হ্যাঁ, হ্যাঁ, অত্যন্ত চমৎকার বৈকি! তবে আলাদাভাবে বলতে গেলে, তার মানে, মারকাডোকে আমার এক বিচিত্র মানুষ বলেই মনে হয়।
তার ওই অদ্ভুত দাড়ি দেখলেই মনে হয়। মিসেস কেলসি মন্তব্য করলেন, লোকটা কেমন যেন সন্দেহজনক।
কথার মধ্যে বাধা পাওয়া সত্ত্বেও মেজর পেনিম্যান কোন ভ্রূক্ষেপ না করেই বলতে থাকলেন আমেরিকানরা একটু চুপচাপ থাকতে ভালবাসে, আর ওদিকে ইংরাজ ছেলেরা যেন একটু বেশি মাত্রায় কথা বলে থাকে। লিডনার নিজেই অত্যন্ত আমোদপ্রিয়, ভদ্র এবং বিচক্ষণ। হ্যাঁ, ব্যক্তিগত ভাবে তারা সবাই অত্যন্ত আমোদপ্রিয় মানুষ। যে কারণেই হোক আমি একটু কল্পনাবিলাসী, বাস্তবের ধার আমি ধারি না। তবে শেষ পর্যন্ত তাদের দেখবার জন্য আমি যাই এবং তাদের সঙ্গে আলাপ করে আমি বুঝতে পারি মানে আমার এই ধারণা হয় যে, একটা কোন গণ্ডগোল এর মধ্যে থাকলেও থাকতে পারে। তবে গণ্ডগোলটা যে ঠিক কোথায় তা আমি জানি না। সত্যি কথা বলতে কি কাউকেই স্বাভাবিক বলে আমার মনে হয় না। চারিদিকে একটা সন্দেহের আবহাওয়া। এর একটা ব্যাখ্যাও আমি অবশ্য করেছি, বাইরে থেকে অত্যন্ত ভদ্রভাবে সবাই সবাইকার পিঠ চাপড়াতে চায়, এই আর কি। ভেতরে ভেতরে তারা যে কতখানি এ ওর উপর হিংসাপরায়ণ উপর থেকে সেটা বোঝা মুশকিল।
এ ঘটনা আমার কাছে যেন সম্পূর্ণ নতুন, এই মনোভাব ব্যক্ত করতে মুখে কৃত্রিম আরক্তভাব ফোঁটাতে হল, কারণ আমি আমার মতামত খুব বেশি প্রকাশ করতে চাই না এই মুহূর্তে। তাই নিজেকে যতটা সম্ভব সংযত রেখে বললাম, লোকেদের যদি এক জায়গায় অনেকদিন ধরে আটকে রাখা হয়, দেখা গেছে অধিকাংশ ক্ষেত্রে তাদের স্নায়ুর উপর দারুণ চাপ পড়ছে। এ কথা আমি হসপিটালে থাকাকালীন অভিজ্ঞতা থেকে বলছি।
সে কথা ঠিক, মেজর কেলসি বললেন, তবে এখন কথা হচ্ছে, এ ঘটনা তো হালফিলের। আর কতদিনই বা তাদের আটক করে রাখা হয়েছে? এই অল্প সময়ে অমন অস্বাভাবিক হয়ে ওঠার কোন কারণ যে থাকতে পারে আমার তা জানা নেই।
এখানে এই অভিযানটা আমরা আমাদের নিজেদের জীবনের মত মনে করে থাকি। মেজর পেনিম্যান এবার মুখ খুললেন অনেকক্ষণ পরে। প্রতিদ্বন্দ্বিতা, ঈর্ষাপরায়ণতা, ঘোঁট পাকাবার দল এর মধ্যে থেকেই গড়ে উঠছে বলে আমার অনুমান।
যদিও আপাত দৃষ্টিতে তাই মনে হয়। মেজর কেলসি সঙ্গে সঙ্গে স্মরণ করিয়ে দেন, এ বছর বহু ভাল ভাল নবাগতরাও এসেছে।
দেখা যাক কে কে এসেছে। স্কোয়ার্ডন লীডার তার আঙুলে গুনতে গিয়ে বলে, রেইটারের মতো কোলম্যান নবাগত। মারকাডোদের মতো ইমাট গতবছর এখানে আসে। তবে ফাদার ল্যাভিগনিও নবাগত, ডঃ বার্ডের পরিবর্তে তিনি এখানে আসেন। অবশ্য ক্যারি এখানকার সব থেকে পুরনো লোক, শুরু থেকে আছে সে এখানে, তা প্রায় পাঁচ বছর হবে। ক্যারির মতোই মিস জনসন এখানে পাঁচ বছরের পুরনো।
সব সময় আমার মনে হয় তেল ইয়ারিমাহে, মেজর কেলসি মন্তব্য করলেন, এরা যেন একটি সুখ দুঃখে সমান অংশীদার। এ রকম একটা সুস্থ পরিবেশ, এক সঙ্গে এতগুলো লোকেদের মধ্যে নির্বিবাদে থাকা যেটা কল্পনা করা যায় না। নার্স লিথেরান যে আমার সঙ্গে এ ব্যাপারে একমত হবে, সেটা আমি নিশ্চিত জেনে গেছি।
আপনি ঠিক বলছেন কিনা, সেটা আমি কী করে জানব বলুন?
