পামালা জিজ্ঞাসা করলেন মিস জনসনকে যে, রাত্রে তার বোধ হয় কিছু ভেঙ্গে গেছে, বোধহয় তার মাথার তেল। মিস জনসন গোছাতে লাগলেন।
মাদমোয়াজেল ব্লাশ, নতুন ফরাসি শিখছে। যে লোকটা, বেড়া ছাঁটছে তাকে দেখে মনে মনে তারিফ করলেন।
ছিপছিপে শরীর তার। লোকের চোখ পড়ে না কিন্তু তার চোখ সর্বত্র।
ইংরেজি আর ভূগোলের মাস্টারনী মিস রীচ দালানের দিকে তাড়াতাড়ি চলতে চলতে মাঝে মাঝেই হোঁচট খাচ্ছেন।
ভাবতে-ভাবতে চলছেন, জমিতে মই দেবার আকশিটায় হঠাৎ হোঁচট খেয়ে যাবার সঙ্গেই সেই জোয়ান মালীটা ধরে ফেললো। সে বললো, সামলে চলুন।
আইলিন রীচ তার দিকে না তাকিয়ে বললেন, ধন্যবাদ।
মিস বোয়ান ও মিস ব্লেক নতুন স্পোর্টস প্যাভিলিয়ানটার দিকে চলেছেন। দুজনেই জুনিয়ার টিচার। মিস বোয়ান ছিপছিপে কালচে, অথচ দীপ্তিময়, মিস ব্লেক মোটা আর ফর্সা। দুজনেই ফ্লোরেন্সের গল্প করছিল। এবার সেখানে গিয়ে কী কী অ্যাডভেঞ্চার হয়েছে।
মিস বোয়ান মিস ব্লেককে বললেন যে তিনি মনোবিজ্ঞান ও অর্থনীতি পড়েছেন, বেশি বাধানিষেধ তারা মানে না। তাই তো তাঁদের অমন সুন্দর দেখায়। রিপু দমন নেই। কিন্তু জিউসেপ যেই শুনেছে যে তিনি মেডোব্যাঙ্কে পড়ান অমনি সে যথেষ্ট ভদ্র হয়ে গেল।
মিস বোয়ান দারুণ খুশি, মেডোব্যাঙ্ক একটা স্কুল বটে। তার স্পোর্টস প্যাভিলিয়ন ভালো। তিনি তো ভাবতেই পারেননি এত তাড়াতাড়ি শেষ হবে। তারপর তিনি একটু আফশোস করে বললেন, যে মিস বুলস্ট্রোড বলেছিলেন না…হতেই হবে। মিস বোয়ান তখন চমকে উঠল। স্পোর্টস প্যাভিলিয়নের দরজা খুলে একটি ছিপছিপে মেয়ে বেরিয়ে এসে তাদের দুজনের দিকে রুক্ষ দৃষ্টিতে চেয়ে তাড়াতাড়ি চলে গেল।
মিস ব্লেক বললে, এটা হয়তো নতুন গেমটিচার, কী বিশ্রী। তারপর বললেন, মিস জোনস কি সুন্দর ছিলেন। যেমন সুন্দর তেমনি মিশুকে। মিস বুলস্ট্রোড বেশ প্রভাবশালী অভিজাত চোহারা। তার চোখের তারা কটা, কিন্তু তাতে কৌতুকের দৃষ্টি। হেড মিস্ট্রেসের ব্যক্তিত্বের জন্যই এই স্কুলের এত সাফল্য, অবশ্য এখানে পড়ানো ভয়ানক ব্যয়সাধ্য। দলবদ্ধভাবে শিক্ষা দেওয়া এখানকার পদ্ধতি নয়। শিক্ষা ব্যক্তিমূলক হলেও শৃঙ্খলার ওপরেই জোর দেওয়া হয়। মিস বুলস্ট্রোডের শিক্ষানীতি হল, জোর করে দেওয়া নয়। তরুণীদের কাছে শৃঙ্খলা জিনিসটার আশ্বাস নিয়ে আসা। ওরা তাতে নিশ্চিত হয়। তার ছাত্রীরা সমাজের নানা স্তরে নানা দেশের। কিছু বিদেশী আছে, যারা উঁচু বংশের ও ধনী পরিবারের। এছাড়া আরো ছাত্রীরা আছে যারা প্রবেশিকা পরীক্ষায় পাশ করতে চায় ও ডিগ্রী নিতে চায়। তাছাড়া কিছু মেয়ে আছে তাদের কাছে স্কুল গণ্ডীটাই বাধা। তাছাড়া বুলস্ট্রোডের নানারকম নিয়মকানুন আছে–যেমন তিনি জড়বুদ্ধিদের নেন না, শিশু অপরাধীদেরও নয়। যে সব মেয়ের বাপ-মাকে তার পছন্দ হয় যাদের মধ্যে তিনি বিকাশের সম্ভাবনা দেখেন তাদের তিনি ভর্তি নেন।
