-মরিন, হতচ্ছাড়া কুকুরটা আবার খেয়ে ফেলেছে মুরগীগুলোর খাবার।
সর্বনাশ ওর যে অসুখ করবে। তার সবজির ঝুড়ি দেখলেন জন সামারহেস। মরিন খুশী হল না শাকের পরিমাণ দেখে। সেদিন মাছ তখনো আসেনি। থাকতে হবে টিনের মাছের ভরসায়। স্বামী-স্ত্রী এসব চিন্তায় ত্রস্তপদে চলে গেলেন সেখান থেকে।
উঠে গিয়ে পোয়ারো জানলা দিলেন বন্ধ করে। স্বামী-স্ত্রীর কথা ভেসে আসছিল দূর থেকে।
-আচ্ছা মরিন, কি খবর আগুন্তুক ভদ্রলোকের? আমার ওঁকে যেন কেমন কেমন মনে হচ্ছে। নতুন এই অতিথিটির নাম কি গো?
–মিঃ এরকুল পোয়ারো। ফরাসী উনি।
–যেন শোনা শোনা মনে হচ্ছে নামটা।
–বোধহয় ভদ্রলোক কোনো চালের দোকানে কাজ করেন, চেহারাটা ওর রকমই। মুখ কুঁচকোলেন পোয়ারো।
–না না। বোধহয় আচারের দোকানে। ঠিক ধরতে পারছি না তবে চেনা লাগছে, বাপু সপ্তাহের পুরো টাকাটা আদায় করে রেখো। আর ওঁদের কথা শোনা গেল না।
ছড়িয়ে পড়া কোটা বীনগুলো পোয়ারো কুড়োতে লাগলেন। মরিন ঘরে ঢোকা মাত্র তিনি সেগুলো তার দিকে এগিয়ে দিলেন।
–অসংখ্য ধন্যবাদ। মনে হচ্ছে এগুলো খারাপ হয়ে গেছে, আর চলবে না।
–অনুমতি যদি করেন তো লাগিয়ে দিই দরজাটা। বাতাস আসছে।
-মিঃ পোয়ারো কেবলই দরজা বন্ধ করতে ভুলে যাই। প্রথমে এখানে আমার শ্বশুর-শ্বাশুড়ী থাকতেন। তারা কখনো বাড়িটা মেরামত করাননি। অবশ্য তাদের সে সঙ্গতি ছিল না। এখন বাড়িটার অবস্থা ঝরঝরে। যখন এখানে ভারতবর্ষ থেকে এলাম, সাধ্যে আমাদেরও কুলোয়নি যে এটা মেরামত করি। তবে যখন ছেলে মেয়েরা ছুটিতে আসে ফুর্তিতে কাটিয়ে যায় অঢেল জায়গা পেয়ে। বাগানও আছে। পেয়িংগেস্ট রেখে বাকি জায়গায় ভালোভাবেই কুলিয়ে যায় আমাদের।
–আমিই বোধ হয় বর্তমানে একমাত্র অতিথি আপনাদের?
-না, একজন বৃদ্ধা আছেন ওপরে। যেদিন উনি এখানে আসেন প্রথম, সেদিন থেকেই ওপরে। ভীষণ অসুখ নাকি যদিও তা আমি কিছুই বুঝি না। সব অসুখ সেরে যায় খাবার সময়। খাবার চার বেলা পৌঁছে দেওয়াই আমার কাজ। শুনছি এক ভাগনি বা অন্য কারো কাছে উনি কালই চলে যাবেন।
একটু থেমে কিন্তু কিন্তু ভাব করে আবার বললেন, আচ্ছা আজ কি আপনার ভাড়াটা দেবেন, এখন আবার আমার একটু অসুবিধে যাচ্ছে। নিশ্চয়ই সপ্তাহখানেক থাকছেন।
–সম্ভবত বেশিদিন।
সাতগিনি দিয়ে দিলেন পোয়ারো, তাকে ধন্যবাদ জানাতে বললেন মরিন, আমার পরিচয় দিচ্ছি আপনাকে আমি এরকুল পোয়ারো।
কোনো ঔৎসুক্য দেখালেন না মরিন। বললেন, সুন্দর নাম। এটা তো গ্রীক নাম, তাই না?
