-এতক্ষণে তোর সুবুদ্ধির দোর খুলেছে দেখছি, পিসিমা খুশি হলেন, লুসিয়ার দিকে তাকিয়ে বললেন–ও, তুমি তো আবার এডনাকে চেনো না। বারবারার বড় বোন এডনা। সে এখন ইন্ডিয়াতে আছে তার স্বামীর সাথে খুব ভাল মেয়ে, নিখুঁত তার কাজকর্ম। এডনা চলে যাবার তিনমাস পর তুমি এখানে এসেছ।
-সত্যি, তা যা বলেছ, নিখুঁত কাজ। পিসিমার পেছনে লাগার মতো একটা অস্ত্র বারবারার হাতে এসে গেছে, এ সুযোগ আর কি ছাড়ে?–খাঁটি মেয়ে বলেই তো ইন্ডিয়াতে যেতে না যেতেই সন্তানের মা হয়েছে–একটা নয়–দু-দুটো। ইন্ডিয়াতে বৈচিগাছের ঝোপ নেই বলেই আমার ধারণা, তবে সারস পাখি আছে। নিশ্চয়ই বাচ্চা দুটোকে কোন জাম গাছের নীচে ঘাসের বিছানায় সারাস পাখি রেখে গিয়েছিল তাই তো?
-মুখটা বন্ধ কর, বারবারা। ক্যারোলিন ধমকে উঠলন, লাগাম ছাড়া মুখ, কিছু আটকায় না। চোখ ফেরালেন লুসিয়ার দিকে হা, যে কথা বলছিলাম। ঘরে বসে সময় খরচ করা এডনার ধাতে ছিল না। সে তাই এখানকার কাউন্টি হাসপাতালের ডিসপেনসারিতে যোগ দিল। তার দৌলতে সারা টাউন হলটা হাসপাতালে পরিণত হয়েছিল। যুদ্ধ একদিন শেষ হল, এডনা কাজ ছাড়ল না। বিয়ের আগে পর্যন্ত সে কাজ চালিয়ে গেছে। এমনকি এখানকার কাউন্টি হাসপাতালের ডিসপেনসারিতেও তার ডাক পড়েছিল। ধীরে ধীরে ওর অসুখ-বিসুখ সারিয়ে তোলার একটা প্রাথমিক ধ্যানধারণার জন্ম হয়েছিল। কোন ওষুধ, কোন বড়ি, কোন রোগে লাগবে, এ জ্ঞানটা ও ইন্ডিয়াতে গিয়ে কাজে লাগাতে পারবে বলে আমার ধারণা। তারপর কি হল? হ্যাঁ, মনে পড়েছে। এডনা চলে গেল, কিন্তু ওর যত ওষুধের শিশি পড়ে রইল এ বাড়িতে। কিন্তু সেগুলো গেল কোথায়?
-আমি বলছি, বারবারা বলতে শুরু করল, ওগুলো একটা কালো টিনের বাক্সে ভরে তুলে রাখা হয়েছিল চিলেকোঠার ঘরে। পারিষ্কার মনে আছে আমার। ইন্ডিয়ায় যাবার আগে এডনা সেগুলো নামিয়ে নিয়ে এল। নিজেদের বাক্স প্যাটরা গোছগাছ করল। আর ওটা তুলে রাখল ওখানে। আঙুল তুলে সে বইয়ের তাকটা দেখিয়ে দিল, সেই থেকে একইভাবে পড়ে আছে, কেউ হাত দেবার প্রয়োজনও মনে করেনি। কোনটা প্রয়োজনীয়, কোনটা নয়, সব বোঝাই হয়ে আছে।
কথা শেষ করে বারবারা উঠে দাঁড়াল। চেয়ারটা টেনে নিয়ে এল বইয়ের তাকের কাছে। উঠে দাঁড়াল। হাত বাড়িয়ে নামিয়ে নিয়ে এল কালো টিনের বাক্সটা।
–ওষুধ আমার প্রয়োজন নেই, লুসিয়া আঁতকে উঠে বলল, আমি ভালই আছি, বিশ্বাস কর।
লুসিয়ার কথায় আমল না দিয়ে বাক্সটা নীচে রাখতে রাখতে বলল–বেশ, তোমার কথাই সই। তবে কষ্ট করে এতদিন পরে এটাকে যখন নামালাম, তখন একবার খুলে না দেখলে চলে।
টিনের বাক্সের ঢাকনা ইতিমধ্যে খুলে গেছে। বারবারা হাত ঢোকাল। দু-আঙুলের ফাঁকে একটার পর একটা শিশি তুলে ধরল। শিশির পায়ে সাঁটানো লেবেলগুলো দেখে তার চোখ ছানাবড়া। ফিসফিসিয়ে বলল–বাব্বাঃ এতে যেমন তেমন ধনভান্ডার নয়। এটা আয়োডিন……….এটা কি……….. ফ্রায়ার্স বালমাস……. ক্যাস্টর অয়েল নাকি?
