- বইয়ের নামঃ দি ক্লকস
- লেখকের নামঃ আগাথা ক্রিস্টি
- বিভাগসমূহঃ অনুবাদ বই, রোমাঞ্চকর,গোয়েন্দা কাহিনী
দি ক্লকস
০১. আর পাঁচটা বিকেলের মতো
আর পাঁচটা বিকেলের মতোই ছিলো সেপ্টেম্বর মাসের ন তারিখের বিকালটা। ওদিন ঘটে যাওয়া কোনো দুর্ঘটনাগ্রস্ত ব্যক্তির পক্ষেই আগে থেকে কোনোরকম ধারণা করা সম্ভব ছিলো না।
শুধু মাত্র ব্যতিক্রম সাতচল্লিশ নম্বর ক্রিসেন্ট উইলিব্রাহামের মিসেস প্যাকার। তিনি কোনো ঘটনা ঘটার আগে সতর্ক করার ব্যাপারে বিশেষজ্ঞ। মিসেস প্যাকার আসন্ন কোনো অমঙ্গলের ব্যাপারটা প্রায় অনেকটাই বলতে পারতেন। কিন্তু সাতচল্লিশ আর উনিশ নম্বরের মধ্যে এত বেশি ফারাক এবং ঘটনার সঙ্গে এত কম জড়িত যে তার পক্ষে আগে থেকে ভাবাটা অপ্রয়োজনের মনে হলো।
ক্যাভেনডিস সেক্রেটারিয়াল অ্যান্ড টাইপ রাইটিং ব্যয়োর প্রিন্সিপাল মিসেস কে. মার্টিনডেলের কাছে আজকের দিনটা বড়োই একঘেয়ে লাগছিলো। ন তারিখের দুটো পঁয়ত্রিশ মিনিট পর্যন্ত দিনটা ছিলো আর পাঁচটা দিনের মতোই, একেবারে সাদামাটা। ঠিক দুটো বেজে পঁয়ত্রিশ মিনিটে মিসেস মার্টিনডেল ইন্টারকমের বেলটা টিপলেন। এডিনা বেল বাইরের ওদিকে বসেছিলো। মিসেস মার্টিনডেল বললেন, এডিনা শীলা ওয়েবকে কাজে পাঠিয়ে দাও।
এডিনা বেল বললেন, এখনো ফেরেনি। তিনি বললেন যে, ও ফিরলে পাঠিয়ে দিও।
এডিনা টাইপ করছিলো। কিছুক্ষণ পর হঠাৎ দরজা খুলে গেলো। শীলা ভেতরে ঢুকলো। সামান্য হাসছিলো ও। এডিনা বলে উঠলো, স্যাণ্ডিক্যাট তোমাকে ডাকছিলো।
শীলা বললো, কি ভাগ্য, এইদিনই আমার দেরি হয়ে গেলো।
মিসেস মার্টিনডেলের বছর চল্লিশেক বয়স, বিবর্ণ কালচে চুল আর ক্রিশ্চান নাম ক্যাথরিনের জন্য ওর নামই স্যাণ্ডিক্যাট হয়ে গেছে। তিনি বললেন, তুমি দেরিতে ফিরছো মিস ওয়েব।
সে বললো সে দুঃখিত, সে একটা ট্রাফিক জ্যামে আটকে গিয়েছিলো। তিনি শীলাকে বললেন যে, মিস এক্স নামে এক ভদ্রমহিলা ফোন করেছিলেন। ঠিক তিনটে নাগাদ। তিনি একজন ফটোগ্রাফার চান। বিশেষ করে তার কথাই বলেছেন। সে আগে কখনো কাজ করেছে। কিনা জিজ্ঞাসা করলো।
শীলা ওয়েবকে বললেন মার্টিনডেল, ভদ্রমহিলার ঠিকানা হলো উনিশ নম্বর উইলিব্রাহামের ক্রিসেন্ট।
শীলা ওয়েব তার দিকে তাকিয়ে মাথা নাড়লো। বললো, ওখানে আগে কখনো গিয়েছি বলে তো মনে করতে পারছি না।
তিনি বললেন, তিনটের সময় তুমি সহজেই ম্যানেজ করতে পারবে। বিকালে কি তোমার আর কোনো অ্যাপয়েন্টমেন্ট আছে?
কনুই-এর কাছে রাখা অ্যাপয়েন্টমেন্ট বুকটার দিকে তাকালেন। প্রফেসর পাড়ি, কারফিউ হোটেল। ঠিক পাঁচটার সময়। ঐ সময়ের আগে তোমার ফেরা উচিত। আর যদি একান্তই না পারো তাহলে আমি জ্যানটকে পাঠিয়ে দেবো। তিনি ইশারা করে জ্যানটকে ঘর থেকে বেরিয়ে যেতে বললেন। সে খানিক পরে দ্রুতবেগে ঘর থেকে বেরিয়ে গেলো।
উইলিব্রাহামের ক্রিসেন্ট অট্টালিকা ছিলো বিদঘুঁটে ধরনের। ১৮৮০ সালে জনৈক ভিক্টোরিনার স্থপতি এটি তৈরি করেছিলেন। এটি দুটো বাড়ি মিশিয়ে অনেকটা অর্ধচন্দ্রাকার ধরনের। বাগান দুটো পাশাপাশি করা। বাড়িগুলোর নম্বর খুঁজে পাওয়া মুশকিল। বাড়িগুলোর মধ্যে শৈল্পিক আভাস পাওয়া যায়। বাইরের দিকটায় কোনোরকম আধুনিকতার ছবি পড়েছে কিনা সন্দেহ।
উনিশ নম্বর বাড়িটার ব্যাপারে অস্বাভাবিক কিছুই ছিলো না। নিখুঁতভাবে পর্দা দিয়ে ঘেরা।
শীলা ওয়েব সদরের গেট খুলে দরজা পর্যন্ত ধীরে ধীরে হেঁটে গেলো। দরজার সামনে গিয়ে বাজালো বেলটা। তারপর সে হাতল ঘুরিয়ে দরজা খুলে ভেতরে ঢুকলো। ছোটো হলঘরটার ডান দিকের দরজাটা সামান্য খোলা ছিলো। সেখানে গিয়ে টোকা মেরে ভেতরে ঢুকে পড়লো।
সারা ঘরে যা সবচেয়ে লক্ষণীয় তা হলো ঘড়ির প্রাচুর্য। দেওয়ালে কয়েকটা বিভিন্ন ধরনের ঘড়ি। গ্রান্ডফাদার ক্লক, ফায়ার প্লেসে ড্রেয়ডেন চীনা ঘড়ি, ডেস্কের ওপরে রুপোর ক্যাথেজ ঘড়ি। এছাড়া একটা ছোটো শৌখিন ঘড়ি ফায়ার প্লেসের আর একদিকে রাখা। টেবিলের ওপরে একটা ঘড়ি। এই ঘড়িটার এক কোণে সোনার জলে রোজমেরী নামটা লেখা।
শীলা মাথার উপর একটা শব্দে চমকে উঠলো। দেওয়ালে কাঠের খোদাই করা ঘড়ি, যেটায় বিকট আওয়াজ হচ্ছিল। সে সোফার পাশ দিয়ে সামনের দিকে এগোলো। সামনের দিকে তাকালো। মেঝেতে হাত-পা ছড়িয়ে একটা দেহ পড়েছিলো। লোকটার চোখদুটো অর্ধেক খোলা অবস্থায়, চোখের দৃষ্টি একেবারে প্রাণহীন। পরনে কালচে ধূসর রঙের একটা কোট। সামনের দিকে ভিজে একটা কালো দাগ। কিছুক্ষণ পর লোকটিকে দেখে থাকায় তার গা স্পর্শ করলো। ভীষণ ঠান্ডা এরপর ভিজে ঐ দাগটা স্পর্শ করে হাতটা দ্রুত সরিয়ে নিলো। একটা অজানা আতঙ্কে নিজের আঙুলের দিকে তাকালো।
হঠাৎ গেট খোলার শব্দ হলো। সে জানালার দিকে তাকালো। একজন মহিলা দরজা খুলে ভেতের ঢুকলেন। মহিলার ঢেউখেলানো চুল, কপাল থেকে পিছন দিকে টেনে আঁচড়ানো। চোখদুটো বড়ো বড়ো চমৎকার নীল রঙের। নিস্পৃহভাবে তিনি সামনের দিকে তাকালেন, মহিলাটি জিজ্ঞাসা করলেন যে এখানে কি সে-ই আছে?
শীলা বললো যে, আমি আছি। মহিলাটা সোফার দিকে যেতেই শীলা বললো, এগোবে না। একজন লোক মৃত অবস্থায় পড়ে আছে এখানে। আপনি ওর ওপরে পড়ে যাবেন।
মহিলাটি শীলার কথায় এবার থমকে গেলেন।
.
কলিন ল্যাম্বের বিবৃতি
নয়ই সেপ্টেম্বর, দুটো বেচে উনষাট নাগাদ উইলিব্রাহাম ক্রিসেন্ট ধরে আমি পশ্চিম দিক বরাবর এগোচ্ছিলাম। সত্যি কথা বলতে কি তিনি আমাকে একরকম গোলকধাঁধার মধ্যেই ফেলে দিয়েছিলেন।
তিনি ৬১ নম্বর ঠিকানা খুঁজে বের করতে চাইছিলেন। কিন্তু শেষ পর্যন্ত খুঁজে পেয়েছিলেন কি? উইলিব্রাহামের ক্রিসেন্ট শেষ হয়ে গেছে। সামনের পথ রোধ করে অ্যালবনি রোড দাঁড়ালো। এরপর তিনি পেছন দিকে ঘুরে দেখলেন দক্ষিণ দিক বরাবর একটা বাড়িও নেই। লম্বা একটা দেওয়াল বরাবর চলে গেছে, দেওয়ালের ঠিক পেছনের দিকে আধুনিক ফ্ল্যাটের ব্লকগুলো মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে আছে। ওখানে ঢোকার জন্য নিশ্চয়ই অন্য কোনো রাস্তা আছে, কোনো আশাই দেখতে পেলাম না।
ঠিক ১৯ নম্বরের কাছে গিয়ে আমাকে থমকে দাঁড়িয়ে পড়তে হলো। দেখলাম ১৯ নম্বরের দরজাটা খুলে গেলো। সঙ্গে সঙ্গে একটা যুবতী বেরিয়ে এলো ভেতর থেকে। তারপর চিৎকার করতে করতে রাস্তার দিকে উধ্বশ্বাসে এগোতে আরম্ভ করলো। ঠিক তখনই গেট দিয়ে বেরিয়ে আসার মুখেই সজোরে ধাক্কা লাগলো আমার সঙ্গে। এরকম আচমকা ধাক্কায় আমি একরকম ছিটকে পড়েই যাচ্ছিলাম। সঙ্গে সঙ্গে দুটো হাত দিয়ে আঁকড়ে ধরলো মেয়েটি। মেয়েটিকে স্থির হতে বললাম। মেয়েটি স্থির হয়ে তখনও পর্যন্ত আমাকে আঁকড়ে ছিলো। চিৎকারটা অবশ্য থেমে গেছে। কিন্তু তখনও ওর কণ্ঠ দিয়ে একটা অস্ফুট শব্দ বেরিয়ে আসছিলো বারবার, আমি এবারে ওকে জিজ্ঞেস করলাম।
সে বললো, ওখানে একটা লোক মেঝের ওপর পড়েছিলো। সে মারা গেছে। ঐ বয়স্ক মহিলাটি লোকটার ঘাড়ের ওপর প্রায় পড়েই যাচ্ছিল।
যুবতী বললো, তার ধারণা মহিলাটি অন্ধ। সে বললো, যে তার হাতে ঐ মহিলাটির রক্ত লেগেছে।
তাই তো কথাটা বলে তিনি তার কোটের দাগটার দিকে তাকালেন। ওর হাতের রক্ত তার বুকের থেকে। আমি পুরো ব্যাপারটা নিয়ে ভাবলাম। তারপর বললাম, যে, তুমি আমাকে ভেতরে নিয়ে চলো, দেখাও আমাকে।
সে ভীষণভাবে কাঁপছিলো। সেই অবস্থাতেই বলে উঠলো, না না, আমি পারবো না। আমি ভেতরে কিছুতেই যাবো না।
আমি বললাম যে, তুমি এখানে বসো। বলে, আমি একটা ফুটপাথের রেলিং-এ হেলান দিয়ে বসিয়ে দিলাম। তুমি এখানে থাকো। যতক্ষণ না আমি ফিরে আসি, তুমি কোথাও যেন যেও না। মেয়েটি বললো, সে ঠিক আছে। আমি ওকে আশ্বস্ত করে বাড়িটার দিকে এগোতে আরম্ভ করলাম। কিছুটা এগিয়েই হলঘরের মধ্যে প্রবেশ করে কয়েক মুহূর্তে ইতস্তত করলাম।
বাঁ-দিকের দরজা দিয়ে তাকালাম। সামনে একটা ফাঁকা ডাইনিং রুম। বসার ঘরে ঢুকতে একজন ভদ্রমহিলার সঙ্গে দেখা হলো। যার ধূসর রঙের চুল। আমার পায়ের শব্দ শুনে বললেন, কে আপনি?
সেই মহিলাটি অন্ধ, আমি তাকে বললাম, একজন অল্পবয়সী মেয়ে দৌড়ে রাস্তায় গিয়ে বললো, যে এখানে নাকি একজন ভদ্রলোক মৃত অবস্থায় পড়ে আছেন।
আসলে ভদ্রমহিলা যেরকম শান্তভাবে বসেছিলেন তাতে মনে হচ্ছিল না ঘরে খুন হয়েছে। ভদ্রমহিলা বললেন, সোফার পেছনে মৃতদেহ পড়ে রয়েছে।
আমি সোফার পেছনে এগিয়ে গেলাম। লোকটির দেহের সামনের দিকে রক্তের চিহ্ন। ভদ্রমহিলা বলতে পারলেন না, কে খুনটা করেছে। আমি বললাম, তাহলে টেলিফোন করা উচিত পুলিশকে।
ভদ্রমহিলা বললেন, যে তার বাড়ি এটা, এখানে কোনো ফোন নেই। তিনি বললেন, তিনি যখন শপিং করে ঘরে ফিরেছেন, তখন মনে হলো দরজার গায়ে একটা চেয়ারে একটা ব্যাগ ঝুলছে। তিনি তারপর ঘরের ভেতরে ঢুকলেন।
তার বুঝতে অসুবিধা হলো না, ঘরে কেউ একজন রয়েছে। তখন তিনি কেউ ঘরে আছে কিনা জানতে চাইলেন। কার শ্বাস-প্রশ্বাসের শব্দ হচ্ছিল, সেদিক লক্ষ্য করে এগোতে লাগলেন। চিৎকারটা কানে এলো। তখন শব্দ এলো যে, সামনে এগোবেন না তাহলে মৃতদেহের উপর পড়ে যাবেন। এরপর খানিকটা অবাক হলেন। সে সময় কেউ দৌড়ে বেরিয়ে গেলো। তখন তিনি খুব সাবধানে যাতায়াত করলেন যতক্ষণ না তার পায়ে বাধা ঠেকলো।
তারপর তিনি হাঁটু মুড়ে বসলেন, বুঝলেন কার হাত একেবারে ঠান্ডা। বিন্দুমাত্র নাড়ির স্পন্দন শোনা যায় না।
তিনি দীর্ঘশ্বাস ফেললেন। তারপর তিনি উঠে পড়লেন। এখানে চলে এলেন। বসে একভাবে অপেক্ষা করতে লাগলেন। তার অনুমান কেউ না কেউ এখানে একসময় আসবেই। শেষপর্যন্ত ঐ অল্পবয়সী মেয়েটি মহিলার অদ্ভুত স্থৈর্য দেখে অবাক হলো। মহিলাকে লোকটির নাম জিজ্ঞাসা করা হলে তিনি বললেন যে, তিনি কলিন ল্যাম্ব।
ভদ্রমহিলা বললেন যে, রাস্তায় একটা বুথ আছে। সেখান থেকে পুলিশকে ফোন করা যাক। ভদ্রমহিলা চুপ থেকে বললেন, মেয়েটাকে বাড়ির ভেতরে নিয়ে আসুন।
ভদ্রমহিলা রান্না করে স্বপাকে খান। তার নাম মিমিসেন্ট পেবমার্স। কলিন মেয়েটিকে ধরে বাইরে থেকে ভেতরে নিয়ে এলো। এরপর সে ফোন করার জন্য বাইরে এলো।
.
০১.
ক্রাউডিয়ান পুলিশ স্টেশন। একটা আধো ক্ষীণ কণ্ঠস্বর শোনা গেলো–আমি কি ডিটেকটিভ ইনসপেক্টর হার্ড ক্যাসেলের সঙ্গে দেখা করতে পারি।
ওপ্রান্তের কণ্ঠস্বর সতর্কভাবে বললো–তিনি ঠিক জানেন না তিনি এখানে আছে কিনা। আপনি কে?
ওকে বলুন আমার নাম কলিন ল্যাম্ব।
ফোনের ওপার থেকে হার্ড ক্যাসেল বললেন–তুমি কোথা থেকে কথা বলছে। তিনি বললেন, এখন বলতে ক্রাউডিয়ান, তার চেয়ে সূক্ষ্মভাবে অর্থাৎ প্রকৃত অর্থে উইলিব্রাহাম ক্রিসেন্টে একজন ভদ্রলোক মৃত অবস্থায় ঘরে পড়ে আছে। তার ধারণা আধ ঘন্টা আগে ভদ্রলোককে ধারালো অস্ত্র দিয়ে খুন করা হয়েছে। মৃতদেহটা আবিষ্কার করেছে একটি মেয়ে, সে তাকে দেখতে পায়। মিমিসেন্ট পেবমার্স নামে একজন অন্ধ ভদ্রমহিলার বাড়িতে খুনটা হয়েছে। মেয়েটি দেখে বাইরে এসে ভয়ে কাঁপছিলো। ভদ্রমহিলা অন্ধ হওয়ার জন্য বুঝতে পারেননি সামনে কেউ পড়ে আছে।
তিনি বললেন, ওখানে তার জন্য অপেক্ষা করা হোক।
.
০২.
উনিশ নম্বর বাড়িতে পুলিশের পক্ষ থেকে শেষপর্যন্ত প্রয়োজনমাফিক ব্যবস্থা নেওয়া হলো। পুরো টিমটাতে একজন পুলিশ সার্জেন, একজন পুলিশ ফটোগ্রাফার আর একজন ফিংগারপ্রিন্ট নেবার লোক ছিলো।
সবশেষে এলেন ডিটেকটিভ ইনসপেক্টর হার্ডক্যাসেল। ভদ্রলোকের গড়ন অনেকটা লম্বাটে ধরনের। ভাবলেশহীন মুখ, চোখের ওপর ভুরু দুটো প্রকট। দেখতে বেশ সুশ্রী। কাজটা সঠিকভাবে এগোচ্ছে দেখে তিনি খুশী হলেন মনে মনে।
এবার তিনি মৃতদেহটার কাছে গিয়ে সেটা ভালোভাবে পরীক্ষা করলেন। তারপর সার্জেনের সঙ্গে গোটা কয়েক কথা বললেন। শেষে ডাইনিং রুমে হাজির হলেন। সেখানে ওরা তিনজন বসেছিলো। ডিটেকটিভ ইনসপেক্টর হার্ড ক্যাসেল তার নিজের পরিচয় দিলেন। তিনি মিস পেবমার্সকে মোটামুটি চিনতেই। অবশ্য পেশাগত ব্যাপারে দুজনের মধ্যে সাক্ষাৎ হয়নি। হার্ড ক্যাসেল সেই ভদ্রমহিলার সম্পর্কে জানেন, তিনি একজন স্কুল শিক্ষিকা। তিনি প্রতিবন্ধীদের জন্য যে সব স্কুলে শিক্ষার ব্যবস্থা আছে তার সঙ্গে যুক্ত ছিলেন।
এইরকম একজন সচেতন শিক্ষিকার সাজানো গোছানো ছিমছাম ঘরে একজন ব্যক্তি খুন হয়ে আছে ব্যাপারটা কিরকম অদ্ভুত ধরনের, অনেকটা অবাস্তব।
হার্ড ক্যাসেলের কথায় পেবমার্স জানালেন এ সম্পর্কে মিস ওয়েব কিছু জানেন, কথাটা বলার পর ডাইনিং রুমে কিচেনের দরজাটা খুলে ওয়েবের সঙ্গে কথা বলতে লাগলেন।
শীলা জানালেন তার ঠিকানা চোদ্দো নম্বর পামার টোন রোড। তিনি পেশায় একজন শর্টহ্যান্ড টাইপিস্ট। তিনি মিস মার্টিনডেলের সেক্রেটারিয়াল ব্যুরোতে চাকুরি করেন। তিনি প্রায় দশমাস ওখানে চাকুরি করেছেন। তিনি মিস পেবমার্স যে একজন স্টেনোগ্রাফার চাইছেন এটা শুনে তিনি লাঞ্চ করে ঐ বাড়িতে আসেন। আসলে তিনি বিশেষভাবে তাকেই চাইছিলেন। কেননা তিনি আগে তার কাছে কাজ করেননি। কারণ মিস পেবমার্স এমন একজন মহিলা যাকে চট করে ভুলে যাওয়া অদ্ভুত ব্যাপার।
মিঃ ক্যাসেল বললেন, যাইহোক আপনি ঠিক কটা নাগাদ পৌঁছেছিলেন ওর বাড়িতে। তার জবাবে বললেন, তিনটের আগেই, এ ব্যাপারে আমি নিশ্চিত। কেননা ঐ কাকাতুয়া-মার্কা ঘড়িটা!
কথাটা শেষ না করেই চুপ করে গেল ও। তারপর চোখদুটো বিস্ফারিত হয়ে গেলো ওর। ওয়েব বললেন যে কাকাতুয়া ঘড়িটায় তিনটে বেজেছিলো ঠিকই। কিন্তু অন্য ঘড়িগুলো প্রায় ঘণ্টাখানেক করে ফাস্ট ছিলো। মিঃ ক্যাসেল বললেন, নিশ্চয়ই খুব অদ্ভুত।
বলে সামান্য ভেবে বললো, এবার বলুন তো মিস ওয়েব তিনি কখন মৃতদেহটা লক্ষ্য করেন।
শীলা বললো, আমি সোফাটা ঘুরে আসার পরেই লোকটাকে দেখতে পাই। কি ভয়ঙ্কর! মিস ওয়েব বললেন, তিনি তার আগে ভদ্রলোককে দেখেননি।
তারপর তিনি ভদ্রলোককে ছুঁয়ে দেখেন, তারা গা পুরোপুরি ঠান্ডা, তার রক্ত গায়ে লেগেছিলো। তারপর সেই ভদ্রমহিলা ঘরে ঢুকেছিলেন। উনি হাতে একটা শপিং ব্যাগ নিয়ে এলেন।
তিনি ভদ্রমহিলাকে মৃতদেহের কাছে যেতে নিষেধ করলেন। ইনসপেক্টর বললেন যে, ঘরেই ঢুকলেন না। আপনি এসে বেলটা বাজিয়েছিলেন, কিন্তু সাড়া পাননি। সেক্ষেত্রে আপনি ভেতরে ঢুকলেন কেন?
সেটা এমন কিছু ব্যাপার নয়। তাকে ওভাবেই নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল। এটা মিস মার্টিনডেল তাকে বলেছিলেন, তিনি বললেন তার মা-বাবা দুজনেই গত হয়েছেন। তিনি তার এক মাসির কাছে থাকেন। তার নাম মিসেস লাউটন।
ইনসপেক্টর ক্যাসেলের কাছ থেকে বিদায় নেবার পর মিসেস পেবমার্সের ডাক পড়লো। তিনি ঘরে ঢুকে চেয়ারে বসে পড়লেন। হার্ড ক্যাসেল জানলা বন্ধ করে দেওয়ার পর পেবমার্স জিজ্ঞাসা করলেন ঐ ভদ্রলোক কে? তিনি বললেন ঐ ভদ্রলোক হলেন কলিন ল্যাম্ব। তিনি রাস্তা দিয়ে যাচ্ছিলেন। সেই সময় শীলা তার কাছে গিয়ে সাহায্য চান। তিনি ঘরে সবকিছু দেখে পুলিশকে ফোন করেন। যেন একজন মেরিন বায়োলজিস্ট।
মিস পেবমার্স জানালেন তিনি এখানে ১৯৫১ সাল থেকে আছেন। তিনি একজন প্রাক্তন স্কুল শিক্ষিকা। ঘটনাক্রমে তিনি অন্ধ হয়ে যান। তারপর ব্রেইলের বিশেষজ্ঞ হওয়ার জন্য নিজেকে নিয়োগ করেন, যারা অন্ধ তাদের সাহায্যের জন্য নানাধরনের শিক্ষা গ্রহণ করেন। অন্ধ আর প্রতিবন্ধী ছেলেদের জন্য যে শিক্ষায়তন আছে সেখানেই তিনি কাজ করেন।
মিস পেবমার্সকে ইনসপেক্টর মৃত ব্যক্তির বর্ণনা পড়ে শোনালেন। ভদ্রলোকের উচ্চতা পাঁচ ফুট আট-দশ ইঞ্চি। বয়স প্রায় ষাট। চোখ দুটো বাদামী। দাড়ি গোঁফ পরিষ্কার করে কামানো। মুখের গড়ন একহারা ধরনের। চোয়ালটা দৃঢ়। পরনে কালচে রঙের ধূসর স্যুট।
মিস পেবমার্স লোকটিকে চিনতে পারলেন না। তার বর্ণনা বেশ সাদামাটা।
মিঃ ক্যাসেল বললেন যে, এমন কোনো ব্যক্তির আসার কথা ছিলো বা কেউ চিঠি দিয়েছিলো। তিনি বললেন না। তিনি বললেন, তিনি ক্যাভেনডিস ব্যুরোতে ফোন করে কোনো সেক্রেটারি চাননি। আর তাছাড়া তার কোনো ফোন নেই। মিস শীলা ওয়েবের নাম তিনি শোনেননি। তিনি সকালে অনেক সময় তালা না লাগিয়ে বাইরে যান, তাই সে সময় কেউ ঢুকে পড়া বিচিত্র নয়। সেদিন তাই ঘটেছে। তিনি দেড়টা থেকে দুটোর মধ্যে বাইরে বাজার করতে গিয়েছিলেন। কেননা তার কিছু কেনাকাটার প্রয়োজন ছিলো। তিনি পোস্টঅফিসে যান, আনাবেনি রোডে। তিনি একটা পার্সেল পোস্ট করেন। কয়েকটা স্ট্যাম্প কেনেন। তারপর কয়েকটা গৃহস্থালীর জিনিস কেনেন। কয়েকটা কাসপার ও সেফটিপিন কেনেন। তিনি গেটের কাছে আসার সময় তার কাকাতুয়া ঘড়িটা তিনবার ডেকে উঠেছিলো।
অন্য ঘড়িগুলোর কথা জিজ্ঞাসা করতে তিনি বললেন, তার বসার ঘরে অন্য সব ঘড়ি একঘণ্টা করে ফাস্ট করা আছে।
মিস পেবমার্স বললেন, আপনি অন্য ঘড়িগুলো, কি বলতে চাইছেন তিনি বুঝতে পারছেন না। বসার ঘরে আর কোনো ঘড়ি নেই।
.
