–ডঃ কারোলি, বারবারার উৎকণ্ঠিত কণ্ঠস্বর, জ্যেঠুর কি হয়েছে? কথা বলছেন না কেন?
বড্ড দেরি হয়ে গেছে, মিস অ্যামরি, ডঃ কারোলি বললেন–স্যার ক্লড, আর বেঁচে নেই, উনি হার্টফেল করছেন, অনেকক্ষণ আগেই মারা গেছেন।
.
০৬.
এরকুল পোয়ারোর চিন্তাচ্ছন্ন মন–আমি যদি একটু আগে এখানে আসতাম, এমন দুর্ঘটনা ঘটত না। এমন অপূরণীয় ক্ষতি, এ যে আমার স্বপ্নের অতীত।
রিচার্ড তখনও নিশ্চিত হতে পারছে না–ডঃ কারোলি, আপনি ঠিক বলছেন তো, আচমকা হার্টফেল করে বাবার মৃত্যু হয়েছে?
–তাই তো মনে হচ্ছে। কয়েকটি কথায় জবাব দিলেন ডঃ কারোলি।
ভাইয়ের মৃত্যু সংবাদ শুনে বোন ক্যারোলিন শোকে ভেঙে পড়লেন। কান্নাকাটি শুরু করলেন। বারবারা ছুটে এল, এখুনি পিসিমাকে, শান্ত করা প্রয়োজন, নয়তো উনি বেঁহুশ হয়ে পড়বেন।
এডওয়ার্ড রেনরও এগিয়ে এল বারবারার পাশে। নীচু স্বরে জানতে চাইল–ওই কারোলির কথা বলছি। সত্যিই কি উনি ডাক্তার?
-হ্যাঁ, ডাক্তার। সহজ ভাবে বারবারা বলল, তবে এদেশের নয়, ইটালির।
কাছাকাছি দাঁড়িয়ে ছিলেন পোয়ারো। ওদের কথাবার্তা তার কানে এল। গোঁফে হাত বুলোতে বুলোতে তিনি বললেন–এখানে উপস্থিত সকলের অবগতের জন্য বলছি, আমি একসময় পুলিশের গোয়েন্দা ছিলাম, অবশ্য বেলজিয়ান পুলিশের, তাহলে মনে রাখবেন, আমরা, অর্থাৎ বিদেশীরা সমস্যার আসল সমাধানটা খুঁজে বের করি, কচ্চিৎ দু-একটা বাদে।
পোয়ারোর কথা শুনে বারবারা লজ্জায় মাথা হেঁট করল, তার বুঝতে দেরি হল না যে, তাকে ইঙ্গিত করেই এমন ঠেস দেওয়া কথা বলা হল। বারবারার মুখ ভার হল। এডওয়ার্ড পরিস্থিতি সামাল দিতে বারবারার সঙ্গে মামুলি কথাবার্তা বলতে লাগল।
ইতিমধ্যে লুসিয়া এসে দাঁড়িয়েছে পোয়ারোর পাশে। তাকে ধরে টেনে নিয়ে গেল ঘরের অন্যপাশে। চাপা গলায় অনুরোধের সুরে বলল–মশিয়ে পোয়ারো, আপনি কারো কথা মানবেন না। এখানেই আপনি থাকুন, যে কাজে এসেছেন, তা শুরু করুন, প্লীজ।
মাদাম, পোয়ারো তাকালেন লুসিয়ার দিকে, আপনি কি সত্যিই চান, আমি এখানে থাকি?
-হ্যাঁ, নিশ্চয়ই, স্যার ক্লডকে ইশারায় দেখিয়ে লুসিয়া বলে চলল–এটা কোন সহজ ব্যাপার নয়, গোলমেলে, আমি হলফ করে বলতে পারি। স্যার ক্লড আমার শ্বশুর হন, ওঁনার বুকে কোন রোগ ছিল না বলেই জানি, সেরকম কোন অসুখ থাকলে নিশ্চয়ই আমার কানে আসত। মশিয়ে পোয়ারো আবার আপনাকে অনুরোধ করছি, দয়া করে এ রহস্যের জট আপনি খুলুন।
ওদিকে মৃত স্যার ক্লডকে ঘিরে আছে রিচার্ড ও ডঃ কারোলি। রিচার্ড দিশেহারা, কি করা উচিত বা উচিত নয়, ঠিক করতে পারছে না।
ডঃ কারোলি তাকে সাহায্য করল–মিঃ অ্যামরি আপনি এক কাজ করুন, আপনাদের পারিবারিক ডাক্তারকে ডেকে পাঠান। উনি এসে স্যার ক্লডকে পরীক্ষা করুন।
রিচার্ড এতক্ষণে ধাতস্থ হল। নিজেই নিজেকে শুধালো আছে তো একজন, ডঃ গ্রাহাম, কেনেথ গ্রাহাম। অল্প বয়সে বেশ পশার জমিয়েছে। ওকে ডাকাটা কি ঠিক হবে? বারবারার ওপর ওর যা নজর, যদি……
দূর, এসব অর্থহীন চিন্তা করার কি সময় এখন? দেখি ফোনে পাই কিনা। কিন্তু….
