এ আপনার বুদ্ধিরই পরিচয় মাদাম। কি যেন চিন্তা করে পোয়ারো বললেন, তাহলে উনিই মিসেস লিডনারের প্রথম বিবাহের প্রসঙ্গ তুলেছিলেন? আচ্ছা, খবরটা দেবার সঙ্গে সঙ্গে তিনি আপনার দিকে কী চোখে তাকিয়েছিলেন বলুন তো? মানে, ওঁর বলার আগে আপনি অন্য কারোর কাছ থেকে ঘটনাটা শুনেছিলেন কিনা, সেটা যাচাই করতে
আপনি কী মনে করেন, সত্যিই সেই ব্যাপারটার সত্যতা সম্বন্ধে উনি নিঃসন্দেহে ছিলেন?
অসম্ভব কিছু নয়। হয়তো চিঠিগুলো তিনি নিজের হাতেই লিখে থাকবেন।
আমারও তাই ধারণা। মনে হয় প্রতিহিংসা নেওয়ার জন্য অমন অপ্রিয় কাজটা তিনি করেছিলেন।
হ্যাঁ, ঠিক তাই। পোয়ারো আমার কথায় সায় দিয়ে বলে ওঠেন, তবে সে কাজ বড় নিষ্ঠুর, বড় অমানুষিক। এক কথায় ঠাণ্ডা মাথায় খুন। বড় নিষ্ঠুর হত্যা, অবশ্যই।
একটু থেমে পোয়ারো তার কথার জের টেনে আবার বলতে থাকেন, তার একটা কথা বড় অদ্ভুত বলে মনে হয়েছে আমার কাছে। আমি জানি তুমি কেন এখানে এসেছ। আপনাকে ওঁর এ কথা বলার কী অর্থ হতে পারে ভেবে দেখেছেন?
না, সহজভাবেই বললাম আমি, আমি ঠিক বুঝতে পারিনি।
আমি আপনাকে বুঝিয়ে দিচ্ছি মাদাম। আপনার এখানে আসার কারণটা সবাই যা জানে, মিসেস মারকাড়ো সেটা বিশ্বাস করতেন না। তার ধারণা ছিল, আপনার এখানে আসার পিছনে অন্য কোন বিশেষ কারণ ছিল। কী সেই কারণ? যার জন্য আপনার এখানে আসার মুহূর্ত থেকে তিনি আপনার উপরে তীক্ষ্ণ দৃষ্টি রেখে গেছেন!
কে জানে, আমি একটু বিরক্ত হয়েই একটা রূঢ় কথা বলে ফেললাম, মঁসিয়ে পোয়ারো, আমার যতদূর মনে হয়, তাকে ঠিক লেডির পর্যায় ফেলা যায় না।
কিন্তু মাদাম, ওটা ঠিক উত্তর হল না।
পোয়ারোর কথার রহস্যটা আমি ঠিক অনুধাবন করতে পারলাম না। কিছু বোঝবার আগেই তিনি আবার বলতে শুরু করে দিলেন। প্রসঙ্গ এবার অন্য। অন্য মন, অন্য লোক।
আর অন্য সদস্যদের সম্বন্ধে আপনার কী ধারণা নার্স?