০৩.
হার্ড ক্যাসেল চমকে উঠলেন যখন তাকে অন্য ঘড়িগুলোর কথা বলা হলো। তিনি বললেন যে একরকম কোনো ঘড়ি তার ঘরে ছিলো না। তারপর বললেন যে যদি বিশ্বাস না হয় তাহলে মিস কার্টিনকে জিজ্ঞাসা করা যেতে পারে। হার্ড ক্যাসেল তাকে পাশের ঘরে আসতে বললেন। মিস পেবমার্স ঐ ঘড়িগুলো নিজে পরীক্ষা করতে চান। তারপর বললেন যে ঘড়িগুলো তো তিনি দেখতে পাবেন না। তাকে হাত দিয়ে স্পর্শ করে অনুভব করতে হবে।
মিস পেবমার্সকে নিয়ে হার্ড ক্যাসেল ওখান থেকে বেরিয়ে এলেন। ওখানের লোক বললো যে স্যার, আমরা প্রায় কাজ শেষ করে এনেছি। মিস পেবমার্স বললেন যে, কাকাতুয়া ঘড়ি আর গ্রান্ডফাদার ঘড়িটা ছাড়া আর কোনো ঘড়ি ওর নেই। হার্ড ক্যাসেল এরপর কিভাবে এগোবেন সে ব্যাপারে একেবারেই নিশ্চিত হতে পারছেন না। তার দিকে তিনি অনুসন্ধানী দৃষ্টিতে তাকালেন। ভদ্রমহিলা যে খুব অবাক হয়ে গেছেন এটা বুঝতে মিঃ ক্যাসেলের অসুবিধা হলো না। মিস পেবমার্স এটা কিছুই বুঝতে পারেন না।
ইন্সপেক্টর ক্যাসেল ফিং বারপ্রিন্টি বিশেষজ্ঞদের দিকে তাকিয়ে জিজ্ঞাসা করলেন, ঘড়িগুলো পরীক্ষা হয়ে গেছে।
একজন বললো, ঘড়ির উপর কোনো ছাপ নেই। থাকা সম্ভব নয়। ওটার ওপর দিকটায় কোনো ছাপ লাগে না। চীনা ঘড়িটার ক্ষেত্রে ঐ একই ব্যাপার। চামড়া আর রুপোর ঘড়িটাতেও কোনো ছাপ পাওয়া যায়নি।
অবশ্য বস্তুগুলোতে স্বাভাবিক সম্ভাবনা থাকতেও পারে। সেখানে অবশ্য ছাপ থাকলেও থাকতে পারে।
হ্যাঁ, ভালো কথা, ওগুলোর কিন্তু কোনোটাতেই দম ছিলো না। প্রত্যেকটি ঘড়িতে একই সময় দেখা যাচ্ছে। সব ঘড়িতেই সাড়ে চারটে।
ঘরের বাকি অংশ থেকে তিন চার সেট ছাপ পাওয়া গেছে। প্রত্যেকটাতেই মহিলার অঙ্গের ছাপ। ভদ্রলোকের পকেটের জিনিসগুলো টেবিলের উপর রাখা আছে।
হার্ড ক্যাসেল টেবিলে গিয়ে দেখলেন ওর মধ্যে একটা নোটের খাম আছে। তাতে কয়েকটা নোট, কিছু খুচরো পয়সা আছে। এছাড়া একটা ছাপাহীন সিল্কের রুমাল আর একবাক্স হজমিগুলি। আর আছে ছাপানো কিছু কার্ড। কার্ডে লেখা ছিলো।
সি. আর. এইচ. কারি
মেট্রোপলিটান অ্যান্ড প্রভিনসিয়াল ইনসিওরেন্স কোং লিমিটেড
৭ নং ডেনভার স্ট্রিট, লন্ডন।
মিস পেবমার্সকে জিজ্ঞাসা করা হলে তিনি বললেন, তিনি কারো আসার প্রতীক্ষা করছিলেন। এই ইনসিওরেন্সের নাম তিনি শোনেননি।
তিনি কোনোভাবেই কোনো ইনসিওরেন্স করার চিন্তা করেননি। তিনি আগুন আর চুরির জন্য ইনসিওরেন্স কোম্পানি থেকে ইনসিওরেন্স করিয়েছিলেন বটে। ঐ কোম্পানির একটা ব্রাঞ্চ ওখানে আছে। তবে তিনি ব্যক্তিগতভাবে কোনো ইনসিওরেন্সে করাননি। তার কোনো সংসার বা আত্মীয়স্বজন নেই, তাই তিনি নিজের জীবন-ইনসিওরেন্স করার কোনো যুক্তি খুঁজে পাননি। কারণ ঐ নামের কোনো লোককে তিনি চেনেন না। যিনি খুন হয়েছেন তারই নাম। ভদ্রমহিলা ভদ্রলোককে স্পর্শ করে নিখুঁতভাবে বুঝতে চান লোকটা দেখতে কেমন ছিলো।
মিস পেবমার্স-এর বুক থেকে একটা দীর্ঘশ্বাস এলো। কাজটা আনন্দদায়ক না হলেও তিনি এই কাজটা করতে রাজী, তিনি লোকটির পাশে বসে চুল, চোখ, নাক, চিবুক পরীক্ষা করলেন। বললেন, না, তিনি নিশ্চিত যে এইরকম কোনো লোককে তিনি চেনেন না বা আগে দেখেননি।
এরপর মৃতদেহ নিয়ে যাওয়া হলো। হার্ড ক্যাসেল গার্ডের কাছে এগিয়ে গেলেন। তারপর ফিরে এসে বসলেন মিস পেবমার্সের কাছে, বললেন, আজ আপনার কাছে কোনো অতিথির আসার কথা ছিলো না। এছাড়া আপনি এমন কোনো চিঠি পাননি যে কোনো ইনসিওরেন্স কোম্পানির এজেন্ট আপনার সঙ্গে দেখা করতে আসছে। এছাড়া কোনো স্টেনো বা টাইপিস্ট তার দরকার ছিল না। তিনি ফোন করে তিনটে নাগাদ ওরকম কাউকে পাঠিয়ে দেওয়ার জন্য ফোন করেননি। যখন তিনি বেরিয়েছিলেন তখন ঐ ঘরে একটা ঘড়ি ছিলো। ঐ কাকাতুয়া ও গ্র্যান্ডফাদার ঘড়িটা।
পেবমার্স বললেন যে, যদি সম্পূর্ণ সঠিক না হতেন তাহলে ঘড়ি ব্যাপারটাকে জোর দিয়ে বলতে পারতেন না। তার যেহেতু দুটো চোখই নেই সেইজন্য ঘরে কি রইলো বা রইলো না তা লক্ষ্য করা তার পক্ষে সম্ভব নয়। শেষবারের মতো সকালে তিনি যখন ঘর পরিষ্কার করতে যান তখন ঘড়িদুটোর ব্যাপারে তিনি নিশ্চিত ছিলেন। কাজের লোকেরা ঘর পরিষ্কার করতে গিয়ে অনেক জিনিস লক্ষ্য করে। সেজন্য আমি ওদের রাখার বদলে নিজের কাজ নিজেই করি।
প্রতিদিনের মতো আজও দশটার সময় আমি আরলবার্গ ইনস্টিটিউটে গেছিলাম। সেখানে ১২-১৫ অবধি ক্লাস করি। তারপর পৌনে একটা নাগাদ রান্না করি। চা তৈরি করি। তারপর বেরিয়ে যাই। তিনি রান্নাঘরে খান। পরে আর তিনি এ ঘরে আসেননি। তাহলে দশটার সময়ে ঘড়িগুলো কেউ এ ঘরে রেখেছে এ সম্পর্কে মিসেস কাটিস বলতে পারবেন।
হার্ড ক্যাসেল বললেন, ধরে নেওয়া যাক আজ কোনো সময়ে ওগুলো ঘরে নিয়ে এসে রাখা হয়। প্রত্যেকটা ঘড়িতেই কিন্তু সাড়ে চারটে বেজে আছে। এই বিশেষ সময়টা সম্পর্কে মিস পেবমার্সের কোনো ধারণা নেই।
ক্যাসেলের মনে হয় না ঐ মৃত ব্যক্তিটাকে ঘরের মধ্যে আসতে দিয়েছেন পরিচারিকা। একথা তিনি তার কাছ থেকেই জানলেন। ভদ্রলোক সম্যক কোনো একটা কারণেই তার সঙ্গে দেখা করতে এসেছিলেন। কারণটা ব্যবসায়িক কিংবা ব্যক্তিগত যে কোনো কারণ হতে পারে। বেলা ১-৩০ থেকে ১-৪৫ টার মধ্যে তাকে ছুরি মেরে খুন করা হয়। দরজা খোলা ছিল বলে তার আসা অসম্ভব নয়।
মিস পেবমার্সকে জিজ্ঞাসা করা হলো মিরিক্যারী এই ঘড়িগুলো সঙ্গে নিয়ে এসেছে। পেবমার্স বললেন, সেগুলো বয়ে আনার কোনো চিহ্ন নেই। এখন প্রশ্ন হলো, যে এনেছে ঘড়িগুলোকে পকেটে করে নিয়ে এসেছে। এছাড়া সব ঘড়িতেই সাড়ে-চারটে বেজে ছিলো এ ব্যাপারে আপনার মত কি?
পেবমার্সের ধারণা এটা কোনো উন্মাদের কাজ। মিস পেবমার্সকে, হার্ড ক্যাসেল বললেন যে তিনি ঘড়িগুলো নিয়ে যেতে চান এবং তার বিনিময়ে একটি রসিদ দিতে চান। পেবমার্স বললেন, ওগুলো তার জিনিস নয় সেই বুঝে কাজ করবেন।
ইতিমধ্যে শীলা কলিনের সঙ্গে দরজার দিকে এগোলেন। মাঝপথে দাঁড়িয়ে হঠাৎ বলে উঠলেন, তাহলে চলি। হঠাৎ শীলা বাইরে এসে বললেন, তার গ্লাভসগুলো বাইরে ফেলে এসেছে। শীলা বললেন যে, তিনি একমাত্র জানেন এগুলো কোথায় আছে। শীলা বাড়ির ভেতর ঢুকে গিয়ে ওটি পেল না।
শীলা যখন বাড়ির ভেতর ঢুকতে যাচ্ছে তখন কলিনের কাছ থেকে বিদায় নিয়ে শীলা চলে গেলো। হার্ড ক্যাসেল অ্যালেনকে বললেন যে তিনি কিছু জায়গায় যেতে চান, তার জন্য কলিনকেও নিয়ে যেতে চান। কলিন যাবার সম্মতি দিলো।
.
০৪.
কলিন ল্যাম্বের বিবৃতি
আমরা কোথায় যাবো? ডিককে জিজ্ঞাসা করা হলো। ও ড্রাইভারকে বললো, ক্যাভেনডিস সেক্রেটারি অফ ব্যুরো প্যালিস স্ট্রিটে। ডানদিক বরাবর এসপ্ল্যানেডে।
গাড়িতে নির্দিষ্ট জায়গায় পৌঁছতে চারটে সিঁড়ি উঠে তবেই বিল্ডিং-এর সদর দরজা। তারা দুজন খোলা দরজা দিয়ে ঢুকলেন। ঢুকেই ডান দিকে একটা দরজা। একপাশে লেখা আছে, দয়া করে আসুন।
ঘরটা বেশ বড়ো, তিনজন টাইপিস্ট পাশাপাশি বসে টাইপ করছিলো। একজন মহিলাকে বললো, মিস মার্টিডেলকে চাই। তার ঘরে যখন যাওয়া হলো তখন ডিক একটা কার্ড বের করে তার দিকে এগিয়ে দিলেন। তার চোখ বিরক্তি ও বিস্ময়ে কুঁচকে গেলো।
মিস মার্টিনডেল-এর ডেস্কের ঠিক ওপরেই দেওয়ালে ফটোগ্রাম টাঙানো একজন আরিয়ান অলিবার যিনি রহস্য উপন্যাসের লেখক, আর একজন গ্যারি গ্রেসজন যিনি থ্রিলার রাইটার। ওর পাশে সিরিয়ম হর্গের ফটোগ্রাফ। এছাড়া একজন টাকওয়ালা লোকের ছবিও আছে। পুরুষগুলোর বেশির ভাগেরই মুখের পার্থক্য আর পরনের পোশাক এক।
তিনি বললেন তার কাছে শীলা ওয়েব নামে একটি মেয়ে কাজ করে। সে এখন নেই। দুপুরবেলা একটা বিশেষ কাজে গেছে। এসপ্ল্যোনেড থেকে বিকেল পাঁচটা নাগাদ কারলো হোটেলে ও একটা বিশেষ কাজে যাবে। বছরখানেক ধরে সে এখানে কাজ করছে। ও এই কাজের আগে কিছু কাজ করতো কিনা তা ওর ফাইল দেখে জানা যাবে। তবে মনে হয় লন্ডনের কোনো ব্যবসায়িক সংস্থায় কাজ করতো। ওর টাইপ একেবারে নিখুঁত, ওর পারিবারিক ব্যাপার তিনি জানেন না। তবে ও নাকি এক মাসির কাছে থাকে। তিনি বললেন যে মিস পেবমার্সের কাছে সে গেছে। তিনি একজন শর্টহ্যান্ড টাইপিস্ট জানা মহিলা চান। তিনি ফোন করে জানতে চান কোন মহিলাটি দরকার। তিনি দুটো বাজতে দশ নাগাদ ফোন করেছিলেন। তিনি অবশ্য প্যাডে সেটা নোট করে নিয়েছেন।
তিনি প্যাডের পাতা উল্টে বললেন, উনপঞ্চাশ মিনিট। তিনি তার গলা চেনেন না। তবে তিনি ফোনে তার পরিচয় দিয়েছিলেন। তাকে জানানো হলো যে মিস পেবমার্স ফোনের কথা অস্বীকার করেছেন। মিস মার্টিনডেল বললেন, সত্যিই ব্যাপারটা ভারী অদ্ভুত।
তিনি বললেন, তার ফোন এসেছিলো কিন্তু তিনি নিশ্চিত নন ফোনটা কে করেছিলো। মিস মার্টিনডেল এই রসিকতার কোনো অর্থ খুঁজে পেলেন না। আসলে শীলা ওয়েবকে চাওয়ার একটা কারণ ছিলো। কারণ শীলা ওয়েব বললেন যে, তিনি ওর কাছে কাজ করেছেন।
ইনসপেক্টর বললেন যে, সে অনেক জায়গায় কাজ করে তবে সে এই জায়গায় কাজ করেছে। তো নিশ্চিত নয়।
হার্ড ক্যাসেল বললেন, শীলা উনিশ নম্বর উইলিব্রাহাম ক্রিসেন্টে গিয়ে পৌঁছেছিলো। তারপর সোজা ওর বাড়িতে ঢুকে বসার ঘরে গিয়ে বসেছিলো। সেখানে গিয়ে ও যে মৃতদেহ দেখে, এটা শুনে মার্টিনডেল ভয় পেয়ে যায়। বেশ কিছুক্ষণ ওর মুখ দিয়ে কথা বেরোলো না।
ক্যাসেল বলে উঠলো, মিস মার্টিনডেল, কারী নামটা শুনে আপনার কিছু মনে হচ্ছে? মি. আর, এইচ. কারী।
ক্যাসেল বললেন, উনি মেট্রোপলিটন এ্যান্ড প্রভিন্সিয়াল ইনসিওরেন্স কোম্পানির সঙ্গে যুক্ত।
ইনসপেক্টর বললেন, তার দুদিকেই অংশ, একদিকে মিস পেবমার্স আপনাকে ফোনে শীলাকে চেয়েছিলো। আর অন্যদিকে মিস পেবমার্স ব্যাপারটা অস্বীকার করেছেন। শীলা তারপর গিয়েছিলো ওখানে। সেখানেই সে একজন মৃত ব্যক্তিকে আবিষ্কার করে। কিছু বুঝতে পারলেন।
মার্টিনডেল বললেন, তার ব্যাবসা ভালোই চলছে। প্রথমটায় ছোটোখাটো ভাবে আরম্ভ করেছিলাম। তারপর বাড়িয়েছি। এখন আমার এখানে আটজন মেয়ে কর্মচারী আছে। ওরা সবসময়েই কাজে ব্যস্ত।
দেওয়ালে টাঙানো লেখকদের ছবিগুলো দেখছে হার্ড ক্যাসেল। মিস মার্টিনডেল বললেন, শুরুতে আমি লেখকদেরই বিশেষজ্ঞ ছিলাম। আপনি নিশ্চয়ই বিখ্যাত থ্রিলার লেখক গ্যারি জনসনের নাম শুনেছেন। শেষে ওর অনুমোদন পেয়ে আমি এখানে এই সংস্থা তৈরি করি। যে কোনো প্রয়োজনীয় রিসার্চে আমি ওদের সাহায্য করি। যেমন আইন সংক্রান্ত খুঁটিনাটি, পুলিশি নিময়কানুন কিংবা বিভিন্ন ধরনের বিষয়ের তথ্যাবলী এরকম নানা ধরনের ব্যাপার আছে। লেখকেরা বিদেশে কোথাও তাদের উপন্যাস রাখতে চাইলে আমরা ওদের প্রয়োজনীয় নাম ঠিকানা প্রভৃতি দিয়ে দিই।
মিস মাটিনডেলের কাছ থেকে বিদায় নিয়ে বেরিয়ে এলাম। দেখলাম জনাতিনেক টাইপিস্ট মহিলা যাবার জন্য তখন প্রস্তুত হচ্ছে। সবাই জিনিসপত্র গুছোতে ব্যস্ত। এডনা নিজের জুতো নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়েছে। করুণ স্বরে পাশের মহিলাটিকে বললো এডনা, মাত্র কয়েকমাস হলো জুতোটা কিনেছি। আর এর মধ্যেই দ্যাখো হিলটা বেরিয়ে এসেছে। এতে দামী জুতো।
একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলে উঠলো আবার, আর ঐ কাছের দোকানের সামনে যতসব বিশ্রী গর্ত, গর্তে পড়েই আমার জুতোর এই হাল। এখন কি করে আমি বাড়ি যাবো বুঝতে পারছি না।
রিসেপসনিস্ট এডনার মুখটা খুব করুণ দেখাচ্ছিল। ঠিক তখনই আমরা ওদের কাছাকাছি গিয়ে হাজির হলাম। আমি এবার হার্ড ক্যাসেলের দিকে তাকিয়ে বললাম, তাহলে ডিক তোমার সন্দেহ থাকা সত্ত্বেও শীলা ওয়েবের কাহিনীটা পুরোপুরি সত্যের দিকে বাঁক নিয়েছে।
হার্ড ক্যাসেল জবাবে বললো, ঠিক আছে, তুমি জিতেছে।
.
০৫.
মিসেস মার্টিনের মুখটা কেমন কঠিন ধরনের। একমনে বাসনগুলো ধুয়ে যাচ্ছিল ও। ইতিমধ্যে অ্যানি এসে জানালো একটা পুলিশের জীপ এসে দাঁড়িয়েছে বাড়ির সামনেই। দুজন পুলিশ অফিসার নেমে এদিকেই আসছে। কথাটা শোনামাত্রই ভুরু কুঁচকে মার্টিন তাকালো অ্যানির দিকে। অ্যানি বারান্দায় এসে খুলে দিলো দরজাটা। সামনে দুজন অফিসার। অপেক্ষাকৃত লম্বাটে চেহারার অফিসারটি বললেন, তুমিই মার্টিন। মার্টিন জবাবে বললে, হ্যাঁ। ইনসপেক্টর বললেন যে, তিনি তার সঙ্গে একটু কথা বলতে চান। মার্টিন-এর ছেলে এরনির সামনে কথা বলা হচ্ছিল।
মার্টিন বললো যে, অন্ধ মহিলাটি খুব সুন্দরভাবে কাজকর্ম করেন। দেখে বোঝা যায় না যে উনি অন্ধ। ওখানে তিনি দশটা নাগাদ যান, ফেরেন ১২ নাগাদ। কোনো কোনো দিন কাজকর্ম থাকলে একটু দেরি হয়ে যায়। ভদ্রলোকের মৃতদেহ সম্পর্কে তাকে জানানো হলে সে বলে যে, খুন-টুনের ব্যাপারে তিনি কিছুই জানেন না। সে বললো, আজ সকালে কেউ মিস পেবমার্সের সঙ্গে দেখা করতে আসেনি। তবে সে হলে সেরকম কোনো লোককে ঘরে ঢুকতে দিতো না। কারীর নাম শুনে তিনি বললেন, এটা ভারতীয় নাম কিন্তু তা নয়। মৃতদেহটি প্রথম একটা যুবতী–একটা কোম্পানির স্টেনো-টাইপিস্ট, ওকে কাজের জন্য ডাকা হয়েছিল, সেজন্য ওর মিস পেবমার্সের বাড়িতে আসা–আবিষ্কার করে। এটা ক্যাসেল তাকে জানালেন।
মার্টিন বলতে লাগলো, বসার ঘরে দুটো ঘড়ি একটা কাকাতুয়া ধ্বনি ও একটা গ্র্যান্ডফাদার ক্লক আছে। যদি আর একটা থাকতো তাহলে তার চোখে নিশ্চয়ই পড়তো। সে বললো যে, পৌনে বারোটা নাগাদ বাড়িতে ফিরেছেন। সাধারণতঃ মিস পেবমার্স বারোটা থেকে সাড়ে বারোটার মধ্যে বাড়ি ফেরেন। মাঝে মাঝে সময়টা একটু বেশি হয়ে যায়। সে বললো, তিনি ওখানে যাবার আগেই বাড়ি থেকে বেরিয়ে গেছিলেন। সে বললো, তার খুব অদ্ভুত লাগছে যে, কিভাবে ঘড়িগুলো এখানে এলো, মাস চারেক আগে মিস পেবমার্স নীলামে তৈরি চুলের কার্পেট পেয়েছিলেন। খুবই ভালো অবস্থা ছিলো তার। তিনি তাকে বলেন, সেটা খুব সস্তায় পেয়েছিলো। কয়েকটা মফঃস্বলের কার্পেট পেয়েছিলেন তার সঙ্গে সেগুলো ছিলো তুণের মতো। এরপর ইনসপেক্টর বিদায় নিলেন।
.
০৬.
