ক্যাপ্টেন মেটল্যান্ড উত্তর না দিয়ে গোঁফে তা দিতে থাকেন।
হঠাৎ সেই সময় আমার মুখ থেকে কথাটা ফসকে গেল, আমাকে মাফ করবেন, এ ব্যাপারে একটা কথা না বলে আমি থাকতে পারছি না।
তারপর আমি সেই ইরাকি লোকটার কথা বললাম। দুদিন আগে নোকটা ফাদার ল্যাভিগনির ঘরের কাছে ঘোরাফেরা করছিল, সে কথাও বললাম ওঁদের।
ভাল কথা, ক্যাপ্টেন মেটল্যান্ড সব শুনে বলেন, খবরটা আমরা নোট করে রাখলাম। খবরটা পুলিশের পক্ষে বিশেষ সহায়ক হবে বলে মনে হয়। এ কেসের ব্যাপারে লোকটা জড়িত থাকলেও থাকতে পারে।
মনে হয়, লোকটা গুপ্তচরের কাজ করছিল, আমি ওঁদের বললাম, পথ পরিষ্কার হয়ে গেলে লোকটার সম্বন্ধে খোঁজ খবর নিতে হবে।
ডঃ রেলি ভ্রু কুঁচকে বলেন, মনে কর পথ আদৌ পরিষ্কার হল না, তখন, তখন কী করবে?
হতভম্বের মত তার দিকে আমি তাকিয়ে থাকলাম। অতঃপর ডঃ লিডনারের দিকে ফিরে তাকালেন ক্যাপ্টেন মেটল্যান্ড।
খুব মনোযোগ দিয়ে আমার কথাগুলো শুনুন ডঃ লিডনার, এখন পর্যন্ত যে সব তথ্য আমরা পেয়েছি, এ হল তার সারমর্ম। মধ্যাহ্নভোজের পর, তখন পৌনে একটা হবে, নার্স লিথেরানকে সঙ্গে নিয়ে আপনার স্ত্রী তার শয়নকক্ষে চলে যান। আর আপনি নিজে তখন ছাদে চলে যান, সেখানে ঘণ্টা দুই কাটান, ঠিক?
হুঁ।
এই সময়ের মধ্যে আপনি কী একবারও নিচে নেমে আসেন নি?
কেউ আপনার সঙ্গে দেখা করার জন্য ছাদে উঠে আসেনি?
হ্যাঁ, এমোট ঘন ঘন এসেছিল। তার কাজই হল আমার সঙ্গে আলোচনা করার ফাঁকে ফাঁকে মাঝে মাঝে নিচে নেমে গিয়ে মাটির পাত্র বোয়ার কাজে নিযুক্ত ছোকরাটার কাজ তদারক করা।
আচ্ছা ডঃ লিডনার এবার খুব ভাল করে মনে করে দেখুন, সব চেয়ে দীর্ঘ সময় কখন তিনি আপনার কাছে ছিলেন, আর সবচেয়ে কত বেশি সময় তিনি কোর্ট ইয়ার্ডে অনুপস্থিত ছিলেন? কোর্ট লিডনার মনে করার চেষ্টা করেন।
বলা মুশকিল, সম্ভবত দশ মিনিট। ব্যক্তিগতভাবে আমি বলব দুই কি তিন মিনিট, কারণ আমি যখন কোন কাজে ব্যস্ত থাকি তখন সময়ের জ্ঞান বলতে আমার কিছু থাকে না।
চকিতে একবার ডঃ লিডনারের দিকে তাকালেন ক্যাপ্টেন মেটল্যান্ড। তারপর নোটবুকের পাতা উল্টাতে গিয়ে তিনি বলেন, এবার শুরু থেকে পড়ে শোনানো যাক। একটু থেমে তিনি আবার বলেন, দেখুন মিঃ লিডনার দুপুর একটা থেকে দুটোর মধ্যে আপনার এক্সপিডিসনের সদস্যরা কে কি করছিল, তার একটা সঠিক বিবরণ দেবার চেষ্টা আমি করছি।
একটু অপেক্ষা করুন। আমার বক্তব্যটা পুরোপুরি শুনলে বুঝতে পারবেন, আমি কি বলতে চাইছি। প্রথমে মিঃ ব্যান্ড মিসেস মারকাডো তার জবানবন্দীতে বলেছেন, তিনি তখন তার শয়নকক্ষে শ্যাম্পু করা অবিন্যস্ত চুল বিন্যস্ত করতে ব্যস্ত ছিলেন। মিস জনসন বলেছেন, তিনি নাকি তখন বসবার ঘরে বসে সিলেন্ডার সীলের ছাপ নিচ্ছিলেন। মিঃ রেইটারের জবানবন্দীতে দেখা যাচ্ছে, তিনি তখন ডার্করুমে ফটো ডেভেলপিং’র কাজে ব্যস্ত ছিলেন। ওদিকে ফাদার ল্যাভিগনি বলেছেন, দুর্ঘটনার সময় তিনি তার শয়নকক্ষে কাজ করছিলেন। অপর দুজন সদস্য ক্যারি এবং কোলম্যানের প্রসঙ্গে জানিয়ে রাখি, ক্যারি তখন খনন কাজে ব্যস্ত ছিল, আর কোলম্যান তখন হাসানিয়ায়। এরপর এখন পরিচারকদের প্রসঙ্গে আসা যাক– বলে ক্যাপ্টেন মেটল্যান্ড এখানে একটু থেমে আবার বলতে শুরু করলেন?
