- বইয়ের নামঃ ক্যাট অ্যামঙ্গ দ্য পিজিওনস
- লেখকের নামঃ আগাথা ক্রিস্টি
- বিভাগসমূহঃ অনুবাদ বই, রোমাঞ্চকর,গোয়েন্দা কাহিনী
ক্যাট অ্যামঙ্গ দ্য পিজিওনস
১. পূর্বাভাস–গ্রীষ্ম পর্ব
গ্রীষ্মপর্বের প্রথমদিন মেডোব্যাঙ্ক স্কুলের কাকড় বিছানো চওড়া পথটা পাক খেয়ে ঘুরে গেছে। শেষবিকেলের রোদ যেখানটায় চকচক করছে ঠিক তার ভেতরে মাঝখানটায় দাঁড়িয়ে মিস ভ্যান্সিটার্ট। পরনে তার ছিল কোট আর স্কার্ট। তার মাথার চুল সুবিন্যস্ত।
প্রথমেই দেখে অজানা লোকেরা তাকে মিস বুলস্ট্রোড বলে ভুল করে। তারা যদি জানত যে মিস বুলস্ট্রোডের ঘরটি ঈশ্বরের বেদী, পুণ্যাত্মা না হলে সেখানে প্রবেশ নিষেধ তাহলে অবশ্যই তারা ভুল করত না।
স্কুলের কাজকর্মে মিস ভ্যান্সিটার্টের পাশেই মেডোব্যাঙ্ক স্কুলের মিস চ্যাডাউইনের স্থান। বেশ স্বচ্ছন্দ চরিত্রের মহিলা। মেডোব্যাঙ্ক ওকে ছাড়া কখনই করা যায় না। স্কুলটির গোড়াপত্তন করেন তিনি আর বুলস্ট্রোড সামনের দিকে ঝুঁকে ঝুঁকে হাঁটেন। কথাবার্তা তার ভাসা ভাসা কিন্তু অংকে ভীষণ মাথা।
মিস ভ্যান্সিটার্টের স্বাগত অভ্যর্থনা ভেসে বেড়াচ্ছে, তিনি জিজ্ঞাসা করছেন মিসেস আর্নল্ডকে, তিনি ভালো আছেন কিনা। লিডিয়াকেলকে জিজ্ঞাসা করলে, তিনি বেশ জাহাজে চড়ে গ্রীস বেরিয়ে এলেন, ভালো ফটো তুলেছেন কিনা।
তিনি বললেন লেডি গারনেটকে, নিশ্চয়ই! আটক্লার্কের ব্যাপারে তিনি বুলস্ট্রোডকে যে চিঠি দিয়েছেন, তা তিনি পেয়েছেন–সব ব্যবস্থা হয়ে গেছে। তারপর জিজ্ঞাসা করলেন মিসেস বার্ডকে যে তিনি কেমন আছেন। তারপর তিনি বললেন যে তার মনে হয় না আজ মিস বুলস্ট্রোড একটুও সময় পাবেন আলোচনা করার। তিনি বললেন যে একটা কাজ করা যাক তিনি মিস বোয়ানের আলোচনা করেন।
পামেলাকে বললেন যে তার ঘরটা বদলে দিয়েছেন আপেল গাছের কাছে। তারপর বললেন যে এবার বসন্তকালটা ভীষণ বাজে যাচ্ছে। তারপর তিনি বলনে যে তার এরোপ্লেনটা ভাল। তারপর বললেন মাদামকে যে, তার সৌভাগ্য যে তিনি এসেছেন।
মাদাম বললেন, ওইটা সম্ভব হবে না। তিনি ভয়ানক ব্যস্ত।
প্রফেসারকে নমস্কার করলেন, নতুন কিছু খুঁড়ে তুললেন কিনা তাকে জিজ্ঞাসা করলেন।
মিস বুলস্ট্রোডের সেক্রেটারি অ্যান শ্যাপল্যান্ড দোতলায় একটি ছোটো ঘরে টাইপ করছে। সে বেশ ভালো, চাইলে মনোরমা হয়ে উঠতে পারে কিন্তু সেদিকে তার খেয়াল নেই। জীবন তাকে শিখিয়েছে কাজে মন দেওয়া। দক্ষতা দেখাতে। তাহলেই অনেক বেদনা অনেক জটিলতা এড়ানো যাবে। এই মুহূর্তে তার একমাত্র লক্ষ্য এই বিখ্যাত মেয়েস্কুলের বিখ্যাত হেড মিস্ট্রেসের নিপুণা দেখেছে জানালা দিয়ে। অস্টিন এসে ঢুকলো। গাড়ি থেকে বাপ আর মেয়ে নামে। বাপটির ভঙ্গী বিব্রত। মেয়েটি শান্ত।
