পোয়ারো বললেন, আপনাদের সকলেরই এই কটাদিন বেশ অশান্তিতে কাটলো। আপনাদের অস্বস্তি আর দুশ্চিন্তা আমি বুঝি, বিশ্বাস করুন। মিস বুলস্ট্রোডের কষ্ট হয়েছে সবচেয়ে বেশি। কিন্তু আপনারাও কম কষ্ট পাননি। তিনজন সহকর্মীকে আপনারা হারিয়েছেন যাদের একজন বহুদিন ছিলেন। আমি মিস ভ্যান্সিটার্টের কথা বলছি। মিস স্প্রিঙ্গার ও মাদমোয়াজেল ব্লাশ অবশ্যই নবাগত। পোয়ারো বললো যে, আপনাদের সামনেই বসে আছে সেই নির্মম হত্যাকারী।
একটা ফটো পকেট থেকে বের করেন। প্রথমে আমি এই ফটো আপনাদের দেখাতে চাই, কেলসি ফটোটা নিয়ে মিস বুলস্ট্রোডকে দেয়। মিস বুলস্ট্রোডের হাত থেকে সবাই নিয়ে দেখে।
আপনাদের সকলকেই জিজ্ঞাসা করছি…কেউ কী আপনারা ফটোর মেয়েটাকে চিনতে পেরেছেন?
সকলেই ঘাড় নাড়িয়ে বললো, না। পোয়ারো বললো, চেনা উচিত। আমি জেনেভা থেকে ফটোটা পেয়েছি…রাজকুমারী শাইস্তার।
মিস চ্যাডউইক চেঁচিয়ে ওঠে, কিন্তু এতো শাইস্তা নয়।
পোয়ারো বললেন, সেই তো কথা, আমাদের এই কাহিনীর যবনিকা উঠেছিল রামাতে সেখানে আপনারা সকলেই জানেন।
উত্তর দিকে পাহাড়ে রাজকুমার আলির বিমান ধ্বংস হয়ে পড়ে। বহুদিন সেটার কোনো খোঁজ পাওয়া যায়নি। রাজকুমার আলির দেহে একটি মূল্যবান বস্তুর সন্ধান পাওয়া গেল না। সেটি রাজকুমার সবসময় সঙ্গে সঙ্গে রাখতেন। গুজব সেটি নাকি এদেশে এসেছে।..রাজকুমার আলি ইউসুফের একমাত্র ঘনিষ্ঠ জীবিত আত্মীয়ার কাছে ছিলেন। মেয়েটি তার খুড়তুতো বোন–সুইজারল্যান্ডে স্কুলে পড়তো। ধরে নেওয়া যাক সে বস্তুটি যদি নিরাপদে রামাতের বাইরে নিয়ে আসা হয়ে থাকে তো সেটি আসলে রাজকুমারী শাইস্তার কাছে বা তার কোনো আত্মীয় বা অভিভাবকদের হাতে থাকবে, তাই কিছু কিছু অনুচর লেগে রইলো। তার কাকা আমীর ইব্রাহিমের পেছনে আর রাজকুমারীর পেছনে। জানা ছিল এর পরে সে মেডোব্যাঙ্কে আসবে, কাজেই খুবই স্বাভাবিক যে, এখানে কাউকে চাকরি নিতে পাঠানো হবে। যাতে রাজকুমারীর সাক্ষাৎপ্রার্থী সব লোকের ওপরে কড়া নজর রাখা যায়। তার চিঠিপত্র টেলিফোনের সব সংবাদ জানা যায়। কিন্তু এর চেয়েও আরো সহজ কিন্তু আরো কার্যকরী একটা পথ রাজকুমারী শাইস্তাকে চুরি করে তাদেরই কাউকে একজনকে রাজকুমারী সাজিয়ে এই স্কুলে পাঠানো হল। কাজটা মোটেই কঠিন নয় কারণ আমীর ইব্রাহিম মিশরে ছিলেন। গরমকালের শেষদিকের আগে ইংল্যান্ডে আসার তার কোনো ইচ্ছাই ছিল না। মেয়েটিকে মিস বুলস্ট্রোড চোখে দেখেননি। রাজকুমারীর অভ্যর্থনার সব ব্যবস্থাই তো তিনি লন্ডনের দূতাবাসের মাধ্যমে করেছিলেন।
.
