স্টাডির দরজা আবার খুলে গেল। বেরিয়ে এল রিচার্ড। দেখল লুসিয়া আর ডঃ কারোলি ঘনিষ্ঠভাবে কথা বলছে। সেদিকে কোন ভ্রূক্ষেপ না করে সে মাঝখানের টেবিলের সামনে এসে দাঁড়াল। দেখল ওষুধের শিশি আর টিউবগুলো তখনও পড়ে আছে। সেগুলো বাক্সের মধ্যে সাজিয়ে রাখার কাজে ব্যাপৃত হল।
ডঃ কারোলি একফাঁকে দৃষ্টি ঘুরিয়ে নিলেন ঘরময় বারবারা আর রেনর নাচে মশগুল রিচার্ড ওষুধের বাক্স সাজাতে ব্যস্ত। আর পিসি ক্যারোলিন ঘুমে ঢুলছেন। অর্থাৎ তিনি উপস্থিত সকলের নজরের বাইরে উপযুক্ত সময়। কাজের কথায় আসা যাক।
তিনি লুসিয়ার পাশে বসে পড়লেন তোমায় যা করতে বলেছিলাম, তা করেছ নিশ্চয়ই। চাপা অথচ ব্যস্ত কণ্ঠস্বর।
–আপনি সত্যিই নিষ্ঠুর। লুসিয়ার ফিসফিসানি কণ্ঠস্বর।
-বাজে কথা ছাড়। ডঃ কারোলি সামান্য ধমকে উঠলেন, যেটা করতে বলেছিলাম, তা করেছ কিনা বল?
লুসিয়া ভয় পেয়েছে। অস্ফুটে কয়েকটি শব্দ বলতে বলতে ছুটে এল বসার ঘরের দরজার কাছে লোকটাকে সে মোটেও সহ্য করতে পারছে না। সে দরজার হাতল ঘোরালো। দরজা খুলল না। আবার চেষ্টা করল, বারবার–তবুও ব্যর্থ হল।
হতাশা ভরা চাউনিতে লুসিয়া পেছন ফিরে তাকাল। উপস্থিত সকলের উদ্দেশ্য চেঁচিয়ে বলল–দেখুন না, দরজাটা কিছুতেই খুলতে পারছি না।
–কেন, কি হল? নাচতে নাচতে বারবারা জানতে চাইল।
কি জানি, দরজাটা খুলছে না। লুসিয়ার গলা থেকে আর্তনাদ ভেসে এল।
নাচ থেমে গেল, বারবারা ছুটে এল, পেছনে রেনর। দুজনে চেষ্টা করল, কিন্তু সব ব্যর্থ। লুসিয়া বোকার মতো ভীত চকিত চিত্তে দাঁড়িয়ে আছে।
বাজনাটা বোধহয় শেষ হয়ে এসেছে, রিচার্ড এগিয়ে গিয়ে গ্রামোফোনের সাউন্ডবক্স বন্ধ করে দিল। দ্রুত পায়ে ছুটে এল দরজার পাশে, হাতল ধরে ঘোরালো এপাশ-ওপাশ। না, সে বেচারীকে হাল ছেড়ে দিতে হল। ডঃ কারোলি ততক্ষণে বইয়ের শেলফের পাশে এসে দাঁড়িয়েছেন। আর মিস ক্যারোলিন অ্যামরি? আচমকা চেঁচামেচিতে তার তন্দ্রা কেটে গেল, চোখ খুললেন, ব্যাপারটা বোঝার চেষ্টা করলেন।
ইতিমধ্যে স্যার ক্লড তার স্টাডি থেকে বেরিয়ে এসেছেন, সকলের পেছনে দাঁড়িয়ে মজা দেখছেন আর কফির কাপে সুখটান দিচ্ছেন। কেউ তার উপস্থিতি টের পেল না।
এবার বীরদর্পে এগিয়ে এল এডওয়ার্ড রেনর। দরজার হাতল ঘোরাল–আশ্চর্য, তালাটা বোধ হয় কোনভাবে এঁটে গেছে, তাই হয়তো…..