এতক্ষণ ফায়ার প্লেসের ধারে দাঁড়িয়ে গেরাণ্ড হোপের প্যানপ্যানানি শুনছেন, তারপর তিনি বললেন, মিস বুলস্ট্রোডকে যে ডাক্তার তাদের বলে জেদী, মিস বুলস্ট্রোড মাথা নেড়ে সায় দিয়ে বললেন মনে মনে, ন্যাকা। তারপর বলেন সব মেয়েরাই ভালোবাসে তাদের নিয়ে বিদঘুঁটে কল্পনা করতে। মিস বুলস্ট্রোডের মুখে সমবেদনা, কিছু ভাবেন না তিনি। তারপর গেরা বললেন যে দু একদিনের মধ্যেই হেনরিয়েটা এমন বদলে যাবে যে অবাক হতে হবে। তারপর মিস বুলস্ট্রোড মনে মনে আওড়ালেন যে তার চেয়ে তার মেয়ে বুদ্ধিমতী। তারপর গেরা বললেন যে তারা মাস দেড়েকের মধ্যে দক্ষিণ ফ্রান্সে যাচ্ছে। তখন হেনরিয়েটাকে সঙ্গে নিয়ে যাবেন। তার একটা পরিবর্তন হবে।
তার খিটখিটে মুখটা রক্তাক্ত হয়ে ওঠে। মিসেস হোপের গলায় মেজাজের ঝাঁঝ ফুটে ওঠে, তিনি বলেন মেয়ে তারই। তারপর তিনি বললেন যে তার যখন খুশি মেয়েকে স্কুল থেকে নিয়ে যেতে পারবে না।
তারপর হোপ বললেন যে, পারবেন না কেন। তাহলে তিনি আর তাকে স্কুলে ফিরিয়ে নিতে পারবেন না। তারপর বললেন যে তার মেয়ের জন্য তিনি কাড়িকাড়ি টাকা দিচ্ছেন।
হোপ বললেন, সেটাই তো কথা, তার স্কুল তিনিই তো বেছে নিয়েছেন। তারপর হেনরিয়েটাকে দেখে বললেন যে তার জন্য দাঁড়িয়ে আছে। আদরমাখা চোখে তাকাল, কী সুন্দর চালাক চতুর মেয়ে, ওর ভাগ্যে এমন মা জুটেছে, তারপর মিস বুলস্ট্রোড মার্গারেটকে বললেন, হেনরিয়েটাকে তার মায়ের কাছে নিয়ে যেতে। তারপর তিনি নিজের ঘরে ফিরে আসেন।
এরপর যারা বুলস্ট্রোডের ঘরে ঢুকলো তাদের গা দিয়ে দামী সুগন্ধ বেরুচ্ছিল। কালো বেশভূষা পরা কালো মেয়েটিকে আপ্যায়ন জানাতে মিস বুলস্ট্রোড ভাবেন, রোজই বোধহয় গোটা বোতল গায়ে ঢালে তারপর মিস বুলস্ট্রোড মাদামকে আসতে বললেন, মাদাম সুন্দর । ভঙ্গীতে হেসে উঠলেন।
আরবী জোব্বা গায়ে দাড়িওলা দশাশই লোকটা মিস বুলস্ট্রোডের হাত টেনে নিয়ে তার ওপর ঝুঁকে পরিষ্কার ইংরেজিতে বললেন, প্রিন্সেস শাইস্তাকে নিয়ে আসার সৌভাগ্য তার হয়েছে।
নতুন ছাত্রীটি সুইজ্যারল্যান্ড স্কুল থেকে সবে এসেছেন তার কথা বুলস্ট্রোড জানেন। জানতেন না লোকটির সঙ্গে তার পরিচয় আছে। মিস বুলস্ট্রোড মেয়েটির বয়স পনেরো বলেই জানেন, বেশ বড়সড় দেখতে। প্রায় যুবতীই, প্রাচ্য দেশের মেয়েরা অমনিই হয়, পড়াশোনা নিয়ে মেয়েটির সঙ্গে মিস বুলস্ট্রোড কথা বলেন, মেয়েটি ইংরেজিতে বলে, মিস বুলস্ট্রোড ভাবেন যে ইংরেজ মেয়েদের দূর বিদেশে পাঠালে বেশ হয়, প্রাচ্য দেশে না হলেও মধ্যপ্রাচ্যে। মিস বুলস্ট্রোড আলোচনা শেষ করে বিদায় নিল।