দেখ, অভ্যাস মতো তিনি তার দাড়িতে টান দিয়ে বললেন, আমার স্ত্রী অত্যন্ত দুর্বল, স্নায়ুর চাপে ভুগছেন। তার সম্বন্ধে আমি খুবই উদ্বিগ্ন।
আচ্ছা ওঁর স্বাস্থ্য ভাল তো?
ও হ্যাঁ, স্বাস্থ্য ওর খুব ভাল। সেদিক থেকে কোন চিন্তা আমার নেই। তবে
তবে কী?
বলতে গিয়ে কি যেন চেপে গেলেন তিনি। দ্বিধাগ্রস্থ ভাবে বললেন, কোন কাজই তাকে করতে হয় না এক রকম। ওর এই ভয়ের কোন কারণ তো আমি খুঁজে পাই না।
ভয়! কিসের ভয় ডঃ লিডনার?
ও কিছু নয়। ডঃ লিডনারের কথায় একটা অস্পষ্টতার ছাপ, স্নায়বিক দুর্বলতায় আজকাল সব কিছুতেই আতঙ্কের ছায়া দেখতে পায় বুঝলেন।
দশটা থেকে একটা, ভাবলাম, এ আর এমন কিছু নয়, অতিরিক্ত মাদক দ্রব্য সেবনের প্রতিক্রিয়া। কিন্তু ডঃ লিডনার সে কথা বিশ্বাস করতে চান না, বিশ্বাস করতে চান না তাদের স্ত্রী এমন অস্বাভাবিক অভ্যাসের বশবর্তী হতে পারেন।
জিজ্ঞেস করলাম, আমার যাওয়ার ব্যাপারটা আপনার স্ত্রী নিজের থেকে অনুমোদন করেছেন তো? ডঃ লিডনারের মুখটা উজ্জ্বল হয়ে উঠল।
হ্যাঁ, নিশ্চয়ই! আমি তো রীতিমতো অবাক। শুনে ও কি বলল জানো? ও এখন অনেকটা নিরাপদ বলে মনে করছে।
নিরাপদ! কথাটা হঠাৎ আমার কানে বাজল। সেই থেকে আমি ভাবতে শুরু করলাম, মিসেস লিডনারকে হয়তো মানসিক রুগিনীর পর্যায় ফেলা যেতে পারে।
তারপর তিনি ছেলেমানুষের মতো আগ্রহের আতিশয্যে নিজেকে ভাসিয়ে দিলেন।
আমি নিশ্চিত ওর সঙ্গ তোমার ভাল লাগবেই। আমার নিজের স্ত্রী বলে বলছি না, মানুষকে আকর্ষণ করার মতো সত্যি ওর মধ্যে একটা অদ্ভুত ক্ষমতা আছে। হাসলেন তিনি ওকি মনে করে জান? তোমাকে কাছে পেলে ওর মধ্যে আনন্দের বন্যা বয়ে যাবে। আমিও তাই মনে করি। কেন জানি না, তোমাকে দেখা মাত্র আমার স্ত্রীর কথাটাই সর্বপ্রথম মনে হয়েছিল। আমি হলফ করে বলতে পারি, একমাত্র তুমিই হলে লুসির উপযুক্ত সঙ্গিনী।
ঠিক আছে মিঃ লিডনার, আমি আবার বলছি, সাধ্যমত চেষ্টা করব। খুশি হয়ে বললাম, মনে হয় আমি বোধহয় আপনার স্ত্রীর সাহায্যে আসতে পারি। আমার ধারণা, ওঁর এই স্নায়বিক দুর্বলতার মূলে এখানকার স্থানীয় কালো চমড়ার লোকগুলো।
ওহো না, তা নয়। মাথা নাড়লেন তিনি সকৌতুকে। আমার স্ত্রী আরবদের খুবই ভালবাসে, তাদের সরলতা ওর খুব পছন্দ। এখানে আমরা মাত্র এক বছর এসেছি। আমাদের বিয়ে হয়েছে বছর দুয়েকেরও কম হবে, কিন্তু এর মধ্যেই ও কেমন সুন্দর আরবী ভাষায় কথা বলতে শিখে গেছে।
একটু চুপ করে থেকে আমি আর একবার চেষ্টা করে দেখলাম। আচ্ছা ডঃ লিডনার, সত্যি করে বলুন তো আপনার স্ত্রীর ভয়ের প্রকৃত কারণটা কী?