কলিন ল্যাম্বের বিবৃতি
ওখান থেকে আমরা বেরিয়ে একটা রেস্তরাঁয় গেলাম। শেষে ডিক ক্যাসেল আমার দিকে একটা দীর্ঘশ্বাস ফেললেন।
হার্ড ক্যাসেল তাকে বললো, পরের মাসেই তো লারকিন-এর শুনানী। বেশ অদ্ভুতভাবে এতদিন ধরে ও দুনম্বরী কাজকর্ম চালিয়ে যাচ্ছিলো। তুমি নিশ্চয়ই কাউকে সন্দেহ করতে।
সে বললো, লারকিন অফিস থেকে কাগজপত্র সরিয়ে নিতো। তারপর সেগুলোর ছবি তুলে নেওয়া হতো। এরপর সেইদিনেই কয়েক ঘণ্টার মধ্যে খুব সাবধানে ঐ কাগজপত্র আগের জায়গায় রেখে দেওয়া হত। সংগঠন ছিলো বেশ ভালো। লারকিন যখন সেখানে কোট ঝুলিয়ে রাখতো, ঠিক তারই পাশে একই রকমের দেখতে এটা কোট পাল্টে নেওয়া হত। বেশ পরিকল্পনা মাফিকই নিয়মিত ঘটনাটা ঘটানো হতো। এ ব্যাপারে নিশ্চয়ই কারো বুদ্ধি কাজ করতো।
লারকিন কোথাও কিভাবে পাওনাগণ্ডা পেতো তা তিনি জানেন। ওরা তাদের হেড-কোয়ার্টারের পরিকল্পনা অনুযায়ী কাজের ছক তৈরি করত। ওখানে পৌঁছবার একটা সূত্র আছে। অর্থ রোজগার করার জন্য এটা করতো।
হার্ড ক্যাসেলের কথায় সে বললো, লারকিনকে ধরার আগেই অনেক মূল্যবান খবরাখবর এইভাবে পাচার করে দিয়েছিলো, সে কারণে ওকে তারা আরো কিছু পাচার করার সুযোগ দিয়েছিল।
আমি বললাম ওকে, লোকে যেরকম এটাকে রোমাঞ্চকর কাজকর্ম ভাবে, তা মোটেই নয়। এখন আর কোনো রোমান্স নয়। আমরা সবাই পরস্পরের গোপন ব্যাপার জানি। এমন কি আমাদের এজেন্টও দেখা যায় অনেক সময় বিরুদ্ধ পক্ষেরও এজেন্ট বটে। এর বিপরীতও বটে। এ ধরনের বিপজ্জনক এজেন্টরা অনেক সময় ভাবনার কারণ হয়ে ওঠে। সেকারণে এখন গোপনে চক্রান্ত করে কোনো ফল পাওয়া যায় না। ডিক বললো, তুমি কেন এখনও পোর্ট লিবিউরিতে ঘুরে বেড়াচ্ছো আমি বুঝতে পারছি। কিন্তু ক্রাডিয়াল তো পোর্ট লিবিউরির থেকে দশ মাইলের বেশি দূর।
তারা যাদের পেছনে ঘুরছে তারা ক্রিসেন্টে রয়েছে। ওখানে ক্রিসেন্ট মুন বলে একটা রেস্তরাঁ ছিলো। সে কারণে পোর্ট লিবিউরি থেকে আরম্ভ করা হলো।
ডিক সগর্বে বলে ওর দিকে তাকালো, ভালো নয়। একটা ছোটো ব্যাপার আমাকে চমকে দিয়েছিলো। কথাটা বলে আমি আমার ওয়ালেটটা বের করলাম। ওর ভেতর থেকে একটুকরো চিরকুট বের করলাম তারপরে। হোটেলে ব্যবহৃত একটুকরো কাগজ ওটা। তাতে একটা স্কেচ অংশ। হার্ড ক্যাসেলের হাত দিয়ে বললাম, হ্যাঁন বিউরি নামে এক যুবকের ওয়ালেট ছিলো না। লারকিনের মামলায় হ্যাঁন বিউরি অনেক কাজ করেছিলো। যুবক বেশ ভালোই ছিলো। কিন্তু দুর্ভাগ্যের বিষয় ও লন্ডনে গাড়ি চাপা পড়ে। গাড়িটার নম্বর কেউ লক্ষ্য করেনি। এই স্কেচটার অর্থ কি তা আমি জানি না। কারণ হ্যান বিউরি গুরুত্বপূর্ণ না হলে স্কেচটা করতো না। কোনো একটা ভাবনা নিশ্চয়ই ওর মনে এসেছিলো। কিংবা কিছু শুনেছিলো অথবা দেখেছিলো! একষট্টি আর ওর নিচেশব্দটা লেখা। তার তলায় একটা মুন অথবা ক্রিসেন্ট। এর কি কোনো যোগ আছে; হ্যাঁন বিউরির দায়িত্বটা সে নিয়েছে। সে নিশ্চিত একটা কিছু আছে যা আমাকে খুঁজে বের করতে হবে। আমি এখনও জানি না একষট্টি সংখ্যার মানে কি কিংবা ঐ এম-এর অর্থ। তারপর বললাম, আমি পোর্ট লিবিউরিকে মাঝখানে রেখে তার বাইরে বৃত্তাকারে কাজ করে চলেছি। এই হলো ব্যাপার। এখানে মাত্র একটা ক্রিসেন্ট আছে। সেটা হলো উইলিব্রাহাম ক্রিসেন্ট। আমি সেজন্যই ঐ একষট্টি নম্বরটা খুঁজে বের করার জন্য ওখান দিয়ে যাচ্ছিলাম। দেখতে চেয়েছিলাম যা ভেবেছি তা সত্যি কিনা। কিন্তু ঐ জায়গাটা শেষপর্যন্ত খুঁজেই পেলাম না।
কলিনকে বলা হলো, আগামীকাল উনিশ নম্বর দুদিকের দুটো বাড়িতে অনুসন্ধান করবো। বাড়ির কেউ উনিশ নম্বরে ঢুকতে দেখেছে কিনা তা-ও জিজ্ঞেস করে দেখবো। উনিশ নম্বরের একেবারে পেছনের বাড়িটাও এর সঙ্গে থাকবে। এই বাড়িটার যার সঙ্গে বাগান যুক্ত। তার ধারণা ঐ বাগানটা ঐ উনিশ নম্বরের পেছনটায় হবে। যদি চাও তবে তোমাকে আমি সঙ্গে নিতে পারি।
ল্যাম্বকে বলা হলো, তিনি তোমার সার্জেন্ট হবে। তুমি শর্টহ্যান্ড নোট নিও। পরের দিন নটা নাগাদ আমি পুলিশ স্টেশনে গিয়ে হাজির হবো।
কদিন পর ডিক বললো যে, ঘড়িগুলোর মধ্যে চামড়ার ট্রাভেলিং ক্লক যেটায় রোজমেরী লেখা আছে। ব্যাপারটা খুব অদ্ভুত।
ডিক বললেন, অনেকেই ভীষণ বোকা ধরনের, তাদের মধ্যে আমি একজন। ঘড়িগুলো কাল বসার ঘরেই ছিলো। আমি মিস পেবমার্সকে ছুঁয়ে দেখতে বলেছিলাম। যদি ঘড়িগুলো তার পরিচিত হয়। অবশ্য উনি চিনতে পারেননি, এরপর পুলিশের লোকেরা এসে পৌঁছেছিলো লাশটা নেবার জন্য। ব্যাপারটা দেখাশোনা করার জন্য তিনি গেটের কাছে গেলেন। তারপর আবার ভেতরে গিয়ে ঐ মিস পেবার্স-এর থেকে ঘড়ি আনতে চেয়েছেন। ভদ্রমহিলা বললো, যেহেতু ঘড়িগুলো তার নয় সেহেতু রসিদ নেবার কোনো প্রয়োজন নেই। এর পর তিনি তার কাছে গেলেন। তার সঙ্গী এডওয়ার্ডকে ঘড়ি নিয়ে আসতে বলা হলে সে ঐ কাকাতুয়া ঘড়ি, গ্র্যান্ডফাদার ক্লকটা ছাড়া ওখান থেকে তিনটি ঘড়ি আনে। প্রকৃতপক্ষে চারটি ঘড়ির কথাই উল্লেখ করা উচিত ছিল। কাজটা করতে বেশি সময় লাগেনি। মানে আমি বলতে চাইছি, মিস পেবমার্সও এটা করে থাকতে পারেন। আমি চলে আসার পরেই উনি ঘড়ি দুটো নিয়ে রান্নাঘরে চলে গেছিলেন।
আমি জিজ্ঞেস করলাম, জানতে চাইলাম, এটা সে করবে কেন। এই বলে আমি বললাম, মেয়েটি তার গ্লাভস নিতে ভেতরে যেতে চাইছিলো সে-ই একমাত্র জানে কোথায় সে তার গ্লাভস রাখে। সম্ভবত সে ভেতর থেকে মেয়েটার গ্লাভস তার ব্যাগে পুরে এনেছিলো।
হার্ড ক্যাসেল বললেন যে, মেয়েটির প্রেমে তুমি পড়েছে, নারীরা যে কোনো পুরুষকে নিজেদের নিরাপত্তার জন্য বেশিরভাগ ক্ষেত্রে ব্যবহার করে, এখন শুধু তোমাকে ওকে নিরাপত্তা দেওয়াটা বন্ধ করতে হবে। তুমি নিশ্চয়ই এতক্ষণে বুঝতে পেরেছো ঐ মেয়েটি খুনের সঙ্গে জড়িত।
তিনি কাজ করার সময়ে কি দেখেছি তা শুনলে তুমি রীতিমতো অবাক হয়ে যাবে। আমি গম্ভীর হয়ে বললাম। জীবনে আমি দেশ বিদেশের লোকেদের সঙ্গে অনেক চমকপ্রদ কাজ করেছি। আমি নারীর প্রলোভন থেকে মুক্ত।
হার্ড ক্যাসেল বললেন, শীলা ওয়েব সম্ভবত তোমার ধরনের মানুষ। হার্ড ক্যাসেল বললেন, শীলা যাতে সন্দেহ না হয় সেই জন্য সে মৃতদেহের কাছে গেছিলো। মৃতদেহটা পেবমার্সের বাড়ি থেকে পাওয়া গেছে। তাই ঐ দুজনকে সন্দেহের তালিকা থেকে বাদ দেওয়া যায় না।
আমি বললাম যে, ঐ ঘরে আমি গেছিলাম। তিনটে বাজার পর গেছিলাম। কারী সম্পর্কে ক্যাসেল কিছু জানেন না। হার্ড ক্যাসেল নিস্পৃহভাবে ওর কোনো অস্তিত্ব নেই। আসলে এইরকম কোনো ব্যক্তি নেই।
ঠিক আছে। মেট্রোপলিটন ইনসিওরেন্স কোম্পানি থেকে কি জেনেছো। কেননা ওরকম নামের কোনো অস্তিত্ব নেই। এমন কি কারী যে ডেনভার স্ট্রিটে থাকে তার কোনো অস্তিত্ব নেই। অতএব সাত নম্বর কি অন্য কোনো নম্বরের অস্তিত্বের কথা বলাই বাহুল্য। ক্যাসেল বললো, লোকটা ভুয়ো পরিচয় দিয়ে প্রিমিয়াম সংগ্রহ করে। এ ভাবেই বিভিন্ন বাড়িতে নিজেকে পরিচিত করে তুলেছে। এরপর প্রতারণা করা খুব সোজা। ওর আঙুলের ছাপ পাওয়া গেছে। দেখতে হবে লোকটার কোনো রেকর্ড আছে কিনা। যদি তাই হবে তবে তা হবে আমাদের অনুসন্ধানের পক্ষে বড়ো একটা পদক্ষেপ। যদি তা না হয় তাহলে ব্যাপারটা জটিল হবে।
ওর ইনকোয়েস্ট গত পরশু হবে। মেডিক্যাল সাক্ষ্যে দেখা যাচ্ছে কোনো ফল কাটার ছুরি দিয়ে সে হাত চিরেছে। ভদ্রমহিলা সত্যি অন্ধ। তিনি নর্থ কান্ট্রি স্কুলের শিক্ষিকা ছিলেন কিন্তু ১৬ বছর আগে দৃষ্টি হারিয়ে বেলপদ্ধতি শিক্ষা করে আরলবার্গের চাকরি নেন। তারা প্রতিবেশীদের জেরা করতে চান।
উইলিব্রাহাম ক্রিসেন্ট হলো একটি অভিজাত এলাকা। ঐ বেলা একটার সময় কেউ লক্ষ্য করেনি। ক্যাসেল বললেন, আঠারো নম্বর বাড়িতে থাকেন মিঃ ওয়াটারহাউস। ভদ্রলোক গেসমহোর্ক এন্ড সুট্যেম জ্যন কোম্পানির ম্যানেজিং ক্লার্ক। ওর বোন ওকে সামলায়। কুড়ি নম্বরে এক মহিলা বেড়াল নিয়ে থাকে।
.
০৭.
আঠারো নম্বর উইলিব্রিহাম ক্রিসেন্ট। মিঃ ওয়াটারহাউস অনেকটা নিশ্চিতভাবে বাড়িতে সিঁড়ি বেয়ে নামছিলেন। হঠাৎ বোনকে বললেন যে তুমি যে-সঠিক এ ব্যাপারে তুমি নিশ্চিত?
ভদ্রমহিলা সামান্য বিরক্ত হয়ে বললেন, তুমি কি বলতে চাইছ আমি তো ঠিক বুঝতে পারছি না জেমস!
এবাভে মিঃ ওয়াটারহাউস বোনের দিকে জবাবদিহির মতো তাকালেন। মিঃ ওয়েটারহাউস এবার সলিসিটারের কাছে যাবার জন্য প্রস্তুত হলেন। ওর মাথার চুল ধূসর। এদিকে ওর বোন মিস ওয়াটারহাউস কিছুটা লম্বাটে ধরনের কৃশকায় চেহারার। অন্যের বোকামি দেখতে তিনি একটু বেশি মাত্রায় উত্তেজিত হয়ে পড়েন। বোন মনে করেন তার দাদা খুন হতে পারে। ওর দাদা বলে উঠলেন যে, খুনী বাড়ি থেকে রোজ একটা করে শিকার বেছে নেয়। মিঃ ওয়াটারহাউস বললেন, এডিথ তুমি এমন কথা বলছে। মিস ওয়াটারহাউস দাদার দিকে তাকিয়ে দৃঢ়স্বরে বলে উঠলেন, আমার দেখতে ইচ্ছে করছে, কোনো একজন এখানে এসে আমাকে খুন করার চেষ্টা করছে।
মিঃ ওয়াটারহাউসের কাছে বোনের কথাটা তেমন একটা মনে হলো না। তিনি ভাবলেন স্বয়ং যদি খুনের শিকারের কথা ভাবলেন তাহলে বোনকে নিশ্চয়ই বাছতেন না। এডিথ বললেন, এখন খুন নিয়ে নানা ধরনের গুজব চলছে। এডিথ অবশ্য কোনোদিনই গুজবে কান দেয় না। তবু ব্যাপারটা উপভোগ করতে ছাড়লেন না। তিনি বললেন, এই ভদ্রলোক নাকি আরলবার্গ ইনস্টিটিউশনের ট্রেজারার কিংবা ট্রাকি। এই সংক্রান্ত ব্যাপারেই হিসাবনিকাশের ব্যাপারে কিসব গোলমাল হয়েছিলো। সে ব্যাপারেই জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ভদ্রলোক এসেছিলেন মিঃ পেবমার্সের কাছে।
মিঃ ওয়াটারহাউস মানতে চান না, তিনি বললেন, একটুকরো তার ওর গলায় জড়িয়ে দিয়ে ওকে শ্বাসরোধ করে মেরেছেন, ভদ্রলোক মোটেই সতর্ক ছিলেন না। আর কেই-বা একজন অন্ধ নিরীহ মহিলার সঙ্গে কথা বলতে অতশত ভাবে। তার অর্থ অবশ্য এই নয় যে, ব্যাপারটা আমি কিভাবে করছি। তার ধারণা তিনি একজন চমৎকার স্বভাবের মহিলা। ওকে গোঁড়া আর অসংযমী বলে মনে হয় না। শিক্ষা ছাড়াও জেনে রাখো পাশাপাশি আরো অনেক ব্যাপার থাকতে পারে। উনি যে স্কুলে পড়ান সেই স্কুলটা দেখতে অদ্ভুত। এই তো মিসেস হেড বলছিলেন ওর ছেলে সুসাম নাকি বলেছে ওদের নতুন ক্লাসরুমটা একেবারেই পছন্দ নয়। জানলাগুলো দিয়ে নাকি বাইরে একেবারে তাকানো যায় না। সেইজন্য নাকি লেখাপড়ায় একেবারে মন বসে না। মিঃ ওয়াটারহাউস গলফের জিনিসপত্র যে ব্যাগে রাখা ছিলো সেখানে গিয়ে ব্যাগ থেকে একটা খেলার লাঠি বের করলেন। তারপর সেটাকে সদর দরজার সামনে সুপরিকল্পিতভাবে রেখে দিলেন। তিনি বললেন যে, জেমস ভীষণ বোকা। যেকোনো পরিস্থিতির জন্য সব সময় তৈরি থাকা ভালো।
এসব করে যখন শোবার ঘরে হাজির হলেন মিস ওয়াটারহাউস, ঠিক তখনই মিসেস হেড হন্তদন্ত হয়ে সিঁড়ি বেয়ে উঠে এলেন ওপরে। বললেন, শোনো দুজন ভদ্রলোক আমার সঙ্গে দেখা করতে চান। ভদ্রলোক হলেও ওরা পুলিশের লোক। ডিটেকটিভ ইনসপেক্টর হার্ড ক্যাসেল তাকে জেরা করবেন।
মিসেস হেড মিস ওয়াটারহাউসকে নিচে যেতে বললেন। মিস ওয়াটারহাউস বললেন, ঠিক আছে। আমি নিচে যাচ্ছি। মিসেস হেড এবারে বলে উঠলেন, তার মনে হয় ওরা তোমাকে পেবমার্সের কথা জিজ্ঞাসা করবেন। নিশ্চয়ই জানতে চাইবেন এই মহিলার আচরণে তুমি কোনোরকম অস্বাভাবিকতা লক্ষ্য করেছে কিনা। ওদের ধারণা মাঝে মাঝে কারো আচরণে কোনোরকম অস্বাভাবিকতা লক্ষ্য করাটা আশ্চর্যের কিছু নয়। অবশ্য ধীরে ধীরে নাকি ব্যাপারটা আরো বেড়ে যেতে থাকে।
হার্ড ক্যাসেল বললেন যে, আপনি নিশ্চয়ই বুঝেছেন কেন আমি এসেছি? নিশ্চয় শুনেছেন গতকাল আপনার পাশের বাড়িতে কি ঘটেছে?
তিনি বললেন পাশের বাড়িতে কেউ খুন হলে সেটি সাধারণত নজরে না এসে যায় না। অবশ্য আগেই জনাদুয়েক সাংবাদিক এসেছিলেন আমার কাছে। তাদের তিনি ফিরিয়ে দিয়েছেন। হার্ড ক্যাসলে বললেন, তিনি ঠিক করেছেন। ঐসব সংবাদিকরা সব জায়গাতেই গর্ত করে পথ করে নিতে পছন্দ করে। অবশ্য আপনি যে এসব মোকাবিলা করার ব্যাপারে সক্ষম তাতে আমার কোনো সন্দেহ নেই। অবশ্য তিনি যদি সত্যিই কিছু দেখে থাকেন তাহলে তা আমাদের কাছে আলোকপাত করলে আমরা কৃতজ্ঞ থাকবো।
হার্ড ক্যাসেল বললেন, খুনটা দেড়টা থেকে আড়াইটার মধ্যে করা হয়েছিল। ওয়াটারহাউস বললেন, তিনি এখানেই ছিলেন। খুন ঠিক কে করেছে আজকে খবরের কাগজে এটা এখনও জানতে পারেনি। হার্ড ক্যাসেল জানালনে, মিস পেবমার্স আমাদের আশ্বাস দিয়ে বলেছেন, ঐসময় তিনি কারো আসার প্রত্যাশায় ছিলেন না। আর ভদ্রলোক সম্পর্কে ওর কোনোরকম ধারণাই নেই।
তিনি বললেন, অবশ্য এ ব্যাপারে ওর পক্ষে নিশ্চিত করে কিছু বলা অসম্ভব। কারণ উনি তো চোখে দেখতে পান না।
ভদ্রলোকের ছবি তাকে দেখানো হলে তিনি বললেন যে, এই ভদ্রলোককে তিনি আগে দেখেননি। তবে ভদ্রলোককে দেখলে বেশ সম্মানীয় বলা যায়।
হার্ড ক্যাসেল বললেন, মৃত্যু যেন একটা শান্তিপূর্ণ ব্যাপার। আমার মনে হয় না কি হতে চলেছে, সে সম্পর্কে ভদ্রলোকের কোনোরকম ধারণা ছিলো। মিস ওয়াটারহাউসকে জিজ্ঞাসা করা হলো যে, তিনি সেদিনের কথা যদি মনে করতে পারেন যে, তিনি বাইরে বা বাগানে গেছিলেন কিনা।
উনি একটু ভেবে বললেন, একটা বাজার মিনিট দশেক আগে তিনি বাগান থেকে ফিরে আসেন। তার ধারণা পেবমার্স তখন বাড়ি ফিরেছিলেন। কারণ তিনি দরজা খোলার আওয়াজ শুনেছিলেন। তখনই ওনার স্কুল ছুটির সময়।
হার্ড ক্যাসেল বললেন, ওর নিজের বিবৃতি অনুযায়ী মিস পেবমার্স দেড়টা নাগাদ আবার বেরিয়ে গিয়েছিলেন। আর তিনটের সময়, তিনি বললেন যে, তাকে তিনি গেট দিয়ে যেতে দেখেছেন। মিস ওয়াটারহাউস বললেন, হার্ড ক্যাসেল ঠিক বুঝতে পারলাম না মিস। আপনি একটু আগে বললেন উনি গেট দিয়ে…।
তিনি বললেন তিনি বসার ঘরে ছিলেন ওখান থেকে রাস্তা ভালোই দেখা যায়। জানলার সামনে বসার ঘরে বসে চেয়ার নিয়ে টাইমস পড়ছিলাম। ওটার পাতা ওলটাবার সময় দেখা যায় পেকমার্স গেট দিয়ে ঢুকেছেন।
হার্ড ক্যাসেল বললেন, এটুকু শুধু বুঝলাম যে, মিস পেবমার্স শপিং করতে আর পোস্টঅফিসে যাবার জন্য বাইরে যাচ্ছিলেন। ওগুলোয় যেতে হলে ক্রিসেন্ট ধরে অন্য রাস্তা দিয়ে যেতে হয়। সে সম্পর্কে অবশ্য আমারও একটা ধারণা ছিল। তিনি বললেন, কোনো সময় মিস পেবমার্স বেরিয়ে গেছিলেন আর কোনোদিকেই বা গেছিলেন। সে ব্যাপারটা একেবারেই মনে নেই। তিনি বললেন, প্রতিবেশীর ওপরে কোনোভাবে নজর রাখার অভ্যাস আমার নেই। তিনি তার নিজের ব্যাপার নিয়েই বেশি ব্যস্ত। আচ্ছা পেবমার্স কি আপনার সদরের গেট দিয়ে বেরিয়ে টেলিফোন করতে যাচ্ছিলেন, ওখানেই তো পাবলিক ফোন আছে।
হ্যাঁ, তেরো নম্বরের উল্টোদিকে। মিস ওয়াটারহাউস বললেন ঐ লোকটিকে তিনি দেখেননি। দেড়টা থেকে তিনটে পর্যন্ত প্রথমে তিনি টাইমস-এর ক্রসওয়ার্ড পাজল নিয়ে সময় কাটান। তারপর ঘর থেকে বেরিয়ে রান্নাঘরে যান। লাঞ্চের বাসনপত্র পরিষ্কার করতে বেশ কিছুক্ষণ সময় লাগে, মিস ওয়াটারহাউস ইনসপেক্টরের দিকে তাকিয়ে বললেন (একটু ভেবে নিয়ে)। তারপর তিনি চিঠি লেখেন। তারপর বিলের টাকা দেবার জন্য কয়েকটা চেক কাটি। এরপর গিয়ে হাজির হই ওপরে। এরপর সম্ভবত শোবার ঘর থেকে পাশের বাড়ির একটা গোলমালের শব্দ আমার কানে আসে। তিনি মেয়ের আর্তনাদ শুনেছিলেন। সে কারণে তিনি স্বাভাবিকভাবে জানলার কাছে হাজির হয়েছিলেন। তার চোখে পড়ে গেটের কাছে একজোড়া যুবক-যুবতী পরস্পরকে জড়িয়ে ধরে আছে। তার মনে হচ্ছিল যুবকটি কোনো ব্যাপার নিয়ে মেয়েটির সঙ্গে তর্ক করছে। তারপর ঐ যুবকটি মেয়েটিকে গেটের পার্কের কাছে বসিয়ে দিলো। তারপর লম্বা লম্বা পা ফেলে ঢুকে গেলো বাড়ির ভেতরে, মিস পেবমার্সকে তিনি দেখতে চাইতেন না যদি না মেয়েটির চিৎকার তিনি দেখতেন। তিনি এসব ব্যাপারে তেমন একটা নজর দেন না। যখন পুলিশের গাড়ি এসে পৌঁছালো তখন ভাবলেন অস্বাভাবিক কিছু ঘটেছে।
এই ঘটনা দেখে খুব স্বাভাবিক ভাবেই বাড়ি থেকে বেরিয়ে এলো। তারপর ঘুরে হাজির হলেন পেছনের বাগানের দিকে। ওখান থেকে কিছু নজরে এলো না। যখন ওখান থেকে সামনের দিকে এগোন তখন দেখলেন যে ছোটোখাটো একটা ভিড় জমেছে। তার খুবই অদ্ভুত লাগছিলো।
গম্ভীরভাবে হার্ড ক্যাসেল বললেন, আর উল্লেখযোগ্য বলার কিছু নেই?
তিনি বললেন, নেই। সাম্প্রতিক তিনি ইনসিওরেন্সের ব্যাপারে বললেন তারা দুজনে মিউঁচুয়াল হেলথ অ্যাসিওরেন্স সোসাইটি থেকে ইনসিওরেন্স করিয়েছে। তিনি কারী নামটা জানেন না। তিনি মনে করেন, তার প্রকৃত নাম ওটা নয়।
অবশ্য প্রমাণ ছাড়া এটা বলা যায় না। তাদের সতর্ক হওয়া উচিত। তার ভাই এসম্পর্কে কিছু জানে না। ও সাধারণত লক্ষ্য করে কিছু সেখানে। সেদিন সে লাঞ্চ করতে আসেনি। তার ছেড়ে দেওয়া হলো। দরজার কাছে একটা গলফ ছিলো। সেটা হাতে করে একবার তুলে দেখলো কলিন ল্যাম্ব। সেটা ভারী ছিলো। তাকে বললেন যে কোনো ঘটনার জন্য তিনি কেন প্রস্তুত, তিনি ভেবে পাচ্ছিলেন না, এটা এখানে কি করে এলো। কথাটা শেষ করে তিনি কলিন ল্যাম্বের হাত থেকে ওটা নিয়ে ব্যাগের মধ্যে ঢুকিয়ে রাখলেন।
হার্ড ক্যাসেল বললেন যে, এইরকম মহিলার সঙ্গে তোষামুদ ব্যবহার করলে ভালো ফল পাওয়া যায়। তা সঠিক নাও হতে পারে। মিস পেবমার্স পোস্টঅফিস আর শপিং-এ যাবার জন্য বেরিয়ে ছিলেন। তবে বেরিয়ে ডান দিকের বদলে বাঁ দিকে গেছিলেন। আর টেলিফোনের ব্যাপারটা। মিস মার্টিনডেলের কথা অনুযায়ী দুটো বাজতে দশে করা হয়েছিলো। তিনি বললেন, মিস পেবমার্স কেন ফোন করেন তা ভাবাটা অর্থহীন। তিনি যদি ফোন করেন তাহলে তিনি মেয়েটিকে ওখানে নিয়ে আসতে চেয়েছিলেন। খুনী যদি অন্য কেউ হয় তাহলে কেন সে মিস পেবমার্সকে জড়াতে চাইছে। তিনি এখন এ পর্যন্ত কিছু জানেন না। যদি মিস মার্টিনডেল ওকে ব্যক্তিগতভাবে চিনতেন তাহলে উনি অবশ্য বলতে পারতেন কণ্ঠস্বরটা মিস পেবমার্সের কিনা। ১৮ নম্বর বাড়ি থেকে এখনও কিছু পাওয়া যায়নি। দেখা যাক ২০ নম্বর থেকে তেমন কিছু পাওযা যায় কিনা।
.
