জুলিয়া তার দিকে আশার চোখে তাকায়। তুমি নিজেকে আমার হাতে ছেড়ে দিচ্ছো তো, বেশ এরকুল পোয়ারো চোখ বোজেন। হঠাৎ চোখ খুলেই ভীষণ চটপট হয়ে পড়লেন।
আর চেয়ারে বসে থাকা যাচ্ছে না। প্রতিটি বিষয়েই শৃঙ্খলা থাকা চাই। তুমি যে কাহিনী বললে তাতে না আছে শৃঙ্খলা না আছে বিনাশের কারণ। কারণ এইখানে আমরা দেখতে পাচ্ছি অনেক সুতো অনেক গুচ্ছ।
তোমার স্কুলে খবর দিচ্ছি। প্রধান শিক্ষিকাকে বলে দিই যে তুমি এখানে আমার কাছে নিরাপদে আছো আর আমরা দুজনেই মেডোব্যাঙ্কে যাচ্ছি।
উনি জানেন যে আমি ভালোই আছি। আমি চিঠি লিখে রেখে এসেছি। আমাকে কেউ চুরি-টুরি করেনি।
তবু খবরটা পেলে শান্তি পাবেন। টেলিফোনে মিস বুলস্ট্রোডকে পাওয়া গেল। আমার নাম এরকুল পোয়ারো, আমার কাছে আপনার ছাত্রী জুলিয়া আপজন এসেছে।…যে পুলিশ অফিসার তদন্ত করছেন তাকে জানিয়ে দেবেন যে একটা দামী মোড়ক ব্যাঙ্কে জমা করে দেওয়া হয়েছে।
মিস বুলস্ট্রোড বললেন, আমাদের এতো তাড়াতাড়ি টেলিফোন করে আপনি যে আমাদের উদ্বেগ দূর করেছেন তার জন্য অশেষ ধন্যবাদ। অত্যন্ত সুবিবেচনার কাজ করেছেন।
…জানো জুলিয়া, আজ মধ্যাহ্নভোজে তুমি যে নেই সেটা আমরা লক্ষ্য করিনি।
জুলিয়া বলে, নইলে আপনি হয়তো ভাবতেন আমাকেও চুরি করে নিয়ে গেছে।
হা ভালোই করেছিলে, তবুও আমি বলবো, তোমার মতলবটা আগেই আমাকে জানানো উচিত ছিল জুলিয়া।
একমিনিট, বলে দরজার কাছে চলে এলেন এরকুল পোয়ারো, দরজা খুলে বাইরে তাকিয়ে দেখলেন। তারপর খুব ঘটা করে দরজা বন্ধ করে চোখে মুখে ঝিলিক তুলে রহস্যঘন কণ্ঠে বললেন, এখন আমরা একা, এবার শুরু করা যাক।
একবার তার দিকে আরেকবার দরজার দিকে মিস বুলস্ট্রোড তাকিয়ে দেখলেন, জুলিয়া কি ব্যাপার? জুলিয়া পুরো ঘটনাটা আনুপূর্বিক বলে গেল। টেনিস র্যাকেটের বদলাবদলি রহস্যময়ী রানী…র্যাকেটের ভেতরে অবশেষে খুঁজে পেলো মিস বুলস্ট্রোড। পোয়ারোর দিকে তাকাতে তিনি বললেন, মাদমোয়াদেল জুলিয়া সবকিছু ঠিকই বলল, ও যে জিনিসগুলি নিয়ে এসেছিল তার ভার এখন আমার ওপর। সেগুলি ব্যাঙ্কে নিরাপদে রাখা হয়েছে। কাজেই মনে হয় না এখানে আর কিছু ঘটবে।
মিস বুলস্ট্রোড বললেন, ওঃ…আচ্ছা জুলিয়ার এখানে থাকা কি ভালো হবে? বলেন তো লন্ডনে ওর মাসির বাড়িতে পৌঁছে দিই।
জুলিয়া প্রতিবাদ করে, না না, আমাকে এখানে থাকতে দিন।
মিস বুলস্ট্রোড বলেন, তোমার এখানে ভালো লাগে?
