প্রয়োজনীয় সময়ের অতিরিক্ত খরচ করব না। আসলে ব্যাপারটা আপনাদের কাছে পরিষ্কার করার দরকার বলে মনে করেছিলাম। কারণ আচমকা প্রশ্ন করলে আপনারা যাতে ঘাবড়ে না যান।
বেশ তো প্রশ্ন করুন না আমি প্রস্তুত, ফাদার ল্যাভিগনি সাহসের সঙ্গে কথাটা বলেন।
এটাই কী আপনার প্রথম বছর এখানে?
হুঁ।
আর এখানে কবে এসেছেন?
প্রায় সপ্তাহ তিনেক আগে। সাতাশে ফেব্রুয়ারি।
ধন্যবাদ মঁসিয়ে। আর একটা কথা, এখানে আসার আগে মিসেস লিডনারের সঙ্গে আপনার কি কোন পরিচয় ছিল?
না, এখানে এসেই ওঁর সঙ্গে প্রথম আলাপ-আমার।
এবার বলুন মিসেস লিডনার খুন হওয়ার সময় আপনি কোথায় ছিলেন?
আমার ঘরে বসে পারস্য দেশের শিলালিপিতে আবিষ্কার করা বর্ণমালাগুলো পাঠোদ্ধার করার চেষ্টা করছিলাম।
পোয়ারোর কুনুইয়ের নিচে বিল্ডিংয়ের একটা খসড়া প্ল্যান পড়ে থাকতে দেখলাম।
দক্ষিণ-পশ্চিম কোণায় এই ঘরটা আপনার, আর আপনার ঘরের ঠিক বিপরীত দিকে মিসেস লিডনারের শয়নকক্ষ, ঠিক বলেছি না?
হুঁ।
তা কখন আপনি আপনার ঘরে যান ফাদার ল্যাভিগনি?
মধ্যাহ্নভোজের ঠিক পরেই, তা তখন একটা চল্লিশ হবে।
আর সেখানে আপনি ঠিক কতক্ষণ ছিলেন বলতে পারেন?
ঠিক তিনটের আগে পর্যন্ত। স্টেশন ওয়াগান ফিরে আসার শব্দ পেলাম। তারপর সেটা আবার ফিরে যাওয়ার আওয়াজ শুনে আমি একটু অবাক হলাম এবং ব্যাপারটা জানবার জন্য বাইরে বেরিয়ে এলাম।
ঘরে থাকার সময় কোন অস্বাভাবিক শব্দ কিংবা এমন কিছু আপনার চোখে পড়েনি যার সঙ্গে এই বিয়োগান্ত নাটকের সম্পর্ক থাকতে পারে বলে আপনার মনে হয়?
না।
কোর্টইয়ার্ডের দিকে আপনার ঘরের কোন জানালা নেই?
না, দুটো জানালাই রাস্তার দিকে।
কোর্ট ইয়ার্ড থেকে সাড়া শব্দ পাননি?
খুব বেশি নয়, তবে আমার ঘরের পাস দিয়ে মিঃ এমাটের বার বার ছাদে যাতায়াত করার শব্দ আমি শুনতে পেয়েছি।
কোন্ সময়, মনে আছে আপনার?
না, বলতে পারব না। কারণ তখন আমি আমার কাজে ডুবেছিলাম।
কয়েক মুহূর্তের জন্য একটা স্তব্ধতা নেমে আসে। মনে হয় পোয়ারো তখন চিন্তা করার সুযোগ নিচ্ছিলেন। তিনিই সেই নীরবতা ভঙ্গ করে বললেন, এ কেসের ব্যাপারে আপনার কিছু বলার নেই? মানে খুন হওয়ার আগে অস্বাভাবিক কিছু আপনার চোখে পড়েনি?