আঙুল নিজের বুকে ঠেকিয়ে পোয়ারো বললেন, একজন ডিটেকটিভ আমি, বোধ হয় দুর্বলশ্রেষ্ঠ।
বিস্ময়ে আর আনন্দে মরিন চিৎকার করে উঠলেন। বেশ মজার মানুষ তো আপনি। কিসের অনুসন্ধান করছেন–সিগারেটের ছাই না পায়ের চিহ্ন?
দেখুন কোনো মজার ব্যাপার নয় এটি। আমি এখানে এসেছি মিসেস ম্যাগিনটির হত্যার তদন্তে।
উঃ কেটে গেল হাতটা। মরিন চোখের সামনে আঙুল তুলে পরীক্ষা করলেন। তারপর বললেন, একথা কি সত্যি? কিন্তু এখন তো শেষ হয়ে গেছে সব। বেচারী পেয়িংগেস্ট ধরাও পড়েছে, বিচারও শেষ। ওর তো শুনছি ফাঁসি হবে বলে। হয়তো হয়েও গেছে এতদিনে।
-না মাদাম, এখনো হয়নি। আর সব শেষ হয়ে যায়নি।
রহস্যের যবনিকা পতন হয় সত্য উদঘাটনেই–কাজেই এখনই নিষ্পত্তি হতে পারে না ম্যাগিনটি হত্যা মামলার।
-ও।
হঠাৎ মরিন তার কোলের ওপর রাখা তরকারির বটির দিকে কেমন মনোযোগ দিলেন।
-ইস, আঙুলের রক্ত লেগে গেল দেখছি বীনগুলোর মধ্যে। যাকগে, সেদ্ধ করলে খাওয়া চলবে, কি বলেন কোনো ভয় নেই সেদ্ধ হলে তাই না? আপনার টিনের খাবারও তো চলবে?
–আমি আজ লাঞ্চের সময় থাকব না।
.
০৫.
মনে হয় না আমার আপনাকে আমি নতুন কিছু খবর দিতে পারব।–মিসেস বার্চ বললেন। মিঃ পোয়ারো বিদেশী দেখে তিনি স্বভাবতই একটু যেন ক্ষুণ্ণ।
নিহত হয়েছেন আমার পিসীমা, খবই দুঃখের ব্যাপার। এ ব্যাপারে আমার শ্বাশুড়ী তো খুবই বিরক্ত। কথা শোনাচ্ছেন সর্বদাই এরকম বিশ্রী ঘটনা ওর পরিবারে কখনো ঘটেনি। অথচ একবার ভাবুন তো আমার দিকটা? নিজের পিসী তো বটে। যাক গে আমার মনে হয় শেষ হয়ে গেছে ব্যাপারটা।
-কিন্তু জেমস বেন্টলী যদি নির্দোষ হয়?
-না না, তা হয় কি করে? ওকে তো আমার কখনো সুবিধের মনে হত না। কেমন কেমন। পিসীকে অনেক আগেই বলেছিলাম ওকে বাড়িছাড়া করতে। নিজের মনে বিড়বিড় করত। কেন যে পিসী থাকতে দিয়েছিল। ও নাকি মোটেও ঝামেলা করে না। মদ সিগারেটের নেশা নেই। এখন পিসীর আত্মাই জানছে কেমন ও।
চিন্তিতভাবে পোয়ারো তাকালেন মহিলাটির দিকে। বেশ ছিমছাম উনি। বাড়িটা বেশ পরিষ্কার, সুগৃহিণী ভদ্রমহিলা বোঝা যায়। একটু খুঁতখুঁতে তবে কারও মাথাটায় উনি কখনো আঘাত করে হত্যা করতে পারবেন না এ বিষয়ে স্বামীকে প্ররোচিত করতে পারেন ভাবতেও অসুবিধা হচ্ছে। এদের অতীত জীবন খুঁটিয়ে দেখেছেন মিঃ স্পেন্স। এদের দিক থেকে হত্যা করার কোনো সঙ্গত কারণ নেই বলে মনে হয়েছে তাঁর। মিসেস বেমি বার্চ সম্বন্ধে পোয়ারো মোটামুটি একটা ধারণা করে নিচ্ছিলেন। সম্পর্ক ভালোই ছিল পিসী ভাইঝির মধ্যে, বেমি জানেন যে পিসীর মৃত্যুর পর তিনিই পাবেন পিসীর সঞ্চিত অর্থ, কিন্তু তিনি সেজন্য মোটেই ব্যস্ত নন।