মানুষের মন হেন কাজ নেই যে করতে পারে না। ডঃ রেলি স্পষ্ট করে কিছু বলতে চাইলেন না।
চিঠিগুলোর মধ্যে খুবই গুরুত্ব আছে। তবে সামগ্রিক ভাবে কেসটার উপরে আমাদের আরও বেশি করে মনোযোগ দিতে হবে। আমার মনে হয় এক্ষেত্রে তিনটি সমাধানের পথ আছে। পোয়ারো তার সুচিন্তিত মতামত জানালেন।
তিনটি?
হ্যাঁ, প্রথম সমাধান খুবই সহজ। আপনার স্ত্রীর প্রথম স্বামী এখনো জীবিত। প্রথমে তিনি আপনার স্ত্রীকে হুমকি এবং পরে তার পুনরাবৃত্তি ঘটিয়ে চলেন একের পর এক। এই সহজ সরল সমাধানের পথটা বেছে নিলে আমাদের সমস্যা হবে খুঁজে দেখা, কি করে তিনি এখানে প্রবেশ করলেন, আর কি ভাবেই বা বেরিয়ে গেলেন কাউকে দেখা না দিয়ে?
দ্বিতীয় সমাধান হল : মিসেস লিডনার নিজেই, কী কারণে কে জানে (এ ক্ষেত্রে সাধারণ লোকের চেয়ে চিকিৎসাবিদ্ৰা বোধহয় সঠিক ব্যাখ্যা করতে পারবেন) সেই হুমকি দেওয়া চিঠিগুলো লিখতেন। গ্যাস প্রয়োগের প্রসঙ্গে স্মরণ রাখতে হবে তিনি একাই সেই গ্যাসের ঘ্রাণ পেয়েছিলেন তাঁর কথায় আপনি সায় দিয়েছিলেন মাত্র। কিন্তু মিসেস লিডনার যদি নিজেই চিঠিগুলো লিখে থাকেন, সেক্ষেত্রে তার বিপদের সম্ভাবনা কি করে থাকতে পারে? অতএব খুনীর সন্ধানে আমাদের অন্য পথে উঁকি মারতে হবে। সত্যি কথা বলতে কি, এক্ষেত্রে আপনার স্টাফদের মধ্যে অনুসন্ধান চালাতে হবে। হ্যাঁ, ডঃ লিডনারের চাপা প্রতিবাদকে অস্বীকার করে পোয়ারো বলতে থাকেন, যুক্তি-তর্কের দিক থেকে–সেটাই একমাত্র সমাধানের পথ বলে মনে হয়। যে তাদের মধ্যে কেউ একজন ব্যক্তিগত আক্রোশ চরিতার্থ করার জন্য মিসেস লিডনারকে খুন করে থাকবে। আর সেই ব্যক্তি মনে হয়, চিঠিগুলো সম্বন্ধে সম্পূর্ণ ওয়াকিবহাল ছিল এবং সেই চিঠিগুলোর ব্যাপারে মিসেস লিডনারের যে ভয় ছিল, কিম্বা ভয়ের ভান করতেন, সেটা তার জানা ছিল। খুনীর মতে সেই তথ্যটা তার পক্ষে নিরাপদে থাকাটা একটা বিশেষ সহায়ক। সে ভেবেছিল, খুনের দায়টা সে বাইরের পত্র লেখকের ঘাড়ে সহজেই চাপিয়ে দেওয়া যাবে এই ভাবে।
এই সব বিভিন্ন সমাধানের সূত্রগুলো একত্রিত করলে দেখা যায়, প্রকৃতপক্ষে খুনী নিজের ওই চিঠিগুলো লিখেছিল মিসেস লিডনারের অতীত ইতিহাস জেনে। কিন্তু এক্ষেত্রেও ভাববার আছে, অপরাধী কেন মিসেস লিডনারের হাতের লেখা নকল করতে গেল? এই ব্যাপারটা এখনো খুব পরিষ্কার নয়। বাইরের কারোর হাতের লেখা হলে এতো চিন্তার প্রয়োজন থাকতো না এবং সেক্ষেত্রে খুনীর বাড়তি সুবিধাও হত। আমাদের সন্দেহ গিয়ে পড়তো বাইরের লোকের উপরে।
তৃতীয় সমাধানের সূত্র আমার মতে সব চেয়ে বেশি আকর্ষণীয়। আমার ধারণা চিঠিগুলো নির্ভেজাল এবং সেই চিঠিগুলো লেখা হয় তো মিসেস লিডনারের প্রাক্তন স্বামী (কিম্বা তার ছোট ভাইয়ের), যিনি প্রকৃতপক্ষে এই এক্সপিডিসনের একজন সদস্য।
.
