- বইয়ের নামঃ এন অর এম
- লেখকের নামঃ আগাথা ক্রিস্টি
- বিভাগসমূহঃ টমি ও টাপেন্স সিরিজ ,অনুবাদ বই, রোমাঞ্চকর,গোয়েন্দা কাহিনী
এন অর এম
১. সুগঠিত জার্মান বাহিনী
এন অর এম (১৯৪১) / আগাথা ক্রিস্টি
অনুবাদ : নচিকেতা ঘোষ
১৯৪০ সাল। সুগঠিত জার্মান বাহিনীর অতর্কিত আক্রমণে ফ্রান্সের পতন যখন অনিবার্য হয়ে উঠেছে, নিচের ঘটনা সেই সময়ের!
টমি বেরেসফোর্ড ব্রিটিশ সিক্রেট সার্ভিসের প্রাক্তন কর্মী। পত্নী টুপেনসকে নিয়ে তিনি অবসর জীবন যাপন করছে। তাদের দুই ছেলে ও মেয়ে বাইরে কর্মনিযুক্ত।
এমন একটা সময় ছিল যখন এই দম্পতি অনেক দুঃসাহসিক কর্ম করেছে, সত্য উদঘাটন করে অপরাধীকে শায়েস্তা করেছে, উত্তেজনা ও আনন্দে ভরা সেই দিনগুলো এখন কেবল স্মৃতিমাত্র।
অবসরের কর্মহীন অলস দিনগুলো তাই বড় একঘেয়ে ভাবেই অতিবাহিত হচ্ছে। তাই মাঝে মাঝে টমিকে আক্ষেপ করতে শোনা যায়, মিঃ কার্টারও আমাদের মনে রাখেননি, করার মত দু-একটা অন্তত কাজ তিনি দিতে পারতেন।
তৎকালীন বিভাগীয় প্রধান মিঃ কার্টার (লর্ড এস্থাম্পটন) অবশ্য তার কর্মক্ষেত্র থেকে অবসর নিয়েছেন। বর্তমানে তিনি স্কটল্যান্ডে থাকেন। মাছ শিকার করেই তার দিন কাটে।
সেদিন বেরেসফোর্ড দম্পতি ড্রইংরুমে বসে আছেন। এমন সময় লম্বা চওড়া এক ভদ্রলোক তাদের সঙ্গে দেখা করতে এলেন।
–আমি গ্রান্ট, লর্ড এস্থাম্পটনের বন্ধু। তারই পরামর্শে একটা কাজের সন্ধান নিয়ে মিঃ বেরেসফোর্ডের সঙ্গে কথা বলতে এসেছি।
কাজের কথা শুনে টমি এবং টুপেনস দুজনেই সজাগ হল। করার মত কাজ নেই বলেই তো এতদিন তারা আক্ষেপ করছিল।
টমি উৎসাহিত হয়ে কাজটা সম্পর্কে জানতে চাইলে গ্রান্ট বললেন, নিছকই ফাইল ঘাঁটাঘাঁটির সামান্য একটা কাজ।
তাদের কথাবার্তার মাঝেই টেলিফোন বেজে উঠল, টুপেনস উঠে গিয়ে ধরল। ফিরে এসে জানাল, সে আলোচনায় থাকতে পারছে না বলে দুঃখিত। তার এক বন্ধু হঠাৎ অসুস্থ হয়ে পড়েছে, এখুনি তাকে তার কাছে যেতে হবে।
টুপেনস চলে গেলে গ্রান্ট জানালেন, লর্ড এস্থাম্পটন নিজেই টমির জন্য একটি কাজের ব্যবস্থা করেছেন। কাজটা গোপনীয়–এমনকি স্ত্রীকেও জানানো চলবে না।
কেন না, তাকে নিয়োগ করা হবে একটি নিষিদ্ধ এলাকায়–যেখানে স্ত্রীকে সঙ্গে নিয়ে যাওয়া সঙ্গত হবে না।
মিঃ গ্রান্ট বললেন, যুদ্ধের গতিপ্রকৃতি অবিশ্বাস্যভাবে পালটে যাচ্ছে। যুদ্ধে আমাদের সৈনিকরা বীরের মতো লড়ছে, বোমারু ও যুদ্ধজাহাজগুলো সক্রিয় তবুও জার্মানদের সঙ্গে আমরা এঁটে উঠতে পারছি না।