০৮.
উইলিব্রাহামের ২০ নম্বর বাড়িটার নাম ডায়না লজ। বাইরে থেকে কেউ যাতে ঢুকতে না পারে সেজন্য গেটের ভেতর থেকে রীতিমতো একটা লম্বা তার জড়ানো আছে। এই বাড়িটার একটা দুর্গন্ধ যুক্ত পরিবেশ। রঙটা বেশ উজ্জ্বল। কোনো বেল নেই। একটা হাতল ছিলো তা টানা হলে ভেতর থেকে একটা অল্প ঘণ্টা বাজার শব্দ কানে এলো ওর।
খানিক পর বছর তিরিশের আগেকার মতো চুল বাঁধা, গলায় মাফলার জড়ানো মিসেস হেমিং এসে দাঁড়ালেন। ইনসপেক্টর লক্ষ্য করলেন গলায় রাখা মাফলার আসলে একটা বেড়াল। এরপর আরো গোটাতিনেক বেড়াল বেরিয়ে এলো।
অনেক বেড়াল নিয়ে ঘরে থাকেন হেমিং। মিসেস হেমিং বললেন যে, তার গোপন করার কিছু নেই। তার পাশের বাড়ির কথা জিজ্ঞেস করতে তিনি বললেন, তার দৃষ্টি পোষ বেড়ালের দিকে। তিনি বললেন, তিনি দোকানপাট তাড়াতাড়ি করে নেন। আসলে বেড়ালদের দেখাশোনা করার জন্য এটা করেন তিনি। তিনি সামনের জানলা দিয়ে তাকাননি। বাড়ির পেছন দিক দিয়ে তিনি বাগানে যান। আসলে তিনি তার প্রিয় বেড়ালকে খুঁজে পাচ্ছিলেন না। বাগান দিয়ে গিয়ে ও একটা গাছের ওপরে উঠে গেছিল।
তার বাগানে দেখতে গেলে হার্ড ক্যাসেল দেখলেন এই বাগানের ঝোঁপঝাড় দিয়ে পেবমার্স, বাগান কোনো কিছু দেখা সম্ভব নয়। এদিকে কোনো প্রতিবেশী নেই। মিসেস হেমিং বললেন, উনিশ নম্বর বাড়ির কথা আপনি বললেন না? আপনার ধারণা বাড়িটায় মাত্র একজনই থাকে। অন্ধ মহিলা। তিনি বললেন যে, ভদ্রলোক খুন হবার জন্য এসেছিলেন ব্যাপারটা সত্যিই বড়ো অদ্ভুত।
.
০৯.
ওরা উইলিব্রাহাম ক্রিসেন্ট ধরে গাড়িটা নিয়ে যাচ্ছিলেন। কালব্রাম রোডে এসে তারা পৌঁছলেন। তবে আজকের কাগজে যতটুকু পড়লাম তাতেই আমি আশ্চর্য হয়ে গেছি। এখন নানা গুজব রটছে। এ সম্পর্কে কোনো ধারণা নেই। কিন্তু তার স্ত্রী বেজায় ঘাবড়ে গেছে। তার একটাই চিন্তা যে, একজন জলজ্যান্ত খুনী অবাধে এখানে ঘুরে বেড়াচ্ছে।
মিঃ জসুব্ল্যাণ্ড নানারকম গুজবের কথা বললেন। মিঃ ব্ল্যাণ্ড বললেন, ভদ্রলোকের কাছে একটা কার্ড আর ঠিকানা পাওয়া গেছে।
মিঃ ব্ল্যাণ্ডকে ছবি দেখানো হলো। তিনি বললেন এই ছবিটা অত্যন্ত সাধারণ। তিনি একে কোনোদিন দেখেননি। কারণ মনে রাখার মতো মুখ হলে তো সহজেই মনে পড়তো।
একষট্টি নম্বর বাড়িটা আসলে মিসেস হেমিং-এর বাড়ির পেছন দিকে পড়ে। ঐ বাড়িটার একটা অংশ ২০ নম্বর ছুঁয়ে আছে। এতে অবশ্য তুমি তোমার মিঃ ব্ল্যাণ্ডকে দেখতে পাবার একটা সুযোগ পাবে।
সামান্য হেসে কলিন বললেন, তোমার মিঃ ব্ল্যাণ্ড যে একজন ধনী ব্যক্তি সে ব্যাপারে আমি নিশ্চিত। যদি তা না হত তাহলে এরকম মারাত্মক বোধ ওর থাকতো না। হার্ড ক্যাসেল বেল বাজিয়েছেন। কলিন ওর দিকে তাকিয়ে বলে উঠলেন, সকালেই ঠিক এই সময়টাতে ওকে তুমি পাবে বলে আশা করতে পারো।
ঠিক তখন একটা ট্রাভেলারস ভ্যান এসে দাঁড়ালো। সামনেই গ্যারেজ। তাতে গাড়ি ঢুকলো। ভেতর থেকে মিঃ ব্ল্যাণ্ড এলেন। তিনি নিজেই বললেন, নিশ্চয়ই ঐ উনিশ নম্বর বাড়িটার ব্যাপারে এসেছেন? আমার বাগানেরই সংলগ্ন ঐ বাড়িটা। তবে একমাত্র ওপর তলার জানলা দিয়ে ছাড়া প্রকৃতই ও বাড়ির ভেতরে কিছু দেখা যায় না। সব মিলিয়ে বেশ অদ্ভুত ব্যাপার।
মিঃ ব্ল্যাণ্ডকে বলা হয় ভদ্রলোকের ছবিটা তার মারা যাবার আগে ভোলা হয়েছিল। হঠাৎ ভেতরের দিকে দরজা খুলে মিঃ ব্ল্যাণ্ডের স্ত্রী এলেন। হার্ড ক্যাসেল তাকালেন ওর দিকে। তিনি দেখতে অনেকটা অ্যানিমিয়া রোগীর মতো। সঙ্গে সঙ্গে আরো একজনের কথা আপনভাবে তার মনে এলো। তিনি বললেন, তার শরীর ভালো নয় বলে তার স্বামী তাকে গুরুগম্ভীর বিষয় থেকে দূরে রাখার চেষ্টা করে। একটুতেই তিনি আবেগপ্রবণ হয়ে পড়েন। তার মনে হয় আপনারা খুন হয়ে যাওয়া লোকের ব্যাপারে কথাবার্তা বলছিলেন। তিনি ছবি দেখতে চান। ইনসপেক্টর ছবি দিলে তিনি তা দেখে বললেন, এটাকে কি শাসরোধ করে হত্যা করা হয়েছে, তাকে ছুরি মারা হয়েছে শুনে তারা খুব ভয় পেলেন।
তিনি এর আগে কখনো তাকে দেখেননি। তার স্বামীরও ওই লোকটির সম্পর্কে কিছু জানা নেই। মিস পেবমার্সের সঙ্গে লোকটির কোনো আত্মীয়তা ছিলো না। মিস পেবমার্সের কাছে লোকটি একেবারে অপরিচিত।
তিনি পেবমার্সকে প্রতিবেশী হিসেবে চেনেন। উনি বাগানের ব্যাপারে আমার স্বামীকে প্রায়ই কিছু উপদেশ কিংবা পরামর্শ দেন।
ইনসপেক্টর হার্ড ক্যাসেল মিঃ ব্ল্যাণ্ডের দিকে তাকিয়ে বললেন, যদি তিনি বা তার স্ত্রী গতকাল বাগানে গিয়ে থাকেন, বাগান থেকে গুলি করার কোনো ঘটনা গতকাল কোনোভাবে আপনাদের নজরে পড়ে থাকে দুপুরবেলা, তিনি কিছু শোনেননি। প্রাসঙ্গিক সময়টা বেলা দেড়টা থেকে তিনটের মধ্যে। ঐ সময়টা ভ্যালেরী ও মিঃ ব্ল্যাণ্ড এখানেই ছিলেন। তখন আমরা লাঞ্চও করেছিলাম। তাদের ডাইনিং রুমে রাস্তার ধারে। সুতরাং বাগানের কোনো কিছু দেখা বা শোনা তাদের পক্ষে সম্ভব নয়।
তারা সাধারণত দেড়টার মধ্যে লাঞ্চ করেন। ব্লাণ্ড বললেন, না যাই না। তিনি বললেন তার স্ত্রী সবসময় লাঞ্চের পর বিশ্রাম নিতে যায়। আর তেমন যদি কোনো জরুরী কাজ না থাকে তাহলে চেয়ারে বসে একটু ঝিমিয়ে নিই। আমি বাড়ি থেকে বেরিয়েছি পৌনে তিনটে নাগাদ। তবে তার আগে একবার ও বাগানে দাঁড়িয়েছে।
মিঃ ব্ল্যাণ্ড বললেন বছরখানেক আগে তার স্ত্রী তার কাকার সূত্রে কিছু অর্থের অধিকারী হয়েছিলেন। তবে কাকাকে ও বছর কুড়ি দেখেনি এটাই বিস্ময়ের ব্যাপার। যাইহোক আপনাকে বলতে অসুবিধা নেই এ ব্যাপারটাই আমাদের অনেকটা বদলে দিয়েছিলো। তার ফলে আমরা নিজেরাই সক্ষম হয়েছিলাম। পরে অবশ্য ঘুরে বেড়ানোর ব্যাপার মাথায় এলো। আমি জোর দিয়েই বলতে পারি। তখন আমাদের বাইরে যেতে খুবই ভালো লাগতো। তারপর বলতে কি এমনিতেই আমি ভ্রমণপ্রিয়। তবে ইংল্যান্ডের বাইরে যাওয়াটা তেমন ভালো লাগত না আমার। এখানে আমাদের সব বন্ধুই আছে। আর আমার বোনও এখানে থাকে। এখানকার প্রত্যেকেই আমাদের চেনা। বিদেশে গেলেই তো আমরা অন্য কারোর কাছে আগন্তুক।
.
১০.
উইলিব্রাহাম ক্রিসেন্টের বাষট্টি নম্বর বাড়ি। এই বাড়ির বাসিন্দা র্যামসে। রান্নাঘরের ওদিক থেকে বেশ আওয়াজ আসছিল।
বিল আর ট্রেড দুজন রান্না করার চেষ্টা করছিলো। মিসেস র্যামসে কাজের শেষে তাদের সমস্ত জিনিসপত্র গুছিয়ে রাখার জন্য বললেন। তারা নিজেদের মধ্যে হৈ-হট্টগোল করলো। তিনি ওদের দুজনকে জোর করে বের করে দিলেন, তারপর ঘরটা বন্ধ করে দিলেন। তারপর এগোতে এগোতে ভাবলেন হঠাৎ একজন মহিলা সাংবাদিকের কথা আপনভাবে মনে পড়লো। বিল ও ট্রেন্ড আগামী পরশুদিন স্কুলে ফিরে যাবে। মাত্র পাঁচ সপ্তাহ আগে তিনি ওদের আসার ব্যাপারে কি খুশীই না হতেন। প্রথম দিন আনতে তিনি স্টেশনে গেছিলেন। সেই দিনগুলোর কথা আর বিশ্বাস হতে চাইছে না। ওরা চলে যাবার পর তিনি পুরোপুরি নিশ্চিত। গাদাখানেক খাবার আর তৈরি করতে হবে না। ওরা দুজনেই যে চমৎকার সে বিষয়ে কোনো সন্দেহ নেই তার।
ভাবনার মাঝখানে একটা আওয়াজ হলো। তার এগারো বছরের ছেলে বিল দৌড়ে এসে রান্নাঘরে ঢুকলো। বললো যে, একজন ডিটেকটিভ এখানে এসেছে। বিল বললো, মিস পেবমার্সের বাড়িতে খুনের ব্যাপারে তারা জানতে চান।
হার্ড ক্যাসেল তার দুই ছেলের দিকে তাকালেন। তারপর বললেন, তোমাদের এখানে থাকার দরকার নেই। কিন্তু ছেলেদুটোর মধ্যে যাবার কোনো লক্ষণ দেখা গেল না। ওরাও সব শুনবে বলে জেদ ধরে বসে রইলো। শেষে একেবারে বাধ্য হয়ে তাদের জোর করে ঘর থেকে বের করে দিলেন। মিসেস র্যামসে এবারে বললেন, দেখুন আমি ক্রিসেন্টের ওদিকটার কোনো লোককেই চিনি না।
হার্ড ক্যাসেল পকেট থেকে ছবি বার করে তার হাতে দিলেন। বললেন, এই ভদ্রলোককে আগে কখনো দেখেছেন কিনা। তিনি বললেন, সম্ভবত দেখিনি। র্যামসে বললেন, ছুটির দিনগুলোতে একেবারে সময় থাকে না। তাকে বলা হলো হার্ড ক্যাসেল র্যামসের ছেলেদুটির সঙ্গে একটু কথা বলতে চান। তার মতে অনেক সময় বাচ্চারা অনেক কিছু লক্ষ্য করে যা বুড়োরা করে না।
মিসেস র্যামসে মিসেস হেমিংকে চেনেন। তার প্রতি একটা অভিযোগ আছে, উনি মাঝে মাঝে বেড়ালদের সঙ্গে খুব খারাপ আচরণ করেন। তিনি জানালেন তার ছেলেরা চলে গেলে তিনি অলসভাবে সময় কাটাবেন।
কলিন ল্যাম্ব নোট নিতে নিতে বললেন, ঐ বাইরের মহিলা অতিথিদের মধ্যে একজন আপনার এখানেই থাকে। উন্যার–এই নামেই ডাকে ওকে সবাই। এখানে এসে ইংরেজি শেখার বদলে গান গাইবে, তাই তো।
র্যামসে বললেন, তার স্বামী সুইডেন চলে গেছেন। তিনি একজন কনস্ট্রাকশন ইঞ্জিনিয়ার। তার স্বামী কবে ফিরবেন তা বলা শক্ত।
বিল আর ট্রেড হলঘরে অপেক্ষা করছিলো। হার্ড ক্যাসেলের প্রস্তাবে ওরা রাজি হলো। ওরা বাগানের দিকে এগোতে লাগলো। বাগানে গাছগুলোর কিছুটা এলোমেলো ভাবেই কাটা। বাগানের একেবারে শেষে ন্যাসপাতির গাছ। একটা চমৎকার আপেল ছিলো তাতে। ট্রেড আপেল ও ন্যাসপাতির মাঝখানটা আঙুল দিয়ে দেখালো। সেখান দিয়ে মিস পেবমার্সের বাড়িটা দেখা যায়।
ইনসপেক্টর বললেন, তার ধারণা ওপরের জানলা থেকে দেখা যায়। তারা বললো, ঠিক বলেছেন আপনি। যদি কাল আমরা ওপরে যেতাম আর তাকাতাম তাহলে আমরা একটা কিছু নিশ্চয়ই দেখতে পেতাম। আমরা সিনেমায় গেছিলোম। বিল ও ট্রেড জানালো মিস পেরমার্স অন্ধ। তাদেরকে একবার তিনি বল ছুঁড়ে দিয়েছিলেন। ন্যাসপাতি গাছে জলের পাইপ দেখে কলিন অনুমান করলেন ছেলেদুটি হেমিং-এর বেড়ালের গায়ে জল দেয়। কলিন বললেন, তোমরা ওর বেড়ার ভেতর দিয়ে ঢুকেছে তারা তা মানলো না। তিনি বললেন, যেভাবেই হোক মাঝে মাঝে ওরা বেড়া দিয়ে ঢোকে। মিস পেবমার্সের বাগানে যাও। ওখান থেকে ঝোঁপঝাড় এগিয়ে মিসেস হেমিং-এর বাগান। ওখানে তারের বেড়ায় গর্ত আছে।
বিল ট্রেডকে বললেন, তখনই চুপ করে থাকতে বলেছিলাম। হার্ড ক্যাসেল বললেন যে, তারা সিনেমা থেকে ফিরে এসে ঘটনা শুনেছিলো। তিনি বাজী রেখে বলতে পারেন যে তখন তারা জায়গাটা খুব সাবধানে ঘুরে দেখে নেয়। তাই তো।
হার্ড ক্যাসেল বললেন, তারা যদি কিছু খুঁজে পেয়ে থাকে সেটা দেখাতে। ট্রেড ছুটে গিয়ে পকেট থেকে একটা রুমাল বের করে দেখালো। রুমালে পরপর কয়েকটা গিট দেওয়া আছে। তিনি রুমালের গিটগুলো খুললেন। দুটি ছেলে তখন দুপাশে দাঁড়িয়ে আছে। রুমালের ভেতরের জিনিসগুলো হলো কাপের একটা হাতল, চিনামাটির কোনো জিনিসের একটা টুকরো, জং ধরা একটা কাটা চামচ, একটা কয়েন, একটা কাচির অর্ধেক অংশ, একটুকরো কাঁচ আর কাপড় শুকোনোর ক্লিপ।
ইনসপেক্টর কাঁচের টুকরো নিয়ে উল্টে-পাল্টে দেখছিলো। এবং সেটা তিনি নিলেন। কলিন কয়েনটা দেখছিলো। ট্রেডের কাছ থেকে কলিন কয়েনটা নিলো। তাদের দুজনের কাছ থেকে প্রতিশ্রুতি নিলেন যে এই কথাটা যেন কারো কাছে বলা না হয়।
১১. দুরন্ত ছেলেগুলো
১১.
হার্ড ক্যাসেল বললেন, ঐ দুরন্ত ছেলেগুলোকে সামলাতে গিয়ে ভদ্রমহিলা ক্লান্ত। কলিন মনে করেন তিনি তার স্বামী সম্পর্কে কিছুই জানেন না। কলিন বললেন যে, ভদ্রমহিলা মিসেস র্যামসে হতে রাজী হয়েছেন। আসলে এটাও হতে পারে, র্যামসে আমাদের উপর নজর রাখার জন্যই এটা করেছেন। এব্যাপারটা একধরনের দেশপ্রেম হতে পারে।
কলিন বললেন যে, তিনি ঠিক বের করে আনতে পারবেন। তারা তেষট্টি নম্বর বাড়ির সামনে এসে থামলো। এর বাগানটার কিছুটা ১৯ নম্বরকে ছুঁয়েছে।
ম্যাকনটন কয়েক বছর আগে এখানে আসেন। দুজনেই বয়স্ক! একজন যুবতী দরজা খুললো। সে পুলিশ দেখে ভয় পেলো। বললো যে ম্যাকনটন ভেতরে আছে। কথাটা বলে ও ওদের পথ দেখিয়ে ঘরে বসালেন এবং তাকে জানালেন যে, পুলিশ ইনসপেক্টর এসেছেন।
মিসেস ম্যাকনটন বললেন, তিনি খুনের ব্যাপারে কিছু জানেন না। তিনি বললেন, ঘটনাটা এমন সময় ঘটলো যে, অনেকেই যখন বাড়িতে থাকে। তাদের জনাচারেক বন্ধু লাঞ্চের জন্য বেরিয়েছিলেন। শেষপর্যন্ত একটা ফার্নিচার ভ্যান এসে দাঁড়ালো। জিনিসপত্র ঐ লোকেরাই বয়ে ভেতরে নিয়ে এলো। অবশ্য তখন আমরা কেউ ভাবিনি এর মধ্যে কোনো গল্প আছে।
তিনি বললেন, তিনি চিৎকার শুনেছেন, তিনি বললেন, ছবি এঁকে তিনি দেখেন। এ ব্যাপারে তিনি নিশ্চত। ভদ্রলোক সম্ভবত তাকে একটা এনসাইক্লোপেডিয়া বিক্রি করতে চেয়েছিলেন। তবে তার কিছু দরকার না থাকায় ভদ্রলোককে তিনি আমল না দেওয়াতে তিনি বাগানে তার স্বামীর কাছে গিয়ে হাজির হয়েছিলেন। তার স্বামী গাছ নিয়ে ব্যস্ত ছিলেন। তিনি কারো পাত্তা না পেয়ে চলে গেছিলেন।
তিনি কোনো ইনসিওর-এর কেউ বলে মনে করছেন না। ভদ্রলোক একটা ভ্যান চালাচ্ছিলেন বলেই এর ধারণা। তিনি তাকে গতকাল দেখনেনি। তার স্বামী এখন বাগানে আছেন।
তারা দুজন মিসেস ম্যাকনটনের কাছে চললেন। শেষপর্যন্ত বাগানে এসে হাজির হলো সবাই মিলে।
মিঃ ম্যাকনটন ছবিটা নিয়ে ভালো করে দেখলেন। তারপর হার্ড ক্যাসেলকে ফিরিয়ে দিয়ে বলে উঠলেন, এখানে একে কখনো দেখেনি। গতকাল যখন ঘটনাটা ঘটে তখন তিনি বাগানেই ছিলেন। মিসেস ম্যাকটনের পেছনে চললো ওরা। হার্ড ক্যাসেল বললেন, চিৎকারটা নিশ্চয়ই একটা দিক থেকে আসেনি। তিনি কখন চিৎকারটা হয় সে সম্পর্কে কিছু বলতে পারেননি। তিনি সবসময়েই বাগানে এলে ঘড়ি খুলে রাখেন। মিসেস ম্যাকনটন বললেন যে, সম্ভবত আড়াইটে নাগাদ। তারা লাঞ্চের পর বিশ্রাম নিচ্ছিলেন।
ওদের বাড়ি আর ১৯ নম্বর বাড়ির বিভাজন রেখা। মিঃ ম্যাকনটন ওকে একটা শেডের তলায় নিয়ে এলেন। এখানে নানান যন্ত্রপাতি সুন্দর করে সাজানো। হার্ড ক্যাসেল তখন ১৯ নম্বর বাড়িটার দিকে তাকিয়েছিলেন। বেড়ার অন্যদিকে গোলাপের ঝাড় একেবারে বাড়ির ভেতর পর্যন্ত চলে গেছে। তিনি যখন সার তৈরি করছিলেন তখন উনিশ নম্বর বাড়িটিকে দেখলেন।
তার স্ত্রী বললেন তার বিশ্বাস উনিশ নম্বর বাড়ির বাগানে একটা মূর্তিতে তিনি লুকিয়ে থাকতে দেখেছিলেন। তার স্বামী এরকম কিছু দেখেননি।
হার্ড ক্যাসেল ওদের কাছ থেকে বিদায় নিলেন। তাদের বিরক্ত করার জন্য দুঃখিত বোধ করলেন।
হার্ড ক্যাসেল গাড়িতে উঠে বললেন, ব্যাপারটায় তার সন্দেহ আছে যে, ছবি দেখে তিনি চিনতে পেরেছেন। কাউকে দেখেছে এটা তার অনুমান। ওরকম ধরনের অনেক সাক্ষীকেই তিনি জানেন, চেপে ধরলে সঠিক কিছু বলতে পারে না। মিসেস হেমিং খুনের ব্যাপার সম্পর্কে কিছুই জানেন না।
হার্ড ক্যাসেল বললেন যে, কলিনের এখনকার মতো মুক্তি। হার্ড ক্যাসেল বললেন, এখন আর একটা জায়গায় যাবে তবে একাই যাবে সে। কলিন বললো যে, পরশু এগারোটায় ইনকোয়েস্ট যাবে।
কাল হার্ড ক্যাসেল লন্ডন যাবেন, রিপোর্ট জমা দিতে। কলিন স্কটল্যান্ড ইয়ার্ডের প্রাইভেট ডিটেকটিভ এরকুল পোয়ারার সঙ্গে দেখা করতে যাবেন, যিনি তার বাবা বন্ধু। হার্ড ক্যাসেল বললেন, তার বন্ধু অদ্ভুত। কলিন বললেন যে, তার মধ্যে তিনি একজন।
.
১২.
