আমাদের অবস্থা দেখে তিনি পত্রপাঠ ফিরে গেলেন।
আমার ধারণা, করোসিভ অ্যাসিডেই মৃত্যু হয়ে থাকবে মিস জনসনের। ক্যাপ্টেন মেটল্যান্ড নতুন করে আমার কাছ থেকে জানতে চাইলেন, কখন কি অবস্থায় মিস জনসনকে আমি দেখতে পাই। সংক্ষেপে আমি তাকে উল্লেখযোগ্য ঘটনার কথা বললাম।
সব শুনে ক্যাপ্টেন মেটল্যান্ড গম্ভীরভাবে জিজ্ঞাসা করলেন–তাহলে আপনার অভিমত হল, মিস জনসন নিজেই সেই অ্যাসিড খেয়েছিলেন?
না, না, সঙ্গে সঙ্গে আমি প্রতিবাদ করে উঠলাম–ওরকম চিন্তা আমি কখনোই করতে পারি না। না, কখখনও নয়।
জানি না এত বিশ্বাস পেলাম কোথা থেকে? তবে এটুকু বলতে পারি যে, খুন একটা অভ্যাস, পোয়ারোর ওই মন্তব্যটা আমাকে কেমন বিশ্বাস করতে শিখিয়েছিল, মিস জনসন কখখনো আত্মহত্যা করতে পারেন না।
আমি ধরেই নিলাম আপনার অনুমানই ঠিক, ক্যাপ্টেন মেটল্যান্ড একটু চিন্তা করে আবার বললেন–কিন্তু কেউ যদি দুশ্চিন্তায় মানসিক ভারসাম্য হারিয়ে ফেলে এবং হাতের কাছে আত্মহত্যা করার রসদ পেয়ে যায়, সেক্ষেত্রে আপনার কী ধারণা হতে পারে নার্স?
কেন, মিস জনসন কি মানসিক ভারসাম্য সত্যি সত্যি হারিয়ে ফেলেছিলেন? আমার কেমন সন্দেহ হল।
মিসেস মারকাডো তো সেই কথাই বলেছেন। তিনি বলছিলেন, গতকাল নৈশভোজের সময় মিস জনসনকে নাকি অন্যমনস্ক দেখাচ্ছিল, কথা তিনি বলছিলেনই না একরকম। মিস জনসন যে মানসিক রোগে ভুগছিলেন এবং তার হাত থেকে রেহাই পেতে তিনি যে আত্মহত্যা করার পথ বেছে নেন, এব্যাপারে মিসেস মারকাডো নিশ্চিত।
ঠিক আছে আমি সরাসরি অস্বীকার করে বললাম–আমি মোটেও সে কথা বিশ্বাস করি না।
তাহলে আপনি কী মনে করেন?
খুন হয়েছেন তিনি? দ্বিধাহীন আমার উত্তর।
আপনার এই ব্যক্তিগত ধারণার পিছনে কোন যুক্তি আছে?
হ্যাঁ, আছে বৈকি! তারপর আমি তাকে গতকাল অপরাহ্নে মিস জনসনের সঙ্গে আলোচনার কথা সবিস্তারে বললাম।
তিনি কি দেখেছিলেন, সে কথা বলেননি?
না, আরও ভেবে দেখার জন্য সময় নেন তিনি।
তাঁর মনের কথাটা কি আপনি আন্দাজ করতে পারেন না নার্স?
না।
তা আপনি কী ভাবছেন মঁসিয়ে পোয়ারো? এবার পোয়ারোর দিকে ফিরে প্রশ্নটা রাখলেন ক্যাপ্টেন মেটল্যান্ড।
আমার মনে হয়, মোটিভ আপনার হাতের কাছেই রয়েছে।
খুনের?
হ্যাঁ, খুনের! অতঃপর পোয়ারো তার সন্দেহের কারণটা ব্যাখ্যা করে বলতে থাকেন, মৃত্যুর ঠিক পূর্ব মুহূর্তে মিস জনসন ইশারায় তার ঘরের জানালার দিকে ইঙ্গিত করেছিলেন। মনে হয় ওই জানালা পথে আততায়ী–
তা মিস জনসনের ঘরে কতগুলো জানালা আছে বলে মনে হয়?
একটিমাত্র, পোয়ারোর হয়ে উত্তরটা আমিই দিলাম।
ঠিক আছে বলে যান নার্স। ক্যাপ্টেন মেটল্যান্ড এবার আমার দিকে ফিরলেন, তারপর?
