হ্যাঁ, নিশ্চয়ই সে তাই করেছে। মিসেস মারকাডোই প্রথম মুখ খুললেন, পরিচারকরা যখন অন্য কাজে ব্যস্ত ছিল, তখনই আততায়ী মিসেস লিডনারকে খুন করে পালায়।
হ্যাঁ, মিঃ এমাটের কথায় অনিশ্চয়তার সুর আমার কানে বাজে, বোধহয় তাই।
তারপর সে বাচ্চা পট-বয় আবদুল্লার দিকে ফিরে আরবি ভাষায় কতকগুলো প্রশ্ন করে তাকে। প্রত্যুত্তরে ছেলেটি উত্তেজিত হয়ে আরবি ভাষায় কি যেন বলল তাকে।
মিঃ এমাট হতভম্বের মত ভ্রু কুঁচকায়, এ আমি কিছুতেই বুঝতে পারি না, নিজের মনে বিড়বিড় করে সে বলতে থাকে, এ আমি আদৌ বুঝতে পারি না।
কিন্তু সে আমাকে বলল না, কি সে বুঝতে পারছে না।
.
১১.
বিচিত্র ঘটনা
এখানে আমার ব্যক্তিগত ভূমিকার কথা যতটা সম্ভব সবিস্তারে বর্ণনা দেবার চেষ্টা করব। পরবর্তী দু’ঘণ্টা আমাকে নীরবে কাটাতে হল ক্যাপ্টেন মেটল্যান্ড, পুলিশ এবং ডঃ রেলির আগমনের অপেক্ষায়। তখন অপরাহ্নের শেষ আলো এসে পড়েছিল কোর্টইয়ার্ডের পশ্চিম প্রান্তে, সময় পাঁচটা। ডঃ রেলি তার অফিস ঘরে যেতে বললেন আমাকে। ডঃ লিডনারের চেয়ারে বসে তিনি আমাকে তার বিপরীত আসনে বসতে বললেন।
আচ্ছা নার্স, এবার শুরু থেকে আরম্ভ করা যাক, কি বলো? নোটবুক তার হাতের কাছেই ছিল। এ আমার নিজের সন্তুষ্টির জন্য, বুঝলে? এখন বল তো ঠিক কখন ডঃ লিডনার তার স্ত্রীর মৃতদেহ দেখতে পান?
তা তখন তিনটে বাজতে পনেরো হবে।
ঠিক আছে, ডঃ রেলি নোটবুক থেকে মুখ তুলে তার পরবর্তী প্রশ্নের জন্য তৈরি হলেন, আচ্ছা, মিসেস লিডনারের ঠিক কখন মৃত্যু হয়, এ ব্যাপারে তোমার কী অনুমান?
ওঃ ডক্টর আমি অত্যন্ত দুঃখিত, গলার স্বরটা যতটা সম্ভব পরিষ্কার করে বললাম, আমার বলা উচিত নয়।
অমন পেশাদারী কথা বলো না। আমি দেখতে চাই আমার সঙ্গে তোমার অনুমান মিলে যায় কি না!
ঠিক আছে, তাহলে বলি, আমার অনুমান এক ঘন্টা আগে ওঁর মৃত্যু ঘটে থাকবে।
তা হতে পারে। সাড়ে চারটের সময় আমি মৃতদেহ পরীক্ষা করে দেখেছি, এবং নোটবুকে মৃত্যুর সময় উল্লেখ করেছি একটা পনেরো থেকে পঁয়তাল্লিশ। মৃত্যুর সময় মোটামুটি দেড়টা হিসাবে ধরে নেওয়া যায়, কি বল?।
আমি চুপ করে ওঁর কথাগুলো শুনে গেলাম। কোন মন্তব্য নয়।
এই খুন-খারাবি ব্যাপারটা বড় অদ্ভুত, ডঃ রেলি নিজের থেকেই আবার বলেন, আচ্ছা, আপনি বলেছেন, তখন আপনি নাকি বিশ্রাম নিচ্ছিলেন। ভাল কথা, কোন শব্দ শুনতে পাননি।
দেড়টার সময় ?না ডক্টর। দেড়টা কেন, তার আগে কিম্বা পরে কোন সময়েই আওয়াজ বলতে কিছু আমার কানে আসেনি। পৌনে একটা থেকে তিনটে কুড়ি পর্যন্ত আমি ঘুমিয়ে পড়েছিলাম। তাই কোন শব্দ আমি শুনতে পাইনি, কেবল ওই আরবী ছেলেটির গুন গুন আওয়াজ ছাড়া এবং ঘুমের ঘোরে মাঝে মাঝে ছাদ থেকে ডঃ লিডনারের সঙ্গে কথা বলতে গিয়ে মিঃ এমাটের চিৎকারধ্বনি আমার কানে আসা ছাড়া অন্য আর কোন শব্দ আমি শুনতে পাইনি।
