এডমাণ্ডুসন বলেন, যেদিন কাণ্ডটা শুরু হলো সেদিন বব আমাকে টেলিফোন করে কথাগুলো বললো, একটা ব্যাঙ্কের সামনে আমরা দেখা করতাম। কিন্তু ঠিক ওই জায়গাটায় দাঙ্গা আরম্ভ হল, পুলিশ রাস্তা বন্ধ করে দিলো, ববের সঙ্গে আর সংযোগ করা গেল না। সেই বিকেলেই আলিকে নিয়ে আকাশে উড়লো। কর্নেল পাইক্যাওয়ে বললেন, বব কোত্থেকে ফোন করেছিল, এডমাণ্ডুসন বললেন না। আচ্ছা মিসেস সাটক্লিফকে চেনেন, এডমাসন বললেন, ববের দিদি, ওখানে দেখা হয়েছিল বটে।ইস্টার্নকুইন জাহাজে টিলবেরী বন্দরে মিসেস সাটক্লিফ ও তার মেয়ে দীর্ঘ সমুদ্রযাত্রার পর দেশে ফিরছেন। অনেক চিন্তা-ভাবনার পর কর্নেল একটা সিদ্ধান্তে পৌঁছে হাত বাড়িয়ে বলে উঠলেন, এখানে আসবার জন্য আপনাকে অনেক ধন্যবাদ। জন এডমাণ্ডুসন চলে গেলে বিচক্ষণ যুবকটি ঘরে ঢুকলো। পাইক্যাওয়ে বললেন, ভেবেছিলাম ওকে টিলবেরী পাঠাবো। কিন্তু স্বভাবটি একেবারেই শুকনো বৈদেশিক দপ্তরের, শিক্ষাটাই অমনি।
যখন রনি এসে ঘরে ঢুকলো তখন কর্নেলকে দেখে মনে হচ্ছিল যেন তিনি ঘুমিয়ে পড়বেন। কালচে পেশীবহুল চেহারা, দীর্ঘদেহ, স্ফুর্তিবাজ মন, বেপরোয়া স্বভাব। তার মুখের দিকে তাকিয়ে কর্নেল বলেন, মেয়েদের স্কুলে ঢুকতে পারবে?
রনি তখন ভুরু নাচিয়ে বলে, মেয়েদের স্কুল, মেডোব্যাঙ্ক একেবারে অভিজাত স্কুল। শিস দিয়ে রনি বলে, মেডোব্যাঙ্ক কল্পনাই করা যায় না। রনি বললো, তাকে কি করতে হবে, নারীহরণ।
কর্নেল বললো যে, তিনি চান যে রনি চারিদিক নজর রাখবে কি হচ্ছে না হচ্ছে আমাকে জানাবে। মনে হচ্ছে কিছুদিনের মধ্যেই মেয়েটার উপর দৃষ্টি পড়বে, কে বা কারা ওখানে গিয়ে জুটবে তা এখনো বলা যায় না। তোমার কাজ হল চোখ খুলে দেখা আর কান পেতে শোনা। সেখানে তুমি মালি সেজে ঢুকবে। তারপর কর্নেল বললো, মালির কাজে যা জ্ঞানের দরকার পারবে তো?
রনি তখন বললো, ছোটোবেলায় সে এসব অনেক করেছে। রনি বললো, মেডোব্যাঙ্কে মালির কাজ খালি আছে? কর্নেল বললো, থাকতেই হবে, ইংল্যান্ডে প্রত্যেকটা বাগানে এখন লোকের অভাব। তোমাকে কতগুলো প্রশংসাপত্র যোগাড় করে দেবো তাহলেই তারা লাফিয়ে উঠবে, উনত্রিশ তারিখে স্কুল খুলবে।
রনি বলল, তখন তার নাম কি হবে?
