অনেক বেশি মোটা, চিন্তায় ডুবে যান পোয়ারো। খিলখিলিয়ে হেসে জেনিয়া বলে-মিস রীচকে আপনি মোটা কল্পনা করতে পারবেন না। উনি এত রোগা পাতলা ছিপছিপে তাছাড়া মিস রীচ রামাতে যাবেন কী করে? গতবার তো তার অসুখ ছিল।
পোয়ারো বললেন, আর অন্য মেয়েরা তাদের দেখোনি আগে?
দু-একজনকে দেখেছি, তাদের আগেই জানতাম। আমি তো মোটে তিন সপ্তাহ ওখানে ছিলাম। অর্ধেক মেয়েকে তো আমি চোখেই দেখিনি।
.
সুতোর গুচ্ছ
মিস বুলস্ট্রোড বললেন, আপনার সঙ্গে আমার কথা আছে আইলিন।
আইলিন রীচ তার পেছনে বসার ঘরে এসে ঢোকে। মেডোব্যাঙ্ক এখন অদ্ভুত শান্ত। মোটে জন পঁচিশ ছাত্রী আছে যাদের বাপ-মা কোন কারণে হয়তো তাদের নিয়ে যেতে পারেনি। আতঙ্ক উদ্বেগ অনেক কেটে গেছে মিস বুলস্ট্রোডের কৌশলে। তাকে দেখে মনে হয় না যে তার মনে কোনো উদ্বেগ আছে। অনায়াসে তিনি শান্ত মুখচ্ছবি বজায় রেখে চলেছেন।
অ্যানি স্যাপল্যাণ্ড মিস বুলস্ট্রোডকে বললো কিছু লোক আপনার সঙ্গে কথা বলতে চাইছে। এই স্কুল টিকবে কিনা জানিনা। জনমত কি দাঁড়াবে তা তো বলা যায় না। একেক জন মানুষ একেক রকম। শেষে দেখা যায় তার মতামত বেশি সেই নিজের মতকেই জনমতে রূপান্তরিত করে। কাজেই মনে হয় মেডোব্যাঙ্ক বন্ধ হয়ে যাবে।
মিস বুলস্ট্রোড বলেন–আপনার দেখছি ভীষণ দৃঢ় মনোভাব।
হা, এই বিষয়ে তাই। দুনিয়ায় কী আছে যার দাম এক কানাকড়িও নয়।
কিন্তু মেডোব্যাঙ্ক অমূল্য, আমি এসেই তা অনুভব করছি।
মিস বুলস্ট্রোড বলেন, আপনি যোদ্ধা। যোদ্ধাদের আমার খুব ভালো লাগে। বিশ্বাস করুন আমি সহজেই হার স্বীকার করবো না, এই যুদ্ধ আমার ভালোই লাগবে। যখন সবকিছু অত্যন্ত সহজ হয়ে ওঠে হাতের মুঠোর মধ্যে, তখন মানুষ কী বলবো-আত্মপ্রসঙ্গে চুর হয়ে থাকে?
ফলের জমি থেকে সোজা হয়ে দাঁড়াতে দাঁড়াতে অ্যানি স্যাপল্যান্ড বললো, ওই যে এলোচুল দুলিয়ে আসছে, বুঝি না বাপু সামলাই কি করে।
অ্যাডাম বলে ওকে, সে কথাটা বলুন।
স্যাপল্যান্ড বলে, আমাদের মধ্যে মাখামাখি নেই। আচ্ছা আপনার কী মনে হয় স্কুল আবার চলবে? কঠিন প্রশ্ন। তাছাড়া আমি উত্তর দেবার কে?