হ্যাঁ, সেই আরবী ছেলেটি
ডঃ রেলির চোখে ভ্রুকুটি।
ঠিক সেই সময় ঘরের দরজাটা খুলে যায়, ডঃ লিডনার এবং ক্যাপ্টেন মেটল্যান্ড প্রবেশ করলেন। ব্যস্তবাগীশ মানুষ এই কাপ্টেন মেটল্যান্ড, ধূসর চোখে ক্রুর চাহনি।
ডঃ রেলি চেয়ার ছেড়ে উঠে দাঁড়িয়ে ডঃ লিডনারকে আসন ছেড়ে দিলেন। বসুন আপনি। আপনি যে আসতে পেরেছেন, তাতেই আমি খুব খুশি। আপনাকে আমাদের প্রয়োজন হবে। বড় বিচিত্র এই কেস।
ডঃ লিডনার মাথা নিচু করে বসে রইলেন।
আমি জানি। ডঃ লিডনার এবার আমার দিকে তাকালেন। নার্স লিথেরানের কাছে আমার স্ত্রী সব সত্য কথা প্রকাশ করে গেছেন। এই সময় কোন কিছু গোপন করা উচিত হবে না আমাদের। নার্স, তাই বলছি, গতকাল আমার স্ত্রীর সঙ্গে তোমার যে সব কথাবার্তা হয়, সব তুমি খুলে বল ক্যাপ্টেন মেটল্যান্ড এবং ডঃ রেলিকে, কোন কিছু গোপন করো না।
আমাদের কথাবার্তা যতটা সম্ভব অক্ষরে অক্ষরে আমি বলে গেলাম।
ক্যাপ্টেন মেটল্যান্ড আকস্মিক ভাবে কখন কখন কথা বলছিলেন। আমার বলা শেষ হতেই তিনি ফিরে তাকালেন ডঃ লিডনারের দিকে।
আর এ সব কথা সবই সত্য, তাই না লিডনার।
নার্স লিথেরানের প্রতিটি কথা সত্য।
কি বিচিত্র কাহিনী! ডঃ রেলির সরস মন্তব্য এবং জিজ্ঞাসা সেই চিঠিগুলো আপনি দেখাতে পারেন?
তিনি তার এ্যাটাচি কেস থেকে বার করে চিঠিগুলো আমাকে দেখান। তারপর সেগুলো তিনি টেবিলের উপরে রেখে দেন।
তাহলে সেগুলো সেখানে পড়ে আছে নিশ্চয়ই।
এ কাহিনীর ব্যপারে চুপ করে বসে থাকা ঠিক হবে না ক্যাপ্টেন মেটল্যান্ড, ডঃ রেলি এবার ক্যাপ্টেন মেটল্যান্ডের দিকে ফিরে বলেন, এখন এই পত্রলেখককে খুঁজে বার করে শাস্তি দিতে হবে।
আচ্ছা এ কাজ কী মিসেস লিডনারের প্রাক্তন স্বামীর বলে আপনারা বিশ্বাস করেন? আমি আমার কৌতূহল আর চাপতে পারলাম না।
কেন, তুমি কী তা মনে করো না? ক্যাপ্টেন মেটল্যান্ড পাল্টা প্রশ্ন করলেন।
হ্যাঁ, একটু দ্বিধার সঙ্গে আমাকে বলতে হল, এর মধ্যে একটু সন্দেহ থেকে যায় বৈকি।
সে যাই হোক, এবার ডঃ লিডনার বলেন, লোকটা অবশ্যই খুনি এবং আমি এ কথাও বলব, মারাত্মক বিপদজ্জনক উন্মাদ লোক সে। তাকে আমাদের খুঁজে বার করতেই হবে ক্যাপ্টেন মেটল্যান্ড, আর সে কাজটা খুব কঠিন বলে মনে হয় না আমার।
আপনি যা ভাবছেন ব্যাপারটা তার থেকেও অনেক কঠিন, কাপ্টেন মেটল্যান্ডের দিকে ফিরে ডঃ রেলি বলেন, তাই না মেটল্যান্ড?