সেটাই তো আমি চাই। কথা বলতে বলতে উঠে দাঁড়ালেন পোয়ারো। তবে আজ আপনি যা বললেন তা আমার খুব কাজে লাগবে।
ডাক্তার রবার্টসের কাছ থেকে বিদায় নিয়ে পোয়ারো একটা ট্যাক্সি ধরলেন। এবার তিনি দেখা করবেন মিস লরিমারের সঙ্গে।
আপনার কথার মাথামুণ্ডু কিছুই বুঝতে পারছি না মিঃ পোয়ারো। সেদিনের ঘরের ফার্নিচারের বিবরণ–সে আবার আপনার কি কাজে লাগবে? মিসেস লরিমার বেশ অবাক হলেন।
ম্যাডাম, ব্যাপারটা হয়ত বোঝাতে পারব না। ধরুন আপনাকে ব্রীজ টেবিলে যদি কেউ বলে আপনি টেক্কাটা অত তাড়াতাড়ি খেলে বসলেন কেন, অথবা সাহেব না মেরে গোলাম মারলেন কেন? আপনার তখন বিরক্ত লাগবে কোন আনাড়িকে বোঝাতে, সেখানে বললেও বুঝবে কিনা সন্দেহ।
মিসেস লরিমার হাসলেন, ও, তার মানে আপনি বলতে চান গোয়েন্দাগিরিতে আপনি। যেমন দক্ষ, ঠিক ততখানি আনাড়ি হলাম আমি। ঠিক আছে, বলছি–সেদিনের যে যে জিনিসগুলোর কথা আমার মনে আছে। মনে মনে একটু চিন্তা করে নিলেন মিসেস লরিমার, ঘরটা বেশ বড়, প্রচুর জিনিসপত্র ছিল–
কি কি জিনিস ছিল?
গোটাকতক কাঁচের আধুনিক ডিজাইনের ফুলদানী, সুন্দর দেখতে। যতদূর মনে পড়ে চিনা বা জাপানি ঢঙের কতকগুলো ছবিও দেওয়ালে টাঙানো ছিল। একগোছা ছোট ছোট রক্তিম টিউলিপ। টিউলিপের সময় কিন্তু এখন নয় কিন্তু ভদ্রলোক যে কোথা থেকে। জোগাড় করলেন–
আর কিছু? ফার্নিচারগুলোর রঙ কিরকম ছিল মনে পড়ছে?
হ্যাঁ। ধূসর সিল্ক রঙের কয়েকটা ফার্নিচার ছিল।
ছোটখাট কোন জিনিস নজরে পড়েনি আপনার?
নাঃ, একদম মনে পড়ছে না। মাপ করবেন, হয়ত কোন কাজে লাগলাম না–
আর একটা প্রশ্ন বাকী আছে। পোয়ারো পকেট থেকে স্কোরশিটগুলো বার করে টেবিলের ওপর রাখলেন। এগুলো সেদিনের প্রথম রাবার তিনটের হিসেব। দেখুন তো, এগুলো দেখে সেদিনের ডিলগুলোর কথা আপনার মনে পড়ে কিনা।
পোয়ারোর হাত থেকে স্কোরশিটগুলো নিয়ে মিসেস লরিমার ঝুঁকে পড়লেন তার উপর। হ্যাঁ, বেশ মনে আছে। এটা প্রথম রাবার। তখন আমার পার্টনার ছিলেন মিস মেরিডিথ। অন্যদিকে ডাক্তার রবার্টস আর মেজর ডেসপার্ড। প্রথম ডিলে আমরা চারটে স্পেড ডেকেছিলাম। পাঁচের খেলা হয়। পরের তাস দুটো ক্লাব ডাক হয়েছিল। ডাঃ রবার্টস খেলতে পারেননি। একটা ডাউন দেন। তৃতীয় ডিলে খুব বেশি ডাকাডাকি চলে। আমার স্পষ্ট মনে আছে। মিস মেরিডিথ পাস দিলে একটা হার্ট দিয়ে মেজর ডেসপার্ড ডাক শুরু করেন। আমি পাস দিলাম। ডাক্তার রবার্টস লাফিয়ে বীড দেন, তিনটে ক্লাব। মিস মেরিডিথ ডাকেন তিনটে স্পেড। মেজর ডেসপার্ড বলেন চারটে ডায়মণ্ড। আমি ডবল দিই। ডাক্তার রবার্টস গোড়ায় হার্ট রঙে ফিরে চান। কিন্তু চারটে হার্টসে একটা ডাউন দেন।