আবার সে বাক্সের ভেতর হাত ঢোকাল–কয়েকটা বাদামি রঙের কাঁচের টিউব। বারবারা হাসতে হাসতে বলল–এ যে মারাত্মক ওষুধ। মানুষ মারতে ওস্তাদ অ্যাস্ট্রোপিন…….মরফিন ….স্ট্রিকনিন। ক্যারোলিন পিসিমা, তুমি কোথায়? খুব সাবধান, আমার পেছনে লেগো না। তাহলেই সর্বনাশ। এই যে, স্ট্রিকনি দেখছ, কফিতে কয়েকফোঁটা মিশিয়ে দিলে আর রক্ষা নেই। বুকের যন্ত্রণায় কাটা ছাগলের মতো দাপাদাপি করবে, অভিনয় করে দেখাল সে, তারপর সব শেষ–মৃত্যু!
ভাইঝির ভেংচিকাটা কথাবার্তা শুনে ক্যারোলিনের মধ্যে কোন প্রতিক্রিয়া দেখা গেল না।
নাঃ, শুধু খেটেই মরলাম, লাভ হল না কিছু। নামিয়ে রাখা শিশি আর টিউবগুলো স্বস্থানে রাখতে রাখতে বারবারা ফিসফিসিয়ে বলল–এমন কিছু নেই, যা খেয়ে লুসিয়া চাঙ্গা হতে পারে।
এমন সময় বসার ঘরের দরজা খুলে গেল। একে একে সকলে এসে ঢুকলেন–প্রথমে বাটলার ট্রেডওয়েল। তার পেছন গৃহকর্তা স্যার ক্লড অ্যামরি, পেছনে তার সেক্রেটারি এডওয়ার্ড রেনর এবং পারিবারিক অতিথি ডঃ কারোলি।
-হ্যালো, মি. রেনর বারবার তার সামনে এসে পড়ল বারবারা, শিশি আর টিউবগুলো রাখতে রাখতে বাক্সটা দেখিয়ে সে বলল–এগুলো সব বিষ! কোন কৌতূহল আছে? দেখবেন নাকি একবার?
রেনর এ প্রশ্নের কোন জবাব দিল না। বছর তিরিশের এক সাধারণ চেহারার শান্ত গোবেচারা যুবক।
ডঃ কারোলি এবার টেবিলের সামনে এসে দাঁড়ালেন। বয়স চল্লিশের কাছাকাছি, গায় তামাটে বর্ণ, ইভনিং স্যুটটা ভালই মানিয়েছে তাকে। বারবারার দিকে একটু ঝুঁকে জানতে চাইলেন–এগুলো ঘাঁটাঘাঁটি করছেন কেন, মিস অ্যামরি?
তখনও দরজার সামনে দাঁড়িয়ে আছেন স্যার ক্লড, ভৃত্যের উদ্দেশ্যে বললেন ট্রেডওয়েল, একটু আগে তোমাকে যে কাজের দায়িত্ব দিয়েছিলাম, সেটা করেছ?
–আজ্ঞে, করেছি স্যার ক্লড। কথা শেষ করে ট্রেডওয়েল সেখান থেকে প্রস্থান করল।
ডঃ কারোলির কাছ থেকে বিদায় নিয়ে স্যার ক্লড বললেন–কিছু মনে করবেন না, আমায় এবার যেতে হবে, দরকারি কাজ আছে, কয়েকখানা জরুরি চিঠি লিখে আজ রাতেই পাঠাতে হবে।
কথা শেষ করে স্যার ক্লড সেক্রেটারি রেনরকে সঙ্গে নিয়ে লাগোয়া স্টাডিতে ঢুকে পড়লেন। দরজার কপাট বন্ধ হওয়ার শব্দ হল। বারবারার হাতে ধরা ওষুধের টিউবটা ছিটকে পড়ল কারণটা কেউ জানে না।
০৪. ডঃ কারোলির সন্ধানী দৃষ্টি
০৪.