কলিনকে বিদায় জানিয়ে হার্ড ক্যাসেল তার নোটবুক বার করলেন। তারপর তার কাগজপত্র রেখে দিলেন। তার মধ্যে কিছু ফাইলপত্র জমে আছে।
তিনি সার্জেন্ট-এর কাছ থেকে রিপোর্টগুলো নিয়ে নিলেন। এগুলোতে চোখ বুলিয়ে তার মনে হলো এতে এমন কোনো সূত্র নেই যাতে সমাধানের কোনো সুরাহা হতে পারে।
বেলশিয়াম বা বাসের কেউ মিস্টার কারীর ফটো চিনতে পারেনি।
ল্যাবরেটরিতে লোকটার পোশাক থেকে কিছু পাওয়া যায় না। হার্ড ক্যাসেল ভাবলেন এটা মিঃ কারী নিজেই তুলেছেন, নাকি ওর খুনীই ওদের পরিকল্পনামাফিক অজ্ঞাতনামা করে রেখেছে। দাঁতের ব্যাপারে চিকিৎসকদের সঙ্গে হার্ড ক্যাসেল ভাবলেন হঠাৎ, ভদ্রলোক ফরাসিও তো হতে পারে। অবশ্য ওর পোশাক-আশাক ঠিক তার বিপরীত। তার মনে হলো কাজটা বেশ মন্থর গতিতে এগোচ্ছে। আজ বা কাল মিঃ কারীকে শেষপর্যন্ত শনাক্ত করা যাবেই।
তিনি সাড়ে পাঁচটা অবধি কাজ করলেন। সার্জেন্ট ক্রেশ রিপোর্ট করেছিলেন শীলা ওয়েব ক্যাভেনডিস ব্যুরোতে আবার কাজ করতে শুরু করেছে। এরপর ঠিক পাঁচটা নাগাদ ও কারফিউ হোটেলে প্রফেসার পার্ডির সঙ্গে কাজ করে ওখান থেকে সাড়ে ছটার আগে ওর পক্ষে কোনোমতেই ছাড়া পাওয়া সম্ভব নয়।
তিনি মাসির নামটা মনে করার চেষ্টা করলেন। চোদ্দো নম্বর পামার টোন রোড, হার্ড ক্যাসেল পুলিশের গাড়ি নিলেন না। হেঁটে যাওয়াই মনস্থ করলেন। হার্ড ক্যাসেল ঠিক বুঝতে পারলেন না হঠাৎ এই মুহূর্তে ওর জুতোর কথা মনে পড়ে গেল। মেয়েটার মুখটা অস্পষ্টভাবে মনে পড়ে গেল ওর।
এই মেয়েটিকে দেখে তার অন্য কারোর মুখ মনে পড়ে গেলো। কিন্তু অনেক চেষ্টা করে তিনি একসময় হাল ছেড়ে দিলেন।
তিনি ১৪ নম্বরে পৌঁছে বেল বাজালেন। বেলের নিচেই নাম লেখা। মিসেস নাটন নিজেই দরজা খুললেন। তার চেহারা অনেকটা জাপানি আকৃতির।
মিসেস নাটন সাংবাদিকদের ভয় পান, তিনি যে পুলিশের লোক এটা জেনে তিনি খুব ভয় পেলেন। এরপর তিনি বসার ঘরে বসলেন, মিসেস নাটনের টেবিলে রাখা চিঠিতে একটাতে লেখা মিসেস নাটন আর অন্য দুটো আর. এস. ওরের লেখা। হার্ড ক্যাসেল বললেন যে, তার বোনঝি একটা ঘটনায় জড়িয়ে গেছে বলে তিনি জানতে এসেছেন।
তিনি বললেন, শীলার মনের অবস্থা শোচনীয়। তবে আজ সকালে সব ঠিক হয়ে গেছে। ও আবার কাজে বেরিয়েছে।
মিসেস নাটন বললেন, সম্ভবত আজ ওর ফিরতে একটু দেরি হবে। প্রফেসার পার্ডির কাছে কাজ করতে গেছে। আর শীলা বলছিলো ভদ্রলোকের সময়জ্ঞান বিন্দুমাত্র নেই। সবসময় বলেন যে, কাজ শেষ করতে মিনিট দশেকও সময় লাগবে না। আসলে লেগে যায় অনেক বেশি। তবে প্রফেসার পার্ডি খুব চমৎকার মানুষ ওর প্রতি নজর নেন।
শীলার সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করা হলে ভদ্রলোক বললেন, শীলার আসল নাম রোজমেরী। সে ক্যাভেনডিস ব্যুরোতে দশ মাস ধরে কাজ করেছে। নভেম্বর থেকে সে এখানে কাজ করছে। এর আগে সে লন্ডনে থাকতো। তার কাছে লন্ডনের ঠিকানা থাকলেও এখন তিনি কোথায় রেখেছেন তা মনে নেই। তার মতে অ্যাসিংস্টন গ্রীড না ঐরকম কিছু। ফুলহামের দিকে যেতে পড়ে। একটা ফ্ল্যাটে দুটো মেয়ের সঙ্গে ভাগাভাগি করে থাকতো, লন্ডনের ঐ ঘরগুলো বেশ খরচ সাপেক্ষ।
মিসেস নাটন বললেন যে, ফার্মটার নাম ছিলো হপডড এ্যান্ড ট্রেন্ট। ওর মা-বাবা নেই। তিনি হলেন তার বোনের মেয়ে। তার পিতার পেশা সম্পর্কে তিনি ঠিক জানেন না।
হার্ড ক্যাসেল বললেন, মিঃ নাটন, এই ঘটনার সঙ্গে কোনো সম্পর্ক নেই ওয়েবের। কিন্তু সমগ্র পরিস্থিতিটা কেমন অস্বাভাবিক। উনি মানতে চাইছেন না মিস নাটনের কোনো শত্রু কেউ থাকতে পারে। তিনি অত্যন্ত বন্ধুবৎসল।
হার্ড ক্যাসেল বললেন, তিনি নিশ্চয়ই বুঝবেন যে, তার বোনঝি অনিবার্যভাবে কারো শিকার হয়েছে। ঘটনা হলো কি যে, ঐ জায়গাতেই ঘটনাক্রমে উপস্থিত ছিলো। নিশ্চয়ই কেউ একজন ওর জন্য ব্যবস্থা করেছিলো যাতে ও ঐ বাড়িতে যায়। বিশেষতঃ যখন সেখানে এমন একটা মৃতদেহ পড়ে আছে, যে কিছুক্ষণ আগে মারা গেছে।
মিস নাটন বললেন, তার মানে আপনি বলতে চাইছেন শীলা যে খুন করেছে এটা কেউ সাজাতে চেষ্টা করছে? না না, আমি বিশ্বাস করতে পারছি না।
হার্ড ক্যাসেল বললেন, ঠিক তাই। বিশ্বাস করাটা শক্ত বলে।
কিন্তু আমাদের তো এই ব্যাপারটা পুরোপুরি নিশ্চিত এবং পরিষ্কার হয়ে নিতে হবে। উদাহরণ হিসাবে ধরা যাক, কেউ তার বোনঝিকে প্রেম নিবেদন করে অসফল হয়ে তাকে খুনের মামলায় জড়িয়ে দিয়েছে।
মিঃ নাটন বললেন, দু-একজনের সঙ্গে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক আছে বটে, তবে তারা কেউ ওরকম নয়। এমন হতে পারে ও লন্ডনে যখন ছিলো তখন ব্যাপারটা ঘটেছিলো। মিসেস নাটন তার কোনো বন্ধুকেও যে খুনের ব্যপারে জড়িত বলে মেনে নিতে চান না।
মিসেস নাটন মনে করেন এটা কোনো উন্মাদের কাজ। হার্ড ক্যাসেল বললেন, ঐ পাগলামির মধ্যে একটা নির্দিষ্ট পরিকল্পনা ছিল। সেজন্য এই প্রসঙ্গ উঠেছে। ওর মা-বাবার কথা এজন্য জিজ্ঞেস করছি, আপনি জানলে অবাক হবেন। কত না খুনের উদ্দেশ্যে গড়ে ওঠে যার মূল গোথিত থাকে একেবারে অতীতে। মিস ওয়েবের বাবা-মা যখন মারা যান তখন ও নিতান্তই শিশু। তাই ওর পক্ষে তাদের সম্পর্কে কিছু বলাটা সম্ভব নয়। সেজন্যই আপনাকে জিজ্ঞেস করছিলাম। মিসেস নাটন বললেন, ওর বাবা-মা স্বাভাবিক ভাবেই মারা যান। তিনি আরও বলেন, ওদের জিজ্ঞেস করিনি। মিসেস নাটন বললেন, শীলা সম্ভবত অবৈধ সন্তান।
শীলা তার বোনের সন্তান। সে একথা নিজে জানতো না। শুধু তাকে বলেছিলো, অল্প বয়সে ওর বাবা-মা মারা গেছে। সুতরাং সেই কারণেই আপনি নিশ্চয়ই বুঝতে পারছেন।
হার্ড ক্যাসেল বললেন তিনি এ সম্পর্কে কোনো প্রশ্ন করবেন না। তবে তিনি নাটনের কাছ থেকে তার পরিবারের কথা জানতে চান।
তিনি বললেন, তার বোন চালাক ছিল। স্কুল শিক্ষিকা ছিলো। একজন সম্মানিত মহিলা ছিল। তিনি তার নাম জানতেন না। তিনি কখনও দেখেননি। শীলার মা একদিন তার কাছে এসে অঘটনের কথা জানালেন। ও ছিল উচ্চাকাঙ্খী স্বভাবের। সে তার বোনকে ভালো করে চিনতে, বিয়ে করা দুরের ব্যাপার। তাই সে অবস্থায় তিনি তাকে সাহায্য করার প্রতিশ্রুতি দেন। তার বোন এখন কোথায় আছে সে সম্পর্কে তার বিন্দুমাত্র ধারণা নেই। তার বোন এরকম একটা ব্যাপার চেয়েছিল। ও ভেবেছিল এটা তার সম্মানের পক্ষে ভালো। নিজের পক্ষেও ভালো। ওর আর ওর সন্তানের মধ্যে এটা বিচ্ছেদের দেওয়াল থাকা উচিত।
মায়ের রেখে যাওয়া অর্থ থেকে তার শিশুটির জন্য অর্থ ব্যয় হত, অ্যান তার ভাগটা রেখে দিয়েছিলেন বাচ্চাটাকে মানুষ করার জন্য। তবে স্কুলটা শেষ পর্যন্ত বদলাতে হয়েছিলো। আলনিয়া বা অন্য কোনো দেশ হবে।
নাটন কিছু গোপন করছেন কিনা বা কিছু জানেন না এটা বুঝতে পারছিলেন না হার্ড ক্যাসেল।
তার বাচ্চা সম্পর্কে তিনি কোনো খোঁজ নেননি এ বিষয়ে নাটন জানালেন যে, তিনি সিদ্ধান্ত নেবার ব্যাপারে অত্যন্ত কড়া। তার সঙ্গে কোন দেখাসাক্ষাৎ ঘটেনি। মিসেস নাটন বললেন, তার স্বামী যুদ্ধে মারা যান। ক্রাউডিয়ানে একটা মিষ্টির দোকান ছিলো তার। ল্যাঙ্কাশায়ার থেকে তার সবকিছু বিক্রি করে চলে এলেন। রসকো এ্যান্ড ওয়েস্ট বলে একটা ফার্মে চাকরি পান।
হার্ড ক্যাসেল তাকে ধন্যবাদ দিলো এবং বললো এ বিষয়ে শীলাকে এসব কথা একেবারেই জিজ্ঞাসা করবেন না। মিসেস নাটন লোকটার ছবি দেখে বললেন যে, এই লোকটিকে তিনি কোনোদিন দেখেননি। এখানে থাকে বলেও তার মনে হয় না। কিছুটা অপ্রত্যাশিতভাবে বললেন, লোকটা খুব চমৎকার, সম্ভবত ভদ্রলোক।
মিসেস নাটন বললেন, একটু আগে তার এক বান্ধবী তার সঙ্গে দেখা করতে এসেছিলো। কিন্তু তার সঙ্গে দেখা হয়নি। ইনসপেক্টর এবার বুঝতে পারলো। সে যখন ক্যাভেনডিস ব্যুরোতে গেছিল তখন ফিরে আসার সময় দেখেছিলো, মেয়েটি একটা জুতো হাতে করে দাঁড়িয়ে আছে। হার্ড ক্যাসেল জিজ্ঞাসা করলেন, মেয়েটি কি প্রিয় বান্ধবী। মিসেস নাটন বললেন, ওরা একই সঙ্গে চাকরি করে। শীলার সঙ্গে তার বন্ধুত্ব আছ। মেয়েটি বেশ সহজ সরল।
মিসেস নাটন শীলা ফিরছেন না বলে চিন্তিত। তবে মাঝে মাঝে প্রফেসারের কথায় থেকে যায়। মাঝে মাঝে বাসের লাইন পড়ে যায়। তিনি বললেন তার নাম শীলা, মিসেস নাটনের মা দিয়েছিলেন। রোজমেরী নামটা বোনই দিয়েছিলেন।
.
১৩.
কলিন ল্যাম্বের বিবৃতি
লন্ডনে এসে কর্নেল বেকের সঙ্গে দেখা করলেন। তিনি তাকে দেখে জামা খুললেন। আমি বললাম, স্বীকার করছি একটা গিট ছিলো মাত্র। তিনি বললেন যে, আমার কাজ কত এগিয়েছে। কর্নেল বেক বললেন, আমি ক্রিসেন্টে কাজ শুরু করেছিলাম। কাজ একটু বাকি আছে।
কাকতালীয় একটা ঘটনা ক্রিসেন্টে ঘটে গেছে। আমি তাকে বললাম যে, একজন অজ্ঞাত পরিচয় ব্যক্তি সেখানে খুন হয়েছে, পকেটে নাম-ঠিকানা পাওয়া গেছে কিন্তু তা গুরুত্বপূর্ণ নয়।
উনি বললেন, তুমি এখানে কিসের জন্য এসেছে, ঐ উইলিব্রাহম ক্রিসেন্টের জন্য অনুমতি নিতে।
আমি বললাম, জায়গাটার নাম ক্রাউডিয়াম। পোর্ট লিবিউরি থেকে অন্তত দশ মাইলের মতো।
কর্নেল বেক আমার কথায় মাথা নাড়িয়ে বললেন, বেশ ভালোই জনবসতি আছে। আমি কতগুলি ব্যক্তি সম্পর্কে ভালোভাবে খতিয়ে দেখতে চাই। তার কথায় কর্নেল বেক দীর্ঘশ্বাস ফেললেন। রিডিং ডেস্কটা ঠিকমতো নিজের কাছে টেনে নিয়ে পকেট থেকে একটা বলপেন নিয়ে তাকালেন আমার দিকে, বললেন, বলো।
আমি তাদের জানালাম মিসেস হেমিং কুড়ি নম্বর উইলিব্রাহাম ক্রিসেন্টে থাকেন। বাষট্টি নম্বরে র্যামসে নামে একজন ভদ্রলোক আছেন। তার স্ত্রী থাকেন। তেষট্টি নম্বর বাড়িতে এক দম্পতি আছেন, ভদ্রলোকের নাম ম্যাকনটন। যেখানে ঐ অজ্ঞাত পরিচয় ব্যক্তিটি খুন হয়েছেন সেই বাড়ির বাগানের সঙ্গে অল্পবিস্তর আর সব পাশের বাড়িগুলোর বাগান ছুঁয়ে আছে।
কর্নেল বেক জিজ্ঞাসা করলেন, মৃতদেহটা কোথায়? উনিশ নম্বরে।
হ্যাঁ, ওখানে একজন অন্ধ মহিলা থাকেন। আগে স্কুলে পড়াতেন। এখন একটা ব্লাইণ্ড স্কুলে চাকরি করেন। স্থানীয় পুলিশ পুখানুপুঙ্খভাবে তদন্ত করে ব্যাপারটা জেনেছে।
আমি বললাম, যাদের নাম বললাম তাদের মধ্যে যে কোনো একজনের বাড়িতে যাওয়া খুব সহজ। তবে দিনের কোনো সময় মৃতদেহকে অন্য বাড়িতে ঢোকাতে গেলে তা অত্যন্ত ঝুঁকির ব্যাপার হবে।
কর্নেল বেক বললেন, কারণটা দেখে, বললেন তিনি, তাহলে তুমি ক্রিসেন্ট আর রাইজিং মুনের ব্যাপারে দৃঢ় মন নিয়ে একটা কিছু করতে চাইছে। ওটার পরে যে রাস্তাটা সেখানে রাইজিং মুন নামে পার্কটা আছে।
আমি এখন ক্রাউডিয়ানে ফিরে যাবো তা চললাম।
আমি বললাম, যে মৃতদেহটা আবিষ্কার করেছে সে একটি মেয়ে। কর্নেল বেক মাথা নাড়লেন। মেয়েটি মৃতদেহ দেখে চিৎকার করে তাকে জড়িয়ে ধরে। পুলিশের হাত থেকে আনা ফটোটা দেওয়া হলো কর্নেল-এর হাতে। তাকে বলা হলো ইনি সেই ব্যক্তি খুন হয়েছে।
কর্নেল বেকসিগারেট টানতে টানতে বললো, ঠিক আছে তুমি ইনকোয়েস্টে যাও। মেয়েটিকে দেখো। ওর নাম কি ডায়না, নাকি আর্টেমিস অথবা ক্রিসেন্ট বা মুনরাইজ ধরনের।
.
১৪.
কলিন ল্যাম্বের বিবৃতি
হোয়াইট হেভেন ম্যানসনে আসার পর থেকে অনেকদিন কেটে গেছে। বছর কয়েক আগে এটা আধুনিক ফ্ল্যাটে অতিরিক্ত বাড়ি ছিলো। তিনি লিফটে উঠলেন, কিছুক্ষণ পর দরজাটা খুলে গেল। সামনেই পুরুষ চাকর জর্জ দাঁড়িয়ে আছে। বললেন, ও মিঃ কলিন ল্যাম্ব, অনেকদিন পরে আপনাকে এখানে দেখলাম।
এরপর সে আমাকে এরকুল পোয়ারোর ঘরে নিয়ে এলো। তিনি নিজের ঘরে একটি চৌকো আর্মচেয়ারে বসে ছিলেন। এখন সেপ্টেম্বর মাস। আবহাওয়ায় গরম ভাব, পোয়ারার শীতের আমেজকে অনুভব করতে পেরেছেন। ওর দুপাশে স্তূপীকৃত বইয়ের সারি। ডান হাতে একটা ধূমায়িত কাপ।
পোয়ারো আমাকে বললেন, তুমি তো বিয়ে করতে চলেছে। আমি এবার কিছুটা বিব্রত বোধ করলাম। উনি আমার বাবার কথা জিজ্ঞাসা করলেন।
আমি বললাম, সত্যি কথা বলতে কি মিঃ পোয়ারো, আমি একটা খুনের কেলে জড়িয়ে পড়েছি। সেই জটিল সমস্যা সমাধানের জন্য আপনার কাছে এসেছি আমি।
আমি সামান্য ইতস্তত করে বললাম, আপনি ব্যাপারটা উপভোগ করলেন সেজন্য। পোয়ারো বললেন, একজন মালিক তার কুকুরের প্রতি সবসময় সহৃদয়। সে তাকে বাইরে নিয়ে যায়। কুকুরটাও সেই প্রভুর প্রতি সহৃদয়। সে যখন বেড়াল কিংবা ইঁদুর মারে তখন সেটা নিয়ে তার প্রভুর পায়ের কাছে রাখে। তারপর লেজ নাড়তে থাকে।
আমি বললাম, তাহলে কি আমি ল্যাজ নাড়ছি বলে আপনার মনে হয়। আমার ধারণা তুমি স্পর্শ করেছে কলিন।
অবশ্যই স্বাভাবিকভাবে বলতে গেলে এটা একটা অপরাধ। ব্যাপারটাতে আমি যে খুনী হবো না তা তুমি জানো নিশ্চয়ই।
পোয়ারোকে বললাম, আপনি চেষ্টা করে পুরো ব্যাপারটা বোধগম্য করে তুলুন। পোয়ারো সমস্ত ব্যাপারটা শুনতে চাইলো না। যাইহোক, এরপর আমি আরম্ভ করলাম। উইলিব্রাহাম ক্রিসেন্টে উনিশ নম্বরে ঘটে যাওয়া ঘটনাটা বললাম ওকে। এরকুল পোয়ারো চেয়ারে হেলান দিয়ে সমস্ত ঘটনা শুনে গেলেন। আমি চাই তিনি এ ব্যাপারটার একটা সমাধান করে দিন।
তিনি বললেন, এটা একটা সাধারণ অপরাধ। ঘটনাটা আপাতদৃষ্টিতে জটিল বলে মনে হয়। ব্যাপারটা বেশ কৌতূহলোদ্দীপক। পোয়ারো বললেন, তার আগের কোনো ব্যাপারের সঙ্গে সাদৃশ্য আছে। তিনি এক ভদ্রলোককে চিনতেন যিনি এক সুন্দরী স্বর্ণকেশীকে বিয়ে করার জন্য নিজের বউকে বিষ খাইয়ে মেরে দেন। সেক্ষেত্রে একটা কুকুর অপহরণ করার ঘটনায় জড়িয়ে ছিলাম। আমি ঐ স্বর্ণকেশী আর ওর প্রেমিককে খুঁজতে আরম্ভ করলাম। বলাবাহুল্য পেলামও। তোমার এই ঘটনাটা আমার কাছে কোনো একটা ঘটনার সাদৃশ্য আছে বলে মনে হচ্ছে।
পোয়ারো বিখ্যাত হাসি হাসলেন। ইতিমধ্যে ভদ্রলোককে হয়তো শনাক্ত করা সম্ভব হবে।
পোয়রো এবারে আমার দিকে তর্জনী তুলে ধরলেন। বললেন, এখন তোমার উচিত প্রতিবেশীদের সঙ্গে কথা বলা।
আমি জবাবে বললাম, সেসব আমি বলেছি। ইনসপেক্টর হার্ড ক্যাসেল আর আমি দুজনে মিলে যা জিজ্ঞাসাবাদ করার ছিলো করেছি। ওরা এমন কিছু বলেনি যা আমাদের উৎসাহ জোগাতে পারে।
পোয়ারো বললেন, আমি তোমাকে আশ্বস্ত করতে পারি। এরকম হতে পারে না। তুমি রহস্যজনক কিছু দেখেছো? এরকম কোনো কথা হয়তো তুমি ওদেরকে জিজ্ঞেস করেছে। উত্তরে তারা হয়তো না বলেছে, আর তুমি সেটা সত্যি বলে মেনে নিয়েছে।
পোয়ারো বললেন, আমি যখন প্রতিবেশীর সঙ্গে কথা বলতে বলি তার অর্থ কিন্তু তা নয়। তার বক্তব্য তুমি কথাবার্তার মধ্যে থেকেই একটা সূত্র খুঁজে পাবে। নানা বিষয় নিয়ে ওদের সঙ্গে কথা বলতে হবে। যেমন বাগান কিংবা পোশাক কিংবা চুলের স্টাইল এরকম সবকিছুই আমাদের বিষয় হতে পারে। কিংবা ধরো ওদের খাদ্যাভ্যাস। এসবের মধ্যেই এমন কিছু কথা পেয়ে যেতে পারো যা সূত্র হিসাবে কাজে লেগে যেতে পারে। তুমি বলেছো, ওদের কথাবার্তায় তেমন কিছু পাওনি, আমার মতে তা হতে পারে না।
আমি বললাম, ওদের যেসব কথাবার্তা হয়েছে একজন সহকারী পুলিশ অফিসার হিসেবে আমি সে সবের শর্টহ্যান্ড নোট নিয়েছিলাম, এনেছি সেগুলো।
আমি তার হাতে কাগজপত্র দিলে পোয়ারো বললেন, অধিকভাবে তুমি এগোচ্ছো।
ওর প্রশংসায় তিনি বিব্রত বোধ করতে লাগলেন। সামান্য চুপ থাকার পর তিনি বললেন যে তিনি সবসময় তাকে পরামর্শ দিতে রাজী। তিনি বললেন, তুমি মনে মনে হয়তো ভাবছ মেয়েটা এই ঘটনার সঙ্গে সম্ভবত জড়িত আছে।
না না, ওর সেরকম সুযোগ ছিলো না। এটা আপনি নিশ্চয়ই বুঝতে পারছেন। পোয়ারো বললেন এবারে না, আমি তা বলতে পারছি না। তুমিও আমাকে বলেছে ওকে কোনো বিশেষ কারণে ডেকে আনা হয়েছিল।
পোয়ারো আমার দিকে তাকিয়ে বললেন, তুমি এবার ওর সঙ্গে কথা বলবে। ঐ কেনর উত্তরটা সম্ভবত পেয়ে যাবে। এমনকি ও যদি নিজে থেকেও না সত্যিটা না উপলব্ধি করতে পারে।
এরকুল পোয়ারো বললেন, তুমি ওর সঙ্গে কথা বলো। কেন না তুমি ওর বন্ধু। আর ঐ অন্ধ মহিলাটির সঙ্গে যেভাবেই হোক দেখা করো। ওর সঙ্গে একইভাবে কথা বলো। এরপর টাইপরাটিং ব্যুরোতে যাবে। কিছু পাণ্ডুলিপি টাইপ করাবে এই অজুহাতেই সেখানে যাবে তুমি। ওখানে যে-সমস্ত মেয়েরা কাজ করে তাদের একজনের সঙ্গে বন্ধুত্ব করবে। তার সঙ্গেও ওদের ব্যাপারে আলোচনা করবে। তারপর চলে আসবে আমার কাছে।
পোয়রোকে জিজ্ঞেস করলাম, আচ্ছা আর একটা কথা জিজ্ঞেস করছি আপনাকে। ঐ ঘড়িগুলোর ব্যাপারে আপনি কি ভাবছেন, পোয়ারো চেয়ারে হেলান দিয়ে আবার চোখ বুজলেন। তিনি কাব্য করে বললেন।
সময় এসে গেছে..সবে…তিনি বললেন কি বুঝতে পেরেছে। দি ওয়ান বাস হ্যান্ড দি কার্পেন্টার থেকে উদ্ধৃতি, এলিস থুলি লুকিং গ্লাস। তাই তো?
এই মুহূর্তে তোমার জন্য যা করতে পারি তা এই। এবার এগোও।
.
১৫.
