হ্যাঁ, আমরা এখানে ভাবানুবেগের কোনও প্রশ্রয় দেব না। ডঃ রেলি বলেন, আমাদের বিচার হবে সম্পূর্ণ নিরপেক্ষ, অন্য কারোর মতামতকে আমরা কোন পাত্তা দেব না। এ ব্যাপারে আশাকরি নার্স লিথেরান আমাদের সাহায্য করবেন। আমার দৃঢ় বিশ্বাস, উনি একজন ভাল পর্যবেক্ষক।
না, না ও ব্যাপারে আমি কিছুই জানি না, সঙ্গে সঙ্গে আমি আপত্তি জানালাম।
আসুন মাদাম, ডঃ রেলির হয়ে পোয়ারো বলেন, আপনাকে কিছু জানতে হবে না, আমি মনে করিয়ে দিচ্ছি, এখন বলুন, মিসেস লিডনারের প্রতি এক্সপিডিসনের প্রতিটি সদস্যদের কার কী রকম মনোভাব ছিল?
কিন্তু মিঃ পোয়ারো, আমি তো মাত্র এক সপ্তাহ হল এখানে এসেছি
আপনি বুদ্ধিমতী, তার ওপর নার্স, রুগীর নাড়ি টিপলেই বুঝতে পারেন, মাত্র এক সপ্তাহ তো সেদিক থেকে অনেক দীর্ঘ সময়। পোয়ারো মৃদু হেসে বলেন, আসুন, এবার প্রথম থেকে শুরু করা যাক। সবার আগে ফাদার ল্যাভিগনির নাম নেওয়া যাক।
ঠিক আছে, তবে সত্যি কথা বলতে কি ওঁর ব্যাপারে আমি তেমন কিছুই জানি না। তাছাড়া ফাদার ল্যাভিগনি এবং মিসেস লিডনার বেশির ভাগ সময়ে ফরাসী ভাষায় কথা বলতেন। আর ফরাসী ভাষা খুব একটা ভাল আমার জানা নেই, ছেলেবেলায় স্কুলে কিছুদিন ক্লাস করেছিলাম। তাতে বুঝতে পারি, তাঁদের আলোচনার বিষয়বস্তু ছিল বইপত্তর।
তাহলে বলতে পারেন, জুটি হিসাবে ওঁরা মন্দ ছিলেন না।
হ্যাঁ, আপনি তা মনে করতে পারেন, আমি তাকে বললাম, কিন্তু আমার যতদূর ধারণা, ফাদার ল্যাভিগনি মিসেস লিডনারের ব্যাপারে শেষ দিকে বিরক্ত হয়ে উঠেছিলেন, বলা যেতে পারে, ওঁকে নিয়ে তিনি মহা সমস্যায় পড়েছিলেন। আমি কি বলতে চাইছি বুঝতে পারছেন নিশ্চয়ই।
তারপর আমি তাকে ফাদার ল্যাভিগনির সঙ্গে আমার কি কথাবার্তা হয়েছিল সব বললাম সবিস্তারে। আর এও বললাম, ফাদার ল্যাভিগনির মতে মিসেস লিডনার নাকি একজন বিপজ্জনক মহিলা।
বিপজ্জনক মহিলা? পোয়ারো চমকে উঠলেন, ফাদার ল্যাভিগনি বলেছেন এই কথা? দারুণ মজার ব্যাপার তো। পোয়ারো নিজের চেয়ারে নড়েচড়ে বসলেন, তার মুখের ভাব দেখে মনে হল, তিনি যেন কোন সূত্র খুঁজে পেয়েছেন। আর মিসেস লিডনার তার সম্বন্ধে কিছু কি বলেছিলেন?
সেটা বলা খুবই শক্ত। মিসেস লিডনারের মনের গভীরে প্রবেশ করতে পারিনি আমি। তবে–
তবে কী?
