পোয়ারো কফির কাপগুলোর ওপর নজর দিলেন। পাঁচটা কাপ, একটা উধাও।
ডঃ গ্রাহাম খুব মনোযোগ দিয়ে স্যার ক্লডকে দেখতে থাকলেন। গায়ে হাত না দিয়ে দূর থেকে যা যা ডাক্তারি নিরীক্ষা করা চলে, তাই করলেন। তারপর ঘাড় নাড়লেন, মুখে অসহায়তার ছাপ।
ডঃ গ্রাহাম শান্ত কণ্ঠে বললেন, পোয়ারো শুনতে পেলেন–দুঃখিত রিচার্ড, মৃত্যুজ্ঞাপক প্রমাণ পত্র এই মুহূর্তে আমি দিতে পারছি না।
-কেন? রিচার্ড কৈফিয়তের সুরে জানতে চাইল। সমস্যা কি? আচমকা হার্ট অ্যাটাকেই তো বাবার মৃত্যু হয়েছে, তাহলে কেন ডেথ সার্টিফিকেট দিতে পারবে না?
-দেখ ভাই, তোমার মতে যা হার্ট অ্যাটাক, আমার কাছে তা নয়, ডঃ গ্রাহামের গম্ভীর কণ্ঠস্বর তোমার বাবার স্বাস্থ্য মোটেও খারাপ ছিল না, হার্টের অসুখেও ভোগেন নি, পরীক্ষা করে যা বুঝলাম, হার্ট ফেল উনি করেননি। মারাত্মক বিষাক্ত কিছু ওঁর শরীরে প্রবেশ করেছে, যার ফলে মৃত্যু।
ডাক্তার বলে চললেন–অতএব আমাকে নিশ্চিত হওয়ার জন্য মৃতদেহ মর্গে পাঠাতে হবে, জানতে হবে গত আট দশ ঘন্টায় ওনার পাকস্থলীতে কী কী প্রবেশ করেছে। এসব করার আগে তুমি মৃতদেহ সৎকার করতে পারবে না, মাফ কর, আমি তোমাকে সাহায্য করতে পারছি না। আসি।
ডঃ গ্রাহাম কথা শেষ করে ডাক্তারি ব্যাগটা হাতে তুলে নিলেন, গট গট করে চলে গেলেন দরজা পেরিয়ে বাইরে। রিচার্ড আর কি করবে? সে বোবার মতো অসহায় দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইল ডঃ গ্রাহামের চলে যাওয়ার দিকে।
পোয়ারোর এখানে থাকার প্রয়োজন আপাতত মিটেছে, ওপরে যাবেন ভাবছেন, এমন সময় ট্রেডওয়েল বসার ঘরে এসে ঢুকল, বলল–স্যার, আপনাদের দু’জনের থাকার ব্যবস্থা করা হয়েছে, সিঁড়ির ওপর দুটো ঘর, পাশাপাশি থাকবেন। আপনাদের রাতের খাবারও তৈরি, আসুন স্যার, খাওয়া-দাওয়া সেরে নিন।
–অনেক-অনেক ধন্যবাদ, ট্রেডওয়েল। পোয়ারো তাকে মনে করিয়ে দিয়ে বলল, রাতে ঘুমোতে যাওয়ার আগে এঘরের দরজা জানালাগুলো পরীক্ষা করে নিও, ভালভাবে তালা এঁটে লাগিও, মনে থাকবে তত?
-আপনি ওসব নিয়ে চিন্তা করবেন না, স্যার। অনুগত ভৃত্যের মতো ট্রেডওয়েল বলল, আমি রাতে বিছানায় যাবার আগে সবকটা দরজা জানলা ভালভাবে এঁটে দেব। এবার ডিনার হলে চলুন।
-আচ্ছা চল, বাঁকা চোখে রিচার্ডকে একবার লক্ষ্য করে পোয়ারো বসার ঘর থেকে বেরিয়ে এলেন, সামনে চলেছে বাটলার ট্রেডওয়েল, গন্তব্য ডিনার হল।
.
০৮.