মিস জনসনের কথাই ধরা যাক না কেন, আমার তো মনে হয়, মিসেস লিডনারকে তিনি খুব একটা ভাল চোখে দেখতেন না। তবে ডঃ লিডনার-এর প্রতি তিনি খুব অনুরক্ত ছিলেন। খুবই স্বাভাবিক, বহু বছর এক সঙ্গে ওঁরা দুজন কাজ করেছেন, অনুরাগ থাকারই কথা। তবে লিডনারদের বিয়েটাই পরিবর্তন এনে দেয় তাদের মধ্যে, হয়তো সেইজন্যই মিস জনসন মিসেস লিডনারের প্রতি অমন বিরূপ হয়ে উঠেছিলেন।
হ্যাঁ, পোয়ারো আমার কথায় সায় দিয়ে বলেন, হয়তো মিস জনসনের কাছে ওঁদের বিয়েটা গ্রহণীয় নয়। ওঁর সঙ্গে ডঃ লিডনারের বিয়েটা বোধহয় ঠিক হতো।
হ্যাঁ, যা বলেছেন, আমি স্বীকার করলাম, কিন্তু একশোর মধ্যে বোধহয় একজোড়া বিবাহিত দম্পতি সুখী হয় না। তবে সত্যি কথা বলতে কি এর জন্য ডঃ লিডনারকে কেউ দোষ দিতে পারে না। মিস জনসন, বেচারি দেখতে তেমন আহামরি বলে কিছু নয়। তার তুলনায় মিসেস লিডনার, বয়স হলেও যে কোন যুবতী নারীর চেয়ে বেশি সুন্দরী, রীতিমতো চোখ ধাঁধিয়ে দিতেন পুরুষদের। সত্যি ওই বয়সেও পুরুষদের আকর্ষণ করার যথেষ্ট ক্ষমতা রাখতেন। মনে পড়ে মিঃ কোলম্যান বলতেন, মিসেস লিডনারের রূপের আগুনে প্রলোভিত পুরুষরা নিজেদের মরণ জেনেও ঝাঁপ দিতে কসুর করতো না। তার রূপ সম্বন্ধে আমার এই উপস্থাপনায় হয়তো আপনি হাসবেন, কিন্তু আমি আবার বলছি, তার মধ্যে একটা অপার্থিব এমন কিছু ছিল, যা দেখে মুগ্ধ না হয়ে থাকা যেত না।
হুঁ! পোয়ারো ছোট্ট করে মাথা নাড়লেন।
তবে আমার মনে হয় না, মিঃ ক্যারির সঙ্গে তার সম্পরটা খুব একটা মধুর ছিল। আমার ধারণা, মিঃ জনসনের মতো মিঃ ক্যারিও ঈর্ষাপরায়ণ ছিলেন। সব সময় মিসেস লিডনারের প্রতি তার মনোভাব ছিল অনমনীয় আর মিসেস লিডনারও তাকে সেই চোখেই দেখতেন। তিনি তাঁর স্বামীর পুরনো বন্ধু ছিলেন অবশ্যই, তবে ওই যে প্রবাদ আছে, কিছু কিছু মহিলা আছেন যাঁরা তাঁদের স্বামীর পুরনো বন্ধুদের কিছুতেই সহ্য করতে পারেন না।
বুঝতে পারছি, আর সেই তিনজন যুবক? কোলম্যান, আপনার কথা থেকে ধরে নেওয়া যায়, ছেলেটির কাছে মিসেস লিডনার যেন একটি কবিতা ছিলেন। ঠিক তাই না?
আমি আর হাসি চেপে রাখতে পারলাম না।
এ এক হাস্যকর ব্যাপার মঁসিয়ে পোয়ারো, হাসতে হাসতে বললাম, নিতান্ত যুবক সে।
আর অন্য দুজন?
মিঃ এমাটের ব্যাপারে সত্যি আমার বিশেষ কিছু জানা নেই। শান্তশিষ্ট মানুষ কথা বলেন কম। তাঁর কাছে মিসেস লিডনারও ছিলেন অতি চমৎকার মহিলা। আর মিসেস লিডনারও ছিলেন তাঁর প্রতি বন্ধুভাবাপন্ন, আদর করে তাকে ডেভিড বলে ডাকতেন, মিস রেলির সঙ্গে তার সম্পর্ক নিয়ে ঠাট্টা ইয়ার্কি করতেন। ওঁদের দুজনের সম্পর্কটা ছিল ঠিক এই রকম।
আর মিঃ রেইটার?
তাঁর সঙ্গে মিসেস লিডনারের সম্পর্কটা খুব একটা ভাল ছিল না। ধীরে ধীরে বললাম, প্রায়ই মিসেস লিডনার তার সঙ্গে ব্যঙ্গ বিদ্রূপ করে কথা বলতেন।
তাতে সে কিছু মনে করত না?
বেচারা! মুখ লাল করে ফিরে যেত।
রেইটারের প্রতি আমার দুঃখবোধ থেকে হঠাৎ কেন জানি না একটা নিষ্ঠুর সত্য কথা আমার মনে উদয় হল। ঠাণ্ডা মাথায় সে খুন করেনি তো? সেই সম্ভাবনার কথাটা মনে হতেই আমি চমকে উঠলাম, তবে আমার মনের কথাটা প্রকাশ করলাম না পোয়ারোর কাছে।