অ্যাডাম হাসে, তাকে জানেন দেখছি মিঃ পোয়ারো। আমি কখনো তাকে পুরো জাগা অবস্থায় দেখিনি…যখন দেখবো তখন বুঝবো তিনি মনোযোগ দিচ্ছেন না।
পুলিশ সাহেব বললেন, আসুন ব্যাপারটা নিয়ে এবারে আলোচনা করি। আমি অবশ্য আমার নিজের ধারণা আপনাদের ওপর চাপিয়ে দেবো না। যারা এই কেস নিয়ে কাজ করছেন তারা কী কী জানতে পেরেছেন, কী কী ভাবছেন, সেটা জানতেই আমি এখানে এসেছি।…ব্যাপারটার নানান দিক রয়েছে, তার মধ্যে একটা দিকের কথা জানিয়ে দেওয়া উচিত। ধরে নেওয়া যাক একটি ছোটো মেয়ে মানে একটি স্কুলের ছাত্রী আপনার কাছে চমৎকার একটি গল্প নিয়ে এলো। সে নাকি কোনো একটা টেনিস র্যাকেটের ফাঁকা হাতলে কীসব পেয়েছে। হয়তো সে যা পেয়েছে আসলে হচ্ছে রঙীন পাথরের একটা সংগ্রহ…বেশ সুন্দর নকল পাথর বা বড়োজোর আধদামী পাথর। যাইহোক শিশুমনে উত্তেজনা জন্মাবার পক্ষে ওই যথেষ্ট। কিন্তু ওগুলোর দাম সম্বন্ধে মেয়েটার মনে ভীষণ উঁচু ধারণা। কী বলেন এমন কাণ্ড হতে পারে না? পোয়ারোর দিকে কটমট করে তাকালেন। হওয়াই তো উচিত।
পুলিশ সাহেব বলেন, বেশ যারা এই ইয়ে মানে..রঙীন পাথরগুলো অজান্তেই এদেশে নিয়ে এসেছে, তাদের বিরুদ্ধে আমরা চাই না যে বেআইনিভাবে ওগুলো আমদানী করার কোনো মামলা ওঠে। তার ওপর আবার আছে বৈদেশিক নীতির কথা। আমাকে বলা হয়েছে যে, কতগুলো এমন ব্যাপার আছে যা এই মুহূর্তে বেশ গোলমাল। তেল বা খনিজপদার্থ বা ওই ধরনের কোনো বৃহত্তর স্বার্থের খাতিরে সবসময়েই প্রতিষ্ঠিত সরকারের সঙ্গে কাজ করতে হয়। কোনো বোস প্রশ্ন আমার চাই না। হত্যাকাণ্ডকে কখনো চেপে রাখা যায় না। পরামর্শ চলছে
চিন্তান্বিত গলায় পোয়ারো আবার বললেন, মেডোব্যাঙ্কে দুটি হত্যা!
কেলসি বলে, আমরা আপনাকে সব তথ্যই জানালাম এখন যদি কোনো ধারণা হয়ে থাকে আপনার।
পোয়ারো বলেন ক্রীড়ামঞ্চে কেন? আপনার মনে সেই প্রশ্নই ছিলো তাই না? উত্তরটা আমরা পেয়ে গেছি, কারণ ক্রীড়ামঞ্চে ছিলো একটা টেনিস র্যাকেট, যার মধ্যে ছিল বহুমূল্য রত্ন। র্যাকেটের খবরটা নিশ্চয়ই কেউ জানতো। কে সে?…মিস শ্রিঙ্গারও হতে পারেন। আপনারাই তো বলেন ক্রীড়ামঞ্চ সম্বন্ধে তার অদ্ভুত একটা মনোভাব ছিলো। ওখানে কারো আসা তিনি পছন্দ করতেন না। মাদমোয়াজেল ব্লাশের ক্ষেত্রেই তা তো দেখা গেলো।
এরকুল পোয়ারো আবার অ্যাডামকেই বললেন, আপনিই তো বলেছিলেন ক্রীড়ামঞ্চে মাদমোয়াজেল ব্লাশের আচরণটা যেন আপনার কাছে কেমন কেমন ঠেকেছিল।