রাতে বিছানায় গেলেন এরকুল পোয়ারো। পরম সুখে নিদ্রা গেলেন। পরদিন সকালে ঘুম ভাঙল। প্রাত্যহিক কাজ সেরে ফাস্ট টেবিলে এসে বসলেন–অবাক হলেন, টেবিল খালি, কেউ কোথাও নেই। পোয়ারো নিজের মনে ব্যাপারটা ভাববার চেষ্টা করলেন।
এমন সময় ট্রেডওয়েল এসে ঢুকল, হাতে কফির ফ্ল্যাক্স আর পোয়ারোর জন্য ব্রেকফাস্ট।
পোয়ারো ফিসফিসিয়ে জানতে চাইলেন–কাউকে তো দেখছি না, পরিবারের সকলের টি ব্রেকফাস্ট সারা হয়ে গেছে, আমার সঙ্গে ব্রেকফাস্ট করবে না বলে সকলে দলবদ্ধ হয়েছে।
-ঠিক ধরেছেন, স্যার। কফির ফ্ল্যাক্স-টেবিলে নামিয়ে রেখে, নীচুস্বরে ট্রেডওয়েল বলল–আজ সকলের আগে ব্রেকফাস্ট সেরেছেন সেক্রেটারি এডওয়ার্ড রেনর, তারপর স্টাডিতে ঢুকতে দেখেছি। রিচার্ড দম্পতি ঘুম থেকে উঠে পড়লেও বাইরে বেরোননি, এই তো একটু আগে ওদের ঘরে ব্রেকফাস্ট দিয়ে এলাম। মিস ক্যারোলিন অ্যামরিও তাই করেছেন, নিজের ঘরে বসেই জল খাবার খেয়েছেন। এপরিবারের আর একজন আছেন, স্যারের ভাইঝি মিস বারবারা অ্যামরি। তিনি সোজা রান্না ঘরে এসে দুটো সেদ্ধ ডিম আর দুটো টোস্ট নিজে হাতেই বানিয়ে নিয়েছেন, আমাকে কেবল তিন কাপ কফি করে দিতে বললেন, আমি কফি তৈরি করে ফ্ল্যাক্সে ভরে দিতে উনি সবকিছু নিয়ে বাড়ি থেকে বেরিয়ে বাগানে চলে গেলেন। পুরনো খবরের কাগজ বিছিয়ে নিয়ে একা একা ব্রেক ফাস্ট করছেন।
দোতলায় একটা ঘর ক্যাপ্টেন হেস্টিংসকে দেওয়া হয়েছে। সকালের আলো এসে ঘরে ঢুকল, ক্যাপ্টেন হেস্টিংস চোখ মেললেন। বিছানা লাগোয়া ঘোট টেবিলে সকালের রাত টাইমস পত্রিকা দেখে তিনি খুশি হলেন, ট্রেডওয়েলই যে এসব ব্যবস্থা করে গেছে, তা নিঃসন্দেহে বলা যায়। ঘরের বাইরে সরু একফালি ব্যালকনি, সেখানে একটা আরাম কেদারা রয়েছে। ক্যাপ্টেন হেস্টিংসের মন খুশিতে নেচে উঠল। তিনি বিছানা ত্যাগ করলেন। চোখে মুখে জল দিলেন। আরাম কেদারায় এসে বসতে গিয়ে বাধা পেলেন। অল্প কিছু দূরে একটা গাছের নীচে গিয়ে চোখের দৃষ্টি আটকে গেল–হ্যাঁ, বারবারাই, নিঃসঙ্গ বসে ব্রেকফাস্ট সারছে।
এমন সময় ট্রেডওয়েল এ ঘরে এসে ঢুকল। সকালের চায়ের কাপটা নিয়ে যাবে বলে। তা দেখে ক্যাপ্টেন হেস্টিংস বললেন–ট্রেডওয়েল, ব্রেকফাস্ট টেবিলে বসে আমার যেতে ইচ্ছে করছে না। তুমি বরং আমার খাবারটা এখানেই দিয়ে যাও।
–বেশ, যেমন বলবেন, ট্রেডওয়েল লক্ষ্য করল, ক্যাপ্টেন হেস্টিংস অপলক চোখে বারবারাকে লক্ষ্য করছেন, মজা বোধ করল সে, মনে মনে খানিক হেসে নিল।
শোনো, ক্যাপ্টেন হেস্টিংস ঘাড় ঘুরিয়ে ডাকলেন ট্রেডওয়েলকে, মানে, বলছিলাম কি, আজকের জলখাবারে কি কি পদ আছে।
আজ্ঞে, আছে টোস্ট, ডিমের পোচ, বেকন ভাজা আর কফি। আপনি এখানেই বসুন, সব তৈরি আছে, নিয়ে আসতেই যা দেরি।