ইনকোয়েস্ট-এর সময় সাধারণ লোকজনদের ভিড় ভালোই ছিল। শীলা ওয়েবের ভাগ্য পরীক্ষার, ব্যাপারে কোনো উদ্বেগ ছিল না। কয়েক মিনিটের মধ্যে সবকিছু শেষ হয়ে গেল।
উনিশ নম্বর বাড়ি থেকে ক্যাভেনডিস ব্যুরোতে একটা ফোন যায়। সেই ফোনে নির্দেশের : মতো পেবমার্সের বাড়িতে গিয়ে তিনি মৃতদেহ দেখতে পান।
মিস মার্টিনডেলের কাছ থেকে জানা গেল যে, তিনি ফোন পেয়ে তার কথামতো শীলা ওয়েব তার কাছে যান। এর সঙ্গে কিছু নির্দেশ তিনি প্যাডে লিখে রেখেছিলেন।
মিস পেবমার্স বলেন, ক্যাভেনডিস ব্যুরো মিস শীলাকে ফোন করার ঘটনা তিনি অস্বীকার করেন।
ডিটেকটিভ ইনসপেক্টর জানালেন, তিনি উনিশ নম্বর বাড়িতে গিয়ে একটা মৃতদেহ দেখতে পান। তিনি মৃতদেহ শনাক্ত করতে পারেননি। সেজন্য তিনি ইনকোয়েস্টের মুলতুবি চান।
পোস্টমর্টেম করেছেন যে ডাক্তার রিগ তিনি বললেন যে, সাড়ে তিনটে নাগাদ তিনি মৃতদেহ পরীক্ষা করেন। তার অনুমান ভদ্রলোক ১.৩০-২.৩০ মধ্যে মারা যান। মৃত্যুর কারণ হিসেবে তিনি বলেন ভদ্রলোককে পাতলা ধারালো একটা ছোরা দিয়ে খুন করা হয়েছে। এটাকে সম্ভবত বাঁকানো এগুলোকে ফ্রেঞ্চ কুকিং নাইফ বলা হয়। ছোরাটা ডগায় ঢুকে গেছিল। ছোরাবিদ্ধ হবার কয়েক মিনিটের মধ্যে মারা গেছেন। ভদ্রলোকের দেহ পরীক্ষা করে জানতে পেরেছেন খুন হবার আগে ভদ্রলোক বিশেষ কোনো ড্রাগের প্রভাবে কোমায় ছিলেন। এটি অ্যালকোহল জাতীয় সম্ভবত ক্লোরাল হাইড্রেট, খাবার পরে ভদ্রলোক মাটিতে পড়ে অচেতন হয়ে যান।
তারপর সম্ভবত অচেতন অবস্থাতেই তিনি ছুরিবিদ্ধ হন। ডাঃ রিগ, অজ্ঞান হবার কত পরে তিনি খুন হন এটা সম্পর্কে সঠিক বলতে পারেননি। ওটা নির্ভর করছে ভদ্রলোকের মানসিক চেতনার উপর। আধঘণ্টার মধ্যে নিশ্চিত ওর চেতনা ফেরেনি। লাঞ্চের কথা বললে উনি তা খাননি। কমপক্ষে অন্তত ঘণ্টাচারেক ভদ্রলোক কিছু খাননি।
এরপর আদালত মুলতুবি হয়ে গেলো।
ক্যাভেনডিস ব্যুরোর এডনা বেন্টও যথারীতি ওখানে উপস্থিত ছিল। সকালের দিকে ক্যাভেনডিস ব্যুরো বন্ধ হয়ে গেছিল। এডনাকে দেখামাত্রই মাউরিন বলে উঠলো, কি ব্যাপার এডনা, লাঞ্চের সময় আমরা কি ব্লু বার্ড-এ যাবো?
এডনা, শীলা খুঁজছিলো, মাউরিন বললো যে ওকে আগেই একটা যুবকের সঙ্গে দেখেছি। এডনা তাকে এগোতে বললো। সে এখন কানিং-এ যাবে।
এডনা ভিতরে ইনসপেক্টরের সঙ্গে দেখা করতে চাইলো। সে দেখলো ইনসপেক্টর হার্ড ক্যাসেল গভীরভাবে করোনার আর এলাকার চিফ কনস্টেবলের সঙ্গে পরামর্শ করছেন। পুলিশটি তাকে জিজ্ঞাসা করলেন যে খুবই কি প্রয়োজন। এডনা বললেন যে আড়ালে আমি শুধু বুঝতে পারছি না মহিলাটি যা বলেছে তা কিভাবে সত্যি হতে পারে। কেননা আমি বলছি…।
এডনা প্রথমে গেল ফল মার্কেটে তারপর হাই স্ট্রিট ধরে ও এগোতে লাগলো। সে যতই ব্যাপারটা ভাবছিলো ততই যেন কেমন তালগোল পাকিয়ে যাচ্ছিলো। নিজের মনে সে বললো ওরকম হতে পারে না। মেয়েটা যা বললো সেরকম মোটেই হতে পারে না।
হাই স্ট্রিট থেকে এবারে ফিরতে আরম্ভ করে আলবানি রোডে এসে উইলিব্রাহাম ক্রিসেন্টের দিকে এগোতে থাকলো এডনা। খবরের কাগজে পড়ে উত্তেজনা সারা রাস্তায় ছড়িয়ে পড়েছে। সবসময়ই ঐ জায়গাটায় কেমন যেন একটা চাপা উত্তেজনা, এডনা বাড়িটার দিকে এগোলো।
বাড়িটার মধ্যে একজন ছুরিবিদ্ধ হয়ে মারা গেছে। এটা ভাবতেই কেমন লাগছিল। সবজি কাটার ছুরি দিয়ে হত্যা করা হয়েছে। কিজন্য এখানে এসেছে সে ব্যাপারে আর কোনো খেয়ালই নেই। হঠাৎ কানের কাছে একটা কণ্ঠস্বর শোনামাত্র চমকে উঠলো ও। ঘাড় ফিরিয়ে দেখে ও রীতিমতো অবাক হয়ে গেল।
.
১৬.
কলিন ল্যাম্বের বিবৃতি
শীলা ওয়েব যখন আদালত থেকে বেরিয়ে এলো তখন ও সাক্ষী ভালোই দিয়েছে। আমি ওর পেছন পেছন বেরিয়ে এলাম। করোনার ভদ্রলোক ভালো।
ও জিজ্ঞেস করলো, এরপর কি হবে। আবার সাক্ষ্যের জন্য ইনকোয়েস্ট মুলতুবি হবে। সম্ভবত, এক পক্ষকাল কিংবা যতদিন না ভদ্রলোককে শনাক্ত করা যায়। আপনি কি মনে করেন লোকটাকে শেষ পর্যন্ত চিনতে পারা যাবে। আমার মনে হয় নিশ্চয়ই। আমি তার টাইপরাইটিং কনসার্ন বন্ধু শুনে তাকে নিয়ে রেস্তরাঁয় যেতে চাইলাম। শীলা তার কেনাকাটা আছে বলে চলে যেতে চাইলে তাকে আমি সমুদ্রের ধারে সেই জায়গায় বসতে যেতে বললাম। আমি সেখানে একা বসে বুঝতে পারলাম আমি মেয়েটাকে মন দিয়েছি।
আমি তার অন্য আকর্ষণের জন্য তাকে ভালোবেসেছি।
দুটোর পর আমি স্টেশনে এসে হাজির হলাম। ডিকের খোঁজ নিলাম। ও কাজ করছিলো। ইনকোয়েস্ট কেমন লাগলো জিজ্ঞাসা করতে আমি বললাম ভালো।
আচ্ছা, আমি কোনো বিশেষজ্ঞের কাছে পরামর্শ করেছিলাম। হা করেছিলাম। আমাকে ওর অস্পষ্টভাবে মনে আছে। তুমি ওর সঙ্গে দেখা করতে গেছিলে কেন। তুমি পুলিশের মতোই আশাবাতিক। কৌতূহল জিনিসটাকে আমার ভালোই লাগে তবে আমি প্রধানত খুনের ব্যাপারটাই বলেছি।
হার্ড ক্যাসেল এটি সাধারণ খুন শুনে অবাক হয়ে উঠলো। বললেন তার তা মনে হয় না। এখন আরো গুরুত্বপূর্ণ আমার অনুমান ওকে প্রথমে অন্য কোথাও নেশা করানো হয়। তারপর উনিশ নম্বর বাড়িতে এনে খুন করানো হয়।
ডিক বললো, আমরা অস্ত্রটা খুঁজে পেয়েছি। সে জানালো ওটা বাগান থেকে পাওয়া গেছে। খুন করার পর খুনী ওখানেই ফেলে দিয়েছিলো অস্ত্রটাকে। ওটাতে কোন আঙুলের ছাপ পাওয়া যায়নি। ওটাকে খুব সতর্কভাবে মুছে ফেলা হয়েছে। আর ছোরাটা যে কোনো লোকের হতে পারে। এর আগে ব্যবহৃত হয়েছে, নতুন করে ধার দেওয়া হয়েছে।
তাহলে ব্যাপারটা ঐ ভাবেই ঘটেছে। প্রথমে ভদ্রলোককে নেশা করানো হয়েছে। তারপর ওকে নিয়ে আসা হয় উনিশ নম্বরে। যদি তা না হয় তাহলে কিভাবে আনা হয়েছিলো।
হার্ড ক্যাসেল বললেন, এটা করতে গেলে খুনীর প্রতিবেশীদের অভ্যাস সম্পর্কে ওয়াকিবহাল থাকা দরকার। এতে লোকের নজরে পড়ে যাওয়ার একটা সম্ভাবনা থেকে যায়।
হার্ড ক্যাসেল বললেন, মিস পেবমার্স একজন সক্ষম পুরুষকে ছোরা মেরে খুন করতে পারেন না। তবে যদি ওনাকে নেশা করানো যায় কিংবা ভদ্রলোক ঘুমোবার জন্য এখানে এসেছিলেন, তাকে মেরে ছোরাটা প্রতিবেশীর বাগানে ফেলে দেওয়া হয়। এরপর ক্যাভেনডিস ব্যুরো থেকে ফোন করে শীলাকে ডেকে পাঠান।
হার্ড ক্যাসেল বললেন, কাজে নামার আগে অবশ্যই সিদ্ধান্ত নিতে হবে। এতে সত্য উদঘাটিত হবে তাতে সন্দেহ নেই।
এবার আমি পকেট থেকে একটা পোস্টকার্ড বের করে টেবিলে রাখলাম। এটাতে লন্ডনের পোস্টঅফিসের ছাপ ছিল। বাঁ-পাশে মনে রেখো লেখা, ডান পাশে নাম-ঠিকানা। নিচে ৪.৩০ সময়ের উল্লেখ আছে।
হার্ড ক্যাসেল বললো, এটাতে কোনো কিছুর যোগসূত্র আছে।
শীলা এটার মাথামুণ্ডু বুঝতে পারছে না। হার্ড ক্যাসেল পোস্টকার্ডটা নিজের কাছে রাখলো সূত্র পাবার আশায়।
পুলিশ স্টেশনে কয়েকটা চিঠি এসেছিলো। একে একে হার্ড ক্যাসেল সেগুলো পড়তে লাগলেন। প্রত্যেকটায় চোখ বোলাতে লাগলেন। হার্ড ক্যাসেল রিসিভারটা তুলে নিলেন। তার দিকে তাকিয়ে বললেন, উইলিব্রাহাম ক্রিসেন্টে টেলিফোন বুথে ওরা একটা মেয়ের মৃতদেহ দেখতে পেয়েছে।
একটা দীর্ঘশ্বাস ফেললেন তারপর, ওরই মাফলার দিয়ে ওকে শ্বাসরুদ্ধ করে মারা হয়েছে।
হার্ড ক্যাসেল আমাকে বললেন যে মৃতদেহটা তোমার বান্ধবীর নয়। আরেকটু চুপ করে ও বলে উঠলো, অবশ্য তোমার যদি কোনো আশঙ্কা থেকে থাকে। শীলার সঙ্গে কাজ করে এডনা ব্রেন্টের। মিস ওয়াটারহাউস প্রথমে মৃতদেহটা দেখতে পান। আঠারো নম্বরে থাকেন উনি।
একজন পুলিশ কনস্টেবল ঘরে ঢুকে বললো, ডঃ রিগ এই মাত্র ফোন করেছিলেন। তিনি ওখানে শিগগিরই চলে যাচ্ছেন। উইলিব্রাহাম ক্রিসেন্টে উনি আপনার সঙ্গে দেখা করবেন বলেছেন।
.
১৭.
এরপর ঘণ্টাখানেক কেটে গেছে। হার্ড ক্যাসেলের সঙ্গে কনস্টেবল পিয়ার্স দেখা করতে চাইলেন। তিনি তাকে অফিসে আসতে বললেন। প্রাথমিক কিছু কথাবার্তার পর পিয়ার্স হার্ড ক্যাসেলকে ইনকোয়েস্টের দিন কোর্টের সামনে এডনা ব্রেন্টের সঙ্গে যা যা কথা হয়েছে সব জানালো। শুনে হার্ড ক্যাসেল বলে উঠলেন, আমার আলোচনা শেষ হওয়া পর্যন্ত তুমি ওকে অপেক্ষা করতে বলতে পারলে না।
পিয়ার্স যখন এডনা ব্রেন্টের সঙ্গে ছিল তখন আশেপাশে কি কেউ ছিল। অনেক লোকই ছিল স্যার। কারণ অনেকেই তো ইনকোয়েস্টে যোগ দিয়েছিল। পিয়ার্স সেরকম বিশেষ কাউকে দেখছে বলে মনে করতে পারছে না। পিয়ার্সকে তিনি বলে যেতে বললেন।
হার্ড ক্যাসেল খুব অবাক হচ্ছিলেন এডনা ব্রেন্টের মৃত্যু নিয়ে। তিনি ইনসপেক্টর সার্জেন্ট ক্লে-কে কয়েকটা নির্দেশ দিলেন। এবার সার্জেন্ট ওকে জিজ্ঞেস করলেন, স্যার, মেয়েটা উইলিব্রাহাম ক্রিসেন্টে গেল কেন সে ব্যাপারে আপনি কি ভাবছেন?
হার্ড ক্যাসেল বললো, এটা হতে পারে এডনা নিছক কৌতূহলের বসেই ওখানে গেছিল। আসলে জায়গাটা কেমন সেটাই হয়তো দেখতে গেছিল। সার্জেন্ট এরপর চলে গেল।
সার্জেন্ট যাবার পর হার্ড ক্যাসেল তিনটে সংখ্যা লিখলেন। প্রথম সংখ্যাটি কুড়ি, তারপর উনিশ, তৃতীয় সংখ্যাটি আঠারো। তারপর হেমিং পেবমার্স, ওয়াটারহাউস। তিনটে বাড়ির ব্রাহাম ক্রিসেন্টে। প্রথমে কুড়ি নম্বর যে ছুরিটা দিয়ে খুন করা হয়েছিলো সেটা ওই বাড়ির বাগান থেকে ছুঁড়ে ফেলা হয়েছে। সম্ভবতঃ উনিশ নম্বর বাড়ির বাগান থেকে ছুরিটা ছুঁড়ে ফেলা হয়েছে। কিংবা এও হতে পারে কুড়ি নম্বর বাড়ির মালিকই ছুরিটা ওখানে ঝোঁপঝাড়ের মধ্যে ফেলে দিয়েছিলো। প্রথমে ওর হেমিংকে সন্দেহ হয়। তারপর তিনি সিদ্ধান্ত করলেন, না উনি এটা করেননি। এডনা কি মিস পেবমার্স সম্পর্কে কিছু জানতো। যেমন শীলা ওয়েবের সঙ্গে ওর কোনোরকম যোগসূত্র কিংবা ঐরকম কিছু পিয়ার্সকে বলে ছিলো একবার। ও যা বলেছে তা সত্যি হতে পারে না।
তিনি ভাবলেন শেষ পর্যন্ত সবটাই তো অনুমান। এবার আঠারো নম্বর ওয়াটারহাউসই প্রথমে মৃতদেহটা দেখতে পান। যারা মৃতদেহ আবিষ্কার করেন তাদের বিরুদ্ধে হার্ড ক্যাসেলের পেশাগত এক ধরনের সংস্কার আছে। খুনী যদি নিজেই মৃতদেহ আবিষ্কার করে তাহলে কিছু সূত্র বের করা সম্ভব হয়। যেমন অন্যমনস্কতার ফলে রেখে যাওয়া আঙুলের ছাপ।ওয়াটারহাউস ইনকোয়েস্টে কোনো সাক্ষী দেয়নি। উনি কি পেবমার্স সেজে ক্যাভেনডিস ব্যুরোতে ফোন করেছিলেন। এছাড়া তাই শীলা ওয়েবকে তার সন্দেহ আছে।
হোটেলে কলিন ফোন করলেন।কলিন বললেন, একটার সময় মার্কেট স্ট্রিটে তিনি লাঞ্চ করেছেন।
হার্ড ক্যাসেল তাকে সন্ধেবেলা আসতে বললেন। ওপ্রান্ত থেকে কলিন বললো, তিনি চলে যাচ্ছেন। তিনি সপ্তাহখানেকের আগে ফিরবেন না।
.
১৮.
শেষ পর্যন্ত হার্ডক্যাসেল উইলিব্রাহাম ক্রিসেন্টে উনিশ নম্বর বাড়িতে এসে পৌঁছলেন। তখন মিস পেবমার্স বাড়ি থেকে বেরোচ্ছিলেন। পেরমার্স বললেন কোনো ভূমিকা না করে হার্ড ক্যাসেল প্রথমেই এলেন খুনের প্রসঙ্গে। তাকে এড়না ব্রেন্টের মৃত্যুর খবর জানানো হলো। তিনি সামান্য থেমে বলে উঠলেন, আচ্ছা মেয়েটি আপনার সঙ্গে দেখা করতে আসেনি? তিনি না বললেন। মিস পেবমার্স বললেন তার সাড়ে বারোটা নাগাদ বাড়িতে থাকার কথা। হার্ড ক্যাসেল মনে করেন ইনকোয়েস্টের সময় ও নিজেও ছিল। সম্ভবত সেখানে তাকে দেখে তার সঙ্গে দেখা করতে চাইতে পারতো। এই রাস্তার অন্য কোনো বাসিন্দার সঙ্গে ওর কোনো পরিচয় নেই। হয়তো কোনো কারণে মিস পেবমার্সের সঙ্গে দেখা করতে এসেছিল। মেয়েটির বয়স উনিশের মতো। মেয়েটার কোনো আকর্ষণ ছিল না। পেরমার্স বললেন যে তিনি কোনো সাহায্য করতে পারছেন না।
মিস ওয়াটারহাউসকে বললেন হার্ড ক্যাসেলকে যেন তিনি সঠিক উত্তর দেন। যে মেয়েটি খুন হয়েছে তাকে হয়তো অনেকবার তিনি দেখেছেন কিন্তু মনে করতে পারছেন না। কোনো মেয়েকে তার দরকার লাগেনি। খুন হবার আগে তার সঙ্গে তার কোনো দরকার হয়নি। তার গেটের কাছে কেউ আসেনি। তিনি বললেন তার পোস্টবক্সে যদি কেউ কোনো কাগজ ফেলে যান তার জন্য তিনি দায়ী নন।
হার্ড ক্যাসেল বললেন, টেলিফোনের ব্যাপারটা আগে বলা যায়। তিনি বলেছিলেন তার টেলিফোনটা খারাপ হয়ে গেছে। তার এক্সচেঞ্জ অনুযায়ী তা ঠিক নয়।
হার্ড ক্যাসেল মনে করেন মেয়েটি এখানে এসেছিলো এবং ক্রিসেন্টে কারো সঙ্গে দেখা করতে গেছিল।
পেবমার্স একটা টাইপিস্ট মেয়েকে ডেকে পাঠিয়েছেন। তবে ওয়াটারহাউস এটা মনে করেন না মিস পেবমার্স খুনটা করেছেন। অনেকেই ফোন করে অর্ডার করে এবং পরে তার অস্বীকার করে। নিছক মজা করার উদ্দেশ্যে হবে এটা।
এরপর ডিটেকটিভ হার্ড ক্যাসেল ক্যাভেনডিস ব্যুরোতে এসে পৌঁছলেন। মার্টিনডেলকে জিজ্ঞাসা করে কিছুই পাওয়া গেল না। ওর অনুমতি নিয়ে মাউরিন নামে মেয়েটিকে জেরা করার সময় জানা গেল যে ও কাজকর্মের মধ্যে কিছু গুলিয়ে ফেলতো। এছাড়া খুব মন্থর স্বভাবের ছিলো। মেয়েটি বাইরে আসে কেনার জন্য। বাইরে গিয়ে জানতে পারে মেয়েটি খুন হয়েছে। জ্যানেট নামের মেয়েটি বুঝতে পারছে না তার খুন হওয়ার ব্যাপারটা। মেয়েটির সঙ্গে তার কোনো বিশেষ বন্ধু ছিল না। মিস ওয়েব যে কারফিউ হোটেলে মিঃ পার্ডির কাছে কাজ করছে, তারা বললো। হার্ড ক্যাসেল বিদায় নিলেন।
তিনি কারফিউ হোটেলে প্রফেসার পার্ডির কাছে এসে পৌঁছলেন। শীলা ওয়েব খুনের ব্যাপারটা শোনেননি। শুনে সে আতঙ্কিত বোধ করলো। সে এমন কিছু বলতে পারলো না যে খুনের ব্যাপারে সাহায্য হতে পারে।
.
১৯.
কলিন ল্যাম্বের বিবৃতি
আমি লন্ডনে গিয়ে প্রথমেই দেখা করলাম কর্নেল বেকের সঙ্গে। সবকিছু রিপোর্ট করলাম ওকে। তাকে বললো যে কাগজপত্র উদ্ধার করতে পারলে যোগাযোগ করবেন। আর মিঃ র্যামসে সম্পর্কে যতটা পারেন খোঁজ নিন।
কর্নেল বললেন, ডায়না লজকে আমার ঘাঁটি বলে মনে হয়। ম্যাকনটনের ব্যাপারে তেমন উৎসাহ পাচ্ছি না। উনি একজন রিটায়ার্ড প্রফেসর। বেশ ব্রিলিয়ান্ট বলা যায়। তিনি তার পুরানো বন্ধুদের থেকে নিজেকে সরিয়ে নিয়েছেন। আমার কাছে সব ব্যাপারটা সন্দেহজনক। তার দিকে তাকিয়ে কর্নেল বললেন, এরপর আপনাকেও সন্দেহ করতে পারি। আমি ওর কথা শুনলাম। তারপর ওর কাছ থেকে চলে এলাম।
আমি প্রথমে এরকুল পোয়ারো সঙ্গে দেখা করেছিলাম। কলিন তোমাকে যেন হতাশ মনে হচ্ছে। আমি ক্লান্ত ছিলাম। আমি বললাম, ক্রাউডিয়ানের খুনের খবর কি আপনি চোখ বুজে প্রশ্নের জবাব দেবেন। পোয়ারো সব কিছু উৎসাহের সঙ্গে পড়েছেন। এরকুল পোয়ারো বললেন, তোমার একমাত্র কাজ হলো প্রতিবেশীদের সঙ্গে আরো বেশি কথা বলা। কেউ কেউ সবসময়েই কিছু না কিছু দেখতে পায়। এটা স্বতঃসিদ্ধ ব্যাপার।
আরো একটা খুন হয়েছে তাকে বলা হলে তিনি বললেন যে এত তাড়াতাড়ি ব্যাপারটা ঘটলো। এছাড়া তিনি নানাভাবে প্রশ্ন করে খুঁটিনাটি জেনে নিলেন। উনি বললেন, মনে রাখবে চার তিন শূন্য বা চারশো তিরিশ। এটা একটা প্যাটার্ন।
পোয়ারো বললেন যে, ব্যাপারটা স্বাভাবিক ভাবেই আরো পরিষ্কার করে যাচ্ছে যে খুনী একথা বলতে পারে না।
পোয়ারো বললেন যে, তুমি যখন এখান থেকে চলে যাবে তখন আমি কয়েকটা জিনিস চেষ্টা করতে চাই। তুমি কি অনুমতি দেবে।
আগামীকাল আমি মিস লেমনকে নির্দেশ দেবো পুরানো আইনজীবী বন্ধুকে চিঠি লিখতে। নাম মিঃ এনডার বাই। এছাড়া ওকে আমি সামারসেট হাউজের ম্যারেজ রেকর্ডটা দেখতে বলবো। নিশ্চয়ই ও আমাকে একটা বিশেষ ওভারসীজ কেবল পাঠাবে।
আমি আপত্তি জানালে ব্যাপারটা ভালো হবে বলে আমার মনে হচ্ছে না। আপনি নিশ্চয়ই শুধু বসে বসে ভাববেন না। পোয়ারো হেসে বললেন, তোমাকে যেটা করতে হবে তা হলো আমার জবাবটা ঠিকমতো পৌঁছেছে কিনা দেখা। আমাকে থামিয়ে দিয়ে পোয়ারো বললেন, আমি জানি।
পোয়ারো বললেন যে লোকটি প্রাইভেট ডিটেকটিভ। পোয়ারো ভাবগম্ভীর গলায় বলে উঠলেন আবৃত্তির ঢঙে
এসো, এসো এসে
খুন হও, শেষে।
বলে পোয়ারো আমার দিকে তাকিয়ে হাসলেন একবার।
.
২০.
