মিঃ মারকাডো ভয়ে ভয়ে তাকান।
হ্যাঁ, তাই হবে, তাই হবে। তার কণ্ঠস্বরে ভয়ের ছোঁয়া। কিন্তু তার এমন ক্ষতি কে করতে পারে? তিনি ছিলেন অত্যন্ত ভদ্র দয়ালু তারপর তিনি আপন মনে মাথা নেড়ে বলতে থাকেন, তাকে যেই খুন করে থাকুক না কেন, শয়তান ছাড়া আর কিছু নয় সে।
মঁসিয়ে আপনি নিজে গতকাল অপরাহ্ন কী ভাবে কাটালেন বলুন?
আমি? তার চোখে অনিশ্চিত ভাব।
জোসেফ, তুমি খেয়াল করতে পারছো না? তাঁর হয়ে মিসেস মারকাডো উত্তরটা বলে দেন, কেন, তুমি তো তখন লাবোরেটরিতে ছিলে, মনে পড়ছে না?
ও হ্যাঁ, তাই তো ল্যাবোরেটরিতে তো ছিলাম। এ আমার নিত্য কাজ।
কখন গিয়েছিলেন?
তিনি আবার অসহায় ভাবে তার স্ত্রীর দিকে তাকালেন, উদ্দেশ্যে, কি হবে তুমি বলে দাও।
একটা বাজতে দশ তখন, জোসেফ।
হ্যাঁ, হ্যাঁ তখন দশ মিনিট বাকি ছিল একটা বাজতে।
দুর্ঘটনার কথাটা আপনি কখন জানতে পারলেন?
আমার স্ত্রী এসেই খবর দেয়। ভয়ঙ্কর দুঃসংবাদ সেটা। বিশ্বাস করা যায় না। এমন কি এখনো আমি বিশ্বাস করতে পারছি না, সত্যি কী তিনি খুন হয়েছেন?
হঠাৎ তিনি কঁপতে শুরু করে দিলেন।
উঃ কি ভয়ঙ্কর! কি ভয়ঙ্কর
মিসেস মারকাডো দ্রুত তার পাশে এসে দাঁড়ালেন।
হ্যাঁ, হ্যাঁ জোসেফ, আমরাও সেটা অনুভব করি। কিন্তু এভাবে ভেঙ্গে পড়লে তো চলবে না। বেচারা, উঃ লিডনারের কথাও ভাবতে হবে আমাদের।
ডঃ লিডনারের মুখে একটা অব্যক্ত যন্ত্রণার ছাপ আমি দেখতে পেলাম। আমার মনে হয় স্ত্রী বিয়োগের প্রসঙ্গটা তিনি খুব সহজে মেনে নিতে পারছিলেন না এবং এ প্রসঙ্গে বাড়তি আলোচনাও যেন তার কাছে অসহ্য বলে মনে হচ্ছিল। পোয়ারোর দিকে তাকালেন তিনি, চোখে করুণ আবেদন। পোয়ারো সঙ্গে সঙ্গে তার আবেদনে সাড়া দিলেন।
মিস জনসন?
আমার আশঙ্কা, আমি বোধহয় খুব বেশি খবর আপনাকে দিতে পারব না। মিস জনসন একবার মিসেস মারকাডোর দিকে তাকিয়ে দেখে নিয়ে বললেন, বসার ঘরে আমি তখন কাজ করছিলাম।
অস্বাভাবিক কিছু আপনি দেখেননি? কিংবা আপনার চোখে পড়েনি?
না।
আপনি কী একেবারে নিশ্চিত এ ব্যাপারে? কোন অস্পষ্ট শব্দ—
না, আমি ঠিকই বলছি।
যদি বলি আপনার চোখ বলছে, কিছু একটা আপনি দেখেছেন নিশ্চয়ই।
না, না আমি ঠিক বলছি কিছুই দেখেনি।
তাহলে কোন শব্দ শুনে থাকবেন — পোয়ারো একটু জোর দিয়েই বলেন, যা আপনি খেয়াল করতে পারছেন না।
মিস জনসন অবজ্ঞার হাসি হাসলেন।
আপনি আমাকে যে ভাবে চাপ দিচ্ছেন মিঃ পোয়ারো, তাতে মনে হয়, আমি যা কল্পনা করছি তা আমাকে বলতে হবে।
তাহলে আমরা ধরে নিতে পারি, আপনি কিছু একটা অনুমান বা কল্পনা করছেন।
মিস জনসন কি যেন ভাবলেন, তারপর থেমে থেমে বলতে শুরু করলেন, আমার যতদূর মনে পড়ছে, গতকাল দুপুরের সময় একটা অস্পষ্ট আওয়াজ আমার কানে আসে। আওয়াজটা মানুষের কান্নার মতো মনে হয়।
তারপর?
