ফুঃ! ফুঁ দিয়ে দেওয়ার মতো করে মিসেস নিকোলেটিস বললেন কে ওদের তোয়াক্কা করে?
ধন্যবাদ ম্যাডাম! বললো ইনসপেক্টর, তাহলে আপনার এই বসবার ঘরেই শুরু করা যাক কি বলেন?
ইনসপেক্টরের উদ্দেশ্যটা জানার পরেই প্রচণ্ড রাগে ফেটে পড়লেন মিসেস নিকোলেটিস, যেখানে খুশী আপনি সার্চ করতে পারেন, বললেন তিনি, কিন্তু এখানে নয়, আমি আপত্তি জানাচ্ছি।
আমি দুঃখিত মিসেস নিকোলেটিস, আমাকে পুরো বাড়ি সার্চ করতেই হবে।
তা ঠিক, কিন্তু আমার ঘরে নয়, আমি আইনের ঊর্ধ্বে।
কেউ আইনের ঊর্ধ্বে হতে পারে না, আমি বলতে বাধ্য হচ্ছি, আপনি একপাশে সরে দাঁড়ান।
এ আমার সাংঘাতিক ক্ষতি, প্রচণ্ড ক্রোধে ফেটে পড়লেন মিসেস নিকোলেটিস। আপনারা ব্যস্ত অফিসার। আপনাদের এই অন্যায় জুলুমের ব্যাপারে আমি সবাইকে চিঠি লিখবো। আমি আমার পার্লামেন্টের সদস্যদের কাছে লিখবো। আমি কাগজেও লিখবো।
মাদাম, আপনি আপনার খুশিমতো যাকে মনে করেন লিখতে পারেন। বললো ইনসপেক্টর শার্প। যেভাবেই হোক, এ ঘর আমি সার্চ করবোই।
শার্প তার অনুসন্ধানের কাজ শুরু করলো টেবিল দিয়ে। কাগজপত্র ঘাঁটাঘাঁটির পর ঘরের এক কোণায় কাপবোর্ডের দিকে এগোল সে। এটা তো দেখছি চাবি দেওয়া। চাবিটা পেতে পারি?
কখখনো নয়, চিৎকার করে উঠলো মিসেস নিকোলেটিস। চাবি আপনি পাবেন না। কখখনো নয়, কখখনো নয়। আর ইউ ব্লাডি বাস্টার্ড, থু! থু! থু!
আমি আবার বলছি, চাবিটা আপনি আমাকে দিন, তীক্ষ্ণস্বরে বললো ইনসপেক্টর। তা না হলে কাপবোর্ডের ডালা আমি ভাঙতে বাধ্য হবো।
না, আমি আপনাকে চাবি কিছুতেই দেবো না। চাবি পাওয়ার আগে আপনাকে আমার পোশাক ছিঁড়ে ফেলতে হবে। আর সেটা-সেটা হবে একটা স্ক্যান্ডাল।
একটা বাটালি নিয়ে এসো করব, শেষে হাল ছেড়ে দিয়ে বললো শার্প।
রাগে উত্তেজনায় চিৎকার করে উঠলেন মিসেস নিকোলেটিস।
তাতে কোনো গুরুত্ব দিলো না শার্প। বাটালি দিয়ে কাপবোর্ডের ডালা খোলা হলো। ডালা খুলতেই অনেকগুলো খালি ব্ল্যান্ডির বোতল বেরিয়ে এলো কাপবোর্ড থেকে।
জানোয়ার! শুয়োরের বাচ্চা! শয়তান! চিৎকার করে উঠলেন মিসেস নিকোলেটিস।
ধন্যবাদ ম্যাডাম, নম্রভাবে বললো ইনসপেক্টর। এখানে আমাদের কাজ শেষ। বুদ্ধি করে বোতলগুলো কাপবোর্ডে আবার সাজিয়ে রাখলো মিসেস হার্বার্ড। ওদিকে মিসেস নিকোলেটিস তখন হিস্টিরিয়া রোগিণীর মতো ছটফট করছিলেন। রহস্য, একটা রহস্য মিসেস নিকোলেটিসের মেজাজের রহস্য এখন পরিষ্কার হয়ে গেলো। সবেমাত্র মিসেস নিকোলেটিসের যন্ত্রণা উপশম করার জন্য তাকে ওষুধ খাইয়ে তার পাশে বসবার উপক্রম করেছিল মিসেস হার্বার্ড, ঠিক সেই সময় পোয়ারোর ফোন এলো। রিসিভারটা নামিয়ে রেখে সে আবার ফিরে গেলো মিসেস নিকোলেটিসের কাছে। তখনো তিনি সোফার উপর হাত-পা ছুঁড়ছিলেন তার বসবার ঘরে। বুঝতেই পারছেন ওরা ওদের কর্তব্য তো করবেই, তাকে বোঝাবার চেষ্টা করেন মিসেস হার্বার্ড।
