কেউই মিস স্প্রিঙ্গারকে হত্যা করতে পারে। ব্যতিক্রম শুধু মিস জনসন, মিস চ্যাডউইক আর যে মেয়েটির কানে ব্যথা হয়েছিল। কিন্তু দ্বিতীয় খুনের বেলায় ক্ষেত্র অনেক সংকীর্ণ। মিস রীচ, মিস ব্লেক ও মিস স্যাপল্যান্ড এতে জড়িত নেই। কারণ সে সময়ে মিস রীচ বিশ মাইল দূরে অ্যাসিনে গ্র্যাঞ্জ হোটেলে ছিলেন।
ইনসপেক্টর বলে, মিস বুলস্ট্রোড তখন ওয়েলশ্যমের ডাচেসের বাড়িতে ছিলেন।
পোয়ারোও গম্ভীর, তবে মিস বুলস্ট্রোডও বাদ পড়লেন। এখন কে কে রইলো?
বাঁধা ঝি দুজন। তারা রাতে থাকে, মিসেস গিবসন আর আরেকটা মেয়ে উরিস হগ। তাদের আমি সন্দেহ করি না, বাকি রইলো মিস রোয়ান ও মাদমোয়োজেল ব্লাশ।
ছাত্রীরাও তো।
চমকে ওঠে কেলসি। নিশ্চয় তাদের আপনি সন্দেহ করেন না।
করি না কিন্তু সঠিক কে বলতে পারে।
কিন্তু কোনো মনোযোগই ছিলো না, কেলসি বললো। মিস রোয়ান আছেন গত একবছর ধরে। ওঁর ইতিহাস ভালো। তার ব্যাপারে আমাদের কিছু বলার নেই।
তাহলে এসে ঠেকেছি মাদমোয়াজেল ব্লাশে। ওখানেই আমাদের যাত্রা শেষ।
এবার সবাই চুপ থাকে।
কোনো প্রমাণ নেই, পরিচয়পত্রগুলো বেশ ভালো।
সে তো হবেই, পোয়ারো বললেন।
উনি আড়ি পাততেন, অ্যাডাম বলে ওঠে, কিন্তু আড়ি পাতা তো হত্যার প্রমাণ নয়। এক মিনিট, কেলসি বলে, চাবি নিয়ে কি যেন বলছিলেন…চাবি নিয়ে বেরিয়ে পড়তেই স্প্রিঙ্গার তাঁকে মারেন এক ধমক।
রাতে র্যাকেট খুঁজতে যে যাবে, তার চাবি দরকার হবেই। পোয়ারো বলেন, চাবি বানাতে হলে চাবির ছাপ দরকার।
অ্যাডাম বললো, আগ বাড়িয়ে চাবির কথা বলবেন না।
কেলসি বললো, চাবির ঘটনা প্রিঙ্গার কাউকে বলেছিল। কাজেই ইনি ভাবলেন ঘটনাটা উল্লেখ করে রাখা ভালো।
মনে রাখার মতো বিষয়। পোয়ারো বলেন, এতে আমরা কদ্দূর যেতে পারি, কেলসি পোয়ারোর দিকে তাকায়।
পোয়ারো বলেন, যা বলা হয়েছে তা যদি সত্যি হয়, হয়তো একটা সম্ভাবনা আছে।
.