১৬.
রহস্যময়
ডঃ লিডনার কথাটা শোনামাত্র লাফিয়ে উঠলেন।
অসম্ভব! এ একেবারে অবাস্তব ধারণা!
মিঃ পোয়ারো শান্ত চোখে তাকালেন তার দিকে, কিন্তু কিছুই বললেন না।
তার মানে আপনি বিশ্বাস করতে বলছেন, আমার স্ত্রীর প্রাক্তন স্বামী আমাদের এই এক্সপিডিসনের একজন কর্মী এবং আমার স্ত্রী তাকে চিনতে পারেনি?
হ্যাঁ, ঠিক তাই। অতীতের দিকে একবার ফিরে তাকান। বছর পনের আগে সেই ভদ্রলোকের সঙ্গে আপনার স্ত্রী কয়েক মাস বসবাস করেছিলেন। আপনি কী মনে করেন দীর্ঘ পনের বছর পরে আপনার স্ত্রী তাকে চিনতে পারবেন? আমার তো তা মনে হয় না। ভদ্রলোকের মুখের আদল বদলে যেতে পারে, চেহারার বদল হতে পারে। আর মনে রাখবেন, মিসেস লিডনার তার প্রাক্তন স্বামীকে খুঁজব মনে করে কখনো চেষ্টা চালান নি। মিসেস লিডনার তাকে আগন্তুক হিসাবেই গ্রহণ করে থাকবেন হয়তো। না, আমার তো মনে হয় না, তিনি তার প্রাক্তন স্বামীকে চিনতে পেরেছিলেন। আর দ্বিতীয় সম্ভাবনা হল, তার প্রাক্তন স্বামীর ছোট ভাই, ছেলেবেলায় যে তার ভায়ের প্রতি অত্যন্ত অনুগত ছিল। এখন তার বয়স বেড়েছে, এখন সে রীতিমত সাবালক। সেদিনকার দশ বার বছরের বালক আজ তিরিশোর্ধ যুবক, আপনার স্ত্রী কী তাঁকে চিনতে পেরেছিলেন, না পারা সম্ভব? যুবক উইলিয়াম বসনারকে বিশ্বাসঘাতক বলা যায় না বরং তাকে দেশপ্রেমিক বলা যেতে পারে। সে তার দেশ জার্মানির জন্য প্রাণ দিতে পারে। তার চোখে মিসেস লিডনার ছিলেন একজন বিশ্বাসঘাতক, সে জানত তার দাদার মৃত্যুর জন্য মিসেস লিডনারই দায়ী। শিশুদের মনে কারোর সম্বন্ধে একবার বিরূপ প্রতিক্রিয়া শুরু হলে তা আর থামতে চায় না। তারা তখন মরীয়া হয়ে ওঠে প্রতিহিংসা নেবার জন্য। আহত বাঘের মতো শিকারের খোঁজে তারা তখন সাংঘাতিক বেপরোয়া।
খাঁটি কথা, ডঃ রেলি তার মতামত জানাতে গিয়ে বলেন, সাধারণ মানুষের মতামত হল, শিশুরা খুব তাড়াতাড়ি সব কথা ভুলে যায়, এটা ঠিক নয়। আসলে তাদের সব কিছু ঠিক ঠিক মনে থাকে। প্রতিবাদ করার জন্য তারা সুযোগের অপেক্ষায় থাকে।
তার মনে আপনি বলছেন, এখানে দুটি সম্ভাবনা বর্তমান। ফ্রেডরিক বসনার, এখন যার বয়স পঞ্চাশ, এবং ইউলিয়াম বসনার, তিরিশোর্ধ বয়স যার। সম্ভাব্য এই দুই ব্যক্তির কথা খেয়াল রেখে এবার আপনার কর্মচারীদের মধ্যে অনুসন্ধান করে দেখা যাক।