ফাদার ল্যাভিগনিকে একটু অস্বস্তির মধ্যে ফেলে দেওয়া হল যেন। জিজ্ঞাসু নেত্রে ডঃ লিডনারের পানে তাকালেন তিনি।
এটা একটা খুব কঠিন প্রশ্ন মঁসিয়ে, ফাদার ল্যাভিগনি উত্তরে বলেন,তাহলে খোলাখুলি ভাবেই বলি, আমার মতে মিসেস লিডনার বলতে গেলে এক রকম সব সময় মৃত্যু ভয়ে দিন গুণছিলেন। আগন্তুক খুনীর আসন্ন আবির্ভাবের কথা ভেবে দারুণ হতাশ হয়ে পড়েছিলেন তিনি। আমি তার নার্ভাস হওয়ার মানে বুঝি, কিন্তু কারণটা জানি না। আর মিসেস লিডনার বিশ্বাস করে কখনো তার গোপন কথা আমার কাছে খুলেও বলেন নি।
পোয়ারোর হাতে খুদে খুদে অক্ষরে লেখা নোট। গভীর মনোযোগ দিয়ে পড়ছিলেন সেই নোটটা। তারপর সেদিন থেকে চোখ তুলে তাকালেন ফাদার ল্যাভিগনির দিকে।
আমার কাছে খবর আছে, দু-তিন দিন আগে এখানে চুরির ভয় দেখান হয়েছিল।
ফাদার ল্যাভিগনি দৃঢ়স্বরে যা বললেন তা ঠিক এই রকম : অ্যান্টিকরুম থেকে চুঁইয়ে পড়া আলো নাকি তিনি দেখতে পান। কিন্তু সেই আলো আলেয়ার মতই রহস্যই রয়ে গেছে এখন। ব্যর্থ অনুসন্ধান বলা যেতে পারে।
আপনি বিশ্বাস করবেন কি করবেন না জানি না, তবে শুনে রাখুন, একজন অচেনা অজানা লোক সেই সময় প্রবেশ করেছিল এখানে।
আমি জানি না, এর পরেও কি ভাববার থাকতে পারে, ফাদার ল্যাভিগনি খোলাখুলি ভাবে বলেন, কারোর কিছু চুরি গেল না, কিংবা কাউকে উত্তক্তও করা হল না। তাই মনে হয় হাউস বয়দের কেউ একজনকে–
নাকি এক্সপিডিসনের কেউ?
এক্সপিডিসনের কেউ যদি হয় তাহলে সেক্ষেত্রে কারোর স্বীকার না করার কোন অর্থ তো দেখা যাচ্ছে না।
কিন্তু বাইরের কোন আগন্তুক হলে?
আমি তাই মনে করি।
আচ্ছা ধরা যাক, বাইরের কোন লোক যদি আগের দিন গোপনে প্রবেশ করে থাকে এখানে, এখন কথা হচ্ছে, সবার চোখকে ফাঁকি দিয়ে পরদিন, মানে দুর্ঘটনার দিন অপরাহ্ন পর্যন্ত তার পক্ষে আত্মগোপন করে থাকাটা সম্ভবপর কিনা?
প্রশ্নটা ফাদার ল্যাভিগনি এবং ডঃ লিডনারকে উদ্দেশ্য করে বললেন পোয়ারো। তারা দুজনেই প্রশ্নটা অত্যন্ত সতর্কতার সঙ্গে ভেবে দেখলেন।
আমার মনে হয় না সেটা সম্ভব,অবশেষে ডঃ লিডনার একটু স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলে বলেন, কোথায় যে সে লুকোতে পারে, আমি তো দেখতেই পাচ্ছি না। ফাদার ল্যাভিগনি, আপনার কি মনে হয়, কেউ এখানে লুকিয়ে থাকতে পারে?
না, না, আমি তা আদৌ মনে করতে পারি না।
এবার পোয়ারো মিস জনসনের দিকে ফিরলেন।
আর মাদাম আপনি? আমার ধারণাটা আপনার কী সম্ভবপর বলে মনে হয় না?
না, প্রত্যুত্তরে মিস জনসন বলে, আমি মনে করি না, এখানে কোথায় কে লুকোতে পারে? শয়নকক্ষ সব সময়ই ব্যবহার করা হচ্ছে। অন্য ঘরগুলো, যেমন ডার্ক-রুম, ড্রইং-অফিস, ল্যাবরেটরি, সেগুলো সব হয় সেদিন, নয় পরদিন ব্যবহার করা হয়েছে, কেউ সেখানে লুকিয়ে থাকলে নিশ্চয়ই কারোর না কারোর ঠিক নজরে পড়তোই। তবে চাকর-বাকররা যদি কোন ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হয়ে
হ্যাঁ, সেটা হতে পারে, পোয়ারো তাকে সমর্থন করে বললেন, আবার অসম্ভবও বলা যেতে পারে।