অসহায়ভাবে মাথা নাড়েন ডঃ লিডনার, না আত্মহত্যা সে করতে পারে না।
কিন্তু এখন কথা হচ্ছে, মেটল্যান্ড বলেন, এই ভারী জিনিসটা কোথায় সে লুকিয়ে রাখল?
হঠাৎ একটা সম্ভাবনার কথা আমার মনে হল, কেন সেই কাপবোর্ডের মধ্যে? কিন্তু আমি কিছুই বললাম না।
যেখানেই সেটা থাকুক না কেন, মনে হয় আত্মহত্যা করার আগে মিস জনসন সেটা নিজের ঘরে এনে থাকবে।
এ আমি বিশ্বাস করি না, চিৎকার করে বলে উঠলাম আমি। আমি ভাবতেই পারি না, অমন নিষ্ঠুরভাবে মিসেস লিডনারের মাথায় মিস জনসন কি করে আঘাত করল? এ যেন অবিশ্বাস্য ব্যাপার। আর এই কারণেই বোধহয় বিশ্বাস করা যায় না, অনুশোচনার জন্য তিনি আত্মহত্যা করতে পারেন!
কি যে বিশ্বাস করতে হবে, আমি নিজেই সে কথা জানি না।ক্যাপ্টেন মেটলান্ড ধীরে ধীরে বলতে থাকেন। এরই মাঝে ফাদার ল্যাভিগনির হঠাৎ অদৃশ্য হওয়ার ব্যাপারটাও বড় রহস্যজনক, সেই রহস্যটাও আগে পরিষ্কার হওয়া দরকার। ওঁদের মত তিনিও যদি আমাদের প্রজেক্টের কোথাও মাথায় আঘাত পেয়ে পড়ে থাকেন, সেটা দেখার জন্য আমরা লোক পাঠিয়েছি।
ওহো, এবার আমার মনে পড়েছে আমি বলতে শুরু করি। সবার কৌতূহলী দৃষ্টি আমার দিকে তখন।
ঘটনাটা গতকাল অপরাহ্নের আমি বলি–ফাদার ল্যাভিগনি আমাকে জিজ্ঞাসা করছিলেন, রহস্যময় ট্যারাচোখা যে লোকটা মিসেস লিডনারের ঘরের জানালার সামনে দাঁড়িয়েছিল, কোন্ পথ দিয়ে সে অদৃশ্য হয়ে যায়? তার ধারণা ছিল, অপরাধ বিজ্ঞানের মতে ঘটনাস্থলে একটা না একটা কোন চিহ্ন ঠিক ফেলে রেখে যায় অপরাধী। সেই ক্লু আবিষ্কার করার জন্য তিনি বাইরে একটু ঘুরে আসতে চান।
ওসব অপরাধ-বিজ্ঞানের সূত্র-টুত্র রেখে দাও। ক্যাপ্টেন মেটল্যান্ড বিরক্ত হয়েই বলেন, ফাদার ল্যাভিগনির আসল উদ্দেশ্যটা কি তা আগে জানতে হবে। এক্ষেত্রে আমার অনুমান, মিস জনসন এবং তিনি প্রায় একই সময় একটা ক্লু আবিষ্কার করে থাকবেন। উত্তেজিত হয়ে তিনি বলতে থাকেন, ট্যারাচোখো লোক! ট্যারাচোখো লোক! আমি বুঝতে পারছি না, আমার নোক কেন যে তাকে ধরতে পারছে না!
সম্ভবতঃ সে আদৌ ট্যারাচোখো নয় বলে! শান্তস্বরে পোয়ারো বললেন।
তবে কী আপনি মনে করেন ট্যারাচোখে তাকানোটা তার নকল? আসলে সে আদৌ ট্যারা নয়?
কথা প্রসঙ্গে পোয়ারো বলেন–তাহলে ট্যারাচোখের লোকটা এক্ষেত্রে অতি প্রয়োজনীয় বলে মনে হয়।
লোকটা ট্যারা কি ট্যারা নয়, সেটা মূল প্রশ্ন নয়–এখন সে কোথায়, সেটাই একমাত্র জানার বিষয়!
আমার অনুমান, পোয়ারো বলেন–এতক্ষণ সে বোধহয় সিরিয়ার সীমান্ত অতিক্রম করে গেছে।
সমস্ত সীমান্ত প্রহরীদের টেলিগ্রাম করে আমি সতর্ক করে দিয়েছি, প্রতিটি গাড়ি অনুসন্ধান করে দেখার জন্য। পাসপোর্টে গন্ডগোল থাকলে গাড়ি যেন আটক করা হয়। গাড়ির আরোহী দু’জন। তাই না মঁসিয়ে পোয়ারো?
