তা জানি কিন্তু তার দুলাইন চিঠির মধ্যেও কিছু ছিল না। শুধু পরের দিন টেনিস না গলফ খেলার কয়েকটা তুচ্ছ কথা..আমার তো মনে হয়না তখন ও জানতো যে সেই বিকেলেই ওকে রাজকুমারকে নিয়ে বেরিয়ে পড়তে হবে।
শুধু ওই কটা কথাই লেখা ছিল তাতে? আপনার কাছে কি সেই চিঠিটা আসে মিসেস সাটক্লিফ?
না ও চিঠি থাকবে কেন? ওটা কি কোনো দরকারের? তক্ষুনি ছিঁড়ে ফেলেছি।
রাখতে যাবই বা কেন বলুন? মিসেস সাটক্লিফ মাঝের দরজা খুলে ভেতরে যেতেই হঠাৎ থমকে দাঁড়ান, দেখে এক ছোকরা একটা স্যুটকেসের ওপর ঝুঁকে পড়ে কি যেন দেখছে। ওকে দেখেই দাঁড়িয়ে বলে ওঠে, আমি বিজলী মিস্ত্রী, ওদিককার আলোগুলোর কিছু হয়েছে?
আলোর বোতাম টিপে বললো, না ঠিক আছে ভাই। তাহলে বোধহয় ঘরের নম্বর ভুল, তাড়াতাড়ি যন্ত্রপাতি নিয়ে দরজার দিকে চলে যায়। সাটক্লিফের দিকে চেয়ে, মাপ করবেন, বলেই চলে যায়।
টেলিফোনটা তুলে নিল সাটক্লিফ। আমি ৩১০ নম্বর থেকে বলছি, কোনো মিস্ত্রী পাঠিয়েছিলেন এ ঘরে, হা…আচ্ছা ধরছি, টেলিফোনটা রেখে সাটক্লিফ বলে এঘরে কোথাও কোনো আলো খারাপ হয়নি, হোটেল থেকেও কোনো মিস্ত্রী পাঠায়নি।
আঁ এ লোকটা চোর-টোর নাকি, তাড়াতাড়ি তার ব্যাগ খুলে দেখে, না, ব্যাগ থেকে কিছু নেয়নি। টাকাকড়ি সব ঠিক আছে।
রাজকুমার আলি ইউসুফ বোধহয় আপনার ভাইকে একটা জিনিস রক্ষা করতে দিয়েছিলেন। তাই তিনি হয়তো ভাবছিলেন নিজের কাছে রাখার চেয়ে আপনার মালপত্রের ভেতরে ঢুকিয়ে রাখা বেশি নিরাপদ।
না না, হতেই পারে না।
একবার খুঁজে দেখলে হয়।
খুঁজে দেখবেন মানে, আঁ, আমার সব জিনিসপত্র আবার সব খুলবেন, যেন কান্নার সুরে আঁতকে ওঠে।
ঝামেলা অনেক জানি। অসুবিধাও প্রচুর হবে। কিন্তু সমস্যাটা যে গুরুতর, কিছু ভাববেন না। আমার মায়ের জিনিসপত্র বেঁধে দিয়েছি। মালপত্তর গোছাতে আমি ওস্তাদ। অতএব মিসেস সাটক্লিফ প্রস্তাবে রাজি হতে বাধ্য হল, আচ্ছা যা ভালো বোঝেন করুন। অতই যদি জরুরী।
ভীষণ জরুরী বিশ্বাস করুন।
জেনিয়া এসে অবাক। মালপত্তর আবার খুলেছই বা কেন আবার গুছোচ্ছেও কেন? মিসেস সাটক্লিফ বললেন, আমাকে জিজ্ঞাসা করছো? এরা ভাবেন যে তোমার বব মামা আমার মালপত্তের ভেতরে কিছু ঢুকিয়ে রেখে গেছেন।
ডোরেক ওকোনর বেশ হাসিখুশি মুখ করে বলে, সব খুলে দেখলাম কিছুই পাওয়া গেল না। সব গুছিয়ে রাখা যাক। টেলিফোনে এক কাপ চায়ের কথা বললেন মিসেস সাটক্লিফ। ওকোনর মালপত্র গোছাতে বসে নিপুণ হাতে চটপট কাজ করে। মিসেস সাটক্লিফ প্রশংসার চোখে বলে আপনার মা তো আপনাকে বেশ শিখিয়েছে।
