এখন আসুন ব্যাপারটা পরিষ্কার করা যাক। দেখা যাচ্ছে, প্রথম চিঠিটা আপনার স্ত্রী পান আমেরিকায় আপনার সঙ্গে তার বিবাহের কিছু পরেই। তারপরে আরো কিছু চিঠি তিনি পান, তবে সেগুলো তিনি নষ্ট করে ফেলেন। এখানে দ্বিতীয় চিঠির তারিখ দেখে মনে হচ্ছে, এই চিঠিটা পাওয়ার কিছু দিন পরেই আপনারা দুজনেই বিষাক্ত কয়লার গ্যাসে মৃত্যু হওয়া থেকে কোন রকমে রেহাই পেয়ে যান। তারপর আপনারা এখানে এই বিদেশে চলে এলেন, এবং এই দু’বছরে কোন চিঠি আসেনি আপনাদের কাছে। এই বছরের মরশুম শুরু হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে আবার আপনার স্ত্রী চিঠি পেতে থাকেন গত তিন সপ্তাহের মধ্যে। ঠিক কিনা?
হুঁ।
আপনার স্ত্রী হাবভাবে বুঝিয়ে দেন তার মনের আকাশে একটা দারুণ আতঙ্কের মেঘ জমে উঠেছে। স্ত্রীর অমন অবস্থায় ডঃ রেলির পরামর্শ মত নার্স লিথেরানকে নিয়োগ করেন আপনার স্ত্রীকে সঙ্গ দেবার জন্য, যাতে করে তার ভয়টা কেটে যায়। তাই না?
হ্যাঁ, ঠিক তাই।
ইতিমধ্যে কয়েকটা অদ্ভুত অদ্ভুত ঘটনা ঘটে যায়, যেমন মিসেস লিডনারের ঘরের জানালায় নক্ করার শব্দ, ভুতুড়ে মুখের আবির্ভাব, অ্যান্টিকরুম থেকে ভুতুড়ে শব্দ ভেসে আসা। এ সব কী আপনার চোখে পড়েনি?
না।
তাহলে এর থেকে বোঝা যাচ্ছে, এ ব্যাপারে মিসেস লিডনার ছাড়া অন্য আর কেউ বিন্দুবিসর্গ জানেন না।
ঠিক তা নয়, ডঃ লিডনার স্মরণ করিয়ে দেন, ফাদার ল্যাভিগনি অ্যান্টিকরুমে আলো দেখতে পেয়েছিলেন, সে কথা আমাদের ভুলে গেলে চলবে না।
হ্যাঁ, আমি তা ভুলিনি।
পোয়ারো মিনিট দুই কি যেন চিন্তা করলেন, তারপর কি ভেবে আবার জিজ্ঞাসা করলেন, আপনার স্ত্রী কি কোন উইল করে গেছেন?
না, আমার তা মনে হয় না।
কেন! তিনি ধনবতী ছিলেন না?
হ্যাঁ, ছিলেন বৈকি, জীবিত অবস্থায় কেবল। ওর বাবা ওর জন্য একটি ট্রাস্টের মাধ্যমে প্রচুর অর্থ গচ্ছিত রেখে যান। তবে আসল টাকায় হাত দিতে পারত না ও। ওর মৃত্যুর পর ওর কোন ছেলে-মেয়ে থাকলে সেই ট্রাস্ট্রের টাকা তার প্রাপ্ত হত, আর অপুত্রক হলে পুরো টাকাটাই পিটস্টাউন মিউজিয়ামের অধিকারে চলে যাওয়ার কথা।
টেবিলের উপর ঝুঁকে পড়ে পোয়ারো নিজেকে চিন্তায় মনোনিবেশ করলেন।
তাহলে এক্ষেত্রে আমরা একটা মোটিভ সযত্নে দূরে সরিয়ে রাখতে পারি। সেই মোটিভটা যে কি আপনি নিশ্চয়ই বুঝতে পারছেন। মানে মিসেস লিডনারের মৃত্যুর পর কে লাভবান হচ্ছে? এক্ষেত্রে একটি মিউজিয়াম। অন্য দিকে মিসেস লিডনার যদি প্রচুর অর্থ এবং সম্পত্তি রেখে যেতেন, সেক্ষেত্রে একটি অতি প্রয়োজনীয় প্রশ্নের সম্মুখীন হতে হতে আমাকে। আমাকে প্রমাণ করতে