২. মেজর ডেসপার্ডের ডিল ছিল
পরের বার মেজর ডেসপার্ডের ডিল ছিল, তিনি পাস দেন। আমি একটা নো-ট্রাম্প দিয়ে ডাক শুরু করলাম। রবার্টস আবার লাফিয়ে বললেন, তিনটে হার্ট। আমার পার্টনার পাস দিলেন। মেজর ডেসপার্ড ডাকলেন চারটে হার্ট। আমি ডবল দিলাম। দুটো শর্ট দিলেন ওরা। পরের তাসে আমরা চারটে স্পেড ডাকলাম কিন্তু একটা ডাউন হয়ে গেলো।
মিসেস লরিমার পরের স্কোরশিটটা তুলে নিলেন।
পোয়ারো বললেন, মেজর ডেসপার্ড কেমন কেটে কেটে লিখেছেন, স্কোর দেখে তাসগুলো মনে করা শক্ত হবে।
যতদূর মনে পড়ছে, প্রথম দুটো ডিলে দুপক্ষই পঞ্চাশ করে শর্ট দিয়েছিলাম। তারপর ডাক্তার রবার্টস পাঁচটা ডায়মণ্ড ডাকলেন। আমরা ডবল দিয়ে তিনটে শর্ট নিলাম। পরের তাসটা আমরা খেলোম তিনটে ক্লাবে। এরপরে ওরা স্পেডে গেম খেলে গেলেন। সঙ্গে সঙ্গে পাঁচটা ক্লাবে গেম করলাম আমরা। পরের তাসটায় শর্ট দিলাম একশো। ওরা আবার একটা হার্ট খেলে গেলেন। কিন্তু পরপর দুটো তাস যথাক্রমে দুটো নো-ট্রাম্প এবং চারটে ক্লাবের খেলা করায় গেম হয়ে গেল। রাবারও পেলাম।
তৃতীয় স্কোরশিটটা তুলে নিলেন মিসেস লরিমার। এই রাবারটা দারুণ উত্তেজনায় হয়েছিল। খুব শান্তভাবে। মেজর ডেসপার্ড আর মিস মেরিডিথ প্রথমে একটা হার্টের খেলা করলেন। তারপর আমরা হার্ট ও স্পেডে গেম ডেকে একটা করে শর্ট দিলাম। ওরা স্পেডে গেম করলেন। রাবার বাঁচাবার আশা খুব কম। এরপর তিনটে তাস একটা দুটো করে শর্ট দিলাম আমরা। অবশ্য ওরা কেউ ডবল দেননি। শেষে আমরা নো-ট্রাম্পে গেম খেলোম। তখন থেকেই যুদ্ধ শুরু হলো। কেউ কাউকে সহজে ছেড়ে দিতে চায় না। ফলে প্রত্যেকেই ডাউন দিতে লাগলাম। ডাক্তার রবার্টসের বীটের তোড়ে একটু ভয় পেয়ে গিয়েছিলেন মেরিডিথ। তাস ভালো থাকলেও বেশি বীট দিতে ভরসা পাচ্ছিলেন না। এরপ পরেই ডাক্তার রবার্টস গেম ফোর্সিং দুটো স্পেড দিয়ে ডাক শুরু করলেন। আমি বললাম তিনটে ডায়মন্ড। তিনি ডাকলেন চারটে নো-ট্রাম্প। আমি পাঁচটা স্পেড, হঠাৎ ডায়মন্ডে গ্র্যান্ডস্ল্যাম ডেকে বসলেন রবার্টস। ডেসপার্ডও মুখিয়েছিলেন, বললেন ডবল। হার্ট লিডে তাসটায় তিনটে শর্ট ছিল। ভাগ্য ভাল লিড হল ক্লাবের সাহেব। ফলে খেলা হয়ে গেল। দারুণ উত্তেজনার মধ্যে দিয়ে শেষ হল রাবারটা।
হায় ভগবান! ভালনারেবল গ্র্যান্ডস্ল্যামের খেলা, তার ওপর ডবল! আমি হলে ছয় সাতের ডাকে না গিয়ে গেমেই সন্তুষ্ট থাকতাম।