একদিন তার স্বামীকে বলতে শুনেছিলাম, ফাদার ল্যাভিগনির মতো যাজক তিনি নাকি এর আগে কখনো দেখেননি।
দেখছি ফাদার ল্যাভিগনির জন্য একটা বড় মাপের শনের দড়ির ব্যবস্থা করতে হবে, ডঃ রেলি ঠাট্টা করে বললেন।
প্রিয় বন্ধু, পোয়ারো কপট দুঃখ প্রকাশ করে বলেন, আপনার কী ধৈর্যচ্যুতি ঘটছে? আমি জানি, আপনি একজন চিকিৎসক, তাই খুব বেশি সময় আমি নেব না। তবে একটু ধৈর্য ধরে অপেক্ষা করুন। আমার কতকগুলো জরুরী কথা আছে। এর মধ্যে দ্বিতীয় পর্যায় আর একবার চায়ের ব্যবস্থা হলে খুব ভাল হয়।
এক প্লেট স্যান্ডউইচ আমার দিকে এগিয়ে দিয়ে পোয়ারো তার স্বভাবসুলভ হাসি হেসে বললেন, এগুলো খেয়ে নিন। খেতে খেতে আলোচনা করব।
হ্যাঁ, যে কথা বলছিলাম, পোয়ারো কথার জের টেনে বলতে থাকেন, আপনার কী মনে হয়, মানে কারা কারা মিসেস লিডনারকে পছন্দ করত বলে আপনার মনে হয় নার্স?
বলছি, তবে আগেই বলে রাখছি, এ আমার ব্যক্তিগত অভিমত, বাস্তবের সঙ্গে এর মিল নাও থাকতে পারে। তবু বলছি এই কারণে যে খবরটা আপনার তদন্তের কাজে হয়তো সুবিধা হতে পারে। জানেন মঁসিয়ে পোয়ারো, আমার যতদূর ধারণা, মিসেস মারকাডো ভীষণ ঘৃণা করতেন মিসেস লিডনারকে।
আর মিঃ মারকাডো?
তার মনোভাব একটু নরম ছিল, আমি তাকে এ কথাও স্মরণ করিয়ে দিলাম, তার স্ত্রী ছাড়া অন্য কোন মহিলা তার প্রতি বড় একটা নজর দেয় না। আর মিসেস লিডনার-এর ওই এক স্বভাব ছিল, যে কোন লোকের সঙ্গে হেসে হেসে কথা বলতেন, তার কাছে সবাই সমান আলাদা করে কাউকে বিশেষ ভাবে ভাবতেন না।
আর মিসেস মারকাডো হলেন তার ঠিক বিপরীত চরিত্র, কী বলেন?
তিনি ঠিক কি রকম ছিলেন জানি না, তবে আর পাঁচটা মেয়ের মতো তাঁর স্বামীর বান্ধবী কিংবা স্নেহভাজন মহিলার প্রতি তার হিংসা হওয়াটা খুবই স্বাভাবিক। তাই আপনাকে সাবধান করে দিচ্ছি, মিসেস মারকাডোর সঙ্গে কথা বলার সময় ওঁদের স্বামী-স্ত্রীর প্রসঙ্গটা যথা সম্ভব এড়িয়ে যাওয়ার চেষ্টা করবেন। তা না হলে–
আপনি যা বলতে চাইছেন, তাতে আমার কোন সন্দেহ নেই। অতএব ধরে নিতে পারি, মিসেস লিডনারের প্রতি মিসেস মারকাভোর হিংসা ছিল এবং তাকে তিনি ঘৃণা করতেন।
কিন্তু তাই বলে তিনি যে খুন করতে পারেন, ওই কথা স্বপ্নেও আমি কখনো ভাবিনি। ওঃ ঈশ্বর আমাকে ক্ষমা করুন। আমি একটু নড়েচড়ে বসলাম। মিঃ পোয়ারো, ও কথা আমি ভাবিনি, এক মুহূর্তের জন্যও নয়!
না, না আমি বুঝতে পারি সব। মুখ ফসকে কথাটা বেরিয়ে গিয়েছিল। পোয়ারো তার বক্তব্য শুধরে নিয়ে বললেন, মিসেস মারকাভোর তখন শত্রুতাচরণের ব্যাপারে আপনার কি মনে হয়, মিসেস লিডনার চিন্তিত ছিলেন?
না, আমার তো মনেই হয় না, আদৌ তিনি চিন্তিত ছিলেন। এমন কি মিসেস মারকাডো যে তার সঙ্গে শত্রুর মতো ব্যবহার করতেন, সে খবরও বোধহয় তার জানা ছিল না। এক এক সময় আমি ভেবেছি, তাকে সব খুলে বলি, সাবধান করে দিই। পরে আবার ভেবেছি, দু দিন পরে সব ঠিক হয়ে যাবে, তাই চুপ করেছিলাম।