সব থেকে দুঃখের ব্যাপার কি জানেন, যথা সময়ে কান্নার আওয়াজ আমি ঠিকই শুনতে পাই। আমার বসবার ঘরের সব জানালাগুলো ভোলাই ছিল। আর কান্নার আওয়াজটা যে মিসেস লিডনারের, সেটা বুঝতে একটু সময় লেগেছিল। সেটাই আমার দুঃখের কারণ। তা সত্ত্বেও আমি যদি তখন তার ঘরে ছুটে যেতাম, কে জানে, হয়তো আমি আততায়ীকে—
ডঃ রেলি তার কথার মাঝে বাধা দিলেন।
ওই চিন্তাটা তখন আর মাথায় আনতে হবে না। ডঃ রেলি তার কথার জের টেনে বলেন, আমার কোন সন্দেহ নেই, মিসেস লিডনার (আমাকে ক্ষমা করবেন লিডনার) বলতে গেলে একরকম আততায়ী তার ঘরে প্রবেশ করা মাত্র আঘাত পান, মাত্র একটি ঘুষির আঘাতই যথেষ্ট ছিল। দ্বিতীয়বার আততায়ীকে ঘুষি ব্যবহার করতে হয় নি। কারণ তা হলে, তার দেহে প্রাণ থাকলে তিনি নিশ্চয়ই সাহায্যের জন্য আবার চিৎকার করতেন নিশ্চয়ই।
তবু মনে হয় আততায়ীকে আমি বোধহয় ধরতে পারতাম একটু তৎপর হলে। মিস জনসন আক্ষেপ করে বললেন।
তা তখন সময়টা কত ছিল মাদাম মঁসিয়ে? পোয়ারো জিজ্ঞাসা করলেন, দেড়টার কাছাকাছি?
হ্যাঁ, সময়টা ওই রকমই হবে।
ভাল কথা। পোয়ারোর কথায় চিন্তার ছোঁয়া, এ ছাড়া আর কোন শব্দ আপনি কী শুনতে পাননি? এই ধরুন দরজা জানালা খোলা কিংবা বন্ধ করার শব্দ?
মিস জনসন মাথা নাড়েন, না, সেরকম কিছু তো মনে পড়ছে না।
আমার ধারণা আপনি সেই সময় টেবিলে বসেছিলেন। তা কোন্ দিকে মুখ করে বসেছিলেন বলুন তো? কোর্টইয়ার্ডের দিকে? অ্যান্টিকরুমের দিকে? বারান্দার দিকে? কিম্বা শহরের উন্মুক্ত পথের দিকে?
কোর্টইয়ার্ডের দিকে।
সেখান থেকে আপনি বয় আবদুল্লাকে দেখতে পাচ্ছিলেন?
ও হ্যাঁ, চোখ তুলতে দেখতে পেতাম বৈকি! কিন্তু তখন আমি নিজের কাজে দারুণ ব্যস্ত ছিলাম, মুখ তুলে তাকাবার মত অবসর আমার ছিল না।
চোখ না তুলেও অনুভবে তো বোঝা যায়, পোয়ারোর সুচিন্তিত প্রশ্ন, কোর্টইয়ার্ডের দিকে জানালার পাশ দিয়ে কেউ হেঁটে গেছে বলে আপনার মনে হয়নি?
না, এ ব্যাপারে আমি নিশ্চিত।
কিন্তু কেউ যদি কোর্টইয়ার্ডের মাঝখানে দিয়ে চলে গিয়ে থাকে, সেটা কী আপনার নজরে পড়েছে?
সম্ভব নয়। তার কারণ তো আমি আগেই বলেছি, চোখ তুলে তাকাবার মত ফুরসত আমার ছিল না তখন।
বয় আবদুল্লাকে কাজ ছেড়ে বাইরে সহকর্মী অন্য পরিচারকদের সঙ্গে আড্ডা মারার জন্য চলে যেতে দেখেননি আপনি?