আপনাদের ভারতীয় পাঁচকটি তখন প্রবেশ পথে প্রহরীর সামনে বসে একটা একটা করে পাখি শিকার করছিল। দুপুর একটা পনেরো নাগাদ হাউসবয় ইব্রাহিম এবং মনসুর তার সঙ্গে মিলিত হয়। আড়াইটে পর্যন্ত তারা সেখানে হাসি-ঠাট্টা এবং গল্প-গুজব করে কাটিয়ে দেয়। আর সেই সময়ের মধ্যেই আপনার স্ত্রীর মৃত্যু ঘটে।
ডঃ লিডনার সামনের দিকে ঝুঁকে পড়ে জিজ্ঞাসা করলেন, আপনার কথাটা ঠিক বুঝতে পারলাম না, আপনি আমাকে ধাঁধায় ফেলে দিলেন যেন। বলুন, আপনি কী ইঙ্গিত করতে চাইছেন?
তার আগে বলুন, কোর্ট ইয়ার্ডের দিকে দরজা ছাড়া আপনার স্ত্রীর ঘরে প্রবেশ করার অন্য আর কোন পথ আছে কি না!
না, থাকার মধ্যে দুটি জানালা, কিন্তু সেগুলো শক্ত রেলিং দিয়ে ঘেরা, তাছাড়া, আমার ধারণা, জানালা দুটি বন্ধ ছিল।
সপ্রশ্ন চোখে আমার দিকে তাকালেন ডঃ লিডনার, আমার সম্মতি পাওয়ার জন্য।
হ্যাঁ, জানালা দুটি ভেতর থেকে ছিটকিনি দেওয়া ছিল, সঙ্গে সঙ্গে আমি জবাব দিলাম।
সে যাই হোক, জানালা দুটি ভোলা থাকলেও ঘন লোহার রেলিং-এর ফাঁক দিয়ে মাথা গলিয়ে কেউ তার ঘরে ঢুকতে পারে না, কিম্বা সেই পথ দিয়ে বেরিয়ে আসতেও পারে না। ক্যাপ্টেন মেটল্যান্ড বলতে থাকেন, সে কথা আমি এবং আমার অনুগামীরাও ভেবে দেখেছি, কোন মতেই জানালা পথ দিয়ে আততায়ীরা আসতে পারে না। তাই আমার যতদূর মনে হয়, আপনার স্ত্রীর শয়নকক্ষে প্রবেশের জন্য আততায়ী নিশ্চয়ই খিলান পথের দরজা দিয়ে কোর্টইয়ার্ডে ঢুকে থাকবে। তবে সেই সঙ্গে প্রহরী, এবং সেই দুজন হাইসবয়দের কথা ধরে নিলে বলতে হয়, সে পথ দিয়ে তৃতীয় কোন ব্যক্তি প্রবেশ করতে পারে না।
সঙ্গে সঙ্গে ডঃ লিডনার লাফিয়ে উঠলেন।
তার মানে কী, কী বলতে চান আপনি?
শান্ত হয়ে আপনি বসুন ডঃ লিডনার, আমাদের কথা এখনও শেষ হয়ে যায়নি, ডঃ রেলি শান্তভাবে বললেন, আমি আপনার মনের অবস্থা জানি, স্ত্রী বিয়োগে আপনি এখন শোকাভূত, কিন্তু তা সত্ত্বেও আমি বলতে বাধ্য হচ্ছি, বাস্তবের মুখোমুখি আপনাকে হতেই হবে। হ্যাঁ, যে কথা বলছিলাম, আপনার স্ত্রীর খুনী বাইরে থেকে আসেনি, অতএব সে নিশ্চয়ই ভেতরের কেউ। মনে হয়, আপনাদের এক্সপিডিসনের কোন সদস্য মিসেস লিডনারের খুনের জন্য দায়ী।