতে পারবে। কিন্তু আপনি? আপনি একজন সুন্দরী তরুণী–সমস্ত ভবিষ্যৎ যার সামনে পড়ে আছে। আমার তো আপনাকে নিয়েই বেশি চিন্তা।