কথোপকথন
মিসেস সাটক্লিফ বলে, দেখুন বুঝতে পারছি না কি বলবো, সত্যি ঠিক বুঝতে পারছি না। এরকুল পোয়ারোর দিকে বিরক্তভাবে তাকিয়ে বললেন, হেনরি অবশ্য বাড়ি নেই।
পোয়ারো ঠিক বুঝতে পেরেছেন কেন তিনি এই কথা বললেন…উনি ভাবছেন হেনরি থাকলে ভালো হত ব্যাপারটা সুরাহা করে দিত। হেনরির কত বিদেশী নিয়ে কারবার। কখনো দক্ষিণ আমেরিকা কিংবা কখনো জেনেভাতে। ও প্যারিসে গেছে দু-একবার।
মিসেস সাটক্লিফ বলেন, ব্যাপারটা এত বিশ্রী বুঝলেন, জেনিয়াকে যে নিরাপদে বাড়ি নিয়ে যাই সেটাই বাঁচোয়া। কিন্তু জেনিয়া ভীষণ বিরক্ত করছে। মেডোব্যাঙ্কে যাবার আগে তো সেখানে যাবে না বলেই নাকে কাঁদলো, ওটা নাকি বড়ো লোকদের ন্যাকা ন্যাকা স্কুল।
পোয়ারো বললেন, ওটা যে খুব ভালো স্কুল সে বিষয়ে কোনো সন্দেহ নেই।
ছিল, এখন আর নেই।
মিসেস সাটক্লিফ সংশয় দৃষ্টিতে তাকিয়ে বলেন, আপনার তাই মনে হয় বুঝি।
তখন পোয়ারো ব্যাখ্যা করলেন, মেডোব্যাঙ্কে তো এখন একটা দুঃসময় চলছে।
মিসেস সাটক্লিফও যেন ওঁত পেতেই ছিলো, সঙ্গে সঙ্গে ঝাঁপিয়ে পড়লো।
শুধু দুঃসময় বলছেন তার চেয়েও অনেক বেশি। দুজন খুন হল। একটি মেয়ে চুরি হল। যেখানে শিক্ষয়িত্রীরা একের পর এক খুন হচ্ছেন সেই স্কুলে আপনি আপনার মেয়েকে পাঠাতে পারেন।
.
জেনিয়া থমথমে মুখে ঘরে ঢুকলো। ঘোর সন্দেহের চোখে পোয়ারোর দিকে তাকায়। এই যে কেমন আছ?
পোয়ারো বলেন, আমি জুলিয়া আপজনের পুরানো বন্ধু, ও আমাকে খুঁজতে লন্ডনে এসেছিল।
জেনিয়া একটু আশ্চর্য হল, জুলিয়া লন্ডনে গিয়েছিল কেন?
পোয়ারো বললেন, আমার উপদেশ নিতে। জেনিয়ার কিন্তু বিশ্বাস হয় না। পোয়ারো বললেন, আমি তাকে উপদেশ দিয়েছি। ও এখন আবার মেডোব্যাঙ্কে ফিরে গেছে।
জেনিয়া বলে, তাহলে ইসাবেলা মাসি ওকে নিয়ে যাননি।
পোয়ারোও মিসেস সাটক্লিফের দিকে তাকাল, কিন্তু ততক্ষণে জেনিয়ার মা ঘর ছেড়ে চলে গেছেন। যখন পোয়ারো এবাড়িতে আসেন তখন তিনি ধোপার কাপড় মেলাতে ব্যস্ত ছিলেন।
পোয়ারো বললেন, ও…আচ্ছা মেডোব্যাঙ্কে এমন কাউকে দেখেছো কী যাকে রামাতে দেখেছিলে?
রামাতে, না..কই মনে হচ্ছে না। কিন্তু জেনিয়া তুমি নিঃসন্দেহ নও, তাই না? জেনিয়া কপাল চুলকোয়, মানে সবসময় তো চেনা মুখের মানুষ দেখা যায় কিন্তু কার সঙ্গে তার মুখের মিল, তা তো তার মনে থাকে না। কখনো হয়তো এমন হয় যে চেনা মানুষদের দেখলেন কিন্তু
মনে করতে পারলেন না, তারা কে? কোথায় দেখেছেন।
রাজকুমারী শাইস্তার কথাই ধরো, তাকে তুমি নিশ্চয়ই চিনতে পেরেছিলে। রামাতে তো তাকে দেখেছে।
রামাতে ছিলো বুঝি। খুব সম্ভব রাজ-পরিবারের মেয়ে তো, তাকে তুমি ওখানে দেখে থাকবে, কী বল।
না, মনে পড়ে না, তাছাড়া ওখানে ওরা মুখের কাপড় খুলে রাস্তায় বেরোয় না। বিদেশে এসে খুলে ফেলে বলে শুনেছি।
সে যাক। তাহলে মেডোব্যাঙ্কে কাউকে তুমি আগে দেখেছে বলে মনে হয় না।
না, দেখিনি…অবশ্য বেশির ভাগ মানুষের মুখই হয়তো যে কোনো জায়গাতেই তাদের দেশে থাকতে পারেন। যখন মিস রীচের মতো কোনো অদ্ভুত মুখ আপনার নজরে আসে, তখনই তো আপনি লক্ষ্য করেন।
মিস রীচকে আগে কোথাও দেখেছো? ঠিক দেখিনি, ওর মতোই কেউ হবে। কিন্তু অনেক বেশি মোটা।