কর্নেল বললেন, অ্যাডাম।
রবিনসনকে দেখে মনে হবে না যে তিনি কস্মিনকালের, বরঞ্চ কোনো বিদেশী নামই হওয়া উচিত। পরিপাটি পোশাক, নাদুসনুদুস চেহারা, হলুদ চুল, উদাস চোখ, চওড়া কপাল, ঝকঝকে দাঁত একটু বেরিয়ে আছে। খাঁটি ইংরেজী উচ্চারণ। কর্নেলের সঙ্গে দেখা হতেই দুজনের সম্ভাষণ আপ্যায়ন দেখে মনে হয় দুই দেশের দুই রাজা, প্রচুর সমাদর হল।
মিঃ রবিনসন মুখে একটা চুরুট দিয়ে কর্নেলকে বললো যে তিনি যে সাহায্য করতে রাজী হয়েছেন তার জন্য অশেষ ধন্যবাদ। রবিনসন বললো কর্নেলকে যে তিনি শুনতে পেয়েছেন যে, শাহজাদা আলি ইউসুফের বিমানটা খুঁজে পাওয়া গেছে।
কর্নেল বললেন, গত বুধবার বিমানটা খুঁজে পাওয়া গেছে। উড়ানপথটা ছিল খুবই কঠিন। বিমানটাতে অবৈধ হস্তক্ষেপ ঘটেছিল আহমেদ নামে এক পুরানো মিস্ত্রীর সম্পূর্ণ বিশ্বাসী লোক। কিন্তু এখন দেখা যাচ্ছে মোটেই তা নয়। নতুন শাসনতন্ত্রে লোকটা বেশ ভালো পদ পেয়েছে।
তারপর রবিনসন একটু আফশোস করে বললেন, আহা বেচারী তরুণ রাজা আলি ইউসুফ, অসাধুতার বিরুদ্ধে বিশ্বাসঘাতকতার বিরুদ্ধে যে লড়বে সে শক্তি কই। পাবলিক স্কুলে শিক্ষাটাই তার কাল।
পাইক্যাওয়ে জানালো, হ্যাঁ আমরা বব ও তার দিদির ওপর ব্যবস্থা করবো। রবিনসন চোখবুজে বলেন, রত্নগুলো যদি তার কাছে এখনো থাকে তো বিপদ ঘটতে পারে। গুণ্ডামি দাঙ্গা মারামারি এসব আমার সহ্য হয় না।
.
যাত্রী এলো ফিরে
মিসেস সাটক্লিফ হোটেলের জানালা দিয়ে তাকিয়ে বিরক্ত হয়। কী অদ্ভুত যখন ইংল্যান্ডে আসব তখুনি বৃষ্টি হতে হবে। পাশে রাখা টেলিফোনটা বেজে উঠলো, মিসেস সাটক্লিফ রিসিভার তোলে। হ্যালো আমি মিসেস সাটক্লিফ বলছি, দরজায় টোকা মারল কে। ফোনটা রেখে দরজা খুলে দেখে একজন বিজলী মিস্ত্রী, বাতি ঠিক নেই, ঠিক করতে এসেছে। ছোকরা ঘরে ঢুকলো। সে বললো, গোসলখানা কোনদিকে? সাটক্লিফ বললো, শোবার ঘরের পেছনে। ফিরে টেলিফোন তুলে নেয়, দুঃখিত…কী যেন বললেন? আমি ডোরেক, আপনার সঙ্গে দেখা হবে কি? মিসেস সাটক্লিফ আমি আপনার ভাইয়ের বিষয়ে–কে বব? তার কি খবর পাওয়া গেছে। হা ফোনে অসুবিধা আছে। ও আচ্ছা আসুন, ওপরে চলে আসুন তিনশো দশ নম্বর ঘরে। আবার দরজায় টোকা পড়তেই খুলে দেয়। কম বয়সী এক ভদ্রলোক ভেতরে ঢুকে করমর্দন করেন। আপনি কি বৈদেশিক দপ্তরের? আমার নাম ডোরেক ওকোনর, আমারই ওপরওয়ালারা আপনার কাছে পাঠিয়েছেন, আর কাউকে পাওয়া গেল না সংবাদটা দেওয়ার জন্য। মিসেস সাটক্লিফের যেন দম বন্ধ হয়ে আসে। বলুন মারা গেছে, না?
হা মিসেস সাটক্লিফ..রাজকুমার আলি ইউসুফকে উড়োজাহাজে রামাতে বাইরে নিয়ে আসছিলেন, পথে পাহাড়ে ধাক্কা খেয়ে তিনি মারা যান।
আমাকে জানানো হয়নি কেন? আমার জাহাজে বেতারবার্তা পাঠানো হয়নি।
ডোরেক ওকোনর বললেন মিসেস সাটক্লিফকে, তার ভাই কি কোনো জিনিস দিয়েছিল ইংল্যান্ডে নিয়ে আসবার জন্যে? মানে বব কোনো ছোটো পুঁটুলি আপনাকে দিয়েছিল। ডোরেক বললেন যে আর একটা কথা তিনি জিজ্ঞাসা করবেন, একটা ভীষণ দরকারী প্যাকেট ছিল। আমাদের ধারণা দেশে নিয়ে যাবার জন্য আপনার ভাই বিপ্লবের দিন কাউকে দিয়েছিলেন। আর সেইদিনই তো তিনিই আপনার সঙ্গে দেখা করতে গিয়েছিলেন।