পরিচালন ব্যবস্থায় রদবদল করেও কোনো সুফল পাওয়া যাচ্ছে না। শেষ পর্যন্ত মূল গলদ কোথায় আবিষ্কার করা হল। পঞ্চমবাহিনী অর্থাৎ গৃহশত্রুদের অব্যাহত সহযোগিতা পেয়ে চলেছে জার্মানরা–তার বলেই অপ্রতিহত হয়ে উঠছে জার্মানবাহিনী। আমাদের নিজেদের লোকই প্রতিপক্ষকে সমস্ত গোপন সংবাদ সরবরাহ করে চলেছে। এরা ছড়িয়ে রয়েছে সরকারী উচ্চমহলে, সামরিক বিভাগের গুরুত্বপূর্ণ দপ্তরে এমনকি আমাদের গোয়েন্দা দপ্তরেও। এদেরই সক্রিয়তায় ব্যর্থ হয়ে যাচ্ছে আমাদের সমস্ত পরিকল্পনা।
টমি মনোযোগ দিয়ে সব শুনল। পরে বলল, আমি এখন একজন কর্মহীন শখের গোয়েন্দা মাত্র। নাৎসিপ্রেমী যেসব গৃহশত্রু দেশের সর্বনাশ করার চেষ্টা করছে তাদের বিরুদ্ধে আমি কী করতে পারি? তাদের কাউকেই আমি চিনি না।
গ্রান্ট বললেন, পেশাদার গোয়েন্দাদের পক্ষে কাজটা করা কঠিন। এই কারণে একজন অভিজ্ঞ শখের গোয়েন্দার সন্ধানই আমরা করেছি। কাজটা আপনাকেই করতে হবে।
আমাদের গোয়েন্দা দপ্তরের সবচেয়ে কর্মতৎপর ও প্রাজ্ঞ কর্মীটিকে আমরা সম্প্রতি হারিয়েছি। গত মঙ্গলবারে সেন্টব্রিজ হাসপাতালে তিনি মারা গেছেন–তিনি যে কাজ হাতে নিয়েছিলেন তা অসমাপ্ত রেখেই।
-আপনি কার কথা বলছেন? সাগ্রহে জানতে চাইল টমি।
–গোয়েন্দা ফারকুয়ার। তিনি অনেকটাই অগ্রসর হয়েছিলেন। যখন জাল গুটিয়ে আনার সময় হয়েছিল, তখনই একটা ট্রাক তাকে চাপা দিয়ে যায়।
ঘটনাটা দুর্ঘটনা নয় বুঝতেই পারছেন। যাইহোক গোয়েন্দা ফারকুয়ার অসমাপ্ত কাজই আপনাকে সমাপ্ত করতে হবে।
টমি জিজ্ঞাসু চোখে তাকিয়ে অস্ফুট স্বরে বললেন, বটে।
-মিঃ ফারকুয়ার ঠিক কতটা এগিয়েছিলেন আমরা কেউই জানি না। মৃত্যুর কিছুক্ষণ আগে তার জ্ঞান ফিরে এসেছিল। সেই সময় তিনি কয়েকটি তাৎপর্যপূর্ণ শব্দ উচ্চারণ করেন, আমাদের সম্বল বলতে ওইটুকুই।
–শব্দগুলো কি শুনতে পারি?
–এন অর এম, সাংসুচি
–এর মধ্যে এমন কি রয়েছে যে
–মিঃ বেরেসফোর্ড, শব্দ কয়টি যথেষ্ট ইঙ্গিতপূর্ণ। এর অর এম শব্দ দুটি আগেও আমরা শুনেছি। এরা দু-জন ঝানু জার্মান গুপ্তচর। এদের কার্যকলাপ ছড়িয়ে আছে বিভিন্ন দেশে। নিখুঁত চতুরতায় দেশে পঞ্চম বাহিনী গড়ে তোলে এরা, যার ফলে নাৎসিবাহিনীর সাফল্য অনিবার্য হয়ে ওঠে।
আমরা জানতে পেরেছি, এন হলেন একজন পুরুষ এজেন্ট এবং এম মহিলা। দুজনই হিটলারের আস্থাভাজন।
–ফারকুয়ার এদের সম্পর্কে কিছু জানতে পেরেছিলেন?
-হ্যাঁ, অন্তত একজনের নাগাল উনি পেয়েছিলেন অনুমান করা হচ্ছে। তার পকেটে পাওয়া গিয়েছিল লিহাম্পটনে ফিরে যাবার একখানা রিটার্ন টিকিট যাতে পাওয়া গিয়েছে সাংসুচি শব্দের সঠিক পরিচয়। ফরাসি উচ্চারণে কথাটা সান্স সৌচি–সাংসুচি নয়।