হ্যাঁ, প্রত্যেকে আরো গভীরে যেতে চাইবে বৈকি’, মেজর পেনিম্যান বোধহয় আমার মনের খবরটা হদিশ করতে পেরেছিলেন। আমারও তাই মনে হয়, এ ব্যাপারে বোধহয় আরও কিছু জানবার থাকতে পারে। অত্যন্ত ভদ্র ডঃ লিডনার। তাছাড়া তার সব থেকে বড় গুণ হল, পরের মেজাজের সঙ্গে নিজেকে মানিয়ে নেওয়ার অদ্ভুত একটা ক্ষমতা আছে তাঁর। সব সময় সকলের সঙ্গে সদ্ভাব রেখে তিনি তার অভিযান সুখময় রাখবার আপ্রাণ চেষ্টা করে থাকেন। তবু এ সব সত্ত্বেও একদিন একটা উত্তেজনা লক্ষ্য করেছিলেন।
হাসলেন মিসেস কেলসি।
আর তার কারণ আপনি জানতে পারলেন না?
আপনি কী বলতে চাইছেন?
অবশ্যই মিসেস লিডনার।
ওঃ মেরি, তার স্বামী একটু যেন বিস্মিত, উনি চমৎকার মহিলা, আমার তো মনে হয় না, তিনি ঝগড়াটে স্বভাবের।
না, না আমি বলছি না তিনি ঝগড়াটে। তবে কখনো কখনো ঝগড়ার কারণ হয়ে ওঠেন তিনি।
কীভাবে? আর কেনই বা তিনি তা হতে যাবেন?
কেন? কারণ তাঁর জীবন একঘেয়ে হয়ে গিয়েছিল। আর হবেনই বা কেন? তার কাজ কোথায়! তিনি তো আর প্রত্নতত্ত্ববিদ নন, এখানে প্রত্মতত্ত্ববিদের স্ত্রী মাত্র। তাই নিজের একঘেয়েমি জীবনে বৈচিত্র্য আনতে মাঝে মাঝে ঝগড়াটের ভূমিকায় অবতীর্ণ হন, হয়তো তাতে তিনি নতুনত্ত্বের স্বাদ পান, আনন্দ পান।
মেরি, এ সবই তোমার অনুমান মাত্র। আসলে তুমি এর কিছুই জানো না।
হ্যাঁ, নিশ্চয়ই এ আমার অনুমান বটে। তবে একদিন দেখবে, আমার অনুমানই ঠিক। সুন্দরী লুসি কোন মতেই মোনালিসা নয়। হয়তো সে কারোর ক্ষতি করবে না, তবু তিনি দেখতে চান, তাঁকে ঘিরে কি ঘটতে পারে।
তিনি কিন্তু স্বামীর প্রতি অনুগত। ওঃ ওঁদের দাম্পত্য জীবনের ব্যাপারে নাক গলানোর সাহস আমার নেই। সে প্রসঙ্গে আমি যেতেও চাই না। আমি কেবল বলতে চাইছি, ওই ভদ্রমহিলাকে আমরা কেউই চিনতে পারিনি।
মেয়েরা পরস্পরের প্রতি অত্যন্ত সহৃদয় শুনেছি, কথাটা বলে হাসলেন মেজর কেলসি। আমি জানি, বিড়াল, বিড়ালের মতো ব্যবহার করে থাকে তারা, এই কথাটা আপনি বলতে চাইছেন তো! তবে এ কথাও জেনে রাখুন, আমরা মেয়েরা আমাদের নিজেদের ব্যাপার অত্যন্ত সচেতন।