একটা কথা বলতে পারেন, ইনসপেক্টর জিজ্ঞাসা করল, ওখানে একটা গলফের লাঠি দেখলাম, আপনি কি সেটা নিয়ে গেছেন? না–মিস ভ্যান্সিটার্ট?
চ্যাডউইক বললেন যে, তিনি নিয়ে গেছেন, যদি কোনো প্রয়োজন হয়।
৩. ক্রীড়ামঞ্চে ধাঁধা
মনে মনে অ্যাডাম বলে, মাথা দেবো তবু মাথা নোয়াবো না।
মিস বুলস্ট্রোডকে দেখে আশ্চর্য হলেন–এর আগে কোনো নারীকে এত বিস্ময়কর মনে হয়নি। ধীর স্থির মূর্তি অথচ চোখের সামনে তার সারা জীবনের কীর্তি চুরচুর হয়ে ভেঙ্গে পড়ছে। প্রায়ই টেলিফোন বাজছে, অভিভাবকেরা জানাচ্ছেন…আরো একজন মেয়েকে স্কুল থেকে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে।
মিস বুলস্ট্রোড অবশেষে কর্তব্য নির্ধারণ করলেন। পুলিশ অফিসারদের কাছে মাপ চেয়ে নিয়ে তিনি অ্যান স্যাপল্যান্ডকে ডেকে একটা ছোট্ট ঘোষণা লেখালেন, এই পর্বের শেষপর্যন্ত স্কুল বন্ধ রইল। যাদের পক্ষে মেয়েদের এখন বাড়িতে নিয়ে যাওয়ার অসুবিধা আছে তারা ইচ্ছে করলে মেয়েদের এখানে রাখতে পারেন, স্কুল থেকে তাদের দেখাশোনা করা হবে।
দরজা দিয়ে বেরুতে গিয়ে অ্যান থমকে দাঁড়িয়ে বললেন, ক্ষমা করবেন মিস বুলস্ট্রোড। একটা কথা বলবো যদি কিছু মনে না করেন…এখুনি কি এরকম একটা কিছু করা ঠিক? মানে…আতঙ্ক একটু কমে গেলে লোকে যখন বিবেচনা করে দেখবে…তখন নিশ্চয়ই মেয়েদের নিয়ে যেতে চাইবে না। জ্ঞানবুদ্ধি দিয়ে বিচার করলে তারা বুঝতে পারবে।
কেলসির দিকে তাকিয়ে, এখন সবই আপনার উপর নির্ভর করছে ইনসপেক্টর। হত্যাকাণ্ড গুলির সমাধান করুন…যারা এসবের জন্য দায়ী, তাদের ধরুন…আবার সব ঠিক হয়ে যাবে।
কেলসি অখুশি মনে বললো, আমরা যথাসাধ্য করছি।
টেলিফোন বাজতেই মিস বুলস্ট্রোড রিসিভার তুলে নেন, বলুন? ইনসপেক্টরকে ইশারায় ডেকে বললেন, আপনার ফোন।
টেলিফোন না রেখে একমুহূর্ত চিন্তা করে ওদের দিকে তাকিয়ে বলে–মহামান্য আমীর আজ সকালে একটা চিঠি পেয়েছেন, মুক্তিপণ দাবী করা হয়েছে তার কাছে। পোর্টমাউথ ডাকঘরের মোহর, তবে ওটা ধোঁকা।
অ্যাডাম বলে, কোথায় কীভাবে টাকাটা দিতে হবে?
অ্যাণ্ডারটন প্রীয়র্সের দুমাইল উত্তরে চৌরাস্তা, চারিদিকে শুধু ধুধু মাঠ। কাল রাত দুটোয় ঐ চৌরাস্তায় অটোমোবাইলের অ্যাসোসিয়েশনের ব্যাক্সের পাশেই টাকাটা একটা খামে পুরে রেখে দিতে হবে, পাথর চাপা দিয়ে।
কত?
কেলসি বলে, বিশ হাজার, মনে হচ্ছে আনাড়ি লোকের কাজ। মিস বুলস্ট্রোড বলেন, আপনি কী করবেন?
মিস বুলস্ট্রোড বলেন, সফল হবেন আশাকরি।
অ্যাডাম বলে ওঠে, সহজ কাজ?
.