হ্যাঁ ভীষণ ভালো লাগে, কত অদ্ভুত কাণ্ড হচ্ছে এখানে।
সেগুলো মেডোব্যাঙ্কের বিশেষত্ব নয়।
এরকুল পোয়ারো বলেন, এখনি আর এখানে কোনো বিপদ নেই জুলিয়ার। বলতে বলতে দরজার দিকে তাকালেন।
মিস বুলস্ট্রোড বলেন, বুঝেছি।
পোয়ারো সাবধান করে দিলেন, কিন্তু তা হলেও বিচক্ষণতার প্রয়োজন আছে। জুলিয়ার দিকে তাকিয়ে বললেন, বিচক্ষণতা বোঝ?
মিস বুলস্ট্রোড বুঝিয়ে দিলেন, মঁসিয়ে পোয়ারো বলতে চাইছেন যে তুমি যা খুঁজে পেয়েছো সে সম্বন্ধে কোনো কথা কাউকে বলবে না। অন্য মেয়েদেরও না। পারবে চুপ করে থাকতে?
হুঁ।
পোয়ারো বলেন, বন্ধুদের কাছে গল্প করার চমৎকার বিষয়, গভীর রাতে টেনিস র্যাকেটের মধ্যে খুঁজে পেলে সাত রাজার ধন। তবু ও নিয়ে গল্প না করার অনেক যুক্তিপূর্ণ কারণ আছে।
জানি।
জুলিয়া তোমার ওপর ভরসা করতে পারি?
হ্যাঁ নিশ্চয়ই…দিব্যি করছি। এই দেখুন বুকে ক্রশ আঁকলাম।
মিস বুলস্ট্রোড হেসে বললেন, তোমার মা বোধহয় শিগগিরি ফিরবেন।
মা? আশা তো করি।
মিস বুলস্ট্রোড বললেন, ইনসপেক্টর কেলসির কাছে শুনলাম তোমার মায়ের সঙ্গে যোগাযোগ করার খুব চেষ্টা হচ্ছে।…কিন্তু মুশকিল হয়েছে কি জানো?…আনাতানি বাসগুলো ভীষণ দেরি করে, সবসময় আবার সময়-টময় মানে না।
মাকে তো বলতে পারি?
হা নিশ্চয়।…আচ্ছা জুলিয়া ওই কথা রইলো, যাও তুমি এখন দৌড় লাগাও।
জুলিয়া ঘরের দরজাটা ভেজিয়ে দিয়ে চলে গেলো। মিস বুলস্ট্রোড তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে পোয়ারোকে দেখেন, আমি বোধহয় আপনার কৌশলটা বুঝতে পেরেছি।
একটু আগে দরজা বন্ধ করার ভান করলেন। আসলে কিন্তু দরজাটা আপনি ইচ্ছে করেই একটু ফাঁক করে রেখেছিলেন।
পোয়ারো মাথা নাড়ে, যাতে বাইরে থেকে শোনা যায় আমরা কী বলছি? হ্যাঁ…অবশ্যই আড়িপাতার মতো যদি কেউ থাকে।…মেয়েটির নিরাপত্তার জন্যই এগুলি করতে হল।…ওর কাছে এগুলো এখন নেই, ব্যাঙ্কে রাখা আছে। সে খবরটা প্রচার করা আবশ্যক।
মিস বুলস্ট্রোড গম্ভীরভাবে ঠোঁটে চেপে বললেন, কবে যে এসব শেষ হবে।
পুলিশের বড়োসাহেব বললেন, এখন আমাদের কর্তব্য হল প্রথমেই সব খবরগুলো একত্রিত করে যত রকম ধারণা আছে সেগুলো বিশ্লেষণ করে দেখা…। আপনাকে পেয়ে আমারা খুব খুশি। মিঃ পোয়ারো..ইনসপেক্টর কেলসির আপনার কথা খুব মনে আছে।
কেলসি বলে, সে অনেকদিন আগের কথা, মামলার ভার চীফ ইনসপেক্টর ওয়ারেণ্ডারের ওপর। তখন সবে ঢুকেছি। একেবারে আনকোরা সার্জেন্ট।
কাজের সুবিধার জন্য এই যে ভদ্রলোক এখানে বসে আছেন তার নাম আমরা দিয়েছি মিঃ অ্যাডাম গুডম্যান। একে হয়তো আপনি চেনেন না মিঃ পোয়ারো, কিন্তু এর বড়োকর্তাকে নিশ্চয়ই আপনি চেনেন, স্পেশাল ব্রাঞ্চ।
পোয়ারো বলেন, কর্নেল পাইক্যাওয়ে? ওঃ, অনেকদিন তার সঙ্গে দেখা হয়নি, এখনও তার সেই ঘুম ঘুম ভাব আছে নাকি?