শ্রদ্ধেয় মিস বুলস্ট্রোড,
আমি পালিয়েও যাইনি বা আমাকে কেউ চুরি করে নিয়েও যায়নি। অতএব চিন্তা করবেন না। যতশীঘ্র সম্ভব আমি ফিরে আসবো।
আপনার পরম বিশ্বস্ত ছাত্রী
জুলিয়া আপজন
আটশো নম্বর হোয়াইট হাউস ম্যানসনের দরজা খুলে দিলো। এরকুল পোয়ারোর নিজের খানসামা ও চাপরাশি জর্জ খুলেই অবাক, ময়লা মুখ নিয়ে নেহাতই একটি স্কুলের মেয়ে দাঁড়িয়ে আছে।
মিঃ এরকুল পোয়ারোর সঙ্গে দেখা করতে পারি? জর্জের জবাব দিতে একটু দেরিই হয়। এখন একজন সাক্ষাৎপ্রার্থী–বিশ্বাসই হয় না।
মিঃ পোয়ারো আগে থাকতে খবর না দেওয়া থাকলে কারোর সঙ্গে দেখা করেন না।
অত সময় আমার নেই, এখুনি তার সঙ্গে দেখা করতে হবে। ভীষণ জরুরী কয়েকটা হত্যা, একটা ডাকাতি। এইরকম আরো কিছু ব্যাপার।
জর্জ বলে, আচ্ছা জিজ্ঞাসা করে আসি, মিঃ পোয়ারো আপনার সঙ্গে দেখা করবেন কিনা। মেয়েটিকে হলঘরে রেখে ভেতরে গেলো সে মনিবকে শুধাতে।
স্যার আপনার সঙ্গে অল্পবয়সী মহিলা এখুনি দেখা করতে চান।
হু, তা তো চান। কিন্তু চাইলেই কি আর অত সহজে হয়।
সে কথা তো আমি ওকে বললাম।
কি ধরনের মহিলা?
মানে বাচ্চা মেয়ে স্যার।
কি বলতে চায়?
তিনি আপনার সঙ্গে কয়েকটি হত্যা ও একটি ডাকাতির সম্বন্ধে আলোচনা করতে চান। পোয়ায়োর ভ্রূ-গুলো এবারে উর্ধ্বে উঠে যায়।
কয়েকটা হত্যা এবং একটা ডাকাতি, বল কি হে! যাও যাও ভেতরে নিয়ে এসে বাচ্চা মেয়েটিকে।
জুলিয়া ঘরে এসে ঢুকলো, বেশ মার্জিত-স্বাভাবিক কণ্ঠস্বর। নমস্কার মিঃ পোয়ারো, আমার নাম জুলিয়া আপজন। শুনেছি আপনি আমার মায়ের একজন বিশেষ বন্ধুকে চেনেন। তার নাম মিসেস সামারহেইস। গতবছর গরমের ছুটিতে ওর বাড়িতে আমরা গিয়েছিলাম। তখন উনি আপনার কথা বলেছিলেন।
মিসেস সামারহেইস, পোয়ারো মানসচক্ষে দেখতে পেলেন, পাহাড়ের ওপরে একটা গ্রাম আর সেই পাহাড়ের চূড়ায় একটা বাড়ি…দাগভরা একটু মধুর মুখ…ভাঙাভাঙা স্প্রিংয়ের সোফা, বহু কুকুর…ভালোয়-মন্দয় মেশানো কত টুকরো টুকরো ছবি।
আমি তাকে মরিন মাসি বলি, মাসি হয় না অবশ্য। উনিই তো আমাদের গল্প করেছিলেন আপনি কি চমৎকার লোক! মিছিমিছি হত্যার অপরাধে একটি লোকের জেল হয়ে গিয়েছিলো, আপনি তাকে বাঁচিয়ে দিয়েছিলেন, তাইতো আমি যখন বুঝতে পারছিলাম না কি করা উচিত, কার কাছে যাওয়া উচিত, আপনার কথাই মনে এলো।
পোয়ারো গম্ভীর সুরে বললেন, আমি সম্মানিত বোধ করছি, ধন্যবাদ। মেয়েটিকে একটা চেয়ার দিলেন বসতে–আচ্ছা শুরু করে দেখি তোমার কাহিনী। আমার চাপরাশি জর্জ বললো, তুমি নাকি আমার সঙ্গে আলোচনা করতে চাও একটা ডাকাতি আর কয়েকটা হত্যাকাণ্ড নিয়ে; তাহলে কি একটার বেশি হত্যা?