ডিটেকটিভ ইনসপেক্টর হার্ড ক্যাসেল ডেস্কের ক্যালেন্ডারের দিকে তাকালেন। ঠিক তিনটে দিন অতিক্রান্ত হয়ে সেপ্টেম্বরের কুড়ি তারিখ। যতটা ভাবা গেছিল ততটা এগোয়নি। লোকটার পোশাক-আশাক থেকেও কোনো সূত্র পাওয়া যায়নি।
খবরের কাগজে বিজ্ঞাপন দেবার পরে চিঠি এসেছিলো অনেক, অবশ্য কোনোটাই কাজের চিঠি নয়। তারই মধ্যে একটা হার্ড ক্যাসেলের কৌতূহল জাগিয়েছে। ওর সঙ্গে যোগাযোগ করেছেন। তার আজ আসার কথা।
অবশেষে তিনি এসে পৌঁছলেন, মিসেস রাইভ্যাল। তিনি বললেন, বিব্রত হওয়ার কিছু নেই মিসেস রাইভ্যাল। এই দিক থেকে আমরা আপনার সাহায্য চাই।
ভদ্রমহিলাকে বললেন তিনি, আপনি তাহলে বলছেন বছর পনেরো হলো ওর সঙ্গে আর দেখা হয়নি।
মিসেস রাইভ্যালের সঙ্গে তার তিন বছর আগে বিয়ে হয়। তিনি সাদেকের বলে একটা এলাকায় থাকতেন। তিনি বলেছিলেন তিনি ইনসিওরেন্স এজেন্ট ছিলেন। কিন্তু এটা মিথ্যা কথা ছিল।
ডেডবডি দেখে তিনি বললেন, এটি হলো হ্যারি। অনেক বুড়িয়ে গেছে, সে ভুল করেনি। তিনি নিশ্চিত এটি তার স্বামী। তাকে তার বরাবর ভালোমানুষ বলে মনে হত। এখনও সেরকম আছে। এই ভদ্রলোকটির মধ্যে একটা খানদানি অভিজ্ঞতা রয়েছে। সে সবসময় ফিটফাট পোশাকে থাকতো। সব কিছুর মধ্যে একটা বিশেষত্ব ছিল। মেয়েদের পেছনে সে বেশ সময় দিত। তাকে তার স্ত্রী এইজন্য সন্দেহ করতেন। তার স্ত্রীর মনে হয় মেয়ে নিয়ে তার কোনো ব্যাবসা ছিল।
মিসেস রাইভ্যাল বললো, একবার একটা দরকারে ও বাইরে গেছিল, তারপর কাজ শেষ করে ফিলে এলো। এসে আমাকে বললো খুব তাড়াতাড়ি ওখান থেকে চলে যেতে হবে। কোনো মেয়ের ব্যাপারে নাকি বিপত্তিতে পড়েছে। মেয়েটি নাকি একজন স্কুল শিক্ষিকা। ব্যাপারটার মধ্যে কোনো অশালীনতা থাকতে পারে
রাইভ্যাল পত্নী বললেন, মেয়েরা খুব তাড়াতাড়ি ওর প্রেমে পড়ে যেত। তারপর এনগেজমেন্ট। তারপর হ্যারি সবার কাছে অর্থ চাইতো। পেয়েও যেত খুব সহজে। তিনি এবার যে মেয়েটির সঙ্গে জড়িয়ে পড়েছিলেন সে সন্তানের মা হতে চলেছিলো। তাই তাকে প্রতারণা করা সহজ হয়নি। তার স্ত্রী তার প্রতি দুর্বল হয়ে তাকে বিয়ে করেন।
তিনি যখন তাকে বিয়ে করেন তখন তার নাম ছিলো হ্যারি ক্যাসলটন। ওর আসল নাম কিনা তা জানা যায় না। তারপরে এখনই চলে যেতে হবে বলতে তিনি বললেন যে তিনি যেতে চান না। তার হাতে বিন্দুমাত্র অর্থ ছিল না। শেষপর্যন্ত তার সঙ্গে দেখা হয়নি। তার আসল নাম ক্লোসিয়্যাপ ফ্লোরেন্স। তবে লোক তাকে ক্লোসি বা ফ্লো বলে ডাকে। তিনি এখন মাঝে মাঝে অভিনয় করেন। এছাড়া টুকিটাকি কাজকর্ম এদিক ওদিক করে বেড়ান। মিঃ ক্যাসলটন ক্রিসেন্টে কেন এসেছিলেন এ সম্পর্কে কোনো ধারণা নেই। সে এতবছর কি করেছে ফ্লো কিছু জানে না।
তার মতে হ্যারি খুব বুদ্ধিমান। সে এমন কিছু করতে চায় না যাতে ওর বিপদ ঘটে। তার ধারণা। সে মেয়েদের নিয়ে কোনো জালজোচ্চুরি করত। মিসেস রাইভ্যালকে পেরমার্সের বাড়ির ঘড়িটা দেখানো হলে তিনি দেখলেন এবং না বললেন। তার স্বামীর সঙ্গে রোজমেরীর সম্পর্ক সম্বন্ধে জানানো হলে তিনি বললেন ওর নাম রোজমেরী। তবে উনি কারো কথা ভাবতে পারছেন না। হার্ড ক্যাসেল তাকে বিদায় নিতে বললেন। এবং বলতে বললেন যে ইনকোয়েস্টে শনাক্তকারিণী হিসেবে সাক্ষী দিতে। এবং কয়েকটা মামুলি কথা আর হার্ড ক্যাসেল বিদায় নিলেন।
.
২১.
কলিন ল্যাম্বের বিবৃতি
এরকুল পোয়ারো বললেন, তাহলে তুমি সাফ হতে পারলে। পোয়ারো গম্ভীরভাবে বললেন যে, একজন অজ্ঞাত পরিচয় ব্যক্তির দ্বারা কৌশলে খুন।
হ্যারি ক্যাসলটনকে তার স্ত্রী শনাক্ত করেছেন। ভদ্রমহিলার কথা বলে পোয়ারোর কিছু মনে পড়ে যাচ্ছিলো। আমি বললাম যে, লন্ডন থেকে ফিরে মেরলিনা সম্পর্কে জানাব। তিনি বললেন তার প্রয়োজন নেই। পোয়ারো তার ব্যাপারে উৎসাহী নয়।
এডনা সম্পর্কে পোয়ারো বললেন তার জুতোর হিল কোথায় কিভাবে ছিঁড়েছিল এ সম্পর্কে তাকে জানানো হোক। সেটা যত অকিঞ্চিৎকর হোক। অফিসের সামনে ঘটেছে। পোয়ারো এবারে জিজ্ঞাসা করলেন ও কিভাবে বাড়ি গেছিল। আমি তাকে ক্রাউডিয়ান যেতে বললাম। আসলে তার তখন মাথায় অন্য চিন্তা ঘুরছিলো বলে তিনি ঐ দিকে মন দিতে পারছিলেন না। হার্ড ক্যাসেলের বাড়ি গিয়ে তার সঙ্গে দেখা করলাম।
হার্ড ক্যাসেল বললো যে, লোকটিকে প্রত্যেক নারী বিশ্বাস করতো তারপর অর্থলগ্নীর ব্যাপারে নানা পরামর্শ দিতো। ধনী মহিলাদের সঙ্গে বিয়ে করে সে এই টাকার খেলা খেলতো। তারপর একদিন হাওয়ায় মিলিয়ে যেত। নিজের নাম পাল্টাতে ও ওস্তাদ ছিলো। যে সব মেয়েরা ওর কাছে আটকে যেত তারাও বলতো না। লোকটা কোনোদিন কামরার সামনে দাঁড়াতাম। পনেরো বছর আগে একবার অদৃশ্য হয়ে গেছিল তখন অনেকেই ধরে নিয়েছিলো ও মারা গেছে। অবশ্য গুজব ছিল ও জেলে।
একজন মহিলা তাকে ভুলতে পারেনি। মহিলার স্মৃতিশক্তি খুব ভালো। আর এরকমই কোনো মহিলা তাকে এখনও ভুলতে পারেনি এরকম কোনো মহিলা যদি অন্ধ হয়ে যায়।
মৃতের স্ত্রী দেহপসারিণী। তবে সে কোনো অপরাধমূলক ঘটনার সঙ্গে জড়িয়ে পড়েনি। ঘড়ির ব্যাপারে কোনো মন্তব্য না করলেও হার্ড ক্যাসেল ওর ইঙ্গিতটা বুঝতে পারলেন।
.
২২.
স্টেশনের কাছেই একটা হোটেলে ছিলাম। ঠিক দশটা নাগাদ অন্য একটা নামে ক্যাভেনডিস ব্যুরোতে ফোন করে শীলাকে ডাকা হল। আমাকে দেখামাত্রই চমকে উঠলো, আপনার এটা করা উচিত হয়নি।
শীলা ওয়েব সোজা হোটেল এসে উপস্থিত হলো। তাকে নিয়ে বাটার ক্যাফে এসে উপস্থিত হলাম।
শীলার দুচোখে কালো ছাপ। তাকে আমি বললাম, আমি বাইরে আবার ফিরে যাচ্ছি। হার্ড ক্যাসেল সম্পর্কে আমি জানালাম যে, ওটা সন্দেহের চোখে দেখা ডিটেকটিভের অভ্যাস। কেউ হয়তো ঘটনাক্রমে শীলাকে খুনে জড়িয়ে দিয়েছিলো। শীলার কণ্ঠস্বর ফোনে ছিলো না কেননা সে ফোন করেনি।
শীলাকে যখন আমি সত্যি কথা বললাম সে বললো যে, হয়তো কোনো সাধারণ কারণে তুমি সেদিন ফোন করতে পারো। যখন সে দৌড়ে আমার কাছে এসেছিল সে কি মৃতদেহ ছাড়া আর কিছু দেখেছিল তা আমি জিজ্ঞাসা করলাম।
শীলা বললো, আর কিছু সে দেখেনি। সে রোজমেরী লেখা ঘড়িটা স্পর্শ করেনি। আসলে শীলা গ্লাভস আনার ভঙ্গি করে ভেতরে গিয়ে রোজমেরী ঘড়িটা তুলে আনে। সেদিন গ্লাভস পরার কোনো কথা ছিল না। শীলা এই কথার সম্মতি নিয়ে বলল, রোজমেরী নামটা তার।
শীলা আমাকে যে মিথ্যা কথা বলছে তা আমি জানতাম। তাই তার দুর্বল জায়গায় আঘাত করতে চাই। আমি দৃঢ়ভাবে মোহমুক্ত হয়ে সোজাসুজি আক্রমণ করলাম।
সে ঘড়ি সম্পর্কে বলল যে, ঘড়িটা দীর্ঘদিন ধরে ওর কাছে ছিল। ছ-বছর পর্যন্ত তার নাম রোজমেরী ছিল। কিন্তু ও শীলা ডাকটা পছন্দ করত। সম্প্রতি ঘড়িটা খারাপ হয়ে যায়। ওটাকে সে ঘড়ির দোকানে সারাতে নিয়ে যায়। দোকানটা ব্যুরোর কাছাকাছি। তাই অসতর্কবশতঃ সে ওটা হারিয়ে ফেলে। সপ্তাহখানেক আগে এটা হয়। এই নিয়ে তার কোনো দুঃখ ছিল না কারণ ওটা ভুল সময় দিত।
তারপর যখন সে ঘরে গিয়ে মৃতদেহ দেখল তখড় মৃতদেহটা পরীক্ষা করল। এবং ঘড়িটা টেবিলে নজরে পড়লো। মহিলাটি যখন এসে পড়ল তাকে সব বললো। সে শুনে অবাক হলো যে মহিলা তাকে আসতে বলেনি। সে বুঝতে পারছিল না ওখানে ঘড়িটা কে রেখেছে।
তিনি বললেন যে তার বাবা-মা ছোটোবেলায় দুর্ঘটনায় মারা গেছে। তার মাসি যা বলত সবসময় মিলত না। তার মনে হত তার বাবা-মা কোনো অপরাধমূলক কাজ করেছিল। সে তার বাবা-মার অবৈধ সন্তান হতে পারে। তার মতে, ছেলে-মেয়েদের কাছে সবকিছু খুলে বলা উচিত। এড়না কেন যে তার বাড়িতে গেছিল তা সে বুঝতে পারছিল না। তার কোনো শত্রু নেই। প্রেম প্রত্যাঘাত যুবক বা কোনো মেয়ে তার প্রতি হিংসা করে। এরপর অন্য কথা বলা হলো।
.
২৩.
কলিন ল্যাম্বের বিবৃতি
বিদেশে যাবার ব্যবস্থা করে ফিরছিলাম। সামনে পুলিশ স্টেশনের ভেতরে ঢুকে পড়লাম। আমি বললাম, আমি লন্ডন চলে যাচ্ছি।
ডিক বললো, এই নাও চিঠিটা পড়। চিঠিতে লেখা আছে,
প্রিয় মহাশয়,
আমার এই মুহূর্তে একটা ব্যাপার মনে পড়ে গেল। আপনি আমাকে জিজ্ঞেস করেছিলেন যে আমার স্বামীর শনাক্তকরণ কোনো চিহ্ন আছে কি না। আমি না বলে ছিলাম তখন। কিন্তু আমার ভুল হয়েছিলো। ওর বাঁ দিকে কানের পেছনে একটা দাগ আছে। ব্লেড দিয়ে কেটে গেছিল। এখানে সেলাই হয়। দাগটা এই ছোটো যে আমার তখন মনে পড়েনি। পরে মনে পড়েছে।
ইতি
মেরেলিনা রাইভ্যাল
তাহলে মৃতদেহটার শরীরে একটা চিহ্ন আছে মহিলার কথামতো। যখন ওকে লাশ দেখানো হয়েছিল তখন উনি দেখতে পাননি। দেখতে হবে, কানটা টেনে দেখতে হবে।
আচ্ছা লন্ডনে তোমার সঙ্গে ঐ বেলজিয়াম বন্ধুটির দেখা হবে।
ডিক বললো, সম্ভবত আসতে পারবে না। কারণ ওর পা খোঁড়া।
আমি তার দিকে তাকিয়ে রইলাম।
পৌনে বারোটার সময় উইলিব্রাহাম ক্রিসেন্টে বাষট্টি নম্বর বাড়ির সামনে দাঁড়িয়ে বেল টিপলেন। র্যামসের সামনে এসে তার সঙ্গে কথা বলতে চাইলেন। তিনি বললেন, পুলিশকে বলার ক্ষমতা তার নেই। তার স্বামী এখনও বিদেশে। তার কথায় তিনি চুপ করে রইলেন। তিনি বললেন যে তিনি জানতেন উনি চলে যাচ্ছেন। তার স্বামীর কাজে তার বিন্দুমাত্র সহানুমুতি ছিল না। তাকে স্পষ্ট করে উনি কিছুই বলেননি। তিনি জানতে চাননি। ওর পুরানো পার্টি মেম্বারশিপ এসব কিছু জানাননি। তিনি খুবই সাধারণ। স্বামীকে তিনি ভালোবাসতেন। চেষ্টা করলে মস্কো যেতে পারতেন। এতে যে তার রাজনীতির সঙ্গে একমত হতে হত, তা নয়। কিন্তু ওর কথা তিনি শোনেননি। চেয়েছিলো তিনি যেন ছেলেদুটোকে নিয়ে আসেন।
র্যামসে বললেন, মিচেলের সঙ্গে দেখা হবে কিনা জানেন না। তার মতে তার ছেলেরা নিজেদের দেশে বেড়ে উঠুক। তিনি আমার কাছ থেকে বিদায় নিলেন। ফেরার সময় ম্যাকনটনের বাড়িতে গেলাম। সেখানে কিছুক্ষণ কাটিয়ে ক্রিসেন্টে গেলাম। মিঃ ব্ল্যাণ্ডের সঙ্গে দেখা হতে তিনি জিজ্ঞেস করলেন, আপনি কোথা থেকে এসেছেন?
মিঃ ব্ল্যাণ্ড হাসলেন। বাইরে প্রকাশ করা নিষেধ।
তিনি বিদায় নিয়ে ৬১ নং বাড়ির দিকে এলেন। মিঃ পোয়ারো বললেন তাকে, প্রতিবেশীদের কাছ থেকে আরো বেশি বের করতে হবে। কেউ কিছু দেখেনি এটা একেবারে অস্বাভাবিক। হয়তো হার্ড কাউকে জিজ্ঞাসাবাদ করেছে। একটা প্রশ্নের সিট তৈরি করলাম। মিঃ কেরীকে নেশা করানো হয়েছিলো। তারপর ওকে খুন করা হয়েছিল কোথায়? মিঃ কারী (ক্যাসলটন)কে উনিশ নম্বর বাড়িতে আনা হয়েছিল। কেমন ভাবে?
প্রশ্নগুলো এইভাবে ভাবতে ভাবতে আমি রাস্তার বাঁ দিকে ঘুরলাম। এইভাবে ব্যাপারটা ভাবতে ভাবতে এগোচ্ছি হঠাৎ তীব্র আলোর ঝলক আমার চোখে এসে লাগলো। মুখ তুলে সঙ্গে সঙ্গে দেখলাম, রাস্তার ধারে কাছাকাছি একটা বাড়ির জানলা দিয়ে কেউ আমাকে দেখছে।
আমি দূরবীন দিয়ে চোখ লাগালাম। হঠাৎ একটা রোলস রয়েস গাড়ি খুব শান্তভাবে অতিক্রম করে গেল। আপোস করলে ভাগ্য সহায় হয়।
ব্লকটার কাছাকাছি এসে তিনতলার বোতামটা টিপলাম। লিফট চলতে শুরু করল।
.
২৪.
দরজার সামনে আমাকে কয়েক মিনিট অপেক্ষা করতে হলো। ক্ষমা করবেন, এ ঘরে সম্ভবত কোনো মেয়ে আছে, আপনাকে জানলা দিয়ে দেখছিল। ও একটা জিনিস নিচে ফেলে দিয়েছে।
মহিলাটি ঘরে নিয়ে এলো। মেয়েটিকে ফলকাটা ছুরিটা দেখানো হলে সে বললো, ওটা আমার নয়।
তাকে প্রশ্ন করা হলো, সে বললো, খুনের দিন ধুয়ে মুছে তাড়াতাড়ি চলে যেতে পারে, সকাল দশটা হবে। সে সময় অবশ্য আমি একটা ক্রসওয়ার্ড পাজল নিয়ে ব্যস্ত ছিলাম। কারীকে সে বাড়িতে আসতে দেখেনি। ভদ্রলোক সামনের দরজা দিয়ে কলিং বেল টিপে ঢোকেননি। তাহলে তিনি দেখতে পেতেন। পাশের বাগান দিয়ে কেউ ঢোকেননি। মিস পেবমার্স ঐ দিন দশটা নাগাদ বাড়ি থেকে বেরিয়ে যান। তার কাজের লোক যায় ২টা নাগাদ। তবে মিসেস কারীকে আসতে দেখেননি। ঐ বাড়িতে পেবমার্স নিজে একাই বাজার করতেন। একজন স্ত্রীর লোক একটা বড়ো বাক্স ডেলিভারি দিত। ১.৪৫ মিনিটে তা ঘটেছিল, ড্রাইভার গাড়ি থেকে নেমে দরজা খুলে বাক্সটা বের করল। লোকটা সাধারণ দেখতে, তার থেকে বয়স বেশি। সে বাক্স নিয়ে টলতে টলতে বাড়ির পাশ দিয়ে ঘুরে পেছনের দরজা দিয়ে ঢুকে ছিল। তবে সম্ভবত ঢুকতে পারেনি। কারণ মিস পেবমার্স দরজায় তালা দিয়ে গিয়েছিল। বাক্সটা ওখানেই রেখে দিয়ে ফিরে গিয়েছিল ও। লোকটাকে আমি ঠিকমতো দেখতে পাইনি। রাস্তার ভুল দিকে দাঁড় করিয়েছিল গাড়িটাকে। আমি শুধু ওর মাথার পেছনের দিকটা দেখতে পেয়েছিলাম। তারপর লোকটি গাড়ি চালিয়ে চলে গেল। মনে মনে ভাবলাম লোকটা হয়তো গুরুত্বপূর্ণ কিছু দেখেও থাকতে পারে। মেয়েটাকে ধন্যবাদ জানিয়ে আমি তখনকার মতো বিদায় নিলাম ওর কাছ থেকে। যে মেয়েটাকে প্রশ্ন করেছিলাম এতক্ষণ, ওর নাম জেরালাউনে।
.
২৫.
মিসেস রাইভ্যাল দরজার হাতলটা ঘুরিয়ে ঠেলে ভেতরে ঢুকলেন। পা দুটো সামান্য টলছিল। তিনি নিজের মনে বিড়বিড় করছিলেন।
ব্যাপার মোটেই ভালো নয়। মিস রাইভ্যাল বললেন, আমি ব্যাপারটা সহ্য করতে পারছি না। সে কাউকে প্রবঞ্চনা করতে পারে না।
রাইভ্যাল নিজের মনে বলছিলেন, আমি সহ্য করতে পারছি না। লোকে আমার সঙ্গে কি করে ঐরকম আচরণ করার কথা ভাবতে পারে। ব্যাপারটা আদৌ ঠিক নয়। তুমি যদি নিজে কারো পেছনে না লাগো তাহলে তোমার পেছনেই বা লোকে কেন লাগতে যাবে?
এরপর একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে জোর গলায় আবার বললো, আবার একটা দাও। ফেজকে তিনি বললেন, যখন তোমাকে কেউ কিছু করতে বলবে তখন তার উচিত ব্যাপারটা খুলে বলা। তার জানানো উচিত যে তুমি কি করেছে এবং তার অর্থ বা কি। সব মিথ্যেবাদী। আমি এসব সহ্য করতে পারি না। মিসেস রাইভ্যাল বললেন, এখন আমার তাহলে কি করা উচিত?
রাইভ্যাল বললেন, তোমাকে অসংখ্য ধন্যবাদ ফেজ। মিসেস রাইভ্যাল বেশ হাসিখুশী কিন্তু আজ ওর মেজাজ ঠিক নেই।
মিসেস রাইভ্যাল বললেন যে, দরজা খুলে দেখলেন ইনসপেক্টর হার্ড ক্যাসেল। তিনি বললেন যে তার খুনের সম্পর্কে কিছু জানতে চান। মিসেস রাইভ্যাল বললেন, একসময় রাইভ্যাল তার জীবনে ছিল। কিন্তু এখন আমি ওকে ভাবি না। খবরের কাগজে ছবি দেখেই তো আমি এগিয়ে এসেছিলাম। নিজে থেকে আমি আপনাদের কাছে ওর সম্পর্কে অনেক কিছুই বলেছি।
মিসেস র্যাইভ্যাল তার স্বামীর একটা আইডেন্টিফিকেশন মার্ক দেখিয়েছেন। এটা একটা মূল্যবান পয়েন্ট। কারণ আই ভেরিফাই অবশ্যই ভালো হওয়া উচিত।
মিসেস রাইভ্যাল, আচ্ছা সময়টা মনে আছে ঠিক কবে নাগাদ ঐ দাড়ি কামাতে গিয়ে কাটার ব্যাপারটা ঘটেছিলো। অক্টোবরে কি নভেম্বরে ঘটেছিল। তার স্বামী তাকে একান্নতে ছেড়ে যান। তারপর তার খুনের ছবি দেখে তাকে চিনতে পারেন।
মিসেস রাইভ্যাল যে মৃতদেহ দেখার আগে তাকে দেখেননি এটা মনে হলো না হার্ডের। তাই তিনি বললেন ডাক্তারের কথা অনুযায়ী ঐ দাগটা বছর পাঁচেকের আগে কিছু না।
রাইভ্যাল বললেন, তা তিনি বিশ্বাস করেন না। যদি তাই হয় তাহলে বুঝতে হবে আপনার স্বামী যখন আপনাকে ছেড়ে যান তখন ঐ দাগ ছিল না। মৃত লোকটি যে হ্যারি এতে আমার বিন্দুমাত্র সন্দেহ নেই।
আর আপনার সঙ্গে যদি দীর্ঘদিন দেখাসাক্ষাত না হয়ে থাকে তাহলে কি করে জানলেন আপনি, যে আপনার স্বামীর ঐ বিশেষ জায়গায় একটা ক্ষতচিহ্ন আছে?
মিসেস রাইভ্যাল, মিথ্যে সাক্ষী দেওয়ার জন্য বিপদে পড়ে যেতে পারেন। আইনে এটাও একটা অপরাধ। এটা হার্ড ক্যাসেল বললেন।
সামান্য থেমে আবার বললেন ইনসপেক্টর, এটাও তো হতে পারে, কেউ হয়তো আপনাকে চাপ দিয়ে আমাদের কাছে দাগের কথা বলতে বলেছে।
রাইভ্যাল বললেন, তিনি মিথ্যে বলেন না। যদি তার বলার মধ্যে কোনো ভুল হয় তার জন্য তিনি দোষী নন। ঘর থেকে বেরিয়ে গেলেন হার্ড ক্যাসেল। ওর চলে যাবার সঙ্গে সঙ্গে মিসেস রাইভ্যালের ভাবভঙ্গী একেবারে বদলে গেল। অস্থিরভাবে বেশ কিছুক্ষণ ধরে পায়চারী করলেন তিনি। রিসিভার নিয়ে ডায়াল ঘোরাতে লাগলেন।
আমি ফ্লোর কথা বলছি। তুমি কখনোই আমার সঙ্গে সোজাসুজি ব্যবহার করোনি। শুধু বলেছিলে লোকটার পরিচয় শনাক্ত হলে তুমি বিপদে পড়তে পারো। কিন্তু কখনও ভাবতে পারিনি যে আমি একটা খুনের মামলায় জড়িয়ে পড়তে চলেছি। আমি আর এসবের মধ্যে থাকতে চাই না।
অপরাধের সহযোগী, মিথ্যে সাক্ষীর জন্য জেল হতে পারে। রিসিভার নামিয়ে রেখে বুথ থেকে বেরিয়ে এলেন মিসেস র্যাইভ্যাল। তারপর হাঁটতে লাগলেন ফুটপাত ধরে। তিনি পরিবর্তনশীল চরিত্রের মহিলা।
.
২৬.
