না আমি টেনিস খেলি না, সময় পাই না। তবে কি ক্রিকেট খেল।
সে ছোটোবেলায় খেলতাম।–অ্যাডাম মনে মনে ভাবতে লাগল যে তিনি কোন মতলবে ক্রীড়ামঞ্চে এসেছিলেন।
২. আততায়ী
সার্জেন্ট গ্রীন হাস্ট্রীট সাইপ্রিয়ান থানায় রাতের ডিউটিতে বসে হাই তুলছিল। টেলিফোন বেজে উঠতেই রিসিভার তুলে নিলো…নিমেষে তার ভঙ্গী পাল্টে গেল। তাড়াতাড়ি কাগজ টেনে লিখতে শুরু করল।
হ্যাঁ, মোডোব্যাঙ্ক, আচ্ছা কি নাম, এস.পি. আর এন-জি, জি? গ্রীনে জি? আচ্ছা ই-আর, প্রিন্সার।
মেডোব্যাঙ্কে খোলা দরজা দিয়ে আলোর রশ্মি এসে ঠিকরে পড়ছে। মিস বুলস্ট্রোড নিজে এসে গোয়েন্দা ইনসপেক্টর কেলসিকে অভ্যর্থনা করলেন। মহিলাটি ইনসপেক্টরের মুখচেনা। অবশ্য এ তল্লাটে এমন কেউ নেই যে তাঁকে চেনে না। এত গুণ্ডগোলের মধ্যেও মহিলাটি আচরণের সমতা হারাননি। সম্পূর্ণ পরিবেশ যেন তার আয়ত্তেই রয়েছে।
আমি ডিটেকটিভ ইনসপেক্টর কেলসি।
প্রথমে আপনি কি করতে চান ইনসপেক্টর? ক্রীড়ামঞ্চে যাবেন, না ঘটনার বিবরণ শুনবেন।
নিশ্চয়ই। আমি সঙ্গে ডাক্তার নিয়ে এসেছি তাকে আর আমার দুজন লোককে যদি দেখিয়ে দেন মৃতদেহ কোথায় আছে তাহলে আপনার সঙ্গে কটা কথা সেরে নিই।
মিস বুলস্ট্রোডের পেছনে পেছনে কেলসি বসবার ঘরে ঢুকলো।-মৃতদেহ প্রথমে কে দেখেছিল?
মিস জনসন, আমাদের মেট্রন। একটা মেয়ের কানে ব্যথা হয়েছিল, মিস জনসন তার ঘরে গিয়ে দেখাশোনা করছিলো। এমন সময় পর্দাটি ঠিকমতো খোলা নেই দেখে ঠিক করতে গিয়ে দেখে ক্রীড়ামঞ্চে আলো জ্বলছে। তখন রাত প্রায় একটা-ওখানে তো আলো জ্বলবার কথা নয়।
হু! মিস জনসন কোথায়?
এখানেই আছে ডেকে দেব কি?
এখন থাক… তারপর কি হল বলুন?
মিস জনসন তখন আমার আর এক সহকর্মী মিস চ্যাডউইককে ডেকে তুললো। দুজনে মিলে ওপাশের দরজা দিয়ে যখন নেমে যাচ্ছিল তখন বন্দুকের শব্দ শুনতে পায়। শুনেই একদৌড়ে তারা ক্রীড়ামঞ্চে হাজির হল, সেখানে…।
কিন্তু তার আগে নিহত মহিলাটি সম্বন্ধে কিছু বলুন
ওর নাম মিস গ্রেস স্প্রিঙ্গার।
আপনার এখানে কতদিন ছিলেন।
এই পরেই এসেছিলেন।…আগের ক্রীড়া শিক্ষয়িত্রীটি কাজ ছেড়ে চলে গেলেন অস্ট্রেলিয়া।
মিস স্প্রিঙ্গার সম্বন্ধে আপনি কি জানেন?
তার পরিচয় পত্রগুলো বেশ ভালোই ছিল।
ব্যক্তিগত পরিচয় ছিলো না আগে।
না।
এমন ঘটনা কেন ঘটতে পারে বলতে পারেন। কোনো মতামত? উনি কি অসুখী ছিলেন? কোনো প্রেমঘটিত?
সেরকম আমি কিছু শুনিনি। আমার তা মনে হয় না, ওর ধারণাটাই ছিলো অন্যরকম। দুনিয়ায় যে কত আশ্চর্য ঘটনা ঘটে।
মিস জনসনকে কি ডেকে দেবো?
