ফাদার লাভিগনির দিকে আবার ফিরে তাকালেন পোয়ারো।
আর একটা কথা, নার্স লিথেরান বলছিলেন, (আপনি নাকি একদিন বাইরের লোকের সঙ্গে কথা বলছিলেন) সেই লোকটাকেই তিনি জানালায় উঁকি মারতে দেখেছিলেন। এর থেকে সহজেই বোঝা যায় যে, কোন একটা উদ্দেশ্য নিয়ে লোকটা ঘোরা-ফেরা করছিল।
হ্যাঁ সে কথা আমি অস্বীকার করছি না, ফাদার ল্যাভিগনি অনেক চিন্তা করে কথাটা বললেন যেন।
লোকটার সঙ্গে আপনি প্রথম কথা বললেন, নাকি সে আপনার সঙ্গে প্রথম কথা বলেছিল?
ফাদার ল্যভিগনি কয়েক মুহূর্ত কি যেন ভাবলেন।
হ্যাঁ, আমার মনে পড়েছে, সে-ই প্রথম আমার সঙ্গে কথা বলে।
তা কী বলেছিল সে?
ফাদার ল্যাভিগনি আবার মনে করার চেষ্টা করলেন।
আমার যতদূর মনে পড়ছে, এই আমেরিকান এক্সপিডিসন হাউসের ব্যাপারে কথাবার্তা বলছিল সে। তারপর এই এক্সপিডিসনে কতজন আমেরিকান কাজ করছে ইত্যাদি। সত্যি কথা বলতে কি লোকটাকে আমি ভাল করে বুঝতেই পারিনি। তবে আরবী ভাষাটা রপ্ত করার জন্য আমি তার সঙ্গে কথা চালিয়ে যাই।
আপনি কী বিশেষ কোন বিষয় নিয়ে আলোচনা করেছিলেন?
আমার যতদূর মনে পড়ে, কথা প্রসঙ্গে আমি তাকে বলেছিলাম, হাসানিয়ে একটা বড় শহর। তারপরে আমরা দুজনেই স্বীকার করলাম, বাগদাদ শহরটা সব থেকে বড়। এরপর বোধহয় সে জানতে চেয়েছিল, আমি আমেরিকান, নাকি সিরীয় ক্যাথেলিক।
তার চেহারার বিবরণ দিতে পারেন?
আর এক দারুণ ভাবনায় পড়লেন ফাদার ল্যাভিগনি।
ছোট-খাট বেঁটে লোক, অবশেষে তিনি বললেন, তবে চেহারা বেশ গাঁট্টাগোট্টা এবং টেরা। গায়ের রং ফর্সা।
মিঃ পোয়ারো এবার আমার দিকে তাকালেন।
ফাদার ল্যাভিগনির দেওয়া লোকটার বর্ণনার সাথে আপনি কী একমত?
না, ঠিক তা নয়, একটু ইতস্তত করে আমি বললাম, বেঁটে নয় বরং তাকে বেশ লম্বাই বলা যায় এবং গায়ের রং অত্যন্ত কালো। রোগাটে চেহারা, আর তাকে টেরা বলে আমার মোটেই মনে হয়নি।
মিঃ পোয়ারোর মুখে চোখে হতাশার ছায়া।
এ কী করে সম্ভব? একই লোকের বর্ণনা দুজন লোকের কাছে দুরকম কী করে হতে পারে? পোয়ারো ফাদার ল্যাভিগনির দিকে ফিরে বলেন, আপনি যদি পুলিশ হতেন, কী চোখে দেখতেন ব্যাপারটা?