জুলিয়া বলে, হ্যাঁ মিস স্প্রিঙ্গার ও মিস ভ্যান্সিটার্ট তার ওপরে বালিকা হরণও আছে–অবশ্য মনে করি না যে ওটা আমার ব্যাপার।
আশ্চর্য, তুমি যে আমাদের একেবারে হতবাক করে দিলে! তা এইসব বিস্ময়কর ঘটনা ঘটলো কোথায়।
আমার স্কুলে মেডোব্যাঙ্কে।
মেডোব্যাঙ্কে? পোয়ারো যেন এবারে বুঝতে পারলেন। সযত্নে রাখা খবরের কাগজ থেকে একটা তুলে নিলেন। ভাঁজ খুলে সামনের পৃষ্ঠায় চোখ বুলাতে বুলাতে মাথা নাড়লেন।
পোয়ারো বললেন, এতক্ষণ বুঝতে পেরেছি, বল দেখি প্রথম থেকে, জুলিয়া।
-গতরাতে আমার শোবার ঘরে র্যাকেট পরীক্ষা করা পর্যন্ত প্রথম বলে থেমে, বুঝলেন, আমি ভেবেছিলাম যে ঠিক আলাদিনের গল্প.পুরানো প্রদীপের বদলে নতুন প্রদীপ, কাজেই টেনিস র্যাকেটেই নিশ্চয় কিছু আছে।
ছিলো? হ্যাঁ!
মিথ্যা লজ্জা করার মেয়ে নয় জুলিয়া, স্কার্ট তুলে প্রায় উরু পর্যন্ত ইজেরটাকে গুটিয়ে নিলো, দেখা গেলো আঠালো ফিতে দিয়ে হাঁটুর খানিকটা ওপরে ছাই রঙের পুলটিশ লাগানো আছে। আঠালো ফিতেগুলো টান দিয়ে খুলতে গিয়ে ব্যথায় উঃ আঃ করে ওঠে। পুলটিশটা খুলে নিতে পোয়ারো দেখলো ওটা একটা মোড়ক। ছাই রঙের প্লাস্টিকের স্পঞ্জ ব্যাগের মধ্যে ভরে রাখা মোড়কটা খুলে, কোনো কিছু না জানিয়েই, একগাদা ঝলমলে পাথর হঠাৎ টেবিলের ওপর ঢেলে দিলো।
পোয়ারো হতচকিত গলা দিয়ে স্বর ফুটলো না–আঁ একি..একি, কি না কি নাম।
তুলে নিয়ে আঙুল দিয়ে নেড়ে চেড়ে দেখেন। নাম বলো…নাম বলো সত্যিকারের। জুলিয়া মাথা নেড়ে-হতেই হবে, নইলে কি আর কেউ খুন করে? এগুলোর জন্য মানুষ খুন করা..বোঝা যায়? আবার হঠাৎ গতরাতের মতো শিশু চোখে ফুটে উঠলো নারীর ছবি।
তীক্ষ দৃষ্টিতে ওকে দেখে পোয়ারো ঘাড় নেড়ে বললেন, হুঁ বুঝেছো দেখছি…যাদুর মায়া তোমাকে পেয়েছে।…শুধু রঙীন খেলনা নয়…এগুলো তোমার কাছে সেটাই তো কথা।
আবেশে জুলিয়া বলে, ওগুলো যে রত্ন।
বলছে যে তুমি এগুলো একটা টেনিস র্যাকেটের ভেতর পেয়েছো?
জুলিয়া কাহিনীর শেষপর্যন্ত শুনিয়ে দিলো। সবকিছু বলেছো, কিছু বাদ যায়নি তো? নাঃ একটু বাড়িয়ে হয়তো কোথাও একটু-আধটু বলেছি। আমার স্বভাব ওই। আমার বন্ধু জেনিয়া কিন্তু একেবারে উল্টো। তার মুখে লোমহর্ষক কাহিনীও কেমন ভেজা ভ্যাজভেজে শোনায়। আবার ঝলমলে রত্নের স্তূপটার দিকে তাকিয়ে, মঁসিয়ে পোয়ারো এগুলো কার?
বলা শক্ত। কিন্তু তোমারও না আমারও না। এক্ষুনি ঠিক করে ফেলতে হবে কি করা উচিত।