ভালো কথা, একটা দুটো ব্যাপারে আমার খটকা লেগেছে। সে যাহোক সিলিয়া কলিনকে চেয়েছিল, পেয়েছেও।
হা। আবার আমি ভাবতেও পারছি না যে, এ ভুল, সম্পূর্ণ ভুল।
বন্দুক সমেত তোমার মনের মানুষকে তুমি পেতে পার না। হাসল ভ্যালেরি। বলল, এই প্রতারণা কি ক্লিপ্টোম্যানিয়ার পর্যায় পড়ে থাকে? কোনো চিন্তা করো না মা। আর ঈশ্বরের দোহাই, সিলিয়াকে বলল, সে যেন জেনেভিভের পাউডার ফেরত দেবার ব্যবস্থা করে। না হলে খাওয়ার সময় আমরা কেউ শান্তি পাব না।
দীর্ঘশ্বাস ফেলল মিসেস হার্বার্ড। এসময় সিলিয়া ডাইনিংরুমে প্রবেশ করল। তার চোখ দুটো চোখের জলে লাল।
অনেক দেরী করেছ সিলিয়া। কফি ঠান্ডা হয়ে গেছে। আর কোনো খাবার নেই। বলল মিসেস হার্বার্ড।
অন্যদের সঙ্গে আমি দেখা করতে চাইনি।
আমি সেটা বুঝতে পারি। কিন্তু একদিন না একদিন তো তাদের সঙ্গে দেখা করতেই হবে।
ও হ্যাঁ, আমি জানি। কিন্তু আমার মনে হয় আজ সন্ধ্যায় সব ঠিক হয়ে যাবে। আমি আর এখানে থাকব না। এ সপ্তাহের শেষে আমি চলে যাব।
মিসেস হার্বার্ড অবাক হলেন।
আমার মনে হয় না তার প্রয়োজন আছে। হয়তো এখন তোমার একটু খারাপ লাগবে আর সেটাই স্বাভাবিক। কিন্তু এসব তরুণতরুণীদের মন খুবই উদার, ওরা তোমাকে ক্ষমা করে দিয়েছে। অবশ্য যতটা সম্ভব ওদের হারানো জিনিসের দাম তোমাকে মিটিয়ে দিতে হবে। তার জন্য তোমাকে
বাধা দিল সিলিয়া। ও হ্যাঁ, আমি আমার চেকবুক সঙ্গে এনেছি। আর একথাই আমি আপনাকে বলতে এসেছিলাম।
বেশ তো। এখন আমাদের হারানো জিনিষের একটা তালিকা তৈরি করতে হবে।
যতোটা সম্ভব আমি করে রেখেছি। তবে সেগুলো আমাকে কিনে দিতে হবে, না টাকা দিয়ে দেব বুঝতে পারছি না।
পরে ভেবে বলব। এখনি বলা শক্ত।
তালিকাটার ওপর চোখ বুলিয়ে সিলিয়া বলে, মোটামুটি অংকের একটা চেক আমি আপনাকে দিয়ে দিচ্ছি, বেশি হলে ফেরত দেবেন, কম পড়লে বলবেন, বাকিটা আমি দিয়ে দেব।
সেই ভালো। মিসেস হার্বার্ড আন্দাজে একটা অঙ্কের চেক দিতে বললো, সঙ্গে সঙ্গে সিলিয়া রাজী হয়ে গেল। সে তার চেকবুক বার করল। চেক সই করতে গিয়ে সিলিয়া দেখল তার পেনে কালি নেই। তখন সে দেয়ালে টাঙানো সেলফগুলোর সামনে গিয়ে দাঁড়াল। নিজেলের সেই ভয়ঙ্কর সবুজ পেনের কালি ছাড়া অন্য ছাত্র-ছাত্রীদের পেনে কালি ছিল না। ওহো আমি ওর কালিই ব্যবহার করব। নিজেল কিছু মনে করবে না। বাইরে বের হলে ওর জন্য এক বোতল সবুজ কুইঙ্ক কালি আনব। সিলিয়া বলল।
অতঃপর সিলিয়া তার পেনে সবুজ কালি ভরে চেক লিখে মিসেস হার্বার্ডের হাতে দিল। মিসেস হার্বার্ড তাকে অনুরোধ করল যাতে সে কিছু অন্তত খেয়ে যায়। অন্তত মাখনরুটিও খেয়ে যায়। সিলিয়া কথা শুনল। এক টুকরো মাখনরুটি সে মুখে দিল।
ওদিকে ইতালীয় চাকর গেরোনিমো ঘরে ঢুকে জানাল, মিসেস নিকোলেটিস তাকে ডেকেছেন। মিসেস হার্বার্ড তাড়াতাড়ি চলে গেলেন।
চিড়িয়াখানার বাঘের মতো কুঁসছিলেন মিসেস নিকোলেটিস তার ঘরে পায়চারি করতে করতে। মিসেস হার্বার্ডকে দেখে সে রেগে বললো, এসব কি শুনছি? আমাকে না জানিয়ে তুমি পুলিশে খবর দিয়েছ? তুমি নিজেকে কি ভাব?