হতো সেই অর্থের অধিকারী কে হতেন? আপনি না মিসেস লিডনারের প্রাক্তন স্বামী? তবে তার প্রাক্তন স্বামীর পক্ষে দাবী প্রতিষ্ঠা করতে যাওয়া একটা বিরাট ঝামেলার ব্যাপার, কারণ সেক্ষেত্রে প্রথমেই তাকে পুলিশ গ্রেপ্তার করতে বাধ্য হবে, তিনি একজন স্বার্থসংশ্লিষ্ট ব্যক্তি বলে। তবে এ অনুমান এক্ষেত্রে খাটে না দুটি কারণে; প্রথম কারণ হল মিসেস লিডনার সে রকম কোন অর্থ কিংবা সম্পত্তি রেখে যাননি। অতএব বর্তমান পরিবেশে স্ত্রীর অস্বাভাবিক মৃত্যুতে স্বামীকে সন্দেহ করাটাই স্বাভাবিক নিয়ম। এক্ষেত্রে প্রথমেই আপনি প্রমাণ রেখেছেন, গতকাল সেই দুর্ঘটনার সময় আপনি আপনার স্ত্রীর ঘরের সামনে যাননি কখনো, দ্বিতীয়ত স্ত্রীর মৃত্যুতে লাভের চেয়ে লোকসানই হয়েছে আপনার বেশি, এবং তৃতীয়ত
এখানে একটু সময়ের জন্য থামলেন তিনি।
হ্যাঁ, বলুন তারপর? ডঃ লিডনার তাড়া দিলেন।
আপনার স্বপক্ষে তিন নম্বর যুক্তি হল, পোয়রা তার কথার জের টেনে বলতে থাকেন, কথা-বার্তা শুনে আমার মনে হয়েছে, স্ত্রীকে আপনি অত্যন্ত ভালবাসতেন। এর থেকে ধরে নেওয়া যায় যে, এমন স্ত্রীবৎসল স্বামী তার স্ত্রীকে কখনোই খুন করতে পারে না, এ আমার একান্ত বিশ্বাস ডঃ লিডনার এবং এর জন্য আমি আপনার প্রশংসা না করে থাকতে পারছি না। বলুন, আমার অনুমান ঠিক কিনা?
হ্যাঁ, ডঃ লিডনারের ঠোঁটে বিনয়ের হাসি।
অতএব, পোয়ারো একটু চিন্তা করে বললেন, এই কেসের ব্যাপারে আরো একটু এগুনো যাক।
কেন, এখানে আমরা যা জেনেছি, সেটাই কি যথেষ্ট নয়? ডঃ রেলি বেশ একটু অধৈর্য হয়েই কথাটা বলে ফেললেন যেন।
পোয়ারো চকিতে তার দিকে ফিরে তাকালেন, ধৈর্য ধরুন ডঃ রেলি, এত ব্যস্ত হবেন না। অসম্পূর্ণ তদন্তে আমি বিশ্বাসী নই। শুধু এই কেসের ব্যাপারেই নয়, যে কোন কেসের ব্যাপারে তুরুপের তাস সহ সম্ভাব্য সমস্ত তাসগুলো আমি আমার টেবিলে হাজির দেখতে চাই, সে যত প্রয়োজনীয় কিংবা অপ্রয়োজনীয়ই হোক না কেন। আমি চাই না একটা তাসও আমার দৃষ্টির আড়াল করে রাখা হোক।
পোয়ারোর শেষ কথায় ডঃ লিডনারকে একটু বিস্মিত বলে মনে হল।
বিশ্বাস করুন মঁসিয়ে পোয়ারো, কোন কিছুই আমি গোপন করে রাখিনি। যতটুকু জানি, সব আপনাকে বলেছি। আমার বলার আরও কিছুই অবশিষ্ট নেই।
কিন্তু আমি যদি বলি সব কথা আপনি আমাকে বলেননি?
হ্যাঁ, অবশ্যই বলেছি। আমার মনে হয় না, কোন কথা বাদ পড়ে গেছে।
এই মুহূর্তে ডঃ লিডনারকে কেমন অসহায় বলে মনে হয়।
পোয়ারো সঙ্গে সঙ্গে মাথা দুলিয়ে বললেন, না, না সব কথা আপনি আমাকে খুলে বলেননি। যেমন ধরুন নার্স লিথেরানকে কেন আপনি নিয়োগ করলেন, বলেছেন সে কথা?