প্রথমে একটু ইতস্ততঃ করে তারপর ধীরে ধীরে তিনি বললেন, আমার বিশ্বাস সে কথা ও নিজের থেকেই তোমাকে বলবে।
ব্যস, এর বেশি কিছু জানা গেল না তার কাছ থেকে।
.
০৩.
খোশগল্প
ঠিক হল আগামী সপ্তাহে আমি তেল ইয়ারিমাহর যাব।
মিসেস কেলসি তার আলইউয়ার বাড়িতে বিশ্রাম নেবার ব্যবস্থা করছিলেন, এবং আমি তার কাজের বোঝা কিছু হাল্কা করবার ব্যবস্থা করছিলাম, সেই সময় লিডনারের অভিযান সংক্রান্ত ব্যাপারে দু একটা মন্তব্য আমার কানে ভেসে এল। মিসেস কেলসির বন্ধু অল্পবয়সী স্কোয়ার্ডন লিডার হঠাৎ বিস্ময়ে চিৎকার করে ওঠে, চমৎকার লুসি। ইনিই তাহলে ওঁর শেষতম সঙ্গিনী? বলে আমার দিকে ফিরল সে। আশ্চর্য হবেন নার্স, আমাদের দেওয়া ওঁর ডাকনাম এটা। চমৎকার লুসি নামেই পরিচিতা উনি আমাদের কাছে।
তিনি কী সত্যিই খুব সুন্দরী? আমি জানতে চাইলাম।
উনি তো নিজেকে তাই মনে করে থাকেন।
এটা তোমার ব্যক্তিগত আক্রোশের কথা হয়ে গেল জন, মিসেস কেলসি টিপ্পনী কাটলেন, তুমি বেশ ভাল করেই জানেন যে, ও কথা উনি কেবল একাই মনে করেন না, অনেকেই ওঁর রূপের জ্বালায় জ্বলে পুড়ে মরে যাচ্ছেন।
তোমার কথাই হয়তো ঠিক। তবে যাই বল এ কথা স্বীকার করতেই হবে, ওঁর একটা বাড়তি আকর্ষণ করবার ক্ষমতা আছে।
মিসেস কেলসি হেসে ওঠেন শব্দ করে। তুমি যে দেখছি সম্পূর্ণ ভাবে নিজের উপর আস্থা হারিয়ে ফেলেছ।
স্কোয়ার্ডন লীডারের মুখ লজ্জায় আরক্তিম। যাইহোক, ওঁর একটা নিজস্ব জগৎ আছে। ডঃ লিডনারের ক্ষেত্রে বলা যায়, ওঁর মতো পত্নীবৎসল স্বামী খুব কম চোখে পড়ে। ওঁর স্ত্রী যে পথ দিয়ে যান, সেই পথ উনি পুজো করে থাকেন। তাদের সম্পর্কে এখন এই মুহূর্তে হয়তো আলাপ করা যেতে পারে।
এক সঙ্গে কজন তারা থাকেন বলতে পারেন?
অনেক দেশের অনেক মানুষ, আনন্দের সঙ্গে স্কোয়ার্ডন লীডার জানালেন, একজন ইংরেজ স্থপতি, একজন ফরাসী ফাদার। আরও আছেন, বুঝলেন? মিস জনসন, ইংরেজ মহিলা। মোটাসোটা ফটোগ্রাফার, উনি একজন আমেরিকান নাগরিক এবং মারকাডোরা–ঈশ্বর জানেন কোন জাতি তারা? আর একটি অল্প বয়সের মেয়ে, সাপের মত চেহারা। সুন্দরী লুসিকে কী ঈর্ষার চোখে দেখে না সে? তাদের মধ্যে কয়েকজন খাপছাড়া হলেও মোটের উপর সবাই বেশ চমৎকার, পেনিম্যান এ ব্যাপারে আপনি আমার সঙ্গে একমত নন?
পেনিম্যান একজন বয়স্ক ভদ্রলোক। তিনি তখন নিজের নাকে স্প্রিংয়ের চশমা আটকাবার চেষ্টা করছিলেন। হঠাৎ অনুরোধের বিস্ময়টা কাটিয়ে উঠে ফিরে তাকালেন স্কোয়ার্ডন লীডারের দিকে।