কলিন ল্যাম্বের বিবৃতি
তোমাকে দেখে মনে হচ্ছে ঐ র্যামসে মহিলাটির কাছ থেকে বেশিকিছু বের করতে পারোনি। অভিযোগ করলেন কর্নেল বেক।
মহিলা তাহলে সক্রিয় অংশগ্রহণকারী নন। আমার দিকে তাকালো কর্নেল। আমি জবাব দিলাম না।
তুমি কি আরো বেশি কিছু আশা কর? জিজ্ঞেস করলো কর্নেল।বললাম জবাবে, তা দিয়েও কিছু হবে না।
ভালো কথা। আমাদের অন্য কারো কোথাও আরো কোথাও দেখতে হবে। ক্রিসেন্টটাকে ছেড়ে দাও।
কলিন তোমার ব্যাপারটার শেষ খবর কি, কর্নেল জিজ্ঞেস করল।
আমি মাথা নেড়ে বললাম, নিশ্চয়ই কোনো এক সময় শেষ হবে। ব্যাপারটা আমি অবশ্য করেছি। এখানকার সময় পৃথিবীটা বড়ো গোলমেলে। যেমন যেভাবে সবকিছু ঘটা উচিত সেভাবে ঘটে না। তোমার কাজটা নিঃসন্দেহে প্রথমশ্রেণীর।
কর্নেল বললেন, তার ধারণা মেয়েটি খুশী। আপনি ভুল করছেন কর্নেল। কর্নেল বেক আঙুল তুলে খানিকটা সতর্ক করার ভঙ্গীতে বলে উঠলো, আমি বলছি তুমি প্রস্তুত থেকো। ভেবেচিন্তেই বললাম কথাটা।
আমি ওর কাছে বিদায় নিয়ে চ্যাজিক্রশ ধরে গভীরভাবে চিন্তা করতে করতে হাঁটছিলাম। আমি একটা কাগজ কিনলাম। তাতে দেখলাম একজন মহিলা ভিক্টোরিয়া স্টেশনের ভিড়ে অজ্ঞান হয়ে মারা যান। ভদ্রমহিলার নাম মেরিলিনা রাইভ্যাল।
হার্ডক্যাসেল ফোন করে জানাল ভদ্রমহিলাকে বোধহয় কেউ টাকার লোভ দেখিয়ে লোকটিকে শনাক্ত করেছে। ওর সময়ের সঙ্গে দাগটির মিল ছিল না।
মাঝখান থেকে ঐ অদৃশ্য ব্যক্তিটি বেশি চালাক সাজার চেষ্টা করছে।
ধরা যাক কোনো পরিচিত ওর কাছে এসে বললো, আমি একটু অসুবিধার মধ্যে পড়ে গেছি। আমি যার সঙ্গে কাজ-কারবার করতাম সেই হঠাৎ খুন হয়ে গেছে। ওরা যদি মৃতদেহ শনাক্ত করে দেখে আর আমাদের কাজ-কারবারের ব্যাপারটা প্রকাশ হয়ে যায় তাহলে সমস্ত ব্যাপারটা চুরমার হয়ে যাবে। কিন্তু তুমি যদি এখানে এসে বলল ঐ মৃত লোকটি তোমার স্বামী তাহলে খুব ভালো হয়। বলবে অনেক বছর আগে ও চলে গেছিল। আবার সম্ভবত ফিরে এসেছিল। তোমার স্বামীর নাম হ্যারি ক্যাসলটন, তাহলেই ব্যাপারটা অন্যদিকে ঘুরে যাবে।
ব্যাপারটা খুব ঝুঁকির। বড়োজোর একটা ভুল হতে পারে। বছর পনেরো পরে যে কোনো মহিলাই এরকম ভুল করতে পারে ভাবাটাই খুব স্বাভাবিক। আর এর সঙ্গে হয়তো সামান্য কিছু অর্থের ব্যবস্থা আছে। সুতরাং সেইভাবে এগিয়েছে ও।
মহিলা সন্দেহজনক নয়। মৃতের যারা পরিচিত তাদের সকলকে খুনী ভাবতে পারি না। ঐ মহিলা ঐরকম কোনো কাজ করতে পারে বলে তো আমার মনে হয় না।
ওর সঙ্গে দেখা করতে গিয়ে দেখা হলে তিনি যা মনে ভেবেছিলেন ও সেটাই করলো। সম্ভবত যে ওকে কাজে লাগিয়েছে তার সঙ্গে যোগাযোগ করার চেষ্টা করলো, একটা পোস্টঅফিসে গেল প্রথমে। আমি ওকে অনুসরণ করেছি।
পোস্টঅফিসে গিয়ে ও প্রথমেই একটা ফোন করলো। আমি ভেবেছিলাম বাড়ির সামনে থেকে ফোনটা করবে। সন্ধ্যা পর্যন্ত কিছু ঘটেনি। এরপর ও গেল ভিক্টোরিয়া স্টেশনে, সেখানে ক্রাউডিয়ানের একটা টিকিট কাটলেন। সময় ঠিক সাড়ে ছটা। এই সময়টা রাস্তাঘাটে বেশ ভীড় হয়। খুনী ভীড়ের মধ্যে পেছনে এসে দাঁড়ায় এবং ছোরাটা ঢুকিয়ে দেয়।
জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছিল। পেবমার্স কলেজে ছিলেন। ইনস্টিটিউশনের ব্যাপারে গুরুত্বপূর্ণ কাজ ছিল। তারপর ৭.৪০ ট্রেনে ক্রাউডিয়ানে ফিরে আসেন।
হার্ড ক্যাসেল দীর্ঘশ্বাস ফেলে আবার বলতে লাগলেন, আর শীলা ওয়েবও কাল লন্ডনে ছিল। সে সময় এক লেখকও নিউইয়র্ক যাবার পথে লন্ডনে ছিলেন। সম্ভবত পাঁচটা কুড়িতে ও হোটেল ত্যাগ করে। এখানে ফিরে আসার আগে একাই একটা সিনেমা দেখতে গেছিল।
আমি বললাম, শোনো ডিক তোমাকে বলার মতো কিছু জানতে পেরেছি আমি। একজন প্রত্যক্ষদর্শীর বিবরণ। নয়ই সেপ্টেম্বর উনিশ নম্বর বাড়িতে ১.৪৫ নাগাদ একটা গাড়ি ভ্যান এসেছিলো। যে লোকটা চালিয়ে নিয়ে এসেছিলো সেই একটা বড়ো আকারের বাক্স এই বাড়িতে ডেলিভারি দেয় পেছনের দরজা দিয়ে। বাক্সটা সাধারণ ধরনের বাক্স ছিলো না। নতুন লন্ড্রী সব গজিয়ে উঠেছিল। দ্য স্নো ফকস্ এমন একটি লী। ঠিক আছে ব্যাপারটা তুমি চেক করো। একটা লোক চালিয়ে নিয়ে এসেছিলো, আবার একজন সম্ভবত ভেতরে নিয়ে গেছিল বাক্সটাকে।
ও কিছু বলার আগে আমি ছেড়ে দিলাম। বেরিয়ে এলাম। তাকালাম রিস্ট ওয়াচটার দিকে। আমাকে এখন অনেক কাজ করতে হবে। হার্ড ক্যাসেল আমার কাছে পৌঁছবার আগেই এটা আমাকে করে ফেলতে হবে। আমার ভবিষ্যৎ জীবনের ব্যবস্থা।
.
২৭.
কলিন ল্যাম্বের বিবৃতি
ঠিক পাঁচদিন পরে। রাত আটটা নাগাদ আমি পৌঁছলাম ক্রাউডিয়ান। হোটেলে গিয়ে হাজির হলাম। ওখানে রুম ভাড়া করলাম একটা। ঘুমিয়ে পড়ার পর পৌনে দশটা নাগাদ। চিরকুটের খামটা বেশ মোটা আর সীমিত বটে। খামটা পরিষ্কার ভাবে ছাপা। কিছুক্ষণ উল্টেপাল্টে দেখে খামটাকে খুললাম।
ভেতরে একটা কাগজ। বড়ো বড়ো করে ছাপার অক্ষরে লেখা আছে কারফিউ হোটেল : ২১ : ৩০ রুম নাম্বার ৪৩০ (তিনবার দরজায় টোকা মারবে)।
আমি লোকটার দিকে তাকিয়ে রইলাম কিছুক্ষণ। উল্টেপাল্টে দেখলাম বার কয়েক। কারফিউ হোটেলে ফোন করার কথাটা মাথায় এলো। পরক্ষণেই ডিককে ফোন করার কথা ভাবলাম। এরপর আমি কারফিউ হোটেলে গেলাম। প্রায় ঠিক সময়েই ওখানে পৌঁছে গেলাম। হোটেলের ভেতরে তেমন একটা বেশি লোকজন ছিল না।
ডেস্কে আমি কোনো কিছু জানতে চাইলাম না। সরাসরি উঠে গেলাম। লিফটে এসে পৌঁছলাম চারতলায়। বারান্দা ধরে এগোতে লাগলাম চারশো তিরিশ নম্বর ঘরের দিকে।
দরজায় তিনবার টোকা দিলাম। ঠিক আমার দিকেই মুখ করেই বসে আছেন এরকুল পোয়ারো। পোয়ারো বললেন যে তাকে চিকিৎসক সমুদ্রের হাওয়া খেতে পরামর্শ দিয়েছেন। পোয়ারো বললেন যে রোজমেরীর একটা ছবি দিতে পারতাম। এছাড়াও আমি নিজের আঙুল কেটে দরজার ওপরে রক্ত লাগা আঙুলের ছাপ লাগিয়ে রাখার কথা ভেবেছিলাম।
শোন কলিন এবারে কিছুটা সিরিয়াস হওয়া যাক। আমি তোমার কিছুটা সহযোগিতা আশা করি। চীকনস্টেবলকে ডেকে পাঠিয়েছিআমি। আর এই মুহূর্তে তোমার ঐ বন্ধুটির জন্য অপেক্ষা করছি। ঐ ডিটেকটিভ ইনসপেক্টর হার্ড ক্যাসেল। তারা তিনজন কথাবার্তা চালাতে লাগলো।
শেষ পর্যন্ত হার্ড ক্যাসেল এলেন। হার্ড ক্যাসেল বললেন, কিছুটা সতর্কভাবে বলতে আরম্ভ করলেন মনে হচ্ছে ব্যবস্থাটা আপনার নিজেরই।
পোয়ারো বললেন যে তার বক্তব্য কক্স হাইড বা ব্লান্ড হাউণ্ডের মতো। গন্ধের পেছনে ছুটোছুটি করার কোনো প্রয়োজন নেই।
পোয়ারো বললেন, তার বন্ধু কলিন ল্যাম্ব এখানে এসেছে। ও আমার সঙ্গে দেখা করতে এসেছিল। কোনো সমাধানের ব্যাপারে সাহায্য চাইতে নয়। তার অনুমান ইতিমধ্যেই এগিয়েছে ও। কলিন এখনও তাকে চেনে না।
পোয়ারো উইলিব্রিহাম ক্রিসেন্টে উনিশ নম্বর বাড়িতে যে ভদ্রলোক খুন হয়েছেন তার পরিচয় জানেন। তিনি কে, কিভাবে খুন হয়েছেন তাও জানেন। হার্ড ক্যাসেল বললেন যে, এই লোক একটা নির্দিষ্ট লক্ষ্য নিয়ে এগোত কিন্তু এইরকম লোকের সংখ্যা কম।
পোয়ারো বললেন যে, সমস্ত ব্যাপারটা ধাপে ধাপে বসালে দেখা যাবে ব্যাপারটা এভাবে ছাড়া অন্যভাবে ঘটতে পারত না।তিনি বললেন, কোনো সমস্যার সমাধান করতে গেলে অবশ্যই একটা ঘটনাবলীর প্রয়োজন। কলিন এই ব্যাপারে তাকে সাহায্য করবে। কারণ যেমন একটা ঘটনা হয়তো চারটের সময় ঘটলো, কাগজে বেরোলো সাড়ে চারটে। কলিন তা করবে না।
পোয়ারো দেখলেন একবার, বললেন যেমন চারটে ঘড়ি। প্রতিটি ঘড়ির সময় সঠিক সময় থেকে এক কাটা এগিয়ে রয়েছে। মালিকের অমতেই সেগুলোকে আবার ঘরের মধ্যে এনে রাখা হয়েছে। অন্তত ঘরের মালিক মিস পেবমার্সের বক্তব্য সেটাই। তবে আমরা পরীক্ষা করে দেখার আগে পর্যন্ত কোনো কিছু বিশ্বাস করতে পারি না। মোটামুটি দশটা বাজতে মিনিট কয়েক আগে সেক্রেটারিয়াল এজেন্সির একটি ফোন বেজে ওঠে। শীলা যখন গেল মৃতদেহ দেখতে পেল। এরপর তার যুবকের সঙ্গে দেখা হলো।
পোয়ারো বলে উঠলেন, কলিন যখন ঘটনাটা বলে তখন আমি থ্রিলারের গন্ধ পেয়েছিলাম। একজন মহিলা তার সৌন্দর্যের লুকানো একমাত্র মেকআপ দিয়ে। সে জানে লোকে তার পোশাক দেখবে। সুতরাং কলিনকে আমি বলতে পারি একজনের থেকে দৃষ্টিটা সরালে এতদূর ঘটনার সমাধান ঘটবে। যে লোকটা খুন হয়েছে একজন ব্ল্যাকমেলার হতে পারে। তবে শোনা কথার পরেই বলা যেতে পারে ভদ্রলোক খুবই সাধারণ ব্যক্তি।
হার্ড ক্যাসেল বললেন, ঠিক তাই। এর মৃত্যু আরো কারো সুবিধা করে দিতে পারে।কলিনকে বলেছিলাম যে প্রতিবেশীদের কাছে যাও যাতে পেবমার্সের সম্পর্কে জানা যায়। অতীত ব্যাপারগুলো জানতে পারলে সুবিধা হয়। সাধারণভাবে কথাবার্তা বললে সে সবরকম সতর্ক থাকে না। তিনি বললেন ঐ বাড়ির পাশাপাশি হেমিং, ব্ল্যাণ্ড দম্পতি, ম্যাকনটন বা মিস ওয়াটারহাউস এদের মধ্যে যে কেউ খুনী হতে পারে। তবে আরো গুরুত্বপূর্ণ যারা ঐ সময় ওখানে হাজির হন। যেমন শীলা ওয়েব। সে আগে থেকেই ভদ্রলোকের সঙ্গে কৌশলে দেখা করার পর ও সেইসময় লোকটাকে খুন করে। পোয়ারো কলিনকে খুনী সন্দেহ করেন না। ঐ ব্যক্তিকে নিশ্চয়ই কেউ খুন করতে চেয়েছিল। উনি যদি ব্ল্যাকমেলার হতেন তাহলে দেখতে হত কে তার শিকার ছিল। যদি ধনী ব্যক্তি হত তাহলে তার উত্তরাধিকারীদের মধ্যে খুঁজে দেখতে হত। যদি লোকটার পরিচয় জানতে না পারি তাহলে আশেপাশে এমন একজনকে খুঁজতে হবে যার ওকে খুন করার পেছনে একটা উদ্দেশ্য আছে। কাজটা বেশ কঠিন।
পোয়ারো বললেন, মিঃ কারী কোথা থেকে এসেছেন সেটা প্রথমেই জানা দরকার। এরপর জানতে হবে তিনি কিজন্য সেখানে এসেছিলেন। মিসেস হেমিং অন্যদের ব্যাপার বোঝার একটা ক্ষমতা আছে।
মিঃ কারীর থেকে একটা কার্ড ছাড়া আর কিছু পাওয়া যায়নি। ওর আসল পরিচয় জানা যায়নি। লোকটার কেউ পরিচিত পাওয়া যায়নি। তার মতে লোকটি ইংরেজ নন আর আগন্তুক। এই অপরাধ বেশ পরিকল্পিতভাবে করা হয়েছে।
অনেক ব্যক্তিই মিঃ কারীকে খুন করতে পারে। এডনা মেয়েটির কথাই ধরা যাক। ক্যাভেনডিসে আটজন মেয়ে কাজ করে। চারজন সেদিন দূরে চলে যায়। ওদের লাঞ্চের সময় ১২.৩০-১.৩০ পর্যন্ত এটা প্রথম সময়। দ্বিতীয় সময় বাকি চারজন মেয়ে গেছিল। এডনা, শীলা, জ্যানেট, মাউরিন। গর্তে পড়ে এডনার হিল খুলে যায়। ও অফিসে এরপর ফিরে আসে। এডনা পরে শীলার সঙ্গে দেখা করতে চায়। কিন্তু এতে কোনো সাক্ষ্য প্রমাণ নেই।
মিস মার্টিনডেল ব্যুরোতে ফোন করে ব্যাপারটা উল্লেখ করেছিল। মিস পেবমার্স নামে কেউ ফোন করেনি। এটা মার্টিনডেলের অনুমান। মিস মার্টিনডেল জানতেন না এডনা ফিরে এসেছে। যতটুকু তার প্রয়োজন তাছাড়া ঠিক ১.৫৯ মিনিটে একটা ফোন এসেছে। এরপর শীলা ওয়েবকে বলা হয়। সে অ্যাপার্টমেন্ট কথা শুনে চলে গেল। মিস পেবমার্স ফোনের ব্যাপারে অস্বীকার করেন। মিস মার্টিনডেল, এডনা জানত ফোনটা ১.৫০ মিনিটে এসেছিল। তাই ঘটনাটা নিয়ে এডনা ভাবছিল এবং এ বিষয়ে সে শীলার সঙ্গে কথা বলবে।
ইনকোয়েস্টের দিন মিস পেবমার্সের কথা শুনে এডনা ইনসপেক্টরের সঙ্গে দেখা করতে চায়। সে যাইহোক ব্যাপারটা মিস মার্টিনডেলের কানে পৌঁছায়। তিনি তখন এডনাকে উইলিব্রাহাম ক্রিসেন্ট পর্যন্ত অনুসরণ করেন। এডনা মার্টিনডেল অভিনয়ের আশ্রয় নেন। মিস মার্টিনডেল এডনাকে ফোন করার জন্য পীড়াপীড়ি করতে থাকে। সেই সময় ওড়নার ফাস দিয়ে তাকে তিনি খুন করেন। এটা একটায় ঘটে। হার্ড ক্যাসেল বুঝতে পারছেন না এটা কেন তিনি করবেন।
পোয়ারো মনে করেন তিনি অত্যন্ত জ্বর ও বাস্তববাদী।
পোয়ারো বললেন, মিঃ ব্লাণ্ড বলেছেন যে তার বোন এখানে থাকে বলে তিনি ক্রাউডিয়ানে থাকতে ভালোবাসেন। আসলে তার কোনো বোন ছিল না। কাকার সম্পত্তি তিনি পেয়েছেন। আসলে ধরা যাক একদিন অসহায় উকিলের চিঠিতে মিঃ ব্ল্যাণ্ড অনেক সম্পত্তির অধিকারী হলেন। আসল চিঠি আসল লোক না পেয়ে নকল তোক পেলো। কে জানে উনি কি জন্য আপোস করেছিলেন। পোয়ারো তার রহস্য বই থেকে যা পেয়েছেন এই কাহিনী থেকে মার্টিনডেল আইডিয়া নিয়েছিল। তার কাছ থেকে নোটটা নিল হার্ড ক্যাসেল। পোয়ারো বললেন, তিনি যদি কোনো কাজে আসতে পারেন খুশী হবেন।
পোয়ারো বললেন, খুনের কেসটি সহজ ও ব্যাখ্যা সহজ।
.
২৮.
আরো একবারের জন্য আমি ক্রিসেন্টে এলাম। পশ্চিম দিক বরাবর এগোতে লাগলাম। পেবমার্সের বাড়িতে ঢুকলাম। সম্ভবত খুনের ঘটনায় আমার দৃষ্টি অন্য জায়গায় পরে।
আমি বললাম, আমি হেড-কোয়ার্টারের আশ্বাস পেয়ে গেছি। সেখানে সমস্ত পরিকল্পনা করা হয়েছিল। আপনি ব্রেল পদ্ধতিতে সমস্ত রেকর্ড রাখেন।
লজ থেকে লারকিন সমস্ত খবরাখবর দিতো। আর এখান থেকে র্যামসের মাধ্যমে চলে যেত নির্দিষ্ট ঠিকানাতে। প্রয়োজনে র্যামসে রাতে বাগানের রাস্তা দিয়ে এসে যোগাযোগ করতেন। একদিন একটা কয়েন তার হাত থেকে পড়ে গেছিল। তার ছদ্মবেশ ছিল চমৎকার। একটু পরেই স্পেশাল ব্রাঞ্চের লোকেরা চলে আসবে। আপনার দায়িত্ব বুঝে নেবে। আপনি চলে যেতে মিসেস ব্ল্যাণ্ড। ক্রাউডিয়ানে কেউ জানে না মিঃ ব্ল্যাণ্ড আগে বিয়ে করেছিলেন। আসলে তিনি মিঃ ব্ল্যাণ্ডের দ্বিতীয় পত্নী। তিনি আইনসংক্রান্ত ব্যাপারের অন্য বিভিন্ন কাগজপত্র, কাকার ছবি জোগাড় করে বহুসম্পত্তি অধিকারী হয়।
তার অনুমান বছরখানেক পর কেউ বিদেশে আসে। তিনি দ্বিতীয় স্ত্রীর এই চাল ধরে ফেলেন। ভদ্রলোক মিসেস ব্ল্যাণ্ডকে দেখতে চেয়েছিলেন সেজন্য তিনি এখানে এসেছিলেন এরপর তিনি খুন হন। হার্ড ক্যাসেল বললেন, তাহলে মিসেস ব্ল্যাণ্ড আর মিস মার্টিনডেল দুই বোন। ব্ল্যাণ্ড নিছক সময় কাটানোর জন্য বিদেশ ভ্রমণ করতো। আর সেই সময়ে হ্যারি ক্যাসলটন নামে শনাক্ত করে কবর দেওয়া হত তাহলে কেই বা জানতো ভদ্রলোক কানাডা থেকে এখোনে এসেছেন।
আমি বললাম ব্ল্যাণ্ড বলেছিলেন না, যে তিনি বোন না। পোয়ারো দশ নম্বর এলিসমোর গার্ডেন মিঃ এনডার ভাইকে লিখলে তারা কানাডায় অনুসন্ধান চালাতে পারে।
মার্টিনডেল শীলার ঘড়িটা পেয়ে তাকে মৃতদেহ আবিষ্কারের জন্য রাখে। আসলে সে পরিকল্পনা করে। প্রথম থেকেই সে একটা প্যাটার্নে চাইলে যেতে পারেন। কেননা আপনি আমার শাশুড়ী হতে চলেছেন।
উনি একজন অন্ধ মহিলা। কিন্তু সামান্য অন্যমনস্কতার সুযোগে বিপদ ঘটিয়ে দিতে পারেন। তাই আমি সরে গেলে আপনি কি বলতে পারেন কোন মহিলা। তিনি ডেস্কের কাছে ছবি দেখাতে গিয়ে একটা ছুরি বার করলেন, আমি ছুরিটা হাত থেকে কেড়ে নিলাম। ভদ্রমহিলা আমাকে বললেন যে আমি কিছুটা রোজমেরীর বাবার মতো।
.
এরকুল পোয়ারোকে লেখা ডিটেকটিভ ইনসপেক্টর হার্ড ক্যাসেলের চিঠি
প্রিয় মিঃ পোয়ারো,
ঘটনার একটা নির্দিষ্ট ছবি এখন আমাদের হাতে এসেছে। সবকিছু আপনার দেওয়া তথ্যের উপর ভিত্তি করে। আপনি যদি সাহায্য না করতেন তাহলে প্রকৃত সত্য আবিষ্কার করতে পারতাম না।
ফোয়রোর মিঃ ভুগেসাউন সপ্তাহখানেক আগে ইউরোপের উদ্দেশ্যে যাত্রা করেন। কানাডা থেকে ইউরোপ যাবার উদ্দেশ্যে বেরিয়েছিলেন তিনি। ফিরে আসার ব্যাপারটা ছিল অনিশ্চিত।
ফোয়রোর মন্টসর পরিবারের সঙ্গে মিঃ ভুগেসাউনের দারুণ বন্ধুত্ব। তাই প্রচুর সম্পত্তি রেখে যান উত্তরাধিকারীর জন্য। কিছুদিন পরে পেটলবারিতে যোগোভ ব্ল্যাণ্ড বলে এক ব্যক্তির খোঁজ পাওয়া যায়। দেখা যায় স্ত্রী ভ্যালেরী ব্ল্যাণ্ডই ঐ অগাধ সম্পত্তির একমাত্র উত্তরাধিকারিণী। ভ্যালেরী ঐ ভদ্রলোকের ভাইয়ের যে মন্টেসর পরিবারের মেয়ে যোগোফ ব্ল্যাণ্ডের প্রেমে পড়ে। বাড়িতে না মেনে নেওয়ায় তারা বিয়ে করে। এতে পরিবারের কর্তা মিঃ হেনরি খুব রেগে গেছিলেন। মেয়েদের সঙ্গে সব সম্পর্ক ত্যাগ করেন। মিঃ জুগেলিন ইংল্যান্ড গেলে ব্ল্যাণ্ডের ওখানে যেতে সে বরাবরই ভ্যালেরী অনুগামী।
এই মৃতদেহ কোয়েনটির ভূগেস। বাড়ির রং করার সময় স্নো ফকস্ লী বাজ পাওয়া যায়। মিসেস মাটিনডেল ও ব্ল্যাণ্ড দুই বোন। মিসেস মাটিনডেলের বিরুদ্ধে সাক্ষ্য প্রমাণ পাওয়া যায়নি। তবে অপরাপর ব্যাপারে তার ভূমিকা আছে। মিসেস ব্ল্যাণ্ডের ক্ষেত্রে অসুবিধা হবে না। অদূর ভবিষ্যতে তাকে গ্রেপ্তার করা যায়। মিঃ ব্ল্যাণ্ডের স্ত্রী শত্রুদের হাতে মারা যান। তখন ব্ল্যাণ্ড হিলাজাকে বিয়ে করেন। এসব তথ্য প্রতীতি।
আপনার বিশ্বস্ত
হার্ড ক্যাসেল
সুসংবাদ মিসেস ব্ল্যাণ্ড গ্রেফতার হয়েছেন। অপরাধের দায়িত্ব তিনি তার স্বামী ও বোনের ঘাড়ে চাপিয়েছেন। উনি ভেবেছিলেন যে, ওরা ভদ্রলোককে শুধু নেশা করাতে যাবে, তিনি ঐ অবস্থায় হিলস মার্টিনডেলকে চিনতে নাও পারেন। এটাই সম্ভাব্য কাহিনী।
কোর্ট বেলা মেয়েটি এক মহিলা মার্টিনডেলকে শনাক্ত করেছে। উনি দুটি ঘড়ি পান। ম্যাকলটন ব্ল্যাণ্ডের বক্তব্য ভ্যানে মিঃ ডুগেস ক্লিকে দেখেছিলেন। ভ্যানটা শেষ পর্যন্ত ব্ল্যাণ্ডের গ্যারেজে ঢুকেছিল।
কলিন ল্যাম্ব শীলাকে বিয়ে করেছে। কলিন আবেগপ্রবণ।
শুভেচ্ছাসহ
রিচার্ড হার্ড ক্যাসেল