–কিন্তু সত্যি এটাই। একটা কথা বলবেন?
–বলুন।
–আমি উড়োচিঠির সম্বন্ধে কিছু বলতে চাই।
–বেশ তো।
–সব সময় এগুলো মিথ্যে হয়, তাই না?
–অনেক সময়।
–না সব সময়।
–আমি তা বলতে পারি না।
–এ ধরনের চিঠিগুলো ভীরুতা, বিশ্বাসঘাতকতা আর নিচু মনের লক্ষণ।
–আমি আপনার কথা সমর্থন করি।
নিশ্চয়ই আপনি এগুলোর বিষয়বস্তু বিশ্বাস করেন না?
–খুব কঠিন প্রশ্ন। না। আর আমি একবর্ণও বিশ্বাস করি না এইসব বিষয়ের।
শেলা প্রবলভাবে আপত্তি জানিয়ে হঠাৎ বিদায় নিলেন। ভুরু কুঁচকালেন পোয়ারো।
সব ব্যাপারটাই গোলমেলে। শেলা তার আগমনের কারণ বিশ্বাস করেন না। তার মানে একটা অজুহাত এটা। কিন্তু ভয় দেখানো উড়োচিঠির সম্পর্ক কি এর সঙ্গে? শেলাই কি লরা আপওয়ার্ডের সনাক্ত করা ছবির মানুষ? তাহলে কি শেলা লিলি গ্যাম্বল? লিলির সম্বন্ধে সর্বশেষ খবর সে আয়ার্ল্যাণ্ডে ছিল। তার পরিচয় ছিল একজন স্টেনোগ্রাফার। তবে কি সেই সূত্রেই সেখানে ডাক্তারের সাথে পরিচয় তার? ডাক্তার লিলির অতীত ইতিহাস না জেনে বিবাহ করেছেন তাকে? এ সবই সম্ভাবনার কথা। কিন্তু সত্যি হতেও পারে। হঠাৎ ঠান্ডা হাওয়া বইতে শুরু করায় পোয়ারো বাড়িতে ঢুকলেন। ইস, তিনি যদি খুনের হাতিয়ারটা খুঁজে বের করতে পারতেন। হঠাৎ বিদ্যুৎ চমকের মত তার মনে হল, যেন অস্ত্রটা তিনি কোথাও দেখেছেন। কোথায়?
.
পোয়ারো ভেবে অবাক হচ্ছিলেন কি করে চোখের এত সামনে থেকেও অস্ত্রটা তার নজর এড়িয়ে গিয়েছিল এতদিন আশ্চর্য। বইয়ের আলমারির ওপরেই ওই তো ওটা রাখা আছে। ঠিক জানলার ধারে। লং মিডোস-এ আসার পরই তো ওখানে ওটা তার দেখার কথা। ওখানে আছে গোড়া থেকেই।
হাতে তুলে পোয়ারো পরীক্ষা করলেন। ধার আছে, বেশ ভারীও। বাড়িমারার ভঙ্গি করছেন হাতে তুলে এমন সময় কুকুর দুটোর পেছন পেছন মরিন ঘরে ঢুকলেন, পোয়ারোকে হালকা গলায় বললেন, আপনি কি খেলা করছেন মিঃ পোয়ারো চিনি গুড়োবার যন্ত্রটা নিয়ে?
–এটা বুঝি চিনি গুঁড়োবার যন্ত্র?
-হ্যাঁ, অথবা বলতে পারেন হাতুড়িও, ঠিক আমি জানি না। দেখতে কিন্তু মজার। হাতলে ঐ পাখিটা থাকার জন্য, তাই না?
পোয়ারো যন্ত্রটা ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে দেখছিলেন–পেতলের তৈরি ভারী বাটালির মত। যথেষ্ট ধার আগায়। হালকা নীল, লাল পাথর বসানো আছে জায়গায় জায়গায়। হাতলে ছোট্ট পাখিটার চোখ দুটো চকচক করছে।
যন্ত্রটা মরিন হাতে নিয়ে তুলে কাউকে মারার মত ভঙ্গি করলেন।
–কাউকে এটা দিয়ে মারা খুব সহজ, না?