তাই বলে আমার ব্যক্তিগত কাপবোর্ড খুলবে? আমি ওদের বললাম, ওটা আপনাদের জন্য নয়। এটা আমি চাবি দিয়ে রেখেছিলাম। চাবিটা আমি আমার বুকের মধ্যে রেখেছিলাম। তুমি যদি সাক্ষী হিসাবে না থাকতে ওরা তাহলে নির্লজ্জের মতো আমার পোশাক টেনে ছিঁড়ে ফেলতো।
ওহো না, ওরা ও কাজ কখনোই করতো না, বললো মিসেস হার্বার্ড।
তুমি যে বলছো। বাটালি না পেলে ওরা তাই করত। এটা আমার বাড়ির পক্ষে অত্যন্ত ক্ষতিকর, এর জন্য আমি দায়ী হবো।
কিন্তু মিসেস নিকোলেটিস, মনে রাখবেন এখানে একজন খুন হয়েছে। আর খুন হলে পুলিস এমন কিছু কাজ করতে পারে যা অন্য সময় হলে মোটেই সুখকর হতো না।
খুনের ব্যাপারে আমি থুথু ফেলি। বললেন উত্তেজিত নিকোলেটিস। এই বাচ্চা মেয়ে সিলিয়া আত্মহত্যা করেছে, বিশ্রী প্রেমের ব্যাপারে জড়িয়ে পড়েছিল ও, তাই তার হাত থেকে রেহাই পাওয়ার জন্য বিষ খেতে বাধ্য হয়েছিল ও, এরকম ঘটনা তো আকছারই ঘটছে আজকাল, এই সব মেয়েরা প্রেমের ব্যাপারে এতো বোকা, প্রেমের জন্য ওরা নিজেদের জীবনকেও তুচ্ছ বলে ভাবতে পারে।
ভালোবাসা, বললো মিসেস হার্বার্ড। তারপর যেখান থেকে আলোচনা শুরু হয়েছিল তার জের টেনে সে আবার বললো, এমন সব ব্যাপারে আমার চিন্তা করা উচিত নয়।
তোমার পক্ষে সেটা হয়তো ভালো কথা, কিন্তু আমাকে চিন্তা করতেই হবে, আমার পক্ষে এটা আর নিরাপদ নয়।
নিরাপদ? অবাক চোখে তাকাল মিসেস হার্বার্ড।
এটা আমার ব্যক্তিগত কাপবোর্ড, জোর দিয়ে বললেন মিসেস নিকোলেটিস। আমার কাপবোর্ডে কি আছে কেউ জানতো না, আমি কাউকে জানতেও দিতে চাইনি। কিন্তু এখন ওরা জেনে গেল, আমি এখন অস্বস্তি বোধ করছি। ওরা হয়তো ভাবতে পারে–ওরা কি ভাবতে পারে?
ওরা বলতে আপনি কাদের বোঝাতে চাইছেন? বললে ভালো হতো, তাহলে আমি হয়তো আপনাকে সাহায্য করতে পারতাম।
কেন বুঝতে পারছে না তুমি, আমার এখানে ঘুম হবে না, বললেন মিসেস নিকোলেটিস, এই চাবিগুলো একইরকমের। যে কোনো চাবি যে কোনো তালায় লাগতে পারে। তাহলে বুঝতেই পারছো ব্যাপারটা কোথায় এসে দাঁড়িয়েছে। এখন আমার চোখে আর ঘুম আসবে না।
মিসেস নিকোলেটিস আমি আবার বলছি, আপনি যদি কোনো কিছুর জন্য ভয় পেয়ে থাকেন তাহলে আমাকে সব কথা খুলে বলতে পারেন।