স্থানীয় সংবাদপত্রের খবরে প্রকাশ : গতকাল ম্যাজিস্ট্রেটের আদালতে এক ব্যক্তিকে পেশ করা হয়েছিল, তার বিরুদ্ধে অভিযোগ যে, সে চুরি করার উদ্দেশ্যে মিঃ হেনরি সাটক্লিফের বাড়িতে অন্যায়ভাবে প্রবেশ করেছিল। মিসেস সাটক্লিফের শয়নকক্ষে ঢুকে লোকটা সব জিনিসপত্র লণ্ডভণ্ড করে রেখেছিল। সেই রবিবার সকালে বাড়ির বাসিন্দারা সবাই গীর্জায় গিয়েছিলেন, এবং সেই অবসরে লোকটা অতসব কাণ্ড করতে পেরেছিলো। প্রকাশ্য আদালতে লোকটা বলেছে যে তার নাম অ্যানড বল এবং তার কোনো নির্দিষ্ট ঠিকানা নেই। সে স্বীকার করেছে। সে কোনো কাজকর্ম না থাকায় অর্থ উপার্জনের চেষ্টায় ওই কাজে সে রত হয়েছিল। জেনিয়া তখন বললো, কিছুতেই বুঝতে পারছি না পুলিশ কি করে টের পেলো আমাদের বাড়িতে চুরি হয়েছে। স্বামী বললো, তুমি ঠিক জানো তো জোয়ান একেবারে নিঃসন্দেহ। তারপর জোয়ান জেনিয়াকে বললো, মেডোব্যাঙ্ক কিন্তু সাধারণ স্কুল নয় আর তোমাকে যেন কেউ লোভী না বলে। জেনিয়া বললো যে তার মেডোব্যাঙ্কে যেতে ভালো লাগছে না। আমার এক বন্ধুর জ্যাঠার মেয়ে সেখানে পড়ত। সেখানে রানীর সঙ্গে যদি নেমন্তন্ন খেতে বসে তো কেমন করে বসবে, কথা বলবে খাবে, বিচ্ছিরি।
বুঝতে পারছ না তোমার কত ভাগ্য, মিস বুলস্ট্রোড কি আর সব মেয়েকে নেন। নেহাত তোমার বাবার প্রতিষ্ঠা আর তোমার মাসীর প্রতিপত্তি ছিলো তাই।
.
মেডোব্যাঙ্ক স্কুলের পত্রগুচ্ছ
জুলিয়া আপনজন মাকে লিখলো মা এতদিনে আমার সব চেনা হয়ে গেছে। বেশ ভালো লাগছে। আরেকজন নতুন মেয়ে এসেছে জেনিয়া, আমরা দুজনে বন্ধু হয়েছি, দুজনে টেনিস খেলি…। ইত্যাদি।
জেনিয়া সাটক্লিফ তার মাকে লিখলো—
মামনি,
অতটা খারাপ লাগছে না। এখানে যতটুকু আশা করেছিলাম তার চেয়ে ভালো সময় কাটছে, আবহাওয়া চমৎকার…ইত্যাদি।
সবশেষে তোমাদের আদরের জেনিয়া।
.
প্রারম্ভের দিনগুলো
কতরকম গল্পগুজব হয় শিক্ষয়িত্রীদের ঘরে। কে কোন দেশে গিয়েছিল কি দেখেছিল। একসময়ে শুরু হল অন্য কোনো বিষয় নিয়ে আলোচনা। নতুন তৈরি ক্রীড়ামঞ্চে সবাই উৎসাহিত, দালানটা যে বেশ সুন্দর হয়েছে সেকথাও মোটামুটি সবাই স্বীকার করলেও প্রত্যেকেরই কিছু না কিছু বক্তব্য আছে। বড়ো গলায় মিস প্রিয়ার বললো, দুনিয়ার অকৃতজ্ঞতার কি শেষ আছে…মানুষ এত ভীরু যে সত্যি কথাটা স্বীকার করে নেবার মতো সাহস নেই–আমি কিন্তু সোজা সামনে গিয়ে দাঁড়াই। কতবার যে কত লোকের কলঙ্ক ফাঁস করে দিয়েছি। ওসব আমি গন্ধে গন্ধে টের পাই।
আঃ কী আশ্চর্য সেসব কাহিনী…মাদমোয়াজেল ব্লাশ যেন অবাক, আপনার ভালো লাগে এইসব করতে?