আজ সন্ধ্যার খানিক বাদে ফর্মুলাটা একটা বড় খামে পুরে আমার স্টাডির সিন্দুকে রেখে দিয়েছিলাম, তখন ঘড়িতে সাতটা বেজে কুড়ি মিনিট, এক চুলও এদিক ওদিক নয়। স্যার ক্লড গম্ভীর গলায় বলে গেলেন। তারপর আমি ঘর থেকে বেরিয়ে যাই, রেনর ঢুকল।
–স্যার ক্লড, আপনি আজে বাজে কিসব বলছেন? রেনর তেড়ে উঠল। চোখ দুটো জ্বলছে।
স্যার ক্লড হাতের ইঙ্গিতে তাকে থামিয়ে দিলেন–যেমনটি ঘটেছে আমি তার পুনরাবৃত্তি করছি। স্টাডিতে ঢুকে রেনর নিজের কাজে মন দিল। ঠিক এই সময় স্টাডির দরজাতে এসে পা রাখলেন ডঃ কারোলি। তাকে দেখে রেনর ঘর থেকে বেরিয়ে এল, অর্থাৎ কারোলি তখন স্টাডিতে একা। রেনর এসে লুসিয়াকে খবরটা দিল যে, রেনর ছাড়া ওঘরে কেউ নেই।
–স্যার ক্লড আপনি কি আবোল তাবোল বলছেন! সব মিথ্যে। চেঁচিয়ে উঠে ডঃ কারোলি প্রতিবাদ করার চেষ্টা করলেন। কিন্তু স্যার ক্লডের হাতের ইশারায় তাকে থামতে হল।
-খানিকবাদে বসার ঘরে অর্থাৎ এখানে এসে ঢুকল আমার বোন ক্যারোলিন আর ভাইঝি বারবারা। ওদের দেখে রেনর চুপচাপ স্টাডি থেকে বেরিয়ে এল, ক্যারোলিন আর বারবারার সঙ্গে গল্পে মেতে উঠল, এরপরে ডঃ কারোলি এসে যোগ দিলেন ওদের সঙ্গে। অর্থাৎ আমার বোন আর ভাইঝি ছাড়া সকলেরই ওই সময়টুকুতে স্টাডিতে পা পড়েছে।
-জ্যেঠু, বারবারা বাঁকা চোখে একবার পিসি ক্যরোলিনের দিকে তাকিয়ে দৃষ্টি সরিয়ে নিল। বলল–তুমি ভুল বলছ। তোমার সন্দেহভাজনদের তালিকায় আমার নামটাও জুড়ে দেওয়া উচিত। কারণ, তুমি হয়তো দেখোনি, তবু বলছি, একটু আগে পিসিমা আমায় বলেছিল, সেলাইয়ের বাক্সে সূঁচ খুঁজে পাচ্ছে না, নিশ্চয়ই মনের ভুলে স্টাডিতে রেখে এসেছে, আমি যেন খুঁজে সেটা নিয়ে আসি। পিসিমা, ও পিসিমা, তুমি এখন চুপ করে আছ কেন? তোমার কথাকে বিশ্বাস করেই তো আমি তো জ্যেঠুর স্টাডিতে ঢুকে ছিলাম।
বারবারা একটানা কথাগুলো বলে গেল বটে, কিন্তু ধোপে টিকল না। নিজের কথার জের টেনে স্যার ক্লড বললেন কিছুক্ষণ কেটে যাবার পর রিচার্ড স্টাডিতে ঢুকল, অন্য কেউ সে সময় ঘরে ছিল না, কয়েক মিনিট সেখানে ছিল।
-বাবা, তুমি থামবে? রিচার্ডের উত্তেজিত কর্কশ কণ্ঠস্বর শোনা গেল নিজের ছেলেকে চোর বদনাম দিচ্ছ? এতজনের মধ্যে আমাকেই তোমার মনে হল চোর, তাই না? ধানাই পানাই করে এটা ওটা বলে সেটাই প্রমাণ করতে চাইছ। তোমার ওই কাকের ঠ্যাং বকের ঠ্যাং ফর্মুলা নিতে আমার বয়েই গেছে।
-যাকে তুমি কাকের ঠ্যাং বকের ঠ্যাং বলছ, তার মূল্য জানা আছে তোমার? লক্ষ লক্ষ পাউন্ড, তোমার ধারণার বাইরে। ছেলের চোখে চোখ রেখে স্যার ক্লড বললেন।
-বুঝেছি, রিচার্ড পালটা জবাব দিল, এদিকে প্রচুর টাকা আমি ধার করে বসে আছি, এই কথাটাই তো তুমি সকলকে বোঝাতে চাইছ, ঠিক বলেছি তো?
