এখন তাকে একটু স্বাভাবিক বলেই মনে হয়। তাই তাকে ছেড়ে আমি চলে এলাম ডঃ লিডনারের কাছে এবং তাকে আমাদের আলোচনার কথা সব খুলে বললাম।
ও যে তোমাকে সব কথা বলেছে, শুনে আমি খুশি হলাম, ডঃ লিডনার বললেন, ওই ঘটনাটা আমাকে দারুণ একটা আতঙ্কের মধ্যে ফেলে রেখেছে। আমার ধারণা ওর বর্ণনা মতে, জানালার উপর টোকা মারা, লোকের মুখের আবির্ভাব ঘটা, এ সবই ওর পক্ষে একটা অনুমান মাত্র। এর প্রতিকারের পথটা আমার জানা নেই। তা সামগ্রিক ভাবে ব্যাপারটা তোমার কি মনে হয়?
তিনি কি বলতে চান ঠিক বুঝতে পারলাম না। তবে সঙ্গে সঙ্গে আমি উত্তর দিলাম, হ্যাঁ, এটা সম্ভব। ওই সব চিঠিগুলি একটা নিষ্ঠুর আক্রোশের নিটফল ছাড়া আর কিছু নয়।
হ্যাঁ, তা অবশ্য হতে পারে কিন্তু আমাদের তরফ থেকে করণীয় কী থাকতে পারে? চিঠিগুলো ওকে পাগল করে তুলেছে। আমি আর ভাবতে পারছি না। আমি নিজেই বোধহয় পাগল হয়ে যাব। আমার কিন্তু অতো চিন্তা নেই। আমার মনে তখন একটা কথাই বার বার গুঞ্জন তুলছিল, এ ব্যাপারে কোন মহিলার হাত থাকাটা একেবারে উড়িয়ে দেওয়া যায় না। চিঠিগুলির হস্তাক্ষর দেখে মনে হয় তা কোন মহিলার লেখা। এ প্রসঙ্গে মিসেস মারকাভোর মুখটা বার বার উঁকি দিতে থাকে আমার মনে। আচ্ছা যদি ধরে নেওয়া যায় যে, মিসেস লিডনারের প্রথম বিবাহের সমস্ত ঘটনার পূর্ণ বিবরণ তার জানা। সাধারণতঃ মেয়েরাই মেয়েদের পরম শত্ৰু, এই প্রবাদটা সত্যি ধরে নিলে স্বভাবতই মনে হয়, মিসেস লিডনারের উপর আক্রোশ চরিতার্থ করার জন্য তিনি এমন জঘন্য পথ বেছে নিয়েছেন। তবে এই মুহূর্তে আমার এই অনুমানের কথা ডঃ লিডনারকে আমি বলতে চাই না। কারণ সেটা তিনি কি ভাবে নেবেন সেটা বোঝা শক্ত।
ও হ্যাঁ, উৎফুল্ল হয়ে আমি বললাম, আমরা ভাল জিনিসই আশা করব। আমার মনে হয় কথাগুলো খোলাখুলি বলে তিনি এখন যথেষ্ট হাল্কা বলে মনে করছেন নিজেকে।
ও যে তোমাকে সব কথা খুলে বলেছে, এটা খুবই ভাল লক্ষণ। ডঃ লিডনার বলেন। এর থেকে বোঝা যায়, ও তোমাকে বিশ্বাস করে। কি করলে ওর ভাল হয়, ভাবতে ভাবতে আমি একেবারে চরম হতাশার মুখোমুখি এসে দাঁড়িয়েছিলাম।
একবার মনে হল জিজ্ঞাসা করি, আপনি কি স্থানীয় থানায় ব্যাপারটা জানাবেন, কিন্তু পর মুহূর্তেই আমি নিজেকে সামলে নিলাম কথাটা চেপে গিয়ে।
পরদিন একটা অদ্ভুত ঘটনা ঘটল। শ্রমিকদের মাহিনার টাকা আনবার জন্য কোলম্যান হাসানিয়ে যাবার জন্য প্রস্তুত। রোজকার অভ্যাস মতো আমাদের ডাকের চিঠিগুলো তার সংগ্রহ করে নিয়ে যাবার কথা। ডাইনিংরুমের একটা কাঠের বাক্সে আমরা যে যার চিঠি ফেলে রাখি, যেখান থেকে চিঠিগুলো সংগ্রহ করে থাকে মিঃ কোলম্যান। সেই চিঠিগুলো গুছিয়ে নিতে গিয়ে হঠাৎ সে চিৎকার করে ওঠে।
কি ব্যাপার? আমি তার কাছে গিয়ে শুধোই।
এই দেখো, আমাদের প্রিয় লুসির কাণ্ড দেখো। উনি কাকে যেন চিঠি লিখছেন, ৪২তম স্ট্রীট, প্যারিস, ফ্রান্স। কিন্তু আমার মনে হয় না, ঠিকানাটা ঠিক। তিনি মনে হয় এখন বিছানায়, দয়া করে তুমি ওঁর কাছে গিয়ে সঠিক ঠিকানাটা লিখিয়ে আনবে?
চিঠিটা তার হাত থেকে নিয়ে আমি দ্রুত মিসেস লিডনারের ঘরে ছুটে যাই। এবং ঠিকানাটা তিনি সংশোধন করে দেন সঙ্গে সঙ্গে।
এই প্রথম আমি মিসেস লিডনারের হাতের লেখা দেখি। এবং ভাল করে দেখতে গিয়ে হঠাৎ, হা হঠাৎই কেন জানি না আমার মনে হল, এরকম হাতের লেখাটা আমার কাছে খুব যেন পরিচিত।
মাঝরাতে হঠাৎ আমার খেয়াল হল, হাতের লেখাটা যে কার, সেটা আমি ধরে ফেলেছি। কেবল সেই লেখাগুলো একটু বড় আকারের এবং বিক্ষিপ্ত ভাবে ছাড়ানো। মিসেস লিডনারের হাতের লেখার সঙ্গে সেই ছদ্ম নামের লেখা চিঠিগুলোর একটা অদ্ভুত মিল আছে।
একটা নতুন সম্ভাবনার কথা হঠাৎ অমার মাথায় এল। তবে, তবে কি মিসেস লিডনার কল্পনা করে নিয়ে নিজেই সেই চিঠিগুলো লিখেছিলেন?
এবং সেই সম্ভাবনার কথাটা কি ডঃ লিডনার জেনে গেছেন।