প্রায় সঙ্গে সঙ্গে ভেতরে থেকে মিস ভ্যান্সিটার্ট এসে বলে, মেজর হারগ্রীভস! আর এই বুঝি অ্যালিসন! তারপর তিনি ভেতরে আসার কথা বললেন অ্যালিসনের ঘরটা দেখে যেতে বললেন।
মুচকি হেসে অ্যানি টাইপ করতে করতে মনে মনে আওড়ায় যে ভ্যান্সিটার্ট কি সুযোগ্য সহকারী সব কায়দাকানুন তার রপ্ত।
দোরঙা গাড়ি মেটে লাল ও আকাশী। মেজর অনারেবল অ্যালিস্টোয়ার হারগ্রীভসের প্রাচীন অস্টিনখানার পেছনে দাঁড়ালো।
ঘরের দরজা খুলে দিতেই এসে দাঁড়াল এক পেল্লায় মানুষ। কালো চাপাদাড়ি ঝোলা আলখাল্লা। আর তার পেছনে একটা ছিপছিপে কালো মেয়ে।
ইনিই বোধহয় প্রিন্সেস, স্কুলের পোশাকে ভাবা যাচ্ছে না।
মিস ভ্যান্সিটার্ট আর মিস চ্যাডউইক দুজনেই আসেন। তাদেরকে দেবী দর্শনে নিয়ে যাওয়া হবে। মিস বুলস্ট্রোডকে নিয়ে ঠাট্টা তামাশা করার কথা কারোর কানেই ওঠে না। তিনি একেবারে অনন্যা।
সাধারণত অ্যানি কাজে ভুল করে না। এই তো সেইদিন সে ছিল এক বিরাট তেল কোম্পানির উচ্চতম অফিসারের একান্ত সচিব। অসহিষ্ণুতা এবং বিশ্রী হাতের লেখার কথা সবাই জানে। প্রাক্তন মনিবদের মধ্যে আছে দুজন ক্যাবিনেট মন্ত্রী এবং একজন বড় সরকারী অফিসার, তার কাজের জগত ছিল পুরুষ ঘেঁষা। এখন এই বিচিত্র নারী জগত এও এক নারী জগত। মালয়, বার্মা পৃথিবীর যে কোনো প্রান্ত থেকে ফিরে আসছে মাঝে মাঝে, সব সময়ে ওকে বিয়ে করতে চাওয়া কিন্তু তার বউ হওয়ার মধ্যে যে কোনো বৈচিত্র্যেই নেই।
একমাত্র আশি বছরের বুড়ো মালীটি ছাড়া এখন চারপাশে শুধুই মাস্টারনী। এখানেই অ্যানের জন্য কিছু বিস্ময় অপেক্ষা করছিল।
বাইরে তাকালে নজরে পড়লো গাড়িবারান্দায় একটা নোক বেড়ার গাছ ছাঁটছে। গায়ের রং রোদে পোড়া। রজারগে জোয়ান। অ্যান অবাক। কোনো বিশেষ উদ্দেশ্যে বোধ হয় কাজটা দিয়েছে বা প্রাণধারণের জন্য।
এখানকার মেট্রন মিস জনসন তিনি খুব ব্যস্ত, কাকে কোন ঘরে দিলে হবে, নতুন নতুন মুখদের ডেকে ডেকে আপ্যায়ন করা, পুরানো ছাত্রীদের সঙ্গে দু-চারটে কথা বলা, কাজের কি আর শেষ আছে।
ছুটির দিনগুলো নিয়েই তার ভীষণ মুশকিল। দুটি বোন আছে, পালা করে কখনো এর কাছে, কখনো তার কাছে যান বটে কিন্তু বোনেরা নিজেদের সংসারের কথাই বলে, সাতকাহন মেডোব্যাঙ্ক নিয়ে তাদের কোনো মাথাব্যথা নেই। স্কুল আবার শুরু হয়েছে তাতেই তার আনন্দ।