লোকটা যে টেরা ছিল, এ ব্যাপারে আমি সম্পূর্ণ নিশ্চিত। ফাদার ল্যাভিগনির কথায় দৃঢ়তার সুর, নার্স লিথেরান হয়তো অন্য বিষয়গুলি ঠিক ঠিক বলে থাকবে। যেমন ধরা যাক, আমি বলেছি লোকটার গায়ের রং মোটামুটি ফর্সা। তার মানে আমি বলতে চেয়েছিলাম, ইরাকীদের মধ্যে তাকে বেশ ফর্সা বলা যেতে পারে। আমার ধারণা, নার্স তাকে কালো বলেই বর্ণনা দেবে।
শুধু কালো নয়, অত্যন্ত কালো, আমি সঙ্গে সঙ্গে বললাম, কালচে হলুদ রঙের চেহারা।
আমার কি মনে হল, ডঃ রেলির দিকে তাকাতেই দেখলাম, ঠোঁট টিপে তিনি হাসছেন।
হঠাৎ পোয়ারো হাত নেড়ে মৃদু চিৎকার করে বলে উঠলেন, সেই লোকটা, হা সেই আগন্তুক হয়তো সে এ কেসের ব্যাপারে একটা উল্লেখযোগ্য নোক হয়ে উঠতে পারে, আবার নাও হতে পারে। সে যাই হোক, যে ভাবেই হোক, তাকে আমাদের খুঁজে বার করতেই হবে। সেই সঙ্গে আসুন তদন্ত চালিয়ে যাওয়া যাক।
পোয়ারোর দ্বিধাজড়িত চোখের দৃষ্টি এখন অশান্ত, ঘুরতে ঘুরতে হঠাৎ দ্রুত স্থির নিবদ্ধ হয় মিঃ রেইটারের মুখের উপরে।
আমার শুভাকাঙ্খী, আসুন। গতকাল অপরাহ্নের ঘটনা সম্পর্কে আপনি যা যা জানেন বলুন।
মিঃ রেইটারের লাল গোলগাল মুখটা হঠাৎ কেমন ফ্যাকাসে হয়ে গেল।
আ–আমাকে বলছেন?
হ্যাঁ, হ্যাঁ আপনাকেই। শুরু করার আগে আপনার নাম এবং বয়স দয়া করে বলুন।
কার্ল রেইটার, আঠাশ।
আমেরিকান নিশ্চয়ই?
হু, শিকাগো থেকে আসছি।
এটাই কী আপনার প্রথম বছর এখানে?
হু, ফটোগ্রাফির ব্যাপারে আমি ভারপ্রাপ্ত।
বেশ, বেশ। পোয়ারো এবার কাজের কথায় ফিরে আসে, এবার বলুন গতকাল অপরাহ্নে আপনি কী করছিলেন মিঃ রেইটার।
তা বেশিরভাগ সময় ডার্ক রুমে ছিলাম।
বেশির ভাগ সময়?
হ্যাঁ, বললাম তো, কতকগুলো প্লেট ডেভেলপের কাজে ব্যস্ত ছিলাম তখন। মাঝে মাঝে ফটোগ্রাফির-রুমেও আসতে হয়েছিল।
বাইরে?
না, না বাইরে যেতে হবে কেন? ডার্করুম এবং ফটোগ্রাফি রুম পাশাপাশি।
তার মানে ফটোগ্রাফি রুম থেকে আপনি কোন সময়ই বাইরে আসেননি, বলছেন?
হ্যাঁ, ঠিক তাই।
সেই সময় কোর্টইয়ার্ডে অস্বাভাবিক কিছু ঘটতে দেখেননি?
মিঃ রেইটার মাথা ঘাড় নাড়লেন।
না, আমি এখন কাজে খুব ব্যস্ত ছিলাম। তবে গাড়ির শব্দ হতেই বেরিয়ে আসি, আমার কোন চিঠি পত্র এসেছে কিনা দেখবার জন্য। কিন্তু বাইরে এসেই দেখি–।
তা কখন আপনি আপনার কাজ শুরু করেন মিঃ রেইটার?
তখন একটা বাজতে দশ হবে।
এই এক্সপিডিসনে যোগ দেবার আগে মিসেস লিডনারের সঙ্গে আপনার কী কখন পরিচয় হয়েছিল?
না স্যার। এখানে আসার আগে আমি তাকে কখনো দেখিনি।
আপনার কী অনুমান? এটা কী কোন একটা দুর্ঘটনা।
কার্ল রেইটার মাথা নাড়লেন। হতাশ ভাবে বললেন, না, স্যার আমি দুঃখিত এ ব্যাপারে আমি কিছুই জানি না।
মিঃ এমাট?
আমেরিকানদের মতো পরিষ্কার কণ্ঠস্বর ডেভিড এমাটের এবং একটু সতর্কতার সঙ্গেই তিনি বললেন, পৌনে একটা থেকে পৌনে তিনটে পর্যন্ত আমি পটারির কাজে ব্যস্ত ছিলাম। আবদুল্লার কাজের উপর নজর রাখাই আমার উদ্দেশ্য ছিল। মাঝে মাঝে ডঃ লিডনারকে সাহায্য করার জন্য ছাদে উঠতে হয়েছিল।