অ্যাডাম বলে, তিনি আমাকে কৈফিয়ৎ দিচ্ছিলেন। বেশ ঘটা করে কৈফিয়ৎ..অত করে যদি না বোঝাতেন তবে আমার কোনো সন্দেহই হত না।
মাথা নেড়ে পোয়ারো বলেন, বটেই তো। চিন্তার উদ্রেক করবারই কথা। কিন্তু আমরা যতটুকু জানি তা হচ্ছে রাত একটায় ক্রীড়ামঞ্চে মিস স্প্রিঙ্গারকে খুন করা হয়েছিল অথচ সেই সময় ওর তো ওখানে থাকবার কথা নয়।
কেলসির দিকে ফিরে, মেডোব্যাঙ্কে আসাবার আগে মিস স্প্রিঙ্গার কোথায় ছিলেন? জানা যাচ্ছে না, তার শেষ চাকরিস্থল ছিলো বেশ নামকরা একটা স্কুলের, নাম বলেছিলো। গতবছর গ্রীষ্মকালে ওখানেই ছিলেন। কিন্তু তারপর কোথায় ছিলেন জানা নেই। মরার আগে তো প্রশ্ন করার দরকার হয়নি। তার কোনো আত্মীয় বা বন্ধুবান্ধব খুঁজে পাওয়া যায়নি।
পোয়ারো বলেন, তবে তো রামাতে থাকাটা অসম্ভব নয়। অ্যাডাম বলে, শুনেছি যখন বিপ্লব হচ্ছিলো তখন ওখানে নাকি একদল স্কুল শিক্ষিকা ছিলো।
তাহলে ধরা যাক তিনি এখানে ছিলেন এবং কোনো উপায়ে র্যাকেটটার খবর জেনেছেন। মেডোব্যাঙ্কে কিছুদিন চুপচাপ নিত্যনৈমিত্তিক কাজের ধারা লক্ষ্য করলেন তারপর একদিন রাতে ক্রীড়ামঞ্চে গিয়ে র্যাকেটটা থেকে মণিরত্নগুলো বের করে নিতে যাবেন মনস্থির করলেন। ঠিক সময়ে কেউ তাকে বাধা দিল। যে কেউ তার গতিবিধির অনুসরণ করছিলো। সে যাই হোক তার কাছে পিস্তল ছিলো। …তাকে গুলি করলো…কিন্তু রত্নগুলো সরিয়ে নেবার সময় পেলো না। কারণ ততক্ষণে গুলির শব্দে ক্রীড়ামঞ্চে লোকজন ছুটে আসছে।
পুলিস সাহেব বললেন, তাহলে আপনার ধারণা ঘটনাটা এরকমই ঘটেছিলো।…এটা শুধু একটা সম্ভাবনা। বিকল্পে এমনও হতে পারে যে পিস্তলধারীই ওখানে প্রথম গিয়েছিলো এবং মিস স্প্রিঙ্গার আসাতে সে বাধা পেলো। হয়তো এমন কোনো মানুষ যার সম্বন্ধে মিস স্প্রিঙ্গার সন্দেহ পোষণ করতেন।…আপনারাই তো বলেছেন অন্যের চরিত্রের দোষ তিনি খুঁজে বেড়াতেন।
অ্যাডাম বলে, আর দ্বিতীয় স্ত্রীলোকটি আপনিও জানেন না আমিও জানি না…হয়তো বাইরের কোনো লোকও এসে থাকতে পারে।
কেলসি মাথা নেড়ে বলে, না, তা মনে হয় না। গোটা অঞ্চলটা আমরা তন্নতন্ন করে খুঁজেছি, আগন্তুকদের তো আমরা খুঁটিয়ে যাচাই করেছি। কাছাকাছি থাকার মধ্যে আছেন মাদাম কোলেনস্কি অ্যাডাম চেনেন। কিন্তু তিনি দুটোর মধ্যে একটা খুনেও জড়িত থাকতে পারেন না।
তবে তো আবার মেডোব্যাঙ্কেই ফিরে আসতে হচ্ছে!..সত্য আবিষ্কারের একমাত্র পন্থার কথা বিবেচনা করে অসম্ভবগুলোকে বাদ দিয়ে সম্ভাবনা আগামীতে পৌঁছানো। কেলসি বলে, হা…তাই তো দাঁড়াচ্ছে। দেখুন প্রথমে যে খুনটা হল সেখান প্রশস্ত ক্ষেত্র :