ওঁর ঘরের মধ্যে একটা অস্বাভাবিক জিনিস আমার নজরে পড়ে। আমি আমার সন্দেহের কথাটা এই প্রথম প্রকাশ করলাম, মাঝরাত্রে জল খাবার অভ্যাস ছিল মিস জনসনের। তাই তিনি তার বিছানা ঘেঁসে টেবিলের উপরে জলের গ্লাস রাখতেন। কিন্তু ঘরে ঢুকে দেখি সেই জল ভর্তি গ্লাসটা মেঝের উপরে পড়ে আছে।
এমনও তো হতে পারে, গ্লাসটা মিস জনসনের হাত থেকে পড়ে গিয়ে থাকবে।
তাহলে সেটা ভাঙ্গা অবস্থায় দেখতাম। কোন ভূমিকা না করে আমি এবার আসল কথাটা বললাম–মনে হয় আততায়ী সেই গ্লাসটা সরিয়ে টেবিলের উপরে অ্যাসিডের কাপটা রেখে থাকবে এবং মিস জনসন জল মনে করে আধো ঘুমে অ্যাসিডের পাত্রে চুমুক দিয়ে থাকবেন।
হ্যাঁ, ঘুমন্ত অবস্থায় এরকম ভুল সব মানুষই করে থাকে। ডঃ রেলি আমাকে সমর্থন করে বলেন, আমারও তাই ধারণা। মিস জনসন খুন হয়েছেন।
তাহলে এক্ষেত্রে ধরে নেওয়া যায় যে, হয় তিনি আত্মহত্যা –না হয় খুন হয়েছেন কী বলেন ডঃ লিডনার? ক্যাপ্টেন মেটল্যান্ড প্রশ্ন করলেন ডঃ লিডনারের দিকে তাকিয়ে।
আত্মহত্যা করার মত মেয়ে সে ছিল না– ডঃ লিডনার মন্তব্য করেন, অতএব ধরে নেওয়া যায় মিস জনসন খুন হয়েছেন।
হ্যাঁ, ঠিক তাই, ক্যাপ্টেন মেটল্যান্ড তার হাতের প্যাকেটটা খুলতে গিয়ে বললেন, আপনারা কেউই জানেন না নিশ্চয়ই এটা আমি মিস জনসনের বিছানার নিচ থেকে সংগ্রহ করেছি।
ক্যাপ্টেন মেটল্যান্ডের হাতে কাগজের ওই মোড়কটা আমি প্রথম থেকেই লক্ষ্য করেছিলাম। মোড়কটা খুলে একটা হস্তচালিত যাঁতা কিম্বা গ্রাইন্ডার জাতীয় পাথরের চাকা টেবিলের উপরে রাখলেন ক্যাপ্টেন মেটল্যান্ড।
একটা লোককে খুন করার পক্ষে এ জাতীয় ভারী পাথর যথেষ্ট, ক্যাপ্টেন মেটল্যান্ড ধীরে ধীরে বলেন–আমার বিশ্বাস, এর মধ্যে আর কোন সন্দেহ থাকতে পারে না।
.
২৬.
এরপর আমার পালা
এ এক ভয়ঙ্কর ভয়াবহ ব্যাপার। যে-কোন মুহূর্তে জ্ঞান হারিয়ে ফেলতে পারেন ডঃ লিডনার। আমি নিজেও অসুস্থবোধ করছিলাম।
পেশাদারি কায়দায় ডঃ রেলি সেটা পরীক্ষা করে দেখলেন।
আমার ধারণা, হাতের কোন ছাপ নেই। তদন্তের মাঝে কথাটা বলে এক জোড়া ফরসেড বার করলেন তিনি তার মেডিক্যাল বক্স থেকে অনুসন্ধান কাজটা নিখুঁত করার জন্য।
হু–এক টুকরো চুল, স্বর্ণকেশী। অবশ্য এটা বেসরকারি অনুমান। এরপর আমাকে খুব কঠোর পরীক্ষা চালাতে হবে, পরীক্ষা করে দেখতে হবে ব্লাডগ্রুপ এবং আরও কত কি সব পরীক্ষা চালাতে হবে। এরই মধ্যে একটা আন্দাজ আমি করেছি। মনে হয় মিসেস লিডনারকে প্রথমে খুন করেছে মিস জনসন। তারপর তার মনে অনুশোচনা হয় এবং সেই অনুশোচনাবোধ তাকে আত্মহত্যায় প্ররোচিত করে।