পোয়ারো মাথা নাড়েন, হ্যাঁ, দু’জনই বটে!
মঁসিয়ে পোয়ারো, প্রথমেই আমার কেমন খটকা লেগেছিল, অনেক কথা আপনি আপনার পেটের মধ্যে রেখে দেন দেখছি।
পোয়ারো মাথা নাড়লেন। না, ঠিক তা নয়। আসলে আজই সকালে সত্য উদঘাটন হতে দেখলাম। আমি তখন সূর্যোদয় দেখছিলাম।
আমার মনে হয় না আপনারা কেউ মিসেস মারকাডোকে চুপিসারে ঘরে চলে যেতে দেখেছেন। অত বড় একটা রক্তপাত ঘটে গেল–আমরা তখন ঘটনার আকস্মিকতায় কিংকর্তব্যবিমূঢ়, অথচ তিনি তখন তার ঘরে একলা। আর তখন উনি এমন চিৎকার করছেন, যেন শূকর ছানার গলায় ছুরি বসানো হয়েছে।
হায় ঈশ্বর! মিসেস মারকাডো চিৎকার করে উঠলেন–এবার বুঝতে পারছি। এবার আমি বুঝতে পারছি, এসব কাজ ফাদার ল্যাভিগনির। পাগল তিনি ধর্মান্ধ তিনি। তার ধারণা, মেয়েরা পাপী! তিনি তাদের সবাইকে খুন করে ফেলবেন। প্রথমে মিসেস লিডনারকে, তারপর মিস জনসনকে। এবার আমার পালা।
আঁতকে উঠে ছুটে যান তিনি ডঃ রেলির দিকে। আমি আপনাকে বলে রাখছি, আর এক মুহূর্তও এখানে থাকব না। সাংঘাতিক লোক তিনি, নিশ্চয়ই এখানে কোথাও ওঁৎ পেতে বসে আছেন আমার অপেক্ষায়।
ডঃ রেলিকে সাহায্য করার জন্য মিসেস মারকাডোকে শান্ত করিয়ে একটা চেয়ারে বসালাম, কেউ আপনাকে খুন করতে যাচ্ছে না। আমি তাকে আশ্বাস দিয়ে বললাম, আপনি শান্ত হন, আপনার কোন ভয় নেই।
তারপর আর এক বাধা, দরজা ঠেলে শীলা রেলি ঘরে এসে ঢুকলেন। তার মুখটা থমথমে দেখাচ্ছিল। সোজা সে চলে এল পোয়ারোর কাছে। একটু আগে আমি পোষ্ট অফিসে যাই মঁসিয়ে পোয়ারো, যেখান থেকে আপনার একটা টেলিগ্রাম নিয়ে এসেছি।
ধন্যবাদ মাদমোয়াজেল।
ওটা কী আমেরিকা থেকে আসছে? মিসেস মারকাড়ো তার দিকে দৃষ্টি রেখে জিজ্ঞাসা করলেন।
পোয়ারো মাথা নাড়লেন। না ম্যাডাম, এটা আসছে টিউনিস থেকে।
একটু সময় পোয়ারোর দিকে তাকিয়ে থেকে তিনি দীর্ঘশ্বাস ফেলে বললেন, ফাদার ল্যাভিগনি, আমার অনুমান তাহলে ঠিক! সাংঘাতিক লোক তিনি। না, এক মুহূর্তও আমি আর এখানে থাকব না। একটু থেমে তিনি আবার বলতে থাকেন, এ জায়গা আমাকে ছেড়ে যেতেই হবে। এখন আমি আর জোসেফ রেস্ট হাউসে গিয়ে রাতটা কাটিয়ে দিতে চাই।
ধৈর্য ধরুন ম্যাডাম, পোয়ারো ধীরে ধীরে মুখ খুললেন–আমি আপনাদের কাছে সব ব্যাখ্যা করে বলছি।
ক্যাপ্টেন মেটল্যান্ড কৌতূহলী চোখ নিয়ে তাকিয়েছিলেন পোয়ারোর দিকে। ডঃ রেলির দিকে ফিরে পোয়ারো অনুরোধ করলেন, ডঃ রেলি, দয়া করে আপনি যদি সবাইকে খবর দেন এখানে চলে আসার জন্য, তাহলে আমার একটু উপকার হয়।