–আমার কথা এখনও বাকি আছে, ছেলের দিকে দৃষ্টি সরিয়ে স্যার ক্লড বললেন রিচার্ড কয়েক মিনিট একলা ওখানে কাটানোর পর লুসিয়াকে বসার ঘরে আসতে দেখে স্টাডি থেকে বেরিয়ে পড়ল। ডিনারের ঘণ্টা পড়তে তখনও অনেক বাকি, লুসিয়া স্টাডিতে ঢুকে সিন্দুকের পাশে দাঁড়াল–আমি তার গতিবিধির ওপরে নজর রেখেছি।
-ওহ, কি হচ্ছে বল তো? রিচার্ড খুব জোর রেগে গেছে। দ্রুত পায়ে লুসিয়ার পাশে চলে এল, দুই হাত দিয়ে জড়িয়ে ধরে স্ত্রীকে নিরাপত্তার বাঁধনে বন্দী করল–কি বলতে চাইছ পরিষ্কার ভাবে বল। সকলে শুনুক। আমাদের স্বামী-স্ত্রীর বিরুদ্ধে তোমার মনে সন্দেহ যদি সত্যিই উঁকি দিয়ে থাকে, সাফ বলি, যে কোন পরিস্থিতির মোকাবিলা করতে আমরা প্রস্তুত।
পরের ঘটনা বলছি, স্যার ক্লড নিজের কথা বলে চললেন,–ডিনারে যাওয়ার আগে আমি দেখলাম, লুসিয়া আপন মনে সিন্দুকের কোল ঘেঁষে দাঁড়িয়ে আছে। ওর উত্তেজনাপূর্ণ মুখ-চোখ দেখে আমার মনে হল, ওর শরীর খারাপ লাগছে। লুসিয়া নিজেও সেকথা মুখে প্রকাশ করল। আমি ওকে একটু ওয়াইন খাওয়ার পরামর্শ দিলাম। কারণ মেয়েদের শরীর নানা কারণে খারাপ হয়। খানিকটা অ্যালকোহল পেটে পড়লে শরীর চাঙ্গা হবে। আমার কথার গুরুত্ব না দিয়ে লুসিয়া বলল, ওসবের দরকার হবে না। কিছুক্ষণ পরে আপনা আপনিই ঠিক হয়ে যাবে। কথা শেষ করে লুসিয়া ওখান থেকে চলে এল। আমি তখন স্টাডিতে একা। হঠাৎ মনে যেন কেমন খটকা লাগল। সিন্দুক খুললাম, দেখি বড় খাম সমেত ফর্মুলা সেখানে নেই, উধাও হয়ে গেছে।
স্যার ক্লড থামলেন। ঘরের, মধ্য তখন পিনপতন নীরবতা, গৃহকর্তা সকলের মুখের দিকে তাকালেন। কঠিন চোখে জরিপ করলেন। বুঝতে পারলেন, প্রত্যেকেই ফর্মুলা খোয়া যাওয়ার ঘটনার গুরুত্ব অনুধাবন করতে পারছে।
-সব শুনলাম, বাবা। কিন্তু তুমি কেন আমাদের স্বামী-স্ত্রীকে দোষী ভাবছ, বুঝতে পারছি না। রিচার্ড রুক্ষ্ম গলায় জানতে চাইল…..।
-দোষী ভাবার অবশ্যই কারণ আছে নিজের চোখে আমি সব দেখেছি, উড়িয়ে দিই। কি করে, স্যার ক্লড ছেলের দিকে তাকিয়ে বলতে থাকলেন, তাছাড়া ট্রেডওয়েলের কাছে খোঁজ খবর নিয়ে যেসব তথ্য পেয়েছি, সব মিলিয়ে এইরকমই দাঁড়ায়।
ক্যারোলিন এবার শাণিত তরবারির মতো আঘাত হানলেন কিন্তু ট্রেডওয়েল বা বাড়ির অন্যান্য চাকর-বাকরদের তুমি তোমার সন্দেহের বাইরে রেখেছ কেন, ক্লড? বাইরে যাদের সন্দেহ করছ, তারা তোমারই পরিবারের একজন।