অ্যাডাম ক্রীড়ামঞ্চে একা..নিপুণ হাতে দেরাজগুলো আঁতিপাঁতি করে খোঁজে। বৃথা আশা কিছুই পাওয়া যাবে না। যেখানে পুলিশে কিছু পেলো না, সেখানে সে আর কী পাবে? তবু বলা কী যায় একেকটা বিভাগের একেক রকম পদ্ধতি। এখানেই কিছু লুকানো আছে। বারবার তারই খোঁজে হত্যাকারী আসে। গুপ্তধন নিশ্চয়ই নেই, সে সম্ভাবনা কেটেই দেওয়া আছে। কোনো চোরকুঠুরী বা ভুয়ো দেরাজ কি স্প্রিং দেওয়া হাতল-টাতলও নেই। দেরাজগুলোতেও কোনো রহস্য নেই। কিন্তু সেগুলো নেহাতই স্কুল জীবনের গোপনীয়তা, সুদর্শন নায়কদের ফটো। কদাচিৎ এক-আধটা অশ্লীল চটি বই। শাইস্তার দেরাজটা আবার খুঁজে খুঁজে দেখে। এটার ওপর ঝুঁকে পড়া অবস্থাতেই তো মিস ভ্যান্সিটার্ট মারা গেছে? কি দেখতে এসেছিলো মিস ভ্যান্সিটার্ট? পেয়েছিল সেটা? তার হত্যাকারী কি তার দেরাজ থেকে সেটা নিয়ে মিস চ্যাডউইক আসার আগেই সরে পড়েছে?
বাইরে যেন কার পায়ের শব্দ শোনা যাচ্ছে। উঠে সিগারেট ধরিয়ে অ্যাডাম মাঝখানে এসে দাঁড়ালো। দরজার সামনে জুলিয়া আপজনকে দেখা গেলো।
অ্যাডাম বলে, মিস কিছু চাই আপনার? ভাবছিলাম আমার টেনিস র্যাকেটটা যদি এখান থেকে নিয়ে যাই।
অ্যাডাম বললো, নিয়ে যেতে পারবে না কেন?…পুলিশ কনস্টেবল আমাকে এখানে বসিয়ে গেলো থানায়, যেতে হলো কিনা কী একটা কাজ, বলে গেলেন ফিরে না আসা পর্যন্ত আমি যেন এখানে থাকি।
জুলিয়া বলে, দেখতে যদি আবার ফিরে আসে।
কে? পুলিশ কনস্টেবল?
না হত্যাকারী, ওরা ফিরে আসে, তাই না? যে জায়গাটায় হত্যা করে, আসতেই হবে। ওরা যে আসতে বাধ্য হয়।
অ্যাডাম বললো, বোধহয় ঠিকই বলেছেন। সবকটা র্যাকেটগুলো দেখতে দেখতে জিজ্ঞাসা করল, কোথায় আছে আপনারটা। জুলিয়া জানালো, এই সারিতে। ওই কোণায় শেষের দিকে, আমাদের নাম লেখা আছে। অ্যাডাম র্যাকেট যখন দিল তখন তার নাম সাঁটা ফলকটা তাকে দেখিয়ে বোঝায় জুলিয়া।
টেনিসে জুলিয়ার সামনের হাতের মারটা জেনিয়া ফিরিয়ে দিলো না, বল ওদিকেই রয়ে গেলো, কেন না, ততক্ষণে জেনিয়ার চোখে পড়েছে, চেঁচিয়ে বললো ও মা, মা আসছে যে।
ওদিকে দুজনেই চেয়ে দেখে মিসেস সাটক্লিফ বেশ উত্তেজিত, তা দূর থেকেও স্পষ্ট বোঝ যাচ্ছে। মিস রীচ তাকে সঙ্গে করে নিয়ে আসছে।
জেনিয়ারের হতাশ ভঙ্গী, এই রে এক্ষুনি শুরু হবে। ওই খুনের ব্যাপারটাই বোধহয়। তোমার ভাগ্য ভালো জুলিয়া তোমার মা তো নিরাপদে বাসে চড়ে ককেশাস।
কেন ইসাবেল মাসি তো আছে?
ধ্যাৎ মা আর মাসী এক হলো।
মিসেস সাটক্লিফ এসে পৌঁছতেই জেনিয়া বলে উঠলো, এই যে মামনি।
জেনিয়া শিগগিরি চলে আসো, জিনিসপত্তর গুছিয়ে নাও। আমার সঙ্গে বাড়ি চলল।