পোয়ারোর বিশ্লেষণ
মিসেস আপজন মেডোব্যাঙ্ক স্কুলের বারান্দা দিয়ে হাঁটতে হাঁটতে ভুলে গেলো যে এইমাত্র তার চোখের সামনে এক রোমহর্ষক নাটকের অভিনয় হলো। এই মুহূর্তে মা শুধু তার সন্তান খুঁজছে। পরিত্যক্ত ক্লাসঘরে তার দেখা পেলো। জুলিয়া ডেস্কের ওপরে ঝুঁকে, একটু দেখি জিভ বার করে রচনা লেখবার দারুণ পরিশ্রমে ব্যস্ত।
মাকে দেখেই একছুটে মায়ের কাছে গিয়ে তার ওপরে ঝাঁপিয়ে পড়লো। মাকে জড়িয়ে ধরে বলে, মাগো।
পরমুহূর্তে সচেতন হল এখন তো বড়ো হয়েছে। জুলিয়া বললো, ওঃ, ভীষণ ভালো লাগছে তুমি ফিরলে বলে। জুলিয়া বলে, মিস রীচের রচনা লিখছি। অদ্ভুত অদ্ভুত বিষয় কিন্তু এটা কি লিখছো দেখি? মিসেস আপজন ঝুঁকে পড়ে লেখাটা দেখে।
পৃষ্ঠার ওপরেই শিরোনাম লেখা-রচনার বিষয় তার নিচে। নয়-দশ লাইন লেখা হয়েছে, জুলিয়ার আঁকা-বাঁকা অক্ষরে। মিসেস আপজন পড়ে দেখে হত্যার প্রতি ম্যাকবেথ ও লেডি ম্যাকবেথের মনোভাবের তুলনামূলক বৈষম্য।
.
উত্তরাধিকার
মিঃ রবিনসন নামে একজন ভদ্রলোক আপনার সঙ্গে দেখা করবে বলে এসেছেন স্যার।
ওঃ, পোয়ারো সামনের টেবিলে চিঠিটা নিয়ে চোখ বুলিয়ে বেশ চিন্তান্বিত হলেন, বললেন ভেতরে নিয়ে এসো জর্জ…।
শুধু কয়েক লাইনের চিঠি। পোয়ারো চিঠি রাখলেন..মিঃ রবিনসন ঘরে ঢুকতেই তিনি উঠে দাঁড়ান। মাথা নিচু করে অভিবাদন জানিয়ে করমর্দন করলেন তারপর চেয়ারে বসতে বললেন।
মিঃ রবিনসন বসে রুমাল দিয়ে তার মস্ত বড়ো হলুদ মুখটা মুছে মন্তব্য করলেন যে দিনটা বেশ গরম…।
মিঃ রবিনসন বলেন, কত কিছুই তো শোনা যায়…সেই বেচারী মেয়ের ছোটোবেলা থেকেই নাকি স্কুলে শিক্ষিকার ওপর প্রবল ভীতি, মনের সমীক্ষকেরা বেশ ভালো বিশ্লেষণ করে দেখতে পারবে। তবে অন্তত লঘু দায়িত্বের অনেকবার প্রাণপণ চেষ্টা করবে।
পোয়ারো বলেন, হ্যাঁ যুক্তিটা মন্দ না তবে আমার ধারণা…মাপ করবেন ওসব যুক্তি ধোপে টিকবে না।
আমিও একমত..ঠাণ্ডা মাথায় খুন একেবারে, তবু..ওর নিষ্কলঙ্ক চরিত্রের কথাটা ওরা বড় গলায় ঘোষণা করবে। দেখাবে কত বিখ্যাত লোকের ও সেক্রেটারি ছিলো। ওর যুদ্ধে চাকরির কথা বলবে। সেখানে তো কোনো দাগ নেই। অন্য পক্ষের চর সেজে গুপ্তচর বৃত্তি করতো। এত অল্পবয়স…কিন্তু দারুণ চালাক। কি প্রচণ্ড লোভ…একা একা কাজ চালিয়ে বিরাট লোভের ধন হস্তগত করা। বিরাট লাভ।
মিঃ রবিনসন সামনের দিকে ঝুঁকে বলে, ওগুলো কোথায় মিঃ পোয়ারো?
আপনি নিশ্চয়ই তা জানেন। হ্যাঁ তা তো বটেই। ব্যাঙ্কগুলো বেশ উপকারী প্রতিষ্ঠান কী বলেন। পোয়ারো হাসলেন, আমাদের কি শিবের গীত গাওয়ার প্রয়োজন আছে?