কেন আপনার তো একটা মতামত থাকতে পারে, চলবে বোধহয় জানে।
ফরাসি সাহিত্য পড়ানো শেষ করে ক্লাস থেকে মাদমোয়াজেল ব্লাশ বেরিয়ে এল। হাতঘড়িতে সময় দেখে…অনেক সময় আছে। আজকাল তো সময়ের কমতি নেই। ছাত্রী নেই। নিজের ঘরে গিয়ে টুপি পরে নেয়। টুপি না পরে চলাফেরা করা তার একদম ভালো লাগে না। আয়নায় চেহারা দেখে পছন্দ হয় না। চোখে লাগার মতো ব্যক্তিত্ব নেই।..মনে মনে হাসে দিদির পরিচয় পত্রগুলো কেমন সুন্দর কাজে লাগানো গেল। হাত-পা এর ফটো দেখে কেউ সন্দেহ করেনি।…অ্যাঞ্জেল তো মারাই গেছে, ওগুলো ফেলে দিয়ে কী কোনো লাভ হত। তার চেয়ে এই বেশ। অ্যাঞ্জেল পড়াতে সত্যিই ভালোবাসতো। ব্যাগটা হাতে ঝুলিয়ে বাইরে এল। বারান্দা দিয়ে যেতে যেতে দেখে, হাঁটু মুড়ে নতুন একজন ঝি কাজ করছে। নিশ্চয় পুলিশের চর…লোকে যেন বোঝে না।
ঠোঁটের কোণে আবছা হাসি খেলে।
.
আনাতোলিয়ার ঘটনা
গভীর খাদের ওপর দিয়ে রাস্তা। সেই রাস্তার এক পাশে মিসেস আপজন বসে আছে। বিশাল চুল এক তুর্কী রমণীর সঙ্গে গল্প জুড়েছে।
.
অনাবরণ
সবাই একটা ছোটো ক্লাসঘরে এসে জমা হল। মিস বুলস্ট্রোড দেখলেন সবাই এসেছে। মিস চ্যাডউইক, মিস জনসন, মিস রীচ ও অল্প বয়সী শিক্ষিকা দুজন। অ্যানি স্যাপল্যান্ড খাতা পেন্সিল নিয়ে বসেছে। যদি মিস বুলস্ট্রোডের কিছু লেখার দরকার হয়। মিস বুলস্ট্রোডের পাশে ইনসপেক্টর কেলসি বসেছে, আর তার পেছনে এরকুল পোয়ারো বসে আছেন।
বেশ কর্তৃত্বের সুর নিয়ে তিনি বলতে শুরু করলেন।
আমার মনে হয় এই তদন্ত কতদূর এগিয়েছে সেটা জানতে আপনারা সকলেই উৎসাহী। কারণ আপনারা সকলেই এই স্কুলের কর্মী। এবং এই স্কুলের ভবিষ্যৎ সম্বন্ধে সুইজারল্যান্ড থেকে অমূল্য সাফল্য পেয়েছেন মিঃ পোয়ারো।
…আপনারা জানেন মঁসিয়ে পোয়ারো আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন ব্যক্তি। তিনি এই বিষয়ে নিজেই আপনাদের বলবেন।
আমি দুঃখিত যে তদন্ত এখনো শেষ হয়নি, কিন্তু আজ একথা বলার সময় এসেছে যেগুলো খোলসা হওয়া দরকার। কাজেই আমার কতদূর এগিয়েছি সেটা যদি আপনাদের জানানো যায় তবে নিশ্চয়ই আপনারা কিছুটা স্বস্তি পাবেন।
মিস বুলস্ট্রোড কেলসির দিকে তাকায়। ইনসপেক্টর উঠে দাঁড়িয়ে বলে, দেখুন সরকারীভাবে আমি যা জানি সবটাই আপনাদের বলতে পারি না, তবে আমরা যথেষ্ট এগিয়েছি এবং এই স্কুলের অপরাধগুলো কে বা কারা সংঘটিত করেছিলো সে সম্বন্ধেও একটা স্পষ্ট ধারণা এসে গেছে। এর বেশি কিছু বলতে চাই না। আমার বন্ধু মিঃ পোয়ারো সরকারী গোপনীয়তায় আবদ্ধ নন। তিনি তার বক্তব্য আপনাদের জানাতে পারেন। আমি জানি আপনারা সবাই মেডোব্যাঙ্কের একনিষ্ঠ কর্মী।
মিস বুলস্ট্রোডের ওপরও আপনাদের শ্রদ্ধা ও ভক্তি ভালোবাসা রয়েছে। সুতরাং আমি আশা করবো যে, মিঃ পোয়ারো যে সব বিষয়ে আপনাদের জানাবেন সেগুলো আপনারা গোপন রাখবেন। কারণ বাজারে যত কম গুজব ছড়াবে ততই মঙ্গল। অতএব আপনাদের অনুরোধ করবো যেন খবরগুলো বাইরে প্রকাশ না হয়, এতে আপনারা সকলেই রাজী…।