আচ্ছা মিস বুলস্ত্রোড় তাহলে আমি মিস জনসনের সঙ্গে কথা বলি কেমন?
মিস বুলস্ট্রোড গিয়ে মিস জনসনকে নিয়ে এলেন।
মৃতদেহ আবিষ্কার করবার পর মিস জনসন ভয় কাটানোর জন্য বেশ খানিকটা ব্র্যাণ্ডি খেয়ে নিয়েছিল। ফলে কথাটথা তার বেড়ে গেছে।
এলসপেথ, ইনি গোয়েন্দা ইনসপেক্টর কেলসি। তুমি মাথা ঠিক রেখে একে সব কথা বলো, যা যা ঘটেছিলো।
মিস জনসন বলে, উঃ সাংঘাতিক ভয়ঙ্কর, জন্মে কভূ দেখিনি। বিশ্বাস করতেই পারছি না, সত্যি বলছি। বিশ্বাসই হয় না, শেষ মিস স্প্রিঙ্গার
বুদ্ধিমান গোয়েন্দা কেলসি সুরের রেশ বুঝে জেরা করবার রীতি পাল্টে ফেললো। মিস ম্প্রিঙ্গারকে খুন করা হয়েছে দেখে কি আপনি অবাক হয়েছেন?
হু…তা তো হয়েছিই। উনি কেমন শক্তসমর্থ মানুষ ছিলেন, কেমন মেজাজী …দুটো চোর একসঙ্গে এলেও তার সঙ্গে এঁটে উঠতে পারতো না।
চোর?…ক্রীড়ামঞ্চে চুরি করবার মতো কিছু ছিল।
না…মানে…সাঁতারের পোশাক ও খেলার সরঞ্জাম আছে।
অর্থাৎ ছিঁচকে চোর।…কিন্তু তার জন্য কি কেউ দরজা ভাঙবার মতো কষ্ট স্বীকার করবে? আচ্ছা দরজার তালা কি ভেঙ্গেছিলো।
আঁ! লক্ষ্য করিনি তো, যখন আমরা ওখানে পৌঁছলাম দরজা খোলাই ছিল। কাজেই মিস বুলস্ট্রোড বলেন, না ভাঙেনি।
ও চাবির ব্যবহার করেছে। মিস স্পিঙ্গারের সঙ্গে কি সকলের সদ্ভাব ছিল?
তা–ঠিক জানি না, এখন তো তিনি মারা গেছেন। মিস জনসনের দিকে তাকিয়ে ইনসপেক্টর বলে, অর্থাৎ, তাকে আপনি পছন্দ করতেন না। তাই তো?
আমার মনে হয় কেউই তাকে পছন্দ করতো না। ভয়ানক মূর্খরা ছিলেন তিনি, তবে নিজের কাজে ভীষণ পারদর্শী ছিলেন, কী বলেন–মিস বুলস্ট্রোড?
নিশ্চয়ই
কেলসি এবার বললো, তাহলে কী কী হয়েছিলো। ঠিক করে বলুন তো মিস জনসন?
আমাদের একজন ছাত্রী জীনের কানের ব্যথা হয়েছিল। আমি একটু ওষুধ লাগিয়ে আবার তার বিছানায় শুইয়ে দিলাম। তক্ষুনি দেখি জানালার পর্দা আধখোলা, ভাবলাম হাওয়া লাগানো মেয়েটার পক্ষে ঠিক নয়, তাই পর্দাটি বন্ধ করে দিই। আমাদের মেয়েরা অবশ্য সবাই জানালা খুলেই শোয়। বিদেশী ছাত্রীরা যা একটু গোলমাল করে। আমি জানালা লাগাতে গিয়ে দেখলাম কী আশ্চর্য, তখন দেখি ক্রীড়ামঞ্চে আলো। স্পষ্ট দেখা গেল। আলোটা যেন ঘুরে বেড়াচ্ছে।
মানে আপনি বলছেন যে ওটা বিজলীর আলো ছিল না টর্চের আলো।
হা নিশ্চয়ই তাই। ভাবলাম এতরাতে ওখানে
আপনি কী ভেবেছিলেন?
মিস জনসন একবার মিস বুলস্ট্রোডের দিকে দেখে নিয়ে আমি ঠিক বুঝিনি, মানে…আমি… আমি তখন হয়তো জিনিসটা সম্বন্ধে ভাবিইনি
মিস বুলস্ট্রোড বললেন মিস জনসন বোধহয় ভেবেছিলেন যে কোনো ছাত্রী হয়তো ওখানে রাতের অভিসারে গেছে। তাই না…এলসপেথ?