পোয়ারো তীক্ষ্ণদৃষ্টিতে মরিনের দিকে তাকালেন, শিশুর সরলতা আর কৌতুক মাখানো মরিনের চোখে।
মরিন আবারও বললেন, মস্তিষ্ক পর্যন্ত এটা দিয়ে বিধিয়ে ফেলা যায়, কি বলেন? জনিকে আজই বলছিলাম জীবনে যদি আমার ক্লান্তি আসে তবে এটাই আমার বন্ধুর কাজ করবে।
এবার মরিন হাসতে হাসতে ওটা রেখে দিলেন।
–আমি কেন যেন এঘরে এসেছিলাম? দূর ছাই, মনে পড়ছে না। যাক গে, দেখি হয়ত জল লাগবে আবার পুডিং-এ।
ঘর থেকে মরিন বেরিয়ে যাবার আগেই তাড়িতাড়ি পোয়ারো জিজ্ঞেস করলেন, ভারতবর্ষ থেকে ফেরার সময় বোধহয় এটা নিয়ে এসেছেন?
-না তো। ওটা বি অ্যাণ্ড বি থেকে বড়দিনের সময় কেনা।
–বি অ্যাণ্ড বি? সেটা আবার কি?
-মানে ব্রিং অ্যাণ্ড বাই। অর্থাৎ আপনার কোনো প্রয়োজনে লাগে না এমন জিনিস ওখানে নিয়ে গিয়ে তার বদলে নিজের প্রয়োজনীয় জিনিস কিনে নিলেন। অবশ্য ওখানে সেরকম দরকারী জিনিস অবশ্য কিছু থাকে না। আমি একটা কফি পটও এটার সঙ্গে এনেছিলাম। আসলে আমার পটের নল ও বাটালির হাতলের পাখিটা খুব পছন্দ হয়ে গিয়েছিল। সম্ভবত কফি পটটা বাগদাদ থেকে কেনা, ওয়েদারবিরা সেরকমই বলেছিলেন। অথবা পারস্যের জিনিসও হতে পারে।
-তাহলে ওয়েদারবি পরিবারের সম্পত্তি ছিল এটা?
-হ্যাঁ। এরকম অনেক জিনিস আছে ওদের। যাকগে এবার যাই, দেখতে হবে পুডিংটা। বেশ ছোট কফি পটটা। তামার তৈরি। পটের আকারের তুলনায় বেশি রকম লম্বা নলটা যা পোয়ারোকে কোনো পুরনো কিছু বিষয় মনে করিয়ে দিল যেন।
মরিন বেরিয়ে গেলে বাটালিটা নিয়ে পোয়ারো গেলেন জানলার ধারে। আগার ধারালো মুখটা একটু যেন বিবর্ণ হয়ে গেছে বলে মনে হল তার। অস্ত্রটা নিয়ে একটু দ্বিধা করে সোজা চলে এলেন নিজের শোবার ঘরে। একটা বাক্সে ওটাকে পুরে সুন্দর করে কাগজ দিয়ে প্যাক করে বাড়ি থেকে বেরিয়ে গেলেন। তিনি নিশ্চিত যে এ জিনিসটার কেউ খোঁজ করবে না কারণ এ বাড়ির জিনিস বড় আগোছালো। মিসেস আপওয়ার্ডের বাড়িতে মিসেস অলিভারের জোর আলোচনা চলছে রবিনের সঙ্গে।
-এরিয়েন, কিছুতেই আমি বুঝতে পারছি না, আপনার গোয়েন্দাকে হঠাৎ আপনি নিরামিষাশী করতে গেলেন কেন।
কি করে বলব? জানি না কেন এরকম অদ্ভুত একটা লোকের কথা আমি ভাবলাম। ফিনল্যাণ্ডের অধিবাসীদের সম্বন্ধে আমি কিছুই জানি না, অথচ ওদেরই একজনকে গোয়েন্দা বানালাম না। যদি একবার পাঠক লেখককে পছন্দ করে ফেলে তখন আর থামা যায় না। আমার তো মনে হয় আমার বইতে যেমন ধরনের খুন হয় আমি তার চেয়ে নিজেই ঢের ভালো খুন করতে পারি। আমার বই তবুও সবাই পছন্দ করে।
–এটা কিন্তু ভালো প্লট হবে। একজন খাঁটি গোয়েন্দা সভেন জারসন কে খুন করলেন আপনি আর আপনার মৃত্যুর পর সেই বই প্রকাশিত হল।