আমি পুলিশে খবর দেয়নি।
তুমি মিথ্যেবাদী। আমি ভুল করেছি তোমাকে বিশ্বাস করে, তোমার সব কাজে সম্মতি দিয়ে। সম্মানিত হস্টেলে পুলিশ
এটা প্রথম নয়, বললো মিসেস হার্বার্ড। আগের অপ্রীতিকর ঘটনার প্রসঙ্গ তুলে বললো সে, একজন ওয়েস্ট ইন্ডিয়ান ছাত্র অসৎ উপায়ে এখানে এসেছিল টাকা রোজগার করতে। আর একজন কুখ্যাত কমিউনিস্ট বিক্ষোভকারী নাম ভাড়িয়ে এখানে এসে উঠেছিল আর।
আহ! এখানে কেউ নাম ভাড়িয়ে এসে আমাকে মিথ্যে পরিচয় দিলে সে কি আমার অপরাধ? আমার সেই দুর্ভাগ্যের কথা তুলে তুমি আমাকে কাটা ঘায়ে নুনের ছিটে দেওয়ার চেষ্টা করছ?
সে সব আমি কিছুই করছি না, আমি শুধু বলছি এখানে বিভিন্ন দেশের ছাত্রছাত্রী মিশে গেছে। তাদের নিরাপত্তার জন্য যদিও বা পুলিশ আসেই তা অবশ্যম্ভাবী। কিন্তু পুলিসকে ডাকাই হয়নি। একজন প্রখ্যাত প্রাইটে ডিটেকটিভ ঘটনাচক্রে এখানে এসে পড়েন আর আমাদের সঙ্গে নৈশভোজে যোগ দেন। ছাত্রছাত্রীদের কাছে তিনি অপরাধতত্ত্বের ওপর সুন্দর বক্তৃতা দেন।
যেন আমাদের ছাত্রছাত্রীদের অপরাধতত্ত্বের ব্যাপারে জ্ঞান দেওয়া খুবই জরুরী ছিল তাই না? ওসব বাজে কথা। ওরা ভালোভাবে জানে, এখানে যেসব জিনিষ চুরি গেছে, সেগুলো নষ্ট করে ফেলা হয়েছে, এক ধরনের অন্তর্ঘাতমূলক কাজ। আর এ ব্যাপারে এখনো কোনো কিনারা হয়নি।
কথাটা ঠিক নয়। আশা করি আমি কিছু করতে পেরেছি।
হা, তোমার কিছু করার মধ্যে এই বন্ধুটিকে আমাদের ঘরের কলঙ্কের কথা বলে দেওয়া এই তো? এক ভয়ঙ্কর বিশ্বাসভঙ্গের নজির বুঝলে?
একেবারেই না। এই হস্টেল চালানোর জন্য আমি দায়ী। এর পবিত্রতা রক্ষা করার ভার আমার উপরেই। আপনাকে একটা সুখবর দেই; ব্যাপারটা এখন মিটে গেছে। আমাদের ছাত্রছাত্রীদের মধ্যে একজন ছাত্রী স্বীকার করেছে, সে এই দুষ্কর্মের জন্য দায়ী।
নোংরা মেয়ে, ঝাঝালো স্বরে বলে উঠলো মিসেস নিকোলেটিস। ওকে রাস্তায় বার করে দাও।
তার অরা দরকার হবে না। সে এই হস্টেল ছেড়ে চলে যাচ্ছে। আর সব হারানো জিনিষের দাম মিটিয়ে দিয়েছে।