রিচার্ড তার খুড়তুতো বোন বারবারাকে ডেকে ডঃ কেনেথ গ্রাহামের ফোন নম্বরটা চাইল।
–বলছি, বারবারা পায়ে পায়ে জ্যেঠতুতো ভাইয়ের পাশে এসে দাঁড়াল, মার্কেট ক্লিভ ফাইভ।
রিচার্ড রিসিভার তুলে নম্বর ডায়াল করতে, উদ্যত হল। ঠিক এই সময় এডওয়ার্ড রেনর ব্যতিব্যস্ত হয়ে বলল–তাহলে মশিয়ে পোয়ারোকে ফেরত পাঠানো জন্য গাড়ির ব্যবস্থা করতে বলি।
রেনরের এই আগ বাড়িয়ে কথা লুসিয়ার মোটেও পছন্দ হল না। পোয়ারো কি বলতে যাচ্ছিলেন। তাঁকে বাধা দিয়ে লুসিয়ে জোর গলায় বলল–না না, গাড়ির দরকার নেই। মশিয়ে পোয়ারো এখানেই থাকবেন। সমস্ত ব্যাপার মিটিয়ে তবেই ফিরবেন। আমি ওঁকে অনুরোধ করেছি।
-কি বলছ, লুসিয়া? রিসিভার কানের কাছে চেপে ধরেই রিচার্ড বিস্মিত কণ্ঠে জানতে চাইল–তুমি ভেবে-চিন্তে বলছ তো?
নিশ্চয়ই, লুসিয়া জোর গলায় বলল, উনি এখানেই এখন থাকবেন।
ক্যারোলিন এখন চুপ করেছেন, চোখে আতঙ্কের ইশারা। চার দিকে তাকালেন। বারবারা আর রেনরের চোখেও উৎকণ্ঠা ও ভয়। ডঃ কারোলি আপন মনে তাকিয়ে আছেন স্যার ক্লডের মৃত মুখের দিকে, কি সব ভাবছেন।
ক্যাপ্টেন, হেস্টিংস নীরবে এতক্ষণ সবকিছু পর্যবেক্ষণ করছিলেন। লাইব্রেরির তাকে সাজিয়ে রাখা বইগুলো টেনে টেনে বের করছিলেন, আর মন দিয়ে পাতা উল্টে উল্টে কি যেন দেখছিলেন। একসময় তিনি সামনের দিকে ঘুরে দাঁড়ালেন। উপস্থিত সকলকে জরিপ করতে লাগলেন।
ফোনে ডায়াল করতেই ওদিক থেকে সাড়া পাওয়া গেল। রিচার্ড শশব্যস্ত হয়ে জানতে চাইল–হ্যালো, মার্কেট ক্লিভ ফাইভ। ডঃ গ্রাহাম? সামান্য বিরতি– হ্যাঁ, হ্যাঁ, কেনেথ গ্রাহামকে চাইছি। আবার বিরতি–হ্যালো কেনেথ, আমি রিচার্ড অ্যামরি বলছি। তোমাকে ভাই এক্ষুনি আমাদের বাড়িতে আসতে হবে। বাবার হার্ট অ্যাটাক হয়েছে। যদুর মনে হয়, উনি আর বেঁচে নেই। আবার বিরতি–না, নিশ্চিত হতে পারছি না। তোমার অপেক্ষাতেই আছি তাড়াতাড়ি চলে এস, ঠিক আছে?
ঘটাং করে ক্রেডেলের ওপর রিসিভার নামিয়ে রেখে রিচার্ড তীক্ষ্ণ চোখে বউয়ের দিকে তাকাল, ঝাঁঝাল গলায় বলল, লুসিয়া, তোমার মাথায় কি বুদ্ধি-সুদ্ধি নেই? ওই শয়তান গোয়েন্দাকে যেভাবেই হোক এখনই তাড়াতে হবে এখান থেকে। তুমি তো সব জানো, বোঝো, নাকি সব বুঝেও ছেলে মানুষির ভান করছো?