পেছন থেকে স্যার ক্লড অ্যামরির গম্ভীর গলা ভেসে এল–রেনর, তোমার ধারণা ভুল। সেক্রেটারির দিকে তাকালেন, তালা ঠিকই আছে, বাইরে থেকে ওটা বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে।
বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে মানে? ক্যারোলিন চমকে উঠলেন, কিছু বলার চেষ্টা করলেন। ভাই তাঁকে থামিয়ে দিয়ে বললেন–আমিই বলেছি, এ এমনই তালা, ভেতর থেকে হাজার চেষ্টা করলেও খুলবে না।
স্যার ক্লড এসে দাঁড়ালেন কফি টেবিলের সামনে। সুগার পট থেকে কয়েক চামচ চিনি নিয়ে কাপের কফিতে মিশিয়ে দিলেন। সবাইকে খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে দেখতে দেখতে বললেন–তোমাদের সাথে কিছু কথা আছে, তাই স্টাডি থেকে, বেরিয়ে এলাম। ও হ্যাঁ, রিচার্ড, স্যার ক্লড ছেলের দিকে তাকিয়ে হুকুম দিলেন–ঘণ্টা বাজাও, ট্রেডওয়েলকে ডাকো, গ্যারাজে টেলিফোন করতে বলেছিলাম, কি করল দেখি।
রিচার্ড বাবার কথা শুনে কিছু বলতে যাচ্ছিল, কি মনে করে মুখ টিপে এগিয়ে গেল ফায়ার প্লেসের দেওয়ালের দিকে। এখানেই ঘণ্টার বোতাম সাঁটা আছে।
দরজার সামনে তখনও কৌতূহলী মুখে সকলে দাঁড়িয়ে আছে। স্যার ক্লড বললেন কি হল, ওভাবে সবাই দাঁড়িয়ে আছ কেন? বসো। আমার সব কথা তোমরা শোন।
ধীর পায়ে চিন্তিত মনে সকলে যে যার আসনে বসে পড়ল। টুলে বসলেন ডঃ কারোলি। রিচার্ড এগিয়ে এসে দাঁড়াল। রেনর আর লুসিয়া ফায়ারপ্লেসের কাছাকাছি দুটো চেয়ার দখল করল। সোফায় দুটো গদিতে হেলান দিয়ে পাশাপাশি বসেছে পিসি-ভাইঝি।
এই সময় বাইরে থেকে টুক করে দরজার কপাট খুলে গেল। দেখা গেল ট্রেড ওয়েলকে। সে তার মনিবের কাছে জানতে চাইল, তাকে কেন ডাকা হয়েছে।
–ট্রেডওয়েল, স্যার ক্লড জানতে চাইলেন, ডিনার টেবিলে তোমাকে একটা টেলিফোন নম্বর দিয়ে কি করতে বলেছিলাম মনে আছে?
-হ্যাঁ স্যার, মনে আছে। বাটলার জানাল, যা বলতে বলেছিলেন ওই নম্বরে ফোন করে জানিয়ে দিয়েছি অনেকক্ষণ আগে।
-স্টেশনে ওরা গাড়ি পাঠাবে তো?
–হ্যাঁ, স্যার, ট্রেন স্টেশনে ঢোকার আগেই ওদের গাড়ি পৌঁছে যাবে।
–বেশ, এবার তুমি যেতে পারো। স্যার ক্লড হুকুমের সুরে বললেন–বাইরে থেকে তালাটা এঁটে দিয়ে যেও।
–আচ্ছা, ট্রেডওয়েল দরজার বাইরে চলে গেল। পরমুহূর্তেই চাবি আঁটার মৃদু শব্দ।
–ক্লড, ক্যারোলিন আর উত্তেজনা চেপে রাখতে পারছেন মা–কি ব্যাপার বল তো? ট্রেডওয়েল, দরজায় বাইরে থেকে তালা চাবি লাগিয়ে দিল কেন? কি চায় ও?
ট্রেডওয়েল, আমার হুকুম পালন করছে মাত্র। স্যার ক্লডের কঠিন কণ্ঠস্বর।
–কিন্তু, রিচার্ড নিস্পৃহ গলায় প্রশ্ন করল, এসবের মানে কি, এ প্রশ্ন তো আমরা করতেই পারি, তাই কিনা?
–নিশ্চয়ই, প্রশ্নের উত্তর পাবে, শান্ত হও। স্যার ক্লড বলে চললেন, প্রথমেই বলি, তোমরা সকলেই জান, আমার স্টাডিতে ঢুকতে হলে দুটো দরজা পার হতে হয়। লাইব্রেরির গায়ে ওই ছোটো দুটো দরজা, চোখের ইঙ্গিতে সেদিকটা দেখালেন, আবার বলতে শুরু করলেন, ওই দুটো কিন্তু বাইরে থেকে বন্ধ। আমার স্টাডি থেকে কাউকে বাইরে বেরতে হলে এই বসার ঘরের দরজা দিয়েই যেতে হবে। বসার ঘরের ওই ফ্